Monday 24 Mar 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাড়ি ফেরা হোক স্বস্তির, নয় আতঙ্কের

সফিউল ইসলাম
২৩ মার্চ ২০২৫ ১৩:৩৩

‘যেতে চাই ঘরে, পথে বাঁধা হাজার,
নিরাপদ পথের খোঁজে মনটা ব্যাকুল আজ।’

ঈদ মানেই উৎসব, ঈদ মানেই প্রিয়জনের সান্নিধ্যে ফেরার আনন্দ। কর্মব্যস্ত জীবনের একঘেয়েমি কাটিয়ে প্রিয়জনের সঙ্গ পাওয়ার জন্য সারা দেশের মানুষ অপেক্ষা করে থাকে এই বিশেষ মুহূর্তের জন্য। কিন্তু সেই স্বপ্নময় যাত্রা যদি দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়, যদি বাড়ি ফেরার পথ হয় অনিশ্চয়তার আরেক নাম, তাহলে ঈদের আনন্দ পূর্ণতা পায় না। সড়ক দুর্ঘটনা, যানজট, অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই, নৌপথে অনিরাপদ যাত্রা—এসব মিলিয়ে ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফেরা যেন আতঙ্কের উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবছর ঈদের সময় দেশের সড়ক, রেল ও নৌপথে ব্যাপক ভোগান্তি দেখা যায়। যানজট, বাস-ট্রেন-লঞ্চের অতিরিক্ত ভিড়, সড়ক দুর্ঘটনা, চড়া ভাড়া আদায়, ফেরিঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা—এসব যেন ঈদযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ এই ভোগান্তি ও অনিরাপত্তা দূর করা সম্ভব যথাযথ পরিকল্পনা ও সচেতনতার মাধ্যমে। আমাদের সবার চাওয়া একটাই। বাড়ি ফেরা হোক স্বস্তির, নয় আতঙ্কের। ঈদের ছুটিতে দেশের মহাসড়কগুলোতে গাড়ির চাপ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। শহর থেকে লাখ লাখ মানুষ গ্রামের পথে ছুটে যায়। ফলে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় সড়কে যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে গিয়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। অনেক সময় সড়কগুলোর দুরবস্থা এবং অনিয়ন্ত্রিত যানবাহন চলাচল দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

বিজ্ঞাপন

এই ক্ষেত্রে যানজটের উল্লেখযোগ্য মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ। ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় নামানো। যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানো। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা। মহাসড়কে ছোট যানবাহনের (থ্রি-হুইলার, মোটরসাইকেল) বেপরোয়া চলাচল। এই ক্ষেত্রে সমাধান হতে পারে।যানজট কমাতে গাড়ির চলাচল পরিকল্পিতভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মহাসড়কে ছোট যানবাহনের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। ফিটনেসবিহীন যানবাহন বন্ধ করতে হবে। হাইওয়ে পুলিশকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। জরুরি প্রয়োজনে বিকল্প সড়কের ব্যবস্থা রাখতে হবে। অন্য দিকে নৌপথের ও নিরাপত্তাহীনতা বিবেচনায় রাখতে হবে। ঈদের সময় লঞ্চ ও ফেরিতে ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি যাত্রী ওঠানো হয়। এতে নৌপথে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায়। অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই নৌযান প্রায়ই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে, যার ফলে বহু প্রাণহানি ঘটে। এছাড়া, অনেকে লাইফ জ্যাকেট ছাড়াই নদীপথে যাত্রা করে, যা বড় ধরনের দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। এই ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সরঞ্জামের অভাব। নৌযানের অপ্রতুলতা। আবহাওয়া উপেক্ষা করে লঞ্চ ছেড়ে যাওয়া। এই ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিতের উপায় হিসেবে করা যেতে পারে।

বিজ্ঞাপন

অতিরিক্ত যাত্রী বহন বন্ধ করতে হবে_

প্রতিটি নৌযানে পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসনের তদারকি বাড়াতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ নৌযান চলাচল বন্ধ করতে হবে। এইছাড়াও নজর রাখতে হবে রেলপথে দিকেও। রেলপথ তুলনামূলক নিরাপদ হলেও ঈদের সময় টিকিট পাওয়া দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। অনেক যাত্রী টিকিট ছাড়াই ট্রেনে উঠে অতিরিক্ত ভিড়ের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণভাবে যাতায়াত করে। ফলে অনেক সময় ছাদে যাত্রা করার মতো বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হয়। এর প্রধান সমস্যাগুলো হলো; অপ্রতুল ট্রেন সংখ্যা। টিকিট কালোবাজারি। অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন। এই ক্ষেত্রে সমাধান হিসেবে করা যেতে পারে।

বিশেষ ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো। টিকিট কালোবাজারি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ। ট্রেনের সময়সূচি যথাযথভাবে মানা। এর পাশাপাশি চালক ও যাত্রীদের ভূমিকা ও মুখ্য বিষয়। নিরাপদ ঈদযাত্রা নিশ্চিত করতে শুধু সরকার বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা যথেষ্ট নয়। চালক, যাত্রী ও পরিবহন মালিকদেরও সচেতন হতে হবে। ঈদের আনন্দ তখনই পূর্ণতা পাবে, যখন সবাই নিরাপদে বাড়ি পৌঁছাতে পারবে এবং পরিবারের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নিতে পারবে। আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত দায়িত্বশীলভাবে আচরণ করা, আইন মেনে চলা এবং নিরাপদ যাত্রার বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া।

নিরাপদ ঈদযাত্রা শুধু সরকারের একার দায়িত্ব নয়, এটি আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সম্ভব। তাই আসুন, আমরা সবাই সচেতন হই, দায়িত্বশীল হই এবং নিশ্চিত করি। বাড়ি ফেরা হোক স্বস্তির, নয় আতঙ্কের।

লেখক: শিক্ষার্থী, ফেনী সরকারি কলেজ, ফেনী

সারাবাংলা/এএসজি

বাড়ি ফেরা মুক্তমত সফিউল ইসলাম