Saturday 24 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জনশক্তি প্রেরণ সেক্টর গুরুত্ব পাচ্ছে না কেন?

খোকন দাস
২৪ মে ২০২৫ ১৮:৩৪

জনশক্তি প্রেরণ খাতের সংগঠন বায়রার এক নেতাকে অন্য এজেন্সির মালিকরা মেরে শার্ট ছিড়ে ফেলেছেন, কোন মতে দৌড়ে ওই নেতা জীবন রক্ষা করেছেন। ওই নেতা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে যাতে সিন্ডিকেট না হয়, সবাই যাতে কর্মী পাঠাতে পারে সেই দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করতে চেয়েছেন। বিদেশে অবস্থানকারী মালয়েশিয়ার সিন্ডিকেটের হোতার অনুসারীরা আগে থেকেই সেখানে অবস্থান নিয়ে নেয় এবং ওই নেতাকে মারধর করে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। তাদের বক্তব্য হচ্ছে যারা সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সাংবাদিক সম্মেলন করতে চাইছেন তারা আগের বার সিন্ডিকেটে থেকে অনেক টাকা কামিয়েছেন। এখন সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে বলছেন। পরে অবশ্য দুই অংশের মধ্যে মিটমাট হয়ে যাওয়ার পর উভয়ে পৃথক সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

বিজ্ঞাপন

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত হওয়ার আলোচনা হওয়ার পর থেকে বায়রার সদস্যদের (কথিত সিন্ডিকেট বিরোধী) একাংশের বিরুদ্ধে আর এক অংশ (সিন্ডিকেটপন্থী) মুখোমুখি অবস্থানে আছে।

দেশে প্রতিদিন যে পরিমাণে ঘটনা ঘটছে তাতে এই ঘটনাটা অনেক তুচ্ছ মনে হবে, সংশ্লিষ্ট না হলে কেউ তেমন একটা আগ্রহ দেখাবেন না।

এর পর আরো দুইটা খবরের একটা হচ্ছে শেনজেন ভিসা প্রত্যাখ্যানের শীর্ষে আছে বাংলাদেশ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আরো একটা তথ্য দেখা গেছে আলুভর্তা খেয়ে জীবন ধারণ করে দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন মালয়েশিয়ার প্রবাসীরা।

কিন্তু যারা দেশের অর্থনীতি নিয়ে কাজ করেন এবং বিরাট বিপুল বেকারত্ব নিয়ে উদ্বিগ্ন তাদের কাছে এই খবরগুলো মোটেও ছোট খবর নয়।

রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের একটা অংশ এমন একটা সময় মারামারি করে একজন একজনের শার্ট ছিড়ে ফেলছেন যখন আমাদের বৈদেশিক কল্যাণ উপদেষ্টা কুয়ালালামপুর অবস্থান করছেন দেশটির শ্রমবাজারে কিভাবে কর্মী পাঠানো যায় সে বিষয়ে আলোচনার জন্য।

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার আবার উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে; এই বাজারকে কেন্দ্র করে পুরানো সিন্ডিকেটের হোতারা আবার সক্রিয় এমন খবর এই সেক্টরে ওপেন সিক্রেট। এই সিন্ডিকেটের লোকদের হাত অনেক লম্বা, সিন্ডিকেটের জন্য যে কোন পর্যায়ে ম্যানেজ করার ক্ষমতা তারা রাখেন – এমন কথাবার্তাও এই সেক্টরে আলোচিত।

এখানে উল্লেখ্য, মালয়েশিয়ার সিন্ডিকেট গঠিত হয় অদ্ভূত প্রক্রিয়ায়; দেশটিতে কর্মী নিয়োগ হয় সফটওয়্যারের মাধ্যমে, ওই সফটওয়্যারের কোম্পানি বেস্টিনেটের মালিক হচ্ছেন বাংলাদেশের বংশোদ্ভূত মালয়েশিয়ার নাগরিক দাতুক আমিন। ওই প্রান্তের সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দেন তিনি। তার কারণে মালয়েশিয়ার সরকার বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে কোন কোন এজেন্সি কর্মী পাঠাবে তা নির্ধারণ করার শর্ত আরোপ করে। তার সঙ্গে যোগসাজসে এই প্রান্তে সিন্ডিকেটের হোতারা সেই এজেন্সিগুলোর নাম ঠিক করেন। মালয়েশিয়া বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশ থেকে কর্মী নিয়ে থাকে, কিন্তু কোন দেশের ক্ষেত্রে এই অদ্ভূত শর্ত আরোপ করা হয় না। এই প্রক্রিয়ায় সর্বশেষ দেশটিতে কর্মী পাঠিয়ে ২২ হাজার কোটি টাকা সিন্ডিকেট সাধারণ কর্মীদের থেকে হাতিয়ে নিয়েছে এমন অভিযোগ উঠেছে।

বিজ্ঞাপন

এই সেক্টর সিন্ডিকেটমুক্ত হবে, অস্বাভাবিক অভিবাসন ব্যয় কমানো হবে, প্রবাসে কর্মীদের হয়রানি কমবে, কর্মী প্রেরণে দীর্ঘসূত্রিতা কমবে এই প্রত্যাশা অনেক দিনের। যে কারণে এবার অভিবাসী কর্মীদের নিয়ে কাজ করেন এমন ২৩টি সংগঠনের নেটওয়ার্ক শুরু থেকে এই প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সরকারকে তাগিদ দিয়ে আসছে।

অন্যদিকে সিন্ডিকেটের পক্ষের এজেন্সির নেতাদের বক্তব্য হচ্ছে; মালয়েশিয়া যে শর্ত দেবে সেই শর্ত মেনেই আমাদের কর্মী পাঠাতে হবে। তাদের শর্ত না মানলে আমরা কর্মী পাঠাতে পারবো না, আমাদের অনেক বেকার, যে করেই হোক আমাদের কর্মী পাঠাতে হবে। আমরা পিছিয়ে আসলে অন্যরা এই সুযোগ নেবে। তারা আরো বলেন, বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সির সংখ্যা অনেক বেশি, তাই তারা এজেন্সি ঠিক করে দেয়। রিসিভিং কান্ট্রি যদি শর্ত দেয়, এজেন্সি ঠিক করে দেয় আমাদের কি করার আছে?

বিগত সময়েও সিন্ডিকেটের পক্ষ থেকে এই একই যুক্তি দেওয়া হয়েছে এবং ওই সিন্ডিকেট গঠনের সঙ্গে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা যুক্ত ছিলেন।

সরকার কর্মী প্রতি ব্যয় ৭৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দিলেও শেষ পর্যন্ত অভিবাসন ব্যায় গিয়ে পৌঁছায় সাড়ে ৫ লাখ টাকায়। এছাড়া যেসব কোম্পানি বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়েছে তাদের অনেকেরই কর্মী নিয়োগের কোন সক্ষমতা ছিল না। যে কারণে অনেকে কর্মহীন অবস্থায় অর্ধাহারে আনাহারে মানবেতর জীবন যাপনে বাধ্য হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট অনেকে ধারণা করেছেন যে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের মতো মালয়েশিয়ার মার্কেটকে কেন্দ্র করে সিন্ডিকেট গঠন সম্ভব হবে না এবার। কেননা প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেশটির সরকার প্রধানের যে ব্যক্তিগত সম্পর্ক আছে তাতে সরকার চাইলে ওই অদ্ভূত পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব। এছাড়া এই সরকারের কেউ কর্মী প্রেরণের সঙ্গে যুক্ত নেই। কেননা, বাংলাদেশ ছাড়া যেসব দেশ থেকে মালয়েশিয়া কর্মী নিয়ে থাকে সেখানে এই ধরনের পদ্ধতি নেই।

যে কারণে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার উপর একধরনের নৈতিক চাপ ছিল। শ্রমবাজার উন্মুক্ত করার বিষয়ে আলোচনার জন্য মালয়েশিয়ায় যাওয়ার পর উপদেষ্টা আসিফ নজরুল যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে এই চাপ ফুটে উঠেছে। তিনি জানিয়েছেন মালয়েশিয়া সাকুর্লে একলাখ ২০ হাজার কর্মী নেবে, এবং সব রিক্রুটিং এজেন্সি যেন কর্মী পাঠাতে পারে সে ব্যাপারে মালয়েশিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।

যদিও সিন্ডিকেটের পরিবেশ তৈরির অংশ হিসেবে একশ্রেণির মিডিয়াকে দিয়ে এমন তথ্যও ছড়ানো হয়েছে যে, মালয়েশিয়া সাড়ে ১২ লাখ কর্মী নেবে, ফলে এতো বড় সুযোগ কোনভাবেই হাতছাড়া করা উচিত হবে না।

মালয়েশিয়ার কর্মীর চাহিদা যদি একলাখ ২০ হাজার হয় তাতে বাংলাদেশ সাকুল্যে কর্মী পাঠাতে পারবে কমবেশি ৬০ হাজার।

২.

মার্চ মাসে রমজানের ঈদকে সামনে রেখে বাংলাদেশে রেকর্ড পরিমাণে রেমিট্যান্স এসেছে, পরিমাণ ছিল ৩২৯ কোটি মার্কিন ডলার, ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে এই মাসেও হয়তো সে রকমই রেমিট্যান্স আসবে। এর মধ্যে ১৭ দিনে এসেছে ১৬১ কোটি মার্কিন ডলার।

রেমিট্যান্স নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের গর্বের কোন শেষ নেই। এতো লুটপাটের পরও দেশের অর্থনীতি যে এখনো টিকে আছে এর একমাত্র কারণ হচ্ছে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ। সরকার যে বিগত ৮ মাসে আদানির বকেয়া বিল পরিশোষ করেছে, কাতারের পাওনা সমুদয় টাকা দিয়ে দেয়েছে তার মূল শক্তি হচ্ছে এই রেমিট্যান্স। রেমিট্যন্স কিছুটা স্বস্তি দিলেও বিগত ৮ মাসে সরকারের জন্য বড় ধরনের চ্যালেন্স হয়ে উঠেছে বেকারত্ব, দেশে এখন বেকারের সংখ্যা কতো তার সঠিক কোন পরিসংখ্যান না থাকলেও এই বেকারত্বই এখন এই সরকারের সামনে ফ্রাংস্টাইন হয়ে উঠেছে। যে বিদেশি বিনিয়োগের গল্প শোনানো হয়েছে সেটা ইতিমধ্যে গল্প হয়ে গেছে। বিগত ৮ মাস ধরে যে সংস্কারের আয়োজন চলেছে বিভিন্ন সেক্টরে সেই সংস্কার কার্যক্রম দিন দিন বেকারদের মিছিলের সামনে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ছে। সরকারের পক্ষ থেকে এতোদিন আইএমএফের ঋণ না নোয়ার বিপ্লবী কথা শোনা গেলেও বাজেট সামনে রেখে ঋণের জন্য তাদের শর্তগুলো গিলতে শুরু করেছে, যার নেতিবাচক প্রভাব দীর্ঘমেয়াদে পড়তে পারে।

বিশাল বেকারত্বের চাপ কিছুটা কমানো ও বিদেশি মুদ্রার মজুদ বাড়াতে যে সেক্টর থেকে নগদে সুফল পাওয়া যেত সেই সেক্টর হচ্ছে জনশক্তি প্রেরণ খাত। বিগত আট মাস অনেক সময়, কিছু পদক্ষেপ নেয়া হলে এতো দিনে সরকার দৃঢ়তার সঙ্গে আইএমএফকে প্রত্যাখ্যান করতে পারতো, বেকার সমস্যার কিছুটা লাঘব হতো এবং বেকার যুবকদের একটা বিরাট অংশকে বিদেশে কাজের উপযুক্ত করা যেত।

কিন্তু বিভিন্ন সেক্টর নিয়ে সংস্কার কমিশন হলেও এই সেক্টর নিয়ে সরকার একেবারেই নিশ্চুপ, বেশ কয়েকজন দক্ষ সহযোগীসহ এই সেক্টর সম্পর্কে ধারণা আছে এমন একজনকে উপদেষ্টার দায়িত্ব দিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা যেত। এই সেক্টরের এমন কিছু সংস্কার কাজ আছে যা বাস্তবায়নে কোন বাজেটের প্রয়োজন নেই, কেবল কিছু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করলেই এই সেক্টর ঘুরে দাঁড়াতো। এখানে উল্লেখ্য যে, জুলাই অভ্যুত্থানের নতুন নতুন স্টেকহোল্ডার আমরা দেখছি, কিন্তু একটা বড় স্টেকহোল্ডার ছিল প্রবাসীরা। সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর যেভাবে কথাবার্ত শোনা গেছে তাতে মনে হয়েছে এই গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরের বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে সরকার অনেক দূর যাবে।

বিগত ৮ মাসে নতুন শ্রমবাজার খোলার কোন খবর আমাদের কাছে নেই, উপরন্তু শ্রমবাজার আরো সংকুচিত হয়ে এখন সৌদি আবরসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে আছে। তথ্যে দেখা যায় গত এক বছরে বৈশি^ক শ্রমবাজারে বাংলাদেশের কর্মী প্রেরণ কমেছে ৩০%। বিএমইটির তথ্য মতে ২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে কর্মী গেছে ১০ লাখ ১১ হাজার। এদের মধ্যে ৯৫ শতাংশ গেছে মাত্র পাঁচটি দেশে; সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, কাতার, সিঙ্গাপুর ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। এই সংখ্যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৩০ শতাংশ কম, ওই বছর কর্মী গেছে ১৩ লাখ ৭,৮৯০ জন। ওমান, বাহরাইনের মতো শ্রমবাজার বন্ধ রয়েছে, অন্যদিকে ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও কাতারের মতো দেশে কর্মী নিয়োগ কমে গেছে।

এই বন্ধ শ্রমবাজারগুলো চালু এবং চালু শ্রমবাজারের সমস্যা সমাধান এবং নতুন নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধান; বিশেষ করে ইউরোপের শ্রমবাজার অনুসন্ধানের বিষয়ে এই সরকারের দৃশ্যমান কোন উদোগ দেখা যাচ্ছে না।

ইউরোপে এখন ক্রমাগত দক্ষ আধা দক্ষ কর্মীর চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখানে কয়েকটা উদাহরণ দেয়া যেতে পারে _

• জার্মানি: জার্মানির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে ২০৪০ সাল পর্যন্ত দেশটিতে প্রতিবছর ২ লাখ ৮৮ হাজার করে দক্ষ প্রবাসী কর্মী লাগবে।

• ফ্রান্স: ২০৪০ সাল নাগাদ দেশটিতে আড়াই থেকে তিন লাখ দক্ষ প্রবাসী কর্মী লাগবে।

• ইতালি: চলতি বছরের জন্য ১ লাখ ৬৫ হাজার সিজনাল ভিসা ইস্যু করেছে, ২০২৪ সালে এই সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৫১ হাজার, ২০২৩ সালে ছিল ১ লাখ ৩৬ হাজার।

• রোমানিয়া: দেশটিতে বর্তমাতে দেড় লাখ প্রবাসী কর্মী কাজ করছে। চলতি বছরের জন্য এক লাখ কর্মী নিয়োগের কোটা ঘোষণা করেছে।

• ক্রোয়েশিয়া: দেশটিতে ৭০ হাজার কর্মী লাগবে, তারা নেপাল, ভারত ও ফিলিপাইন থেকে কর্মী নিয়ে থাকে। চলতি বছর নেপাল ও ভারতের জন্য যথাক্রমে ২৮ হাজার ও ১৪ হাজার ৭০০টি কর্মীর ভিসা ইস্যু করেছে।

জনসংখ্যা হ্রাস ও বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে পুরো ইউরোপ জুড়ে কর্মীর সংকট দেখা দিয়েছে। নেপালের মতো পিছিয়ে পড়া দেশ থেকে কর্মী যাওয়া অব্যাহত থাকলেও বাংলাদেশ ক্রমাগত পিছিয়ে পড়ছে।

ইউরোপে কর্মী প্রেরণ ২০২৪ সালে আগের বছরের তুলনায় ৫২ শতাংশ কমেছে। বিএমইটির তথ্যে দেখা যায়, ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের পর ২০২৪ সালে এসে বড় ধরনের পতন ঘটে। ২০২৩ সালে যেখানে ৪৬ হাজার ৪৫৫ জন কর্মী ইউরোপ গেছে সেখানে ২০২৪ সালে গেছে মাত্র ২২ হাজার ২৭১ জন।

রোমানিয়া আমাদের বড় বাজার ছিল, একশ্রেণির দুর্বৃত্তের অপতৎপরতা এবং দেশ থেকে যাওয়া কর্মীরা সে দেশে পৌঁছানোর পর পালিয়ে যাওয়ার কারণে দেশটির শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে গেছে। এই একই কারণে ক্রোয়েশিয়ার বাজারটাও বন্ধ হওয়ার পথে। ভূয়া ডকুমেন্টের চাপে ইটালির বাজারে সৃষ্ট স্থবিরতা এখনো কাটেনি।

এই সমস্যাগুলো দূর করার পাশাপাশি স্বল্প মেয়াদে ট্রেনিং ও ভাষা শিক্ষার উদ্যোগ নিলে এতো দিনে কয়েক লাখ বেকার যুবককে ইউরোপের বাজারের উপযুক্ত করে দক্ষ করা যেত। কেবল ইউরোপের জন্য নয়, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও এখন অদক্ষ কর্মীর পরিবর্তে দক্ষ, সেমি দক্ষ কর্মীর চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে, আমাদের কর্মীদের প্রস্তুত করা না হলে এই বাজারও ধীরে ধীরে হাতছাড়া হয়ে যাবে।

৩.

ঢাকা শহর এখন মিছিলের শহর, প্রতিদিন কোন না কোন দাবিতে মিছিল হচ্ছে। কোনভাবেই স্থিতিশীলতা ফিরছে না। এখানে ওখানে এখনো মব-সন্ত্রাস চলছে, প্রকাশ্য জনমভায় নারীদের নিয়ে অশালীন বক্তব্য দেয়া হয়েছে। এই অস্থিরতাও ইউরোপের শ্রমবাজরে আমাদের ভিসা রেশিও কমে যাওয়ার জন্য ভূমিকা রাখছে। বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি সেটা কেউ গ্রাহ্য করছে না।

এই বেকার সমস্যা সমাধানে আলো ফেলা ছাড়া কোন সেক্টরের কোন সংস্কারই যে আখেরি কাজে আসবে না ইতিমধ্যে সেই লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।

প্রশ্ন হচ্ছে ঘুরে ফিরে সিন্ডিকেটের হাতেই এই গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর জিম্মি হয়ে থাকবে?

বিদেশি কর্মরত এই দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সন্তানরা আলুভর্তা খেয়ে পরিবার ও সরকারকে সাপোর্ট করে যাচ্ছে তাদের সমস্যা সমাধান উপেক্ষিতই থেকে যাবে?

দেশের শ্রমজীবী মানুষের মতো প্রবাসের কর্মীদের কাছেও জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা অধরাই থেকে যাবে?

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট

সারাবাংলা/জিএস/এএসজি

খোকন দাস জনশক্তি মত-দ্বিমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর