Wednesday 15 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘মা বললেন, তুমি যুদ্ধে যাও’


১৩ ডিসেম্বর ২০১৭ ২৩:১৩ | আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৮ ১৫:৪৪

রাফিয়া চৌধুরী, নিউজরুম এডিটর

“যুদ্ধ শেষ করেও ঘরে ফিরতে পারিনি। ৯ এপ্রিল যুদ্ধ শুরু করি তেলিয়াপাড়ায় (বর্তমানে শ্রীমঙ্গল)। যুদ্ধ শেষ হওয়ার প্রায় এক মাস পর ঘরে ফিরি। এরইমধ্যে বাসার লোকজন সবাই ধরে নিয়েছে, আমি আর নেই। হঠাৎ ৮ জানুয়ারি মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ বলে, ‘আমি ঢাকা যাব, তোমার বাসার ঠিকানা দাও। তোমার খবর পৌঁছে দিই।’ সেখানে মাঠে পড়ে থাকা একটা সিগারেটের প্যাকেট থেকে কাগজ বের করে শুধু লিখে দিলাম, ‘আমি ভালো আছি, এখনও বেঁচে আছি। ১১ জানুয়ারি ঢাকায় ফিরব।’ সেই চিঠি পেয়ে অনেকটা অবাকই হলেন আমার বাবা-মা।”

বিজ্ঞাপন

বিজয়ের ৪৬তম বর্ষে শ্যামলীর নিজ বাসভবনে যুদ্ধ দিনের স্মৃতি থেকে কথাগুলো বলছিলেন মেজর (অব.) ওয়াকার হাসান বীর প্রতীক

দেশমাতৃকার জন্য সেই মহান যুদ্ধের কথা বললেন এই বিজয়ী বীর, বললেন সেই সব স্বর্ণালী দিনের কথা। জানালেন তাঁর সহযাত্রী সাহসী যোদ্ধাদের কথা— যাঁদের কাছে দেশপ্রেম ও মাতৃভাষার মূল্যই ছিল সবচেয়ে বড়। যাঁরা জীবনবাজী রেখে দেশ স্বাধীন করতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। যুদ্ধজয়ী বীর মেজর (অব.) ওয়াকার হাসান বীর প্রতীক সারাবাংলার মুখোমুখি হলেন সেইসব উজ্জ্বল দিনের কথা নিয়ে।

বীর প্রতীক ওয়াকার হাসান বলেন, ‘১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ জয় পায়। কিন্তু পাকিস্তান সরকার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা দেয়নি। তখন থেকেই আন্দোলন শুরু হয়ে যায়। সে সময় আমি রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রথমবর্ষের ছাত্র। একটা সময় দেশে অচল অবস্থার সৃষ্টি হয়। সারাদেশে স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত বন্ধ ঘোষণা করা হয়। নন কো-অপারেশন মুভমেন্ট শুরু হয়।’

“বঙ্গবন্ধুর আদেশ ছিল প্রতিটি পদে পদে যেন পাকিস্তানিদের শায়েস্তা করা হয়— ‘আমরা পানিতে মারব, ভাতে মারব।’ ১৯৭১ সালের জানুয়ারি মাসে রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বন্ধ হয়। আমি আমার ঢাকার বাসায় চলে আসি। ৭ মার্চের সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ছিল ৭ কোটি মানুষের জন্য মহাবাণী। এই ভাষণের পর থেকে বাঙালি যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়।” বললেন ওয়াকার হাসান।

বিজ্ঞাপন

‘পাকিস্তানিরা তাদের সৈন্যও আনতে শুরু করে। ২৫ মার্চের সার্চলাইট অপারেশন পরিকল্পিতভাবেই করে তারা। সারা রাত তারা মানুষ খুন করে। সেই রাতে তারা শহীদ মিনার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে ছাত্রদের হত্যা করে এবং পুরান ঢাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর গণহত্যা চালায়। ২৬ মার্চ সারাদিন কারফিউ ছিল। ২৭ মার্চও কারফিউ ছিল। কিন্তু দুই ঘণ্টার জন্য কারফিউ তুলে নেওয়া হয়।’

সেই স্বর্ণালী দিনের কথা বলতে বলতে আবেগ আপ্লুত হয়ে গেলেন এই বীর সেনানী। তিনি বলতে থাকলেন, “আমার মা আমাকে বললেন, ‘চল বাইরে যাই।’ তিনি আমাকে নিয়ে গেলেন নিউ মার্কেট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। সেখানে গিয়ে দেখলাম, শহীদ মিনার ভেঙে ফেলা হয়েছে। যাদেরকে হত্যা করা হয়েছে তাদেরকে জগন্নাথ হলের মাঠে গণকবর দেওয়া হয়েছে। গণকবরও খুব ভাল করে দেয়নি। কোথাও হাত, কোথাও পা বের হয়ে আছে। মা আমাকে বলল, ‘তোমার এখন কী করা উচিত?’ আমি বললাম, ‘আমি যুদ্ধ যাব! আমার প্রতিশোধ নেওয়া উচিত।’ আমার মা বললেন, ‘এই কথাটাই শুনতে চাচ্ছিলাম।’ তিনি বললেন, ‘আমার তো দুইটা ছেলে। আমি দুইজনকে পাঠাতে পারব না। তুমি যুদ্ধে যাও। কারণ, তুমি পারবে যুদ্ধ করতে।’”

‘৪ এপ্রিল আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাই। সেখান থেকে সবাইকে নিয়ে তেলিয়াপাড়া গিয়ে সেকেন্ড ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগ দিই। সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট ইব্রাহীমের নেতৃত্বে আমাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ওই সময় যারা গিয়েছিল, তাদের মধ্যে শিক্ষিত ছেলের সংখ্যা ছিল কম। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল আরও কম। শিক্ষিত ছেলেদের কমান্ডের দায়িত্ব দেওয়া হয়। আমাদের বিশ দিনের মতো ট্রেনিং দেওয়া হয়। পাঁচজনকে সেকশন কমান্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে আমি একজন ছিলাম।’

ওয়াকার হাসান, “এপ্রিল মাসের ২৫ তারিখের দিকে আমরা প্রথম একটা অপারেশনে যায়। রাতে পাকিস্তানিরা টহল দিত। আমরা অ্যাম্বুশ করলাম। কিন্তু যেদিন আমরা ফাঁদ পাতলাম সেদিন তারা দেরি করে এল। আমরা কিছুটা চিন্তায় পড়ে গেলাম। আমাদের তথ্য কেউ ফাঁস করে দিল না কি? এগুলো ভাবতে ভাবতে কিছুক্ষণের মধ্যে তারা এল। আসার পর আমাদের মাইনগুলো ফুটল না। ‘তাদের গাড়ির নিচে মাইনগুলো পড়ল কিনা? মাইনগুলো কি খারাপ?’ নানারকম চিন্তা হয়। এরইমধ্যে বিকট শব্দ নিয়ে একটা গাড়ি বিষ্ফোরণ ঘটল। ওই হামলায় ৫৮জন পাকিস্তানি মারা গেল এবং কিছু পাকিস্তানি বন্দী হলো। সেটা আমার প্রথম সফল অপারেশন। সেই অপারেশন থেকে আমার মনে হয়েছিল, আমরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তত।”

সারাবাংলা/আরসি

বিজ্ঞাপন

শুটিং খরচ কমালো এফডিসি
১৫ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:০২

আরো

সম্পর্কিত খবর