দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ডিজিটাল যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছি
২৩ জুন ২০২১ ১৫:০৫
বিপ্লব বড়ুয়া। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০তম জাতীয় সম্মেলনে দলের উপদফতর সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করার পর দলের এই নির্ভরযোগ্য কর্মীকে ব্যক্তিগত সহকারী করে নেন। পরে দলের ২১তম জাতীয় কাউন্সিলে সাংগঠনিকভাবেও পদোন্নতি দিয়ে দফতর সম্পাদক হিসেবে মনোনীত করেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সাইবার যুদ্ধে আগামী দিনে দলের লক্ষ্য-প্রস্তুতি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন। তার সঙ্গে কথা বলেছেন সারাবাংলার সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট নৃপেন রায়। সেই কথোপকথনের উল্লেখযোগ্য অংশ এখানে তুলে ধরা হলো-
সারাবাংলা: আওয়ামী লীগ ৭২ বছর পেরিয়ে ৭৩ বছরে পদাপর্ণ করছে। বর্তমানে সময়ে মাঠের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি সাইবার দুনিয়া মোকাবিলা করাও একটি চ্যালেঞ্জ। এ ব্যাপারে আপনারা আগামী দিনগুলোকে সামনে রেখে কী ধরণের কর্মকাণ্ড বা পরিকল্পনা নিতে চান?
বিপ্লব বড়ুয়া: আমাদের দলের সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে বাঙালি জাতিকে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। সেই ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন দৃশ্যমান। প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরিকল্পনায় এই সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে অবকাঠামোগত যা যা করার সবকিছু করেছে। করোনার সময় আমরা যে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ডিজিটাল ওয়ালের ওপর কতটা নির্ভরশীল তার প্রমাণ আমরা পাচ্ছি।
২০০৮ সালে ঘোষিত এই ডিজিটাল বাংলাদেশের কর্মসূচিটি নেত্রী যদি বাস্তবায়ন না করতেন তাহলে করোনা মহামারির সময় আরও বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় হতে পারত। ডিজিটাল বাংলাদেশ মানবিক বিপর্যয়কে রক্ষা করেছে। আজকে সরকারের প্রতিটি কাজে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং সুশাসন পরিচালনায় ক্ষেত্রে দুর্নীতি হ্রাস করা কিংবা যেকোনো ধরনের অনিয়মকে রোধ করার জন্য ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। গত ৩ তারিখ অর্থমন্ত্রী বাজেট উত্থাপন করেছেন। সেই বাজেটে আমাদের অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘বাজেট ব্যয় করা একটি চ্যালেঞ্জ।’ বাজেটের অর্থ ব্যয় করার ক্ষেত্রে বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, ‘এবার এক ধরনের বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহার করা হবে। যাতে করে কোনো ধরণের বিলাসী কর্মকাণ্ড করা না যায়। বিলাসিতার কর্মকাণ্ডকে নিরুৎসাহিত করা ও দুর্নীতি কমানো এবং প্রতিটি ব্যয়ের যাতে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা থাকে সেজন্য বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহারের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
সারাবাংলা: সরকারি পর্যায়ে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার লক্ষ্য করা গেলেও দলীয় কর্মকাণ্ডে এর ব্যবহার খুব একটা নেই। দলীয় কর্মকাণ্ডে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে কোনো পদক্ষেপ কি নেওয়া হয়েছে?
বিপ্লব বডুয়া: আওয়ামী লীগ সরকার এই ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রতিদিনের কাজে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার সেভাবে হচ্ছে না। সংগঠন ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনায় যাতে তথ্যপযুক্তি ব্যবহার করা যায় সে চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে খুব দ্রুত প্রতিটি সাংগঠনিক নির্দেশনা তৃণমূলে পৌঁছানো যাবে। একইভাবে আমাদের সংগঠনের প্রচার-প্রচারণা যাতে সোশ্যাল মিডিয়ার আরও বেশি শক্তিশালী করা যায়, ব্যাপকভাবে প্রচার করা যায় সে ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। এছাড়া সংগঠনের সব ডাটা, বিভিন্ন কমিটি সংক্রান্ত তথ্য, গবেষণা কর্ম ও দলের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড যাতে একটা ডিজিটাল পদ্ধতির মধ্যে নিয়ে আসা যায় সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দুই বছর আগে এ ধরনের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে আমরা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে বসেছি। একইভাবে আমরা করোনার মধ্যেও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতারা ভার্চুয়ালি মতবিনিময় করেছেন। সেখানে সংগঠন পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা এবং সংগঠনের তথ্য সংরক্ষণ ইস্যুতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে আলোচনা হয়।
সারাবাংলা: ডিজিটাল দুনিয়া মানে নিউ মিডিয়ার যুগ? এই নিউ দুনিয়া এবং নিউ জেনারেশনদের নিয়ে কি কোনো চিন্তাভাবনা বা কৌশল রয়েছে?
বিপ্লব বড়ুয়া: একটা বিষয় হচ্ছে, আমাদের দলীয় প্রচার প্রচারণা। এখন নিউ মিডিয়া হলো- অনলাইন গণমাধ্যম ও সামাজিক গণমাধ্যম। প্রযুক্তি মানুষের দোরগোঁড়ায় পৌঁছানোর কারণে এখন প্রতিটি ঘরে স্মার্টফোন রয়েছে, ইন্টারনেট প্রযুক্তি রয়েছে। দেখা যাচ্ছে যে, প্রচলিত গণমাধ্যম সংবাদপত্র-টেলিভিশনের বাইরেও এখন অনলাইন নিউজ পোর্টাল কিংবা ফেসবুক, ইউটিউব, অন্যান্য অ্যাপসে মানুষজন তাদের মতামত জানাচ্ছে। তারা সেখান থেকে বিভিন্ন তথ্য নিচ্ছে এবং বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করছে। আমরা সেই জায়গাগুলোতে আমাদের সংগঠনের প্রচার-প্রচারণা বৃদ্ধি করতে চাই। কারণ দেখা গিয়েছে যে, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে এই সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে, গুজব ও অপপ্রচার করে যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে সেখানেই প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে সঠিক তথ্য দিয়ে মানুষের বিভ্রান্তি দূরও আমাদের একটি কাজ। আমরা এই জায়গায় একটি সংগঠিত কার্যক্রম চালাতে চাই।
সারাবাংলা: তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ডিজিটাল প্লাটফর্মে এনে সাইবার যুদ্ধে প্রস্তুতির ক্ষেত্রে কোনো চ্যালেঞ্জ আছে বলে মনে করছেন কি?
বিপ্লব বড়ুয়া: লোকাল কোনো ইস্যুতে, যেমন-একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকার যে বিভিন্ন ডেভলপমেন্ট বা উন্নয়ন প্রকল্প অথবা কর্মসূচি, কিংবা দলীয় কোনো প্রচারণা টার্গেট করে যদি দিতে চাই, তাহলে ওই এলাকার সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের ওই জায়গার নেতাকর্মীদের দরকার। আমরা সেই প্রস্তুতির কাজও করতে চাই। আমরা চিন্তা করেছি যে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, প্রচার সম্পাদক এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদকদের সঙ্গে অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের যারা এই চারটি পদে রয়েছেন তাদের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে। তারপর তৃণমূল পর্যায়ে সোশ্যাল মিডিয়া ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সবধরনের প্রোপাগাণ্ডার জবাব দেওয়া হবে। তার জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।
সারাবাংলা: ডিজিটাল দুনিয়ায় প্রস্তুতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আগামী দিনে কোনটা বলে মনে করছেন?
বিপ্লব বড়ুয়া: আমরা ইতোমধ্যেই বিভিন্ন ধাপে সে প্রস্তুতি শেষ করেছি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দফতর বিভাগ থেকে সারাদেশের দফতর-উপদফতর সম্পাদকদের কানেক্টের চেষ্টা করা হচ্ছে। সিআরআই আমাদের সহযোগিতা দিচ্ছে। তারা বিভিন্ন জায়গায় ওয়ার্কশপ পরিচালনা করে যাচ্ছে। দফতর ও উপদফতর সম্পাদকদের কম্পিউটার লিটারেসি ও প্রযুক্তি ব্যবহার শেখানো হচ্ছে। ২০২৩ সালে নির্বাচন হবে। আমরা মনে করি, নির্বাচনের আগেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তারা বড় ধরণের ভূমিকা রাখবে।
সারাবাংলা: সারাবাংলাকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
বিপ্লব বড়ুয়া: সারাবাংলাকেও ধন্যবাদ।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম
আওয়ামী লীগ ডিজিটাল বাংলাদেশ ডিজিটাল যুদ্ধের প্রস্তুতি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বিপ্লব বড়ুয়া