ফিলিস্তিনের মুসলিমরা কেন অবহেলিত? মুসলিম বিশ্বের করণীয় কী?
১২ এপ্রিল ২০২৫ ১৭:৪৪ | আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৫ ১৭:৪৫
ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরায়েলি দখলদারত্ব ও সামরিক আগ্রাসন আজ নতুন কিছু নয়। গত সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে এই ভূমি রক্তাক্ত হয়ে আসছে—নিরীহ নারী, শিশু ও সাধারণ মানুষের আর্তনাদ চাপা পড়ে যাচ্ছে গোলাবারুদের শব্দে। গাজা উপত্যকা পরিণত হয়েছে পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ, কিন্তু সবচেয়ে মানবিক বিপর্যস্ত অঞ্চলে। প্রতিদিন সেখানে ধ্বংস হচ্ছে ঘরবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, এমনকি জীবনের মৌলিক আশাও।
ইসরায়েল একবিংশ শতাব্দীর আধুনিক প্রযুক্তি ও শক্তিশালী সামরিক কৌশল নিয়ে আক্রমণ করছে। ড্রোন, স্যাটেলাইট নজরদারি, লেজার প্রযুক্তি ও অতি-উন্নত গোয়েন্দা ব্যবস্থার মাধ্যমে তারা ফিলিস্তিনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বারবার ভেঙে দিচ্ছে। অথচ ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ গড়ে উঠছে সীমিত সম্পদ, মূলত মানবিক ইচ্ছাশক্তি আর আত্মত্যাগের উপর ভর করে।
বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর অনেকেই এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে নীরব। মানবাধিকারের ধ্বজাধারীরা যখন রাজনৈতিক স্বার্থে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তখন নিষ্পেষিত মানুষের আর আশ্রয় থাকে না। আর মুসলিম বিশ্ব? তারা আবেগে ফেটে পড়লেও বাস্তবে কার্যকর কোনো ঐক্য বা অবস্থান নিতে পারেনি।
এই পরিস্থিতির পেছনে রয়েছে একটি অমোঘ সত্য
“ঝড় তখনই ওঠে, যখন বাতাসের ভারসাম্য নষ্ট হয়। সিংহ তখনই গর্জায়, যখন তার সামনে দুর্বল শিকার থাকে।” ফিলিস্তিন যদি রাজনৈতিক, সামরিক ও প্রযুক্তিগত দিক থেকে ইসরায়েলের সমান শক্তিশালী হতো, তবে ইসরায়েল কখনোই এমন আগ্রাসনের সাহস পেত না। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়—সম্মান আসে শক্তি থেকে, শ্রদ্ধা আসে প্রতিরোধের সক্ষমতা থেকে। আধিপত্য তখনই স্থায়ী হয়, যখন প্রতিপক্ষকে দুর্বল মনে করা হয়।
কেন এই দুর্বলতা?
মুসলিম বিশ্বের এই হতাশাজনক অবস্থার পেছনে অন্যতম মূল কারণ হলো—বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও গবেষণায় চরম পশ্চাদপদতা। একসময় যেসব মুসলিম মনীষী—ইবনে সিনা, আল খাওয়ারিজমি, ইবনে রুশ্দ, আল-ফারাবি—বিশ্ব সভ্যতাকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, আজ সেই উত্তরাধিকারীরা বৈশ্বিক জ্ঞান সমাজে প্রায় অদৃশ্য।
ধনী মুসলিম দেশগুলো—সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত কিংবা সংযুক্ত আরব আমিরাত—যেখানে তাদের বিশাল অর্থনৈতিক সম্পদকে ব্যবহার করে গবেষণা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও সামরিক উন্নয়নে নেতৃত্ব দিতে পারত, সেখানে তারা ব্যস্ত রয়েছে বিলাসবহুল প্রাসাদ নির্মাণ, ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বিলিয়ন ডলার ব্যয়, কিংবা পশ্চিমা জীবনধারার অনুকরণে।
একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ইসরায়েল তার মোট জিডিপির প্রায় ৫% গবেষণা ও উন্নয়নে (R&D) ব্যয় করে, যা বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ। বিপরীতে, অধিকাংশ মুসলিম রাষ্ট্র এই খাতে ১%-এরও কম বরাদ্দ দেয়। ফলত, ইসরায়েল উন্নত ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (Iron Dome), সাইবার প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় অগ্রসর হয়ে গেছে—যেখানে মুসলিম বিশ্ব এখনো বিদেশি প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল। এই বৈষম্য কেবল একটি সংখ্যাগত তফাৎ নয়, বরং তা ক্ষমতার পার্থক্য নির্দেশ করে।
একটি জাতি যতই আবেগপ্রবণ হোক না কেন, আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্র ও রাজনৈতিক মানচিত্রে টিকে থাকতে হলে তার প্রয়োজন জ্ঞানভিত্তিক শক্তি।
কাজেই, মুসলিম বিশ্ব যদি সত্যিই ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়াতে চায়, তবে প্রথম শর্ত হলো—বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও শিক্ষায় বিপ্লব ঘটানো। শুধু আবেগ নয়, প্রয়োজন প্রস্তুতি।
শুধু দোয়া নয়, চাই কর্ম
মুসলিম সমাজে এক ধরনের ভাবধারা ক্রমেই গভীর হচ্ছে—কেবল দোয়ার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হবে। যদিও আল্লাহর ওপর ভরসা ঈমানের একটি মৌলিক স্তম্ভ, তবে এই ভরসা কখনোই কর্মবিমুখতার বিকল্প নয়। ইসলামি ইতিহাস বলে দেয়, দোয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাস্তব পদক্ষেপই আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার পথ খুলে দেয়।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কেবল মসজিদে বসে দোয়া করেননি, বরং নিজ হাতে তরবারি তুলে যুদ্ধ করেছেন, কৌশল ঠিক করেছেন, সাহাবিদের প্রস্তুত করেছেন। বদর, ওহুদ কিংবা খন্দকের যুদ্ধ—প্রতিটিতেই তিনি দোয়ার পাশাপাশি গ্রহণ করেছিলেন সুনির্দিষ্ট রণনীতি ও বাস্তব পদক্ষেপ।
এই ঐতিহ্য অনুসরণ করেছিলেন সালাহউদ্দিন আইয়ুবি, যিনি ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ও সংহতির মাধ্যমে জেরুজালেম পুনরুদ্ধার করেন। ওসমানীয় খলিফারা সামরিক শক্তির পাশাপাশি বিজ্ঞান, শিক্ষা ও প্রশাসনিক দক্ষতায় নিজেদের গড়ে তুলেছিলেন বলেই দীর্ঘদিন দুনিয়ার নেতৃত্ব দিতে পেরেছেন। আন্দালুসের মুসলিমরা কেবল কিতাবে সীমাবদ্ধ থাকেনি, তারা জ্ঞানচর্চা, গবেষণা ও চিকিৎসায় অগ্রগতি ঘটিয়েছিল, যার ছায়া পড়ে ইউরোপের রেনেসাঁ যুগেও।
অথচ আজ? আজকের অনেক মুসলমান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দোয়ার পোস্ট শেয়ার করে দায়িত্ব শেষ করে ফেলেন। খুব কম মানুষই প্রকৃতপক্ষে অর্থ দিয়ে সাহায্য করেন, আন্দোলনে যুক্ত হন, কিংবা জনমত গঠনে ভূমিকা রাখেন। বাস্তবতা হলো—সোশ্যাল মিডিয়ায় “আমিন” কমেন্ট করলেই ফিলিস্তিন রক্ষা পাবে না।
দোয়ার প্রকৃত তাৎপর্য হলো—আত্মশুদ্ধি ও কর্মের অনুপ্রেরণা। এটি অলৌকিক কোনো শর্টকাট নয়, বরং প্রস্তুতির আগুনে জ্বলে উঠার আগমনবার্তা। আল্লাহ কেবল তাদেরই সাহায্য করেন, যারা নিজেদের সাহায্য করে—এ কথা পবিত্র কুরআনেও স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। সুতরাং, শুধু কাঁদা, দোয়া করা বা আবেগে আপ্লুত হওয়া নয়, সময় এসেছে জ্ঞানভিত্তিক কর্ম, ঐক্য এবং সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করার। কেবল তখনই দোয়া হবে কার্যকর, আর মুসলিম সমাজ আবার ফিরে পাবে তার মর্যাদা ও শক্তি।
অতীতের গৌরব
মধ্যযুগে মুসলিম বিশ্ব ছিল বিশ্ব সভ্যতার জ্ঞান, বিজ্ঞান, চিকিৎসা, যুদ্ধকৌশল এবং স্থাপত্যে এক অদ্বিতীয় পথপ্রদর্শক। যখন ইউরোপ অন্ধকার যুগে নিমজ্জিত ছিল, তখন মুসলিম বিশ্ব আলো ছড়াচ্ছিল শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে। বাগদাদের বাইতুল হিকমা, যেখানে বিজ্ঞান, গণিত, দর্শন, চিকিৎসা এবং প্রকৌশলের উপর গবেষণা হত, ছিল বিশ্বের প্রথম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি। কায়রোর আল-আজহার, বিশ্বের প্রাচীনতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে আজও তার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। স্পেনের কর্ডোভা বিশ্ববিদ্যালয়, যা একসময় বিশ্বের অন্যতম সেরা শিক্ষা কেন্দ্র ছিল, আজও সে যুগের গৌরবকে স্মরণ করে।
এছাড়া, মুসলিম সাম্রাজ্যগুলো—ওসমানীয় সাম্রাজ্য, তুর্কি সালাতানাত, মুঘল সাম্রাজ্য—এগুলো শুধু সামরিক শক্তির ওপর দাঁড়িয়ে ছিল না, বরং এসব সাম্রাজ্য তাদের বুদ্ধিমত্তা, প্রজ্ঞা, সাংস্কৃতিক উত্থান এবং সামরিক কৌশলে সমগ্র বিশ্বের কাছে শ্রদ্ধার্ঘ্য হয়ে উঠেছিল। তাদের যুদ্ধ কৌশল, প্রশাসনিক দক্ষতা, শিক্ষা, শিল্প, স্থাপত্য—সবই তাদের অসামান্য দূরদৃষ্টি এবং কৌশলের ফলস্বরূপ।
তবে আজ? আজ সেই অতীতের গৌরব শূন্যতার প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। যেখানে এক সময় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভিতরে নতুন তত্ত্বের জন্ম হত, সেখানে আজ শিক্ষা ব্যবস্থার মান অবক্ষয়ের দিকে। যেখানে এক সময় সামরিক কৌশল চর্চা হয়ে ছিল এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানে বিশ্বনেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেখানে আজ অনেক মুসলিম রাষ্ট্র কেবল অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে struggle করছে। উন্নত প্রযুক্তি, গবেষণায় পৃষ্ঠপোষকতা, এবং ইতিহাসের এই ঐতিহ্য আজ যেন আড়ালে চলে গেছে।
এখন প্রশ্ন উঠছে—মুসলিম বিশ্বের এই অতীতের গৌরব কোথায় হারিয়ে গেল? কি কারণে এই সমৃদ্ধির পরিমাণ হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়ে রইল নিঃসঙ্গতার মধ্যে? আজ মুসলিম বিশ্ব যদি তাদের সেই গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যকে পুনরুদ্ধার করতে চায়, তাহলে তাকে শুধু ঐতিহাসিক অবদান মনে রেখে নয়, বরং বর্তমানের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বিজ্ঞান, শিক্ষা, প্রযুক্তি, এবং সংস্কৃতির নতুন দিগন্তে পদার্পণ করতে হবে।
করণীয় কী?
মুসলিম বিশ্বের সামনে এখন আর আবেগ নয়, বাস্তব পদক্ষেপের সময় এসেছে। ফিলিস্তিনের নিপীড়ন প্রতিরোধ করতে এবং মুসলিম বিশ্বকে পুনরায় শক্তিশালী করতে প্রাথমিকভাবে নিচের পদক্ষেপগুলো নেওয়া জরুরি:
ঐক্য গঠন
মুসলিম দেশগুলোকে রাজনৈতিক মতপার্থক্য দূরে রেখে ফিলিস্তিন ইস্যুতে এক কণ্ঠে কথা বলতে হবে। যতটা সম্ভব ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা, জাতিগত ও রাজনৈতিক বিভাজনগুলোকে পাশ কাটিয়ে তাত্পর্যপূর্ণ প্রতিরোধ গড়ে তোলা প্রয়োজন। এককভাবে, কোনও দেশের জন্য ফিলিস্তিনের অবস্থা পরিবর্তন করা কঠিন, তবে একসাথে এই ইস্যুতে সোচ্চার হওয়া বিশ্বের অন্যান্য জাতির জন্য শক্তিশালী বার্তা হতে পারে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ
ভবিষ্যৎ প্রতিরক্ষা ও উন্নয়নের জন্য জরুরি ভিত্তিতে শিক্ষার প্রসার, গবেষণায় তহবিল এবং টেকসই উদ্ভাবনের ওপর জোর দিতে হবে। মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ ছাড়া সশস্ত্র প্রতিরোধ কিংবা ইসরায়েলের আধিপত্যের মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সাইবার নিরাপত্তা এবং আধুনিক অস্ত্র প্রযুক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।
আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক তৎপরতা
জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক আদালতে সক্রিয়ভাবে ইসরায়েলের দখলদারতাকে চ্যালেঞ্জ জানানো অত্যন্ত জরুরি। বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলোকে এই ইস্যুতে চাপ সৃষ্টি করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিনের জন্য ন্যায্যতার দাবি তুলতে হবে। বিশেষ করে, মুসলিম দেশের নেতাদের গবেষণার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য তুলে ধরা এবং আরও শাস্তিমূলক পদক্ষেপের জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো প্রয়োজন।
মানবিক সহায়তা ও পুনর্বাসন
কেবল বক্তৃতা নয়, বাস্তব সহায়তা পাঠানো জরুরি। ফিলিস্তিনে যেসব মানুষ আশ্রয়হীন, আহত বা ক্ষতিগ্রস্ত, তাদের সহায়তার জন্য তাত্ক্ষণিক মানবিক কার্যক্রম শুরু করা উচিত। আরো গুরুত্বপূর্ণ, পুনর্বাসন প্রকল্প শুরু করে দীর্ঘমেয়াদি সহায়তা প্রদান করা, যাতে সেখানকার জনগণ পুনরায় জীবিকার সন্ধান পায়।
সচেতনতা বৃদ্ধি
মিডিয়া ও সামাজিক মাধ্যমে নিরপেক্ষ তথ্য তুলে ধরা ও জনমত গঠন অপরিহার্য। ইসরায়েলের দখলদারি, গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বাস্তব চিত্রগুলো সঠিকভাবে বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছানো উচিত। একদিকে যেমন ফিলিস্তিনের প্রতি আন্তর্জাতিক সহানুভূতি তৈরি করতে হবে, তেমনি মুসলিম বিশ্বের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করে তাদের অংশগ্রহণের দিকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
বাণিজ্যিক অবরোধ
ইসরাইলের সকল পণ্য ও সেবা বর্জন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ। বৈশ্বিক বাণিজ্যিক অবরোধ ইসরায়েলকে অর্থনৈতিকভাবে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে এবং তাদের সমর্থনকারী দেশগুলোকে চাপের মধ্যে রাখবে।
সামরিক প্রস্তুতি
মুসলিম বিশ্বের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। আধুনিক ও শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং নিকটবর্তী মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা, একত্রে একটি শক্তিশালী প্রতিরোধ গঠন করতে সহায়তা করবে।
শিক্ষা ও গবেষণা
শিক্ষা ব্যবস্থার পুনর্গঠন এবং গবেষণায় বিনিয়োগ করার মাধ্যমে মুসলিম সমাজের মেধা ও সৃজনশীলতাকে কাজে লাগানো যেতে পারে। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং মানবিক গবেষণার ক্ষেত্রে বিনিয়োগ মুসলিম বিশ্বের দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থ রক্ষায় সহায়তা করবে এবং ইসলামিক নলেজ ও প্রযুক্তিতে শক্তি বৃদ্ধি করবে।
ফিলিস্তিন ইস্যু মানবতা ও ন্যায়ের লড়াই, যেখানে জাতিগত এবং ধর্মীয় বিভাজন অতিক্রম করে একটি সমগ্র বিশ্বের কাছে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে। কিন্তু এই লড়াই কেবল আবেগ দিয়ে নয়, শক্তি, ঐক্য ও প্রজ্ঞা দিয়ে জিততে হবে। মুসলিম বিশ্ব যদি সত্যিকার অর্থে ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়াতে চায়, তবে অতীতের গৌরবকে স্মরণ করে আজকের বাস্তবতায় বিজ্ঞান, শিক্ষা ও ঐক্যের ভিত্তিতে নতুন পথ নির্মাণ করতে হবে।
ইতিহাসে মুসলিমরা অনেক সময় তাদের জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা, কৌশল এবং ঐক্যের মাধ্যমে শক্তিশালী প্রতিপক্ষদের মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছে। আজও সেই শক্তি পুনরুদ্ধার সম্ভব, তবে তার জন্য প্রয়োজন মুসলিম জাতির সমন্বিত প্রয়াস, যেখানে প্রযুক্তি, শিক্ষা, কূটনীতি এবং মানবিক সহায়তার সমন্বয়ে এক নতুন সংগ্রাম শুরু হবে।
অথবা, যদি মুসলিম বিশ্ব কেবল আবেগের পথে হাঁটে এবং কোনও বাস্তব পদক্ষেপ না নেয়, তবে ইতিহাস আমাদের নীরবতা আর ব্যর্থতার জন্য কখনোই ক্ষমা করবে না। আজকের ফিলিস্তিন কেবল একটি আঞ্চলিক সংকট নয়, বরং মুসলিম বিশ্বের পরিচিতি ও ভবিষ্যতের পথের সংকেত। তাই, এখন সময়ের দাবী হচ্ছে: প্রতিটি মুসলমানকে, প্রতিটি মুসলিম রাষ্ট্রকে—এক কণ্ঠে, এক প্রচেষ্টায় কাজ করা।
শুধু রক্তের সম্পর্ক বা ঐতিহাসিক বোধ নয়, বরং প্রজ্ঞা ও পদক্ষেপের মাধ্যমে ফিলিস্তিনের মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। মুসলিম বিশ্বের ঐক্য এবং শক্তির উপর নির্ভর করে ভবিষ্যৎ—এটি একটি ক্রান্তিকাল, যা আমাদের অভিযানকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
লেখক: প্রভাষক, দর্শন বিভাগ, গাইবান্ধা সরকারি কলেজ
সারাবাংলা/এএসজি
ফিলিস্তিনের মুসলিমরা কেন অবহেলিত? মুক্তমত মুসলিম বিশ্বের করণীয় মো. মিজানুর রহমান