Monday 14 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইংলিশ মিডিয়াম: শিক্ষা ব্যবস্থায় বিষফোঁড়া

মনোয়ার পারভেজ
১৩ এপ্রিল ২০২৫ ১৪:২৫

ভাষার কথা প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন, ‘মনে আছে বহুকাল পূর্বে যখন বলিয়াছিলাম বাঙালির শিক্ষা বাংলা ভাষার যোগেই হওয়া উচিত তখন বিস্তর শিক্ষিত বাঙালি আমার সঙ্গে যে কেবল মতে মেলেন নাই তা নয় তারা রাগ করিয়াছিলেন। অথচ এ জাতীয় মতের অনৈক্য ফৌজদারি দণ্ডবিধির মধ্যে পড়ে না। আসল কথা, যারা ইংরাজি শিখিয়া মানুষ হইয়াছেন, তারা বাংলা শিখিয়া মানুষ হইবার প্রস্তাব শুনিলেই যে উদ্ধত হইয়া ওঠেন, মূলে তার অহংকার।’ রবীন্দ্রনাথ খুব একটা ভুল লেখেন নি, সত্যি কথাই বলেছেন।

বিজ্ঞাপন

বর্তমান বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে সবচেয়ে প্রধান বিষফোঁড়া হচ্ছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল গুলোর ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা ব্যবস্থা। এটা আমাদের দেশের নিজস্ব ভাষা শিক্ষায় ব্যাপক ধ্বসের সৃষ্টির কারণ হয়ে দাড়াচ্ছে। দেশের কতিপয় উচ্চ শ্রেনির অভিভাবকদের বর্তমানে দেখা যাচ্ছে তাদের সন্তানদের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়াশোনা করানোর প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারপর ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের অধিকাংশ শিক্ষার্থীরাই দেখা যায় ভালোভাবে বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারেনা ! এটা বাঙালি জাতি হিসাবে আমাদের জন্য লজ্জার বিষয়। অভিভাবকেরা দেশে বসে নিজস্ব ভাষায় শিক্ষা না দিয়ে অন্য ভাষায় শিক্ষা দেওয়ার মধ্যে কি ফায়দা খোঁজে পাচ্ছেন আমার বুঝে আসেনা। এটা মানছি যে বিশ্ব শিক্ষা ব্যবস্থায় ও চাকরির বাজারে ইংরেজি শিক্ষার গুরুত্ব অনেক। তাই বলে নিজের ভাষা শিক্ষার থেকে অন্য ভাষায় শিক্ষা গ্রহণের গুরুত্ব বেশি হয়ে গেল? নিজস্ব ভাষার শিক্ষা বাদ দিয়ে অন্য শিক্ষায় শিক্ষিত করে সন্তানদের হাসির খোরাক বানাচ্ছেন না তো? বইমেলায় অনেক সময় দেখা যায় এসব শিক্ষার্থীরা ইংরেজি বই কিনতে আসে। তখন সাংবাদিকেরা তাদের প্রশ্ন করলে তারা বাংলায় দুটো কথা বলতে পারেনা। এই নিয়ে তখন সারাদেশের মানুষ এসব শিক্ষার্থীদের নিয়ে হাসাহাসি করেন। এই হাসাহাসি করাটাই স্বাভাবিক। একদিন তো দেখলাম পহেলা বৈশাখে বাংলা নববর্ষ উদযাপনে আসা কিছু ইংলিশ মিডিয়ামের শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের সামনে বাংলায় কিছুই বলতে পারল না অথচ ইংরেজিতে অনর্গল কথা বলে গেল। এই প্রতিবেদনটা দেখার পর আমি লজ্জা পেয়েছিলাম। আমার মনে হয় এই লজ্জা শুধু আমি না সারাদেশের মানুষও পেয়েছে। এমনকি বায়ান্ন সালে ভাষার জন্য যারা জীবন দিয়েছিলো তারা যদি বেঁচে থাকতো তাহলে এটা দেখে তারা আত্মহত্যা করতো ! আফসোস আমাদের সোনার ছেলেরা ভাষা শহীদদের মর্যাদা রক্ষায় আজ ব্যর্থ। নিজস্ব ভাষার শিক্ষা গ্রহণ না করে বা মর্যাদা না দিয়ে অন্য ভাষায় শিক্ষা গ্রহণ করে কোনো জাতি উন্নতি সাধন করতে পারবেনা। এমনকি ব্যক্তিরও উন্নতি হবেনা। সুতরাং দেশের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল গুলোর ইংরেজি শিক্ষা নিয়ে এখনই আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিন্তা করা উচিত। সময় থাকতে এখনই এদের লাগাম টেনে ধরতে হবে শিক্ষা ব্যবস্থায় ভাষা শিক্ষার এই বিষফোঁড়াদের। নয়তো বিষফোঁড়া গলে পচে ইনফেকশন ধরতে পারে। কেননা এই ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের এই ইংরেজি শিক্ষা নিয়ে আমার সংশয় হয়।

বিজ্ঞাপন

দেশের বাংলা মিডিয়ামে বিদ্যালয়ে যারা পড়াশোনা করেন তারা কি ইংরেজি শিক্ষায় কোনো দিক থেকে পিছিয়ে আছে নাকি? তারাও তো ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণ করছেন। কই তাদের তো ইংরেজি শিক্ষায় কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তারাও তো চাকরি বাজারে ইংরেজির যোগ্যতা অর্জন করতেছেন। তাহলে নিজস্ব ভাষা বাদ দিয়ে অন্য ভাষায় শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে কেন? আগে নিজের ভাষা ভালোভাবে শিখতে হয় তারপর পৃথিবীর অন্য ভাষা। অথচ বাংলাদেশে থেকে বাংলা ভাষাকে চর্চা না করে ইংরেজি ভাষায় পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীরা কথায় কথায় ইংরেজিতে কথা বলে নিজেদেরকে অহংকারে ভাসিয়ে রাখেন। যেখানে হওয়া উচিত ছিল শুদ্ধ বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারাটা তাদের অহংকার। সুতরাং দেশের ভাষার মান রক্ষার্থে আমাদের অভিভাবকদের এই বিষয়ে সচেতনতা হওয়া অতীব প্রয়োজন। আর নয়তো এসব ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল গুলোতে অন্ততপক্ষে শিক্ষার্থীদের বাংলা চর্চার জন্য বাংলা বিষয়টি রাখা যেতে পারে। এতে অন্যান্য সকল বিষয় শিক্ষার্থীরা ইংরেজিতেই পড়ুক নিজের ভাষা চর্চা রাখার জন্য বাংলা বিষয়েও চর্চা থাকবে। সাথে পরিবারের মধ্যেও বাংলা চর্চা অব্যহত রাখাটা জরুরি। এমনকি শিক্ষায় মাতৃভাষার গুরুত্ব নিয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতামত হচ্ছে ‘শিক্ষায় মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধ স্বরূপ।’ কেননা মাতৃদুগ্ধ যেমন একটি শিশুর জন্য সবচেয়ে পুষ্টিকর, তেমনি বিদ্যাশিক্ষার ক্ষেত্রেও মাতৃভাষা সর্বোত্তম মাধ্যম।

লেখক: কলামিস্ট

সারাবাংলা/এএসজি

ইংলিশ মিডিয়াম ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল মনোয়ার পারভেজ মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর