Wednesday 15 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এবার হবে ‘ডু অর ডাই’ আন্দোলন


১৮ জানুয়ারি ২০১৮ ১০:৫৫ | আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৮ ২২:১৬

চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করার দাবিতে রাজপথে আন্দোলন চলে আসছে গত ৫ বছর ধরে। কখনো রাজপথে সহিংস কর্মসূচি কখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন এ সবই হয়েছে সারাবছর। দেশের লাখো শিক্ষিত যুবকদের প্রত্যাশা ও ন্যায্যতা বিবেচনায় জাতীয় সংসদেও প্রস্তাব উঠেছে। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সরকার কর্তাব্যক্তিরা। তারপরও দাবি পূরণ হয়নি।

দাবি আদায়ে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এখনো চলছে অবস্থান ও অনশন কর্মসূচি। পরিসর ক্ষুদ্র। কিন্তু সেখান থেকেই ছক কষা হচ্ছে বৃহত্তর আন্দোলনের। যে আন্দোলন হবে ‘ডু অর ডাই’। লাখো শিক্ষিত তরুণের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট এ আন্দোলন আসলে কোন দিকে যাচ্ছে— সারাবাংলার সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট মেসবাহ শিমুলের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে সে কথাই জানালেন মো. ইমতিয়াজ হোসাইন। যিনি এ আন্দোলনের প্রথম উদ্যোক্তা।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা : আন্দোলনের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে বলুন?

ইমতিয়াজ : ২০১১ সালের কোনো একদিন পাবলিক লাইব্রেরিতে পড়ছিলাম। একাডেমিক লেখাপড়ার ফাঁকে পত্রিকার একটি বিজ্ঞাপনে চোখ আটকে যায়। পাবলিক সার্ভিস কমিশন-পিএসসি’র ওই বিজ্ঞাপনে ফার্স্ট ক্লাস একটি চাকরির জন্য আবেদন আহ্বান করা হয়েছে। বয়স সর্বোচ্চ ৩০ বছর। চিন্তা শুরু হলো। আমি সেদিন থেকে বাইরের দেশগুলোর নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করলাম। দেখলাম কোনো দেশেই এমন নিয়ম নেই। সেখানে চাকরি থেকে অবসরের সময় আছে। কিন্তু প্রবেশের ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো শর্ত নেই।

সারাবাংলা : বয়স নির্ধারণ করা থাকলে সমস্যা কোথায়?

ইমতিয়াজ : সমস্যাটা সাদা চোখেই দেখা যায়। একটু খেয়াল করে দেখুন। পৃথিবীর যে দেশগুলোয় চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে বয়স নির্ধারণ করা নেই সেখানে কিন্তু সেশন জ্যামও নেই। ছাত্র রাজনীতি নেই। পড়াশুনা শুরু করে কম বয়সেই। অথচ আমাদের দেশের এখনো সিংহভাগ শিশুর হাতেখড়ি হয় ৫ বছরের পরে। সেসব দেশে অল্প বয়সেই গ্রাজুয়েশন শেষ করে ফেলে। আর আমাদের দেশের ছেলে-মেয়েদের ২৭ থেকে ২৮ বছরে গিয়ে গ্রাজুয়েশন শেষ হয়। এরপর সরকারি চাকরির যে ঢিলে দশা। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, নিয়োগ পরীক্ষা, ভাইভা কিংবা অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষ করতে অনেক সময় লেগে যায়। তারপর এখন নতুন করে যোগ হয়েছে প্রশ্ন ফাঁস কিংবা নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণে অব্যবস্থাপণার জন্য পরীক্ষা বাতিল সব মিলিয়ে একজন শিক্ষার্থী নিজেকে চাকরির জন্য প্রস্তুত করার সময় পায় না।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা: তার মানে কি আপনি বলতে চাইছেন ৩৫ করার পেছনে আরও অনেক যৌক্তিক কারণ রয়েছে?

ইমতিয়াজ : নিশ্চয়ই। দেশ উন্নত হচ্ছে। এখন দেশের মানুষের ধ্যান-ধারণার উন্নয়ন প্রয়োজন। তা না হলে পুরনো অনেক অপ্রয়োজনীয় বিষয়কে আঁকড়ে ধরে থাকব আমরা। এ উপলব্ধিতা আমাদের নীতি নির্ধারকদের আগে প্রয়োজন।

সারাবাংলা : আন্দোলনের সূচনা করলেন কবে?

ইমতিয়াজ : বিষয়টি নিয়ে কয়েকদিন ভাবার পর আমি আমার বন্ধুমহলে বিষয়টি আলোচনা করলাম। তারাও এর যৌক্তিকতা ধরতে পারল। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় চাকরিতে প্রবেশের সর্বনিম্ন বয়স ৩৫ করার যৌক্তিকতা নিয়ে কিছু লিফলেট বিলি করলাম। দেখলাম অনেকেই বিষয়টিতে ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছেন। তারপর ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারির কোনো একদিন আমরা শাহবাগে মানববন্ধন করলাম। এবং তাতে বিপুল সাড়া পেলাম। সেই থেকে আন্দোলন শুরু হলো।

 

সারাবাংলা: এ পর্যন্ত আন্দোলনের চিত্র তুলে ধরতে বললে কোন তথ্যগুলো সামনে আনবেন?

ইমতিয়াজ: গত পাঁচ বছরে আমরা সারাদেশে অন্তত ৮০০টির মতো কর্মসূচি পালন করেছি। এরমধ্যে রাজধানীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে সারাদেশে বহুবার কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে টানা ৩৭ দিন অনশন কর্মসূচি পালন করেছি। সে সময় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু দাবি মানার আশ্বাস দিয়ে অনশন ভাঙিয়েছেন।

 

সারাবাংলা : আন্দোলনের ফলাফল কী হয়েছে?

ইমতিয়াজ : আমাদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির ২১তম বৈঠকে চাকুরির বয়স ৩২ করার ঘোষণা দেওয়া হয়। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ যখন স্পিকার ছিলেন তখন তিনি ৭১ বিধিতে আলোচনার সময় ৩৫ বছর করার কথা উল্লেখ করেন। এতে আমাদের উৎসাহ আরও বেড়ে যায়। আমরা আশাবাদী হতে থাকি। জাতীয় সংসদে ৫ বছরে অন্তত ১০০ বার বিষয়টি আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী পয়েন্ট অব অর্ডারে এ নিয়ে চারবার কথা বলেন।

সারাবাংলা : বিষয়টি পাশ হতে হলে জাতীয় সংসদের সদস্যদের সম্মতির প্রয়োজন রয়েছে আপনারা তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন কি না?

ইমতিয়াজ : এটা মূলত আন্দোলনের বিষয় নয়, এটি উপলব্ধির বিষয়। আমরা তাদের উপলব্ধিকে জাগিয়ে তুলতে অন্তত ২০০ সংসদ সদস্যের সঙ্গে কথা বলেছি। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীসহ অনেকের সঙ্গেই দেখা করেছি।

সারাবাংলা : সরকারের সবপর্যায়ে আপনারা কথা বলেছেন, তাদের রেসপন্স কেমন পেয়েছেন?

ইমতিয়াজ : একমাত্র অর্থমন্ত্রী ছাড়া সবাই আমাদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। তারা অনেকেই আমাদের পক্ষে বিভিন্ন সময় কথা বলেছেন। মূলত তারা এর যৌক্তিকতা বুঝতে সক্ষম হয়েছেন।

সারাবাংলা : এখন আপনাদের পরিকল্পনা কী?

ইমতিয়াজ : এখন আমরা একটা বড় ধরনের ধাক্কা দিতে চাই। আপনি দেখছেন বিশেষ কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত কোনো দাবিই আমরা মানি না।

সারাবাংলা : ‘ধাক্কা’ আর ‘বিশেষ পরিস্থিতি’ বলতে কী বোঝাতে চাইছেন?

ইমতিয়াজ : আমরা বেশ ক’দিন যাবত জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বসে আছি। এর কোনো ফলাফল নেই।

সারাবাংলা : আপনাদের অংশগ্রহণ তো কম?

ইমতিয়াজ : হ্যাঁ, কম। আমরা এখানে বসে আছি সারাদেশের লাখ লাখ শিক্ষিত যুবকদের জাগিয়ে তুলতে। যারা এখন রাজধানীতে আসার জন্য সংগঠিত হচ্ছে। আমরা রাজধানীতে একটা বৃহত কর্মসূচি পালন করতে চাই। সেটা অবশ্যই নিয়মতান্ত্রিক হবে। তবে এখনই সে বিষয়ে বলা যাচ্ছে না।

সারাবাংলা : সে জন্য কি আপনার প্রস্তুত?

ইমতিয়াজ : হ্যাঁ, আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। সারাদেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কমিটি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কমিটি হয়েছে। শনিবার নাগাদ অনেকেই ঢাকামুখী হবে। এবং হয়তো ২৫ জানুয়ারি নাগাদ আমাদের আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে যাবে।

সারাবাংলা : আপনি এ আন্দোলনের সঙ্গে শুরু থেকেই লেগে আছেন, আপনার তো একটা ব্যক্তিগত জীবন রয়েছে।

ইমতিয়াজ : জ্বি। আসলে ৫ বছর আগে যখন শুরু করি। তখন ছাত্র ছিলাম। কিন্তু এখন এটাকে একটা জায়গায় নিয়ে যাওয়া আমার জীবনের একটি ব্রত হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর জন্য আমি ব্যক্তিগত জীবনে অনেক বিসর্জন দিয়েছি। এ পর্যন্ত ১১ বার পুলিশের হাতে আটক হয়েছি। কিন্তু তাতেও দুঃখ থাকবে না। কেননা এর সঙ্গে এ দেশের অসংখ্য শিক্ষিত তরুণ ভাগ্য জড়িত।

সারাবাংলা : যতটুকু মনে এটি একটি অরাজনৈতিক আন্দোলন। এটি চালিয়ে নিতে নিশ্চয়ই অনেক কাঠখড় পোহাতে হচ্ছে।

ইমতিয়াজ : ঠিকই ধরেছেন আপনি। একটি অরাজনৈতিক আন্দোলন চালিয়ে নেওয়া যে কত কঠিন তা যারা করে তারাই কেবল বোঝে। নানাজনে মিশে গিয়ে নানাভাবে এটাকে প্রভাবিত করতে চায়। আর্থিক ক্ষতি তো রয়েছেই। এটি বেকারদের আন্দোলন। আমি একটি উন্নয়ন সংস্থায় কাজ করি। কোনোমতে এটাকে টেনে নিচ্ছি। এখন একটা ফলাফল চাই।

সারাবাংলা: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

ইমতিয়াজ : আপনাকেও ধন্যবাদ।

সারাবাংলা/এমইউএস/একে/আইজেকে

 

বিজ্ঞাপন

শুটিং খরচ কমালো এফডিসি
১৫ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:০২

আরো

সম্পর্কিত খবর