Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তিনটি গুণে বিশ্বসেরা ব্যাংকক হাসপাতাল


২২ এপ্রিল ২০১৯ ২০:৪০

দেশের বাহিরে উন্নত চিকিৎসার প্রসঙ্গে এলে আমাদের চোখে প্রথম যে আস্থার নাম ভেসে ওঠে তা হলো ব্যাংকক হাসপাতাল। বহুল পরিচিত থাইল্যান্ডের এই হাসপাতালটিতে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত একমাত্র বাংলাদেশি ডা. শক্তি রঞ্জন পাল। সম্প্রতি তার সাক্ষাতকার নেন সারাবাংলার স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট জাকিয়া আহমেদ। ডা. শক্তি রঞ্জন পাল জানালেন তার অভিজ্ঞতার কথা। জানালেন তার মতে কেমন হওয়া উচিত বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা।

ডা. শক্তি রঞ্জন পাল বলেন, বিদেশে চিকিৎসা নিতে এসে বাংলাদেশিরা মূলত ভাষাগত জটিলতায় পড়েন। কিন্তু ব্যাংকক হাসপাতালে ‘বাংলাদেশ মেডিকেল সার্ভিস’ নামে একটি আলাদা এরিয়া এবং কাউন্টার রয়েছে। যেখানে দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাভাষী চিকিৎসক এবং কর্মী। উদ্দেশ্য হলো, বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা যেন ভাষা জটিলতায় না পড়েন। এতে চিকিৎসা দিতেও হাসপাতালের সুবিধা হয়।

বিজ্ঞাপন

ব্যাংকক হাসপাতাল বিশ্বব্যাপী আস্থা অর্জন করেছে, এর পেছনে কোন কোন বিষয় বড় ভূমিকা রেখেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভালো চিকিৎসক, ভালো নার্সিং এবং উন্নত প্রযুক্তি। এই তিন মিলিয়েই একটি হাসপাতালকে বিশ্বমানের বলা হয়ে থাকে। ব্যাংকক হাসপাতালের ক্ষেত্রেও এই তিনের সমন্বয় হয়েছে। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকদেরও আধুনিক হতে হবে। চিকিৎসা শাস্ত্রে এবং প্রযুক্তি ব্যবহারে। টেকনিশিয়ান, ব্রাদার, নার্স সবাইকে আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে এগিয়ে নিতে হবে। কারণ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একজন রোগী ২৪ ঘণ্টা তাদের যত্নে থাকে। মনে রাখতে হবে, এটা একটা টিম ওয়ার্ক।

বিজ্ঞাপন

চিকিৎসা প্রযুক্তিতে ব্যাংকক হাসপাতালকে কেন অন্য হাসপাতালের চেয়ে আলাদা মনে করা হয়- জানতে চাইলে ডা. শক্তি রঞ্জন পাল বলেন, সিটি স্ক্যান, এমআরআই, পেটি-সিটির মতো টপ টেকনোলজি রয়েছে ব্যাংকক হাসপাতালে। এই হাসপাতালকে বলা হয়, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও চীনের ৪৬টি হাসপাতালের ‘হেড কোয়ার্টার’।

উদাহারণ হিসেবে বলা যায়, এখানে হৃদরোগ নির্ণয়ে সিটি এনজিওগ্রামের জন্য রয়েছে ২৫৬-স্লাইস কার্ডিয়াক সিটি মেশিন। ব্যাংকক হাসপাতালের স্পেশালিটি হচ্ছে, অল আরটারি গ্রাফট। হার্টের বাইপাস সার্জারিতে সাধারণত পা থেকে ভেইন নিয়ে হার্টে লাগিয়ে দেওয়া হয়। সেগুলো ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে আবার বন্ধ হয়ে যায়। কারণ পায়ের ভেইন হার্টের সাথে ভালো ম্যাচ করে না। তবে বুকের বা পাকস্থলির কিছু আরটারি আছে, যেগুলো তুলনামূলক বেশি ভালো। সেগুলো নেওয়াও খুব কঠিন, এর জন্য আলাদা প্রযুক্তির প্রয়োজন হয়। বুকের বা পাকস্থলির আর্টারি নিয়ে হৃদপিণ্ডে লাগিয়ে দিলে ২০ থেকে ২৫ বছর নিশ্চিন্ত। আরেকটি স্পেশালিটি হচ্ছে হাইব্রিড ওপিডি। হৃদপিণ্ডের পাশাপাশি যদি কারও আরেকটি সমস্যা থাকে, তাদের ক্ষেত্রে একই সময়ে দু’টি অস্ত্রোপচার করার সুযোগ রয়েছে।

তিনি বলেন, এখানকার ক্যান্সারের ডায়াগনসিস পদ্ধতি উন্নত মানের। কমন টেস্টে যখন ক্যান্সার ধরা পরে না, তখন শতভাগ নিশ্চিত হতে এখানে ব্যবহার করা হয় চতুর্থ প্রজন্মের পেট-সিটি যা থাইল্যান্ডের কেবল এই হাসপাতালেই রয়েছে। পেট-সিটির মাধ্যমে কোথায় এবং কোন ধরনের ক্যান্সার তা নির্ণয় করা হয়।

ক্যান্সার যদি সার্জিকাল স্টেজে থাকে, তাহলে কেমো এবং রেডিয়েশনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে সার্জারি করা হয়। রেডিয়েশনের জন্য ব্যবহার করা হয়, সর্বাধুনিক প্রযুক্তি হল ভেরিয়েন-এজ। এর বিশেষত্ব হচ্ছে, টিউমার যে আকৃতিরই হোক না কেন প্রোগ্রামের মাধ্যমে শুধুমাত্র টিউমারের টিস্যুকেই ঠিক করবে, পাশের ভালো টিস্যুগুলোর কোনো ক্ষতি হবে না। এ জন্য লিনাক দিয়ে রেডিয়েশন দিলে যেটা ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ লাগে সেটা ভেরিয়ন-এজ দিয়ে ১ থেকে ৩ দিনে শেষ করা যায়। এছাড়া টার্গেট থেরাপি, ইউরো থেরাপি, জেনেটিক থেরাপিসহ সব উন্নত মানের চিকিৎসা সেবা রয়েছে, বলেন ডা. শক্তি রঞ্জন পাল।

তিনি আরও বলেন, অর্থপেডিক্স এবং নিউরো সার্জারিতেও ব্যাংকক হাসপাতালের সুনাম রয়েছে। এখানে চেষ্টা থাকে যত কম কেটে অপারেশন করা যায়। হাঁটু বা জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট করা হলে ২৫ থেকে ৩০ বছরের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়। নিউরোর ক্ষেত্রে ভেরিয়ান-এজ ব্যবহার করে টিউমার অপারেশন করা হয়। টিউমার যদি চারটিও থাকে, তবু নির্মূল করা সম্ভব। যেহেতু কোনো কাটাকাটি হচ্ছে না, তাই রোগী তিন দিনের মাথায় স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরে যেতে পারেন। এটা অনেকেই জানেন না।

বাংলাদেশ থেকে ব্যাংকক হাসপাতালে যোগাযোগ করার মাধ্যম কী হতে পারে সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে ধানমন্ডি, বনানী এবং চট্টগ্রামে ব্যাংকক হাসপাতালের অফিস রয়েছে। সেখান থেকে রোগীদের সব ধরনের তথ্য দিয়ে সহায়তা করা হয়। এই অফিসগুলোতে চিকিৎসক রয়েছেন, যারা ব্যাংককে কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের অধীনে চিকিৎসা নিতে হবে তা নির্ধারণ করে দেন। প্রয়োজন বোধে ব্যাংককের চিকিৎসকের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে রোগীর যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হয়।

বিশেষত কোনো রোগী ব্যাংককে এসে চিকিৎসা নিয়ে যাওয়ার পরে যদি পরামর্শের প্রয়োজন হয়, তখন রোগীকে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেওয়া হয়। চিকিৎসক টেলি মেডিসিনের মাধ্যমে ব্যবস্থাপত্র দেন। নতুন রোগীদের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ হেলথ প্রোফাইল করে নেওয়া হয়। রোগী অতীতে যত চিকিৎসা নিয়েছেন, যা যা টেস্ট করিয়েছেন সমস্ত নেওয়া হয়, বলেন ডা. শক্তি রঞ্জন পাল।

অর্থপেডিক্স টেলি মেডিসিন ডা. শক্তি রঞ্জন পাল নিউরো সার্জারি বাংলাদেশ মেডিকেল সার্ভিস ব্যাংকক হাসপাতাল সাক্ষাতকার

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর