Wednesday 21 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কালাদান বহুমুখি প্রকল্প: কতটুকু বিকল্প হতে পারে

খোকন দাস
২১ মে ২০২৫ ১৪:৪১

শিলিগুড়ি করিডোর ও বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে ভারত তার মূল ভূখণ্ড থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যে পণ্য সরবরাহে মিয়ানমারের উপর দিয়ে ‘কালাদান বহুমুখি প্রকল্পকে’ আবারো গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে। যদিও ২০২৪ সালের শুরুর দিকেও দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষ ভারতের উচ্চবিলাসী এই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত বলেই মনে করতো। এবং এতোদিন দিল্লীর কাছে কালাদান রুটের বিকল্প ছিল বাংলাদেশের দেয়া ট্রানজিট।

বিজ্ঞাপন

আরকানের সিতওয়ে বন্দর থেকে মিজোরামের মাধ্যমে সাতটি রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত হতে নেয়া প্রকল্পটির দুটো দিক আছে; একটি সড়ক পথ, অন্যটি অভ্যন্তরীণ নৌপথ। সড়ক পথের দৈর্ঘ হচ্ছে ৬৮মাইল আর অভ্যন্তরীণ নদী পথের দৈর্ঘ হচ্ছে ৯৮ মাইল। সড়ক পথের ৬৮ মাইলের মধ্যে কালাতোয়া থেকে জরিনপুর এই অংশের ২৬ মাইলের অংশ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কালাদান নদীর মুখে সিতওয়ে বন্দর ও নদীবন্দরের কাজ সম্পন্ন হলেও সড়ক পথের কাজ সম্পন্ন হয়নি।

বিজ্ঞাপন

উল্লিখিত সাতটি রাজ্যে পণ্য সরবরাহে ভারতের জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক রুট হচ্ছে বাংলাদেশের দেয়া ট্রানজিট। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক এখন তলানীতে। বিশেষ করে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে। শেখ হাসিনার পতনকে দিল্লী তাদের নিজেদের পতন মনে করেছে। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টা চীন সফরের সময় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্য নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন তাতে দিল্লী আরো ক্ষুব্ধ হয়েছে। তারা এতাটাই ক্ষুব্ধ হয়েছে যে, বাংলাদেশের মধ্যদিয়ে ট্রানজিট প্রকল্পে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নিয়েছে।

এদিকে শিলিগুড়ি করিডোর দিয়েও চীনের তরফে নিরাপত্তা ঝুঁকি মনে করছে ভারত। এইসব বিবেচনায় ভারত এখন নতুন করে কালাদান প্রকল্পের দিকে নজর দিচ্ছে। যে কারণে দেশটির রোড ট্রান্সপোর্ট এন্ড হাইয়ে বিভাগ মেঘালয়ের শিলং থেকে আসামের সিলচর পর্যন্ত হাইওয়ের কাজ দ্রুত শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বর্তমানে মিয়ানমারের যে পরিস্থিতি তাতে ওই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ এবং ওই রুট দিয়ে কতটুকু সুফল পাওয়া যাবে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। বিশেষ করে আরাকান রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিয়ে সৃষ্ট সংকট ওই প্রকল্প নিয়ে আশাবাদী হওয়ার সুযোগ আপাতত দেখা যাচ্ছে না।

ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় কলকাতা থেকে মিয়ানমার, মিয়ানমারের মাধ্যমে উত্তর-পূর্ব ভারতের নৌপথ ও সড়ক পড়ে পণ্য সরবরাহে ভারত ও মিয়ানমার সরকারের মধ্যে ২০০৮ সালে কালাদান মাল্টি মডেল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট (কেএমএমটিটিপি) এর চুক্তি সই হলেও দেশটিতে গৃহযুদ্ধের কারণে বার বার এই প্রকল্পের কাজ হোঁচট খেয়েছে।

২০২১ সালে মিলিটারি ক্যু-এর মাধ্যমে সামরিক জান্তার ক্ষমতা দখলের পর থেকে দেশটিতে গহযুদ্ধ চলছে। দেশটি মাত্র ২১ শতাংশ অঞ্চল সামরিক জান্তার নিযন্ত্রণে রয়েছে, বাকী অঞ্চল বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে। অন্যদিকে যে আরাকান রাজ্যে সিতওয়ে বন্দর অবস্থিত সেই আরকান রাজ্য এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণাধীন।

প্রকৃতিক সম্পদ ও ভূ-রাজনীতির কৌশলগত কারণে রাখাইন রাজ্যটি ভারত ও চীন উভয় দেশের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হচ্ছে। রোহিঙ্গা সংকটের কারণে বাংলাদেশও এখন ওই ভূ-রাজনীতির মধ্যে ঢুকে পড়েছে।

সিতওয়ের কালাদান বন্দর থেকে অল্প দূরেই চীন গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করছে; এই বন্দরের ৭০ শতাংশ মালিকানা রয়েছে চীনের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের হাতে। দক্ষিণ চীন সাগরের পরিবর্তে ভারত মহাসাগর হয়ে তেল আমদানিতে এই বন্দর ব্যবহার করবে চীন। একইসঙ্গে ১৭০০ কিলোমিটারের চীন মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডোরের গেটওয়ে হিসেবে বিবেচিত হবে এই বন্দর।

প্রধান উপদেষ্টা সাতটি রাজ্য নিয়ে মন্তব্য করেছেন তাতে দেশের অভ্যন্তরেও অনেকে সমালোচনা করেছেন; গভিরভাবে বিবেচনা করলে উপদেষ্টার ওই বক্তব্য বাস্তবসম্মত।

ওই সাত রাজ্যের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বাংলাদেশকে উপেক্ষা করার কোন সুযোগ নেই। বরং বাংলাদেশ পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে উভয় দেশই উপকৃত হতে পারে। কিন্তু এর জন্য দরকার প্রতিবেশিসুলভ মানসিকতা ও মর্যাদাসম্পন্ন কূটনৈতিক সম্পর্ক। কিন্তু ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরিতে বরাবরই একচোখা, তারা পারস্পরিক সম্পর্ক তৈরিতে সরকারের পরিবর্তে একটা বিশেষ দলের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরিতে আগ্রহী।

ভারত এখনো শেখ হাসিনার সঙ্গে সুর মিলিয়ে বাংলাদেশের বিরোধিতা করে যাচ্ছে তাতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সম্পর্ক উন্নয়ন অনেক জটিল হবে তা বুঝায় যায়।

ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে একতরফা যেসব ব্যবস্থা নিচ্ছে, তাতে কিছুটা ক্ষতি হলেও এই ক্ষতি শেষ পর্যন্ত পুষিয়ে নেওয়া যাবে, কিন্তু আখেরে ‘কালাদান প্রকল্প’ সাত রাজ্যের জন্য কতটুকু সুফল নিয়ে আসবে তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট

সারাবাংলা/জিএস/এএসজি

কালাদান বহুমুখি প্রকল্প খোকন দাস মত-দ্বিমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর