Monday 07 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অন্যের স্বপ্ন বিক্রি করে কোটিপতি!

সফিউল ইসলাম
৫ এপ্রিল ২০২৫ ১৭:৪৪

ফ্রিল্যান্সিং, ডিজিটাল প্রযুক্তির বিকাশের ফলে আজকের সময়ের এক আলোচিত কর্মক্ষেত্র। বিশ্বব্যাপী লক্ষাধিক তরুণ-তরুণী ঘরে বসেই ফ্রিল্যান্সিং করে উপার্জনের স্বপ্ন দেখছে। তবে এই স্বপ্নকে পুঁজি করে অসাধু চক্র গড়ে তুলেছে প্রতারণার এক বিশাল জাল। তারা দ্রুত আয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তরুণদের বিভ্রান্ত করছে এবং তাদের মূল্যবান সময় ও অর্থ নষ্ট করছে। ফ্রিল্যান্সিংয়ের নামে চলমান প্রতারণার ফলে সৃষ্ট হতাশা।

বিজ্ঞাপন

ফ্রিল্যান্সিং প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনভাবে কাজ করার একটি দারুণ সুযোগ। দক্ষতা থাকলে আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় বাজারে কাজ পাওয়া সম্ভব। তবে সমস্যা তখনই দেখা দেয়, যখন কিছু অসাধু ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে নিরীহ তরুণদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলে।

তারা দাবি করে, মাত্র এক থেকে তিন মাসের প্রশিক্ষণে লাখপতি হওয়া সম্ভব। কিন্তু বাস্তবে, ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হতে দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং সময় লাগে। প্রতারিত তরুণরা যখন কাজ পায় না, তখন তারা হতাশ হয়ে পড়ে এবং সময় ও অর্থ দুটোই নষ্ট হয়।

ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণের নামে প্রতারণার অনেক কৌশল প্রচলিত রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হলো _

অতিরঞ্জিত বিজ্ঞাপন, নিম্নমানের প্রশিক্ষণ, ভুয়া ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম, জব গ্যারান্টি, সার্টিফিকেট বিভ্রান্তি, মাত্র ৩০ দিনে লাখপতি হন! এ ধরনের বিজ্ঞাপন তরুণদের আকৃষ্ট করে, কিন্তু বাস্তবে এটি সম্পূর্ণ ভুয়া প্রতিশ্রুতি। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের দেওয়া প্রশিক্ষণের মান এতটাই দুর্বল যে শিক্ষার্থীরা বাস্তব মার্কেটপ্লেসে প্রতিযোগিতা করতে পারে না। কিছু প্রতিষ্ঠান নিজেদের তৈরি প্ল্যাটফর্মে কাজ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু বাস্তবে সেখান থেকে প্রকৃত কাজ পাওয়া যায় না। অনেক প্রতিষ্ঠান কোর্স শেষে নিশ্চিত চাকরির প্রতিশ্রুতি দেয়, যা প্রায়শই বাস্তবায়িত হয় না।

প্রশিক্ষণ শেষে দৃষ্টিনন্দন সার্টিফিকেট দেওয়া হয়, যা বাস্তব মার্কেটপ্লেসে কোনো মূল্য বহন করে না। এই ছাড়া ও কিছু প্রতারক প্রতিষ্ঠান বলে, তারা কাজের নিশ্চয়তাসহ ফ্রিল্যান্স একাউন্ট বিক্রি করছে, যা সাধারণত নিষিদ্ধ বা বন্ধ হয়ে যায়। এমন ভাবে যে সকল শিক্ষার্থী প্রতারণার শিকার হয়, তারা চরম হতাশায় ভোগে। পরিবারের টাকা ব্যয় করে যখন তারা কোনো কাজ পায় না, তখন মানসিক চাপ সৃষ্টি হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। অনেক তরুণ আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে এবং নতুন কোনো কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতে পারে না। হতাশার কারণে কিছু তরুণ মানসিক বিষণ্ণতায় ভুগে এবং সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

বিজ্ঞাপন

কেউ কেউ আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফলে তখন অন্য কোনো পেশায় প্রবেশ করতে দ্বিধাবোধ করে। কিছু তরুণ ঋণের ফাঁদে পড়ে, যা ভবিষ্যতে তাদের জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এমন ফ্রিল্যান্সিং প্রতারণা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে: বিশ্বস্ত উৎস থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ, সত্যিকারের দক্ষতা অর্জন, প্রতারণামূলক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, বাস্তবতা সম্পর্কে সচেতনতা, গভীর গবেষণা করা, কাজ শেখার পাশাপাশি মার্কেটিং ও ক্লায়েন্ট ম্যানেজমেন্ট শেখা, ইউটিউব, এবং অন্যান্য স্বনামধন্য প্ল্যাটফর্ম থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া যেতে পারে। শুধু কোর্স করা যথেষ্ট নয়, দক্ষতা অর্জনের জন্য যথাযথ প্র্যাকটিস ও রিয়েল ওয়ার্ল্ড অভিজ্ঞতা গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা। ফ্রিল্যান্সিং রাতারাতি ধনী হওয়ার পথ নয়। এটি কঠোর পরিশ্রম, ধৈর্য ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সফলতার পথ তৈরি করে। যেকোনো কোর্সে ভর্তি হওয়ার আগে প্রতিষ্ঠানটির সম্পর্কে বিস্তারিত রিভিউ ও পূর্ববর্তী শিক্ষার্থীদের সরাসরি অভিজ্ঞতা জানা উচিত।

সচেতন নাগরিকদের পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং খাতে প্রতারণা রোধে সরকারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। ফ্রিল্যান্সিং আগামীর সম্ভাবনা কে নতুন রুপ দিবে। এতে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। যা বর্তমানের তুলনায় দ্বিগুণ থেকে চারগুণ ও ছাড়িয়ে যেতে পারে। এই ক্ষেত্রে সরকারের উচিত ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে কিছু যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা তার মাঝে উল্লেখযোগ্য,

প্রতারক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করা। সরকারি ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করা। কোর্সের মান নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা। তরুণদের প্রকৃত ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে সহায়তা করা। সচেতনতা বৃদ্ধি করতে সরকারি পর্যায়ে ক্যাম্পেইন চালানো। প্রতারণার শিকারদের সহায়তা করার জন্য হেল্পলাইন ও আইনি সহায়তা প্রদান। এই ক্ষেত্রে নতুন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য কিছু পরামর্শ হলো: সঠিকভাবে গবেষণা করুন, কোথা থেকে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন এবং কিভাবে কাজ শিখছেন, তা ভালোভাবে যাচাই করুন।

বিনামূল্যে শেখার প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করুন, অনেক মানসম্পন্ন ও বিনামূল্যের প্রশিক্ষণ রয়েছে, সেগুলো কাজে লাগান। নেটওয়ার্ক তৈরি করুন, সফল ফ্রিল্যান্সারদের সাথে যোগাযোগ করুন এবং তাদের কাছ থেকে দিকনির্দেশনা নিন। ধৈর্য ধরুন, ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হতে সময় লাগে, তাই ধৈর্য ধরে কঠোর পরিশ্রম করুন। প্রথম দিকে ছোট ছোট কাজ নিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করুন, বড় প্রকল্পের দিকে না গিয়ে শুরুতে ছোট ছোট কাজের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা বাড়ান। সর্বপুরি বলা যায়, ফ্রিল্যান্সিং একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র, তবে কিছু অসাধু চক্রের কারণে এটি অনেক তরুণের জন্য বিভ্রান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই তরুণদের উচিত সচেতনতা বৃদ্ধি করা, বাস্তবতা বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং দক্ষতা বৃদ্ধিতে মনোনিবেশ করা।

একই সঙ্গে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত প্রতারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। যারা সত্যিই ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার গড়তে চায়, তাদের ধৈর্য ধরে প্রকৃত দক্ষতা অর্জন করতে হবে এবং বাস্তব অভিজ্ঞতার মাধ্যমে ধাপে ধাপে সফলতার দিকে এগিয়ে যেতে হবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, ফেনী সরকারি কলেজ, ফেনী

সারাবাংলা/এএসজি

ডিজিটাল প্রযুক্তি ফ্রিল্যান্সিং মুক্তমত সফিউল ইসলাম