কর্মক্ষেত্রে ক্ষমতা এবং কর্তৃত্বের প্রবাহ সাধারণত উপর থেকে নিচের দিকে প্রবাহিত হয়—প্রশাসনিক স্তরের কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, ম্যানেজাররা তাদের অধীনস্থ কর্মীদের তদারকি করেন, এবং অভিজ্ঞ জ্যেষ্ঠ কর্মীরা নতুনদের দিকনির্দেশনা দেন। এই চিত্রটিই কর্মস্থলের প্রথাগত কাঠামো হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু বাস্তবের চিত্র অনেক সময় এর থেকে ভিন্ন হয়, যেখানে ক্ষমতার প্রচলিত ধারণা উল্টে যায় এবং এক অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির জন্ম হয়। বর্তমানে কর্মক্ষেত্রের সংস্কৃতিতে একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা হিসেবে ‘উর্ধ্বমুখী বুলিং’ বা অধস্তন কর্মীদের দ্বারা জ্যেষ্ঠ কর্মীদের প্রতি নির্যাতনমূলক আচরণ লক্ষণীয়। এই অধস্তন কর্মীদের মধ্যে শুধু জুনিয়র কর্মীরাই নয়, অনেক ক্ষেত্রে সহায়ক বা সাপোর্ট স্টাফরাও অন্তর্ভুক্ত থাকেন। এটি এমন একটি গুরুতর সমস্যা যা কর্মক্ষেত্রের সুস্থ পরিবেশ এবং উৎপাদনশীলতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক উন্নয়নশীল দেশে, যেখানে প্রথাগতভাবে বয়স এবং অভিজ্ঞতাকে সম্মানের চোখে দেখা হয়, সেখানে জ্যেষ্ঠ কর্মচারীদের প্রতি জুনিয়র কর্মী অথবা সহায়ক কর্মীদের হেয় প্রতিপন্ন করা, পেছনে সমালোচনা করা, অথবা সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার মতো ঘটনাগুলি এক গভীর সাংগঠনিক ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি।
এরভিং গোফম্যান তার কালজয়ী নাট্যতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গিতে সমাজকে একটি বৃহৎ মঞ্চ হিসেবে কল্পনা করেছিলেন, যেখানে প্রতিটি ব্যক্তি তার নির্দিষ্ট চরিত্রে অভিনয় করে। এই মঞ্চে, কর্মক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠ কর্মচারীরা সাধারণত ‘নেতা’, ‘পরামর্শদাতা’ অথবা ‘অভিজ্ঞ দিকনির্দেশক’ এর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। তাদের প্রতি থাকে সম্মান, শ্রদ্ধা এবং নির্ভরতার এক অদৃশ্য প্রত্যাশা। কিন্তু যখন অফিসের সংস্কৃতি বিকৃত হয়—যেমন গোষ্ঠীবাজি, অভ্যন্তরীণ প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষাক্ততা, অথবা কার্যকর কর্তৃপক্ষের অনুপস্থিতি—তখন গোফম্যানের ভাষায় এক ‘‘পার্থক্যপূর্ণ স্ক্রিপ্ট’’ তৈরি হয়। এই পরিস্থিতিতে, জুনিয়র কর্মী থেকে শুরু করে সহায়ক কর্মীরা পর্যন্ত জ্যেষ্ঠদের প্রচলিত ভূমিকা বা ‘চরিত্র’ কেড়ে নিয়ে নিজেরাই মঞ্চের কেন্দ্র দখল করতে চায়। এটি একটি সামাজিক এবং সাংগঠনিক বিপর্যয়, যেখানে প্রতিষ্ঠিত ক্ষমতার বিন্যাস ভেঙে পড়ে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, যেখানে সাংস্কৃতিকভাবে বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ একটি অলঙ্ঘনীয় সামাজিক নিয়ম হিসেবে পরিগণিত, সেখানে উর্ধ্বমুখী বুলিং এক ধরনের গভীর সাংগঠনিক বৈপরীত্যের জন্ম দেয়। আধুনিক অফিসগুলোতে, বিশেষত বেসরকারি খাতে, তরুণ কর্মীরা প্রায়শই প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং উদ্ভাবনী ধারণার মাধ্যমে এক প্রকার সাংস্কৃতিক আধিপত্য বিস্তার করে। এর বিপরীতে, দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন জ্যেষ্ঠ কর্মীরা যখন ডিজিটাল রূপান্তরের সাথে মানিয়ে নিতে পিছিয়ে পড়েন অথবা তাদের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা না থাকে, তখন তারা সহকর্মীদের কাছে ধীরে ধীরে উপেক্ষিত হয়ে ওঠেন। এই উপেক্ষার মাধ্যমেই শুরু হয় নীরব কিন্তু ধারালো বুলিং: জ্যেষ্ঠদের হেয় করা, তাদের সিদ্ধান্তকে কটাক্ষ করা, অফিসিয়াল গ্রুপে তাদের উপেক্ষা করা, অথবা তাদের সিদ্ধান্তকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে খাটো করে দেখা। লক্ষণীয় বিষয় হলো, অনেক সময় ‘সহায়ক কর্মচারীরাও’ তাদের নিজস্ব নেটওয়ার্ক বা তথ্যের সুবিধা ব্যবহার করে এই ধরনের বুলিংয়ে অংশ নিতে পারে। তারা হয়তো সরাসরি উপহাস নাও করতে পারে, কিন্তু প্রয়োজনীয় তথ্য আটকে রাখা, কাজ ধীরে করা বা অসম্পূর্ণ রাখা, অথবা গুজব ছড়িয়ে জ্যেষ্ঠদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার মতো পরোক্ষ উপায়েও নির্যাতন করতে পারে। এই আচরণগুলি সমষ্টিগতভাবে একটি জ্যেষ্ঠ কর্মীর আত্মমর্যাদা এবং কর্মোদ্যোগকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে।
ওয়ার্কপ্লেস ডেভিয়েন্স বা কর্মক্ষেত্রের বিচ্যুতি বিষয়ক তাত্ত্বিক আলোচনায়, বিশেষ করে রবিনসন ও বেনেটের সুপরিচিত শ্রেণিবিভাগ অনুযায়ী, এমন আচরণকে ‘ইন্টারপারসোনাল ডেভিয়েন্স’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এখানে কেউ ব্যক্তিগতভাবে সহকর্মীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যদিও এই ধরনের আচরণ সরাসরি প্রতিষ্ঠানকে আপাতদৃষ্টিতে আঘাত করে না, তবে এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব অনিবার্যভাবে প্রতিষ্ঠানিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই বিচ্যুতিমূলক আচরণকে অনেক সময় অভ্যন্তরীণভাবে ন্যায়সঙ্গত করার চেষ্টা করা হয় বিভিন্ন অজুহাতে, যেমন: “জ্যেষ্ঠ ভাই তো কিছু বোঝেন না,” “উনি শুধু নিয়ম নিয়ে বসে থাকেন,” অথবা “নতুন জেনারেশনকে তো জায়গা করে দিতে হবে।” সহায়ক কর্মীদের ক্ষেত্রে এমন যুক্তি শোনা যায়, “উনি তো আমাদের মান ইজ্জত দেন না, আমরাও কেন দেব?” কিন্তু এই যুক্তিগুলি আসলে একটি পচনশীল অফিস সংস্কৃতির স্পষ্ট চিহ্ন, যেখানে অভিজ্ঞতা এবং প্রজ্ঞার মূল্যায়নের চেয়ে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই এবং আধিপত্যের মনোভাব বড় হয়ে দাঁড়ায়। এটি এক ধরনের নীরব বিপ্লব, যেখানে প্রচলিত শ্রেণিবিন্যাস ভেঙে পড়ছে এবং নতুন, প্রায়শই নেতিবাচক, ক্ষমতার সম্পর্ক গড়ে উঠছে।
বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতের অনেক প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা, দলীয়করণ, অথবা তথাকথিত ‘আধুনিকায়ন’ এর নামে প্রবীণ কর্মীদের প্রতি অবজ্ঞা এই উর্ধ্বমুখী বুলিংকে উৎসাহিত করে। প্রায়শই দেখা যায়, কোনো জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা যদি দুর্নীতিতে আপস না করেন অথবা কোনো নির্দিষ্ট পক্ষের অনুগত না হন, তাহলে তাকে একটি ‘বাধা’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ফলস্বরূপ, জুনিয়র কর্মী থেকে শুরু করে ‘সহায়ক কর্মচারীরা’ পর্যন্ত একটি অনানুষ্ঠানিক জোট তৈরি করে এবং তাকে কার্যত অকার্যকর করে তোলে, যার ফলে সেই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ধীরে ধীরে তার কর্মক্ষমতা এবং মর্যাদা উভয়ই হারাতে থাকেন। এই ধরনের পরিস্থিতিতে, জ্যেষ্ঠ কর্মীরা এক অদৃশ্য প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন, যা তাদের কর্মপরিবেশকে অসহনীয় করে তোলে। সহায়ক কর্মীরা এক্ষেত্রে প্রায়শই ‘তদারকিবিহীন’ অবস্থায় থাকে, ফলে তাদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
গোফম্যানের নাট্যতাত্ত্বিক দৃষ্টিতে, এই পরিস্থিতিকে ‘’রোল ডিসরাপশন’‘ বা সামাজিক ভূমিকার ব্যাঘাত বলা হয়। একজন জ্যেষ্ঠ যিনি অফিসে একজন পরামর্শদাতা, অভিজ্ঞ দিকনির্দেশক বা সিনিয়র সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী হিসেবে অভিনয় করতেন, হঠাৎ করেই তার এই প্রচলিত ভূমিকা পাল্টে যায়—তিনি হয়ত অযোগ্য, অপ্রাসঙ্গিক বা নিছকই একজন নীরব দর্শক বা প্রান্তে ঠেলে দেওয়া ব্যক্তিতে পরিণত হন। অন্যদিকে, তরুণ কর্মী ও সহায়ক কর্মচারীরা তাদের আগ্রাসী মনোভাব এবং উদ্ভাবনী শক্তি (বা সংঘবদ্ধ অনীহা) দিয়ে মঞ্চের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। এই সামাজিক রূপান্তর কর্মক্ষেত্রে এক গভীর নাট্যতাত্ত্বিক সংকট সৃষ্টি করে, যেখানে প্রত্যেকের পূর্বনির্ধারিত চরিত্র এবং ভূমিকা বদলে যায়, এবং এক নতুন, প্রায়শই বিশৃঙ্খল, সামাজিক বিন্যাস তৈরি হয়।
উর্ধ্বমুখী বুলিং কেবল একটি পেশাগত সমস্যা নয়, বরং এটি মানসিক স্বাস্থ্য এবং সামাজিক মর্যাদার সাথেও নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, পেশাগত পরিচয় অনেকটা আত্মপরিচয়ের অংশ হয়ে ওঠে। একজন জ্যেষ্ঠ যখন অফিসে অপমানিত হন, সহকর্মীদের দ্বারা (জুনিয়র বা সহায়ক) অবহেলিত হন, অথবা জুনিয়রদের দ্বারা লাঞ্ছিত হন, তখন তা তার মানসিক স্বাস্থ্যে গভীর আঘাত হানে। তারা প্রায়শই অভিযোগ করতেও ভয় পান—কারণ অভিযোগ করলে হয়ত তাকেই ‘পুরনো ধ্যানধারণার মানুষ’ বা ‘পরিবর্তনে অনিচ্ছুক’ বলে দোষারোপ করা হবে। এই ভয় এবং সামাজিক লাঞ্ছনার আশঙ্কা জ্যেষ্ঠ কর্মীদের আরও নিঃসঙ্গ করে তোলে, যার ফলে তারা এক নীরব কষ্টের মধ্যে জীবনযাপন করেন। তাদের এই নীরবতা সমস্যাটিকে আরও জটিল করে তোলে, কারণ এটি সমাধানের কোনো পথ খুঁজে পায় না।
অনেক সময় প্রশাসনিক বিভাগ কিংবা মানবসম্পদ শাখা এই ধরনের বিষয়কে গুরুত্বই দেয় না। তাদের প্রচলিত ধারণায়, জ্যেষ্ঠরা সবসময় শক্তিশালী—তাদেরই অন্যদের নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা আছে। ফলে, নিচু স্তরের কর্মীদের দ্বারা নির্যাতনের ঘটনাকে তারা ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে অথবা একে গুরুত্বহীন হিসেবে এড়িয়ে যায়। ‘বিশেষত সহায়ক কর্মচারীদের’ দ্বারা জ্যেষ্ঠদের বুলিংয়ের ঘটনাকে অনেক সময় ‘অসহায়’ শ্রেণীর বিদ্রোহ হিসেবে দেখে উপেক্ষা করা হয়, অথবা ভাবা হয় জ্যেষ্ঠরাই তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছেন। এই উদাসীনতা এবং অদক্ষতা উর্ধ্বমুখী বুলিংকে আরও প্রসারিত হওয়ার সুযোগ করে দেয়, কারণ কোনো প্রকার শাস্তির ভয় না থাকায় অধস্তন কর্মীরা তাদের আচরণে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
এই সমস্যা সমাধানে সংগঠনের উচিত প্রথমেই ‘উর্ধ্বমুখী বুলিং’কে একটি বাস্তব এবং গুরুতর সমস্যা হিসেবে স্বীকার করা। এরভিং গোফম্যানের নাট্যতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, কর্মীদের মধ্যে ভূমিকার ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা অত্যাবশ্যক। একটি কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে যেখানে একজন জ্যেষ্ঠ কর্মী তার অভিজ্ঞতা ও প্রজ্ঞার জায়গা থেকে স্বাচ্ছন্দ্যে নিজের চরিত্রে অবতীর্ণ হতে পারেন এবং তার মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। পাশাপাশি, তরুণ কর্মী এবং ‘সহায়ক কর্মচারীদের’ মধ্যে সহমর্মিতা, আন্তঃপ্রজন্ম সহযোগিতা এবং দায়িত্বশীলতার বোধ গড়ে তুলতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ এবং কার্যকর যোগাযোগ ব্যবস্থা, যা কর্মীদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধকে উৎসাহিত করবে।
এছাড়া, কর্মক্ষেত্রে নেতৃত্বেরও দায়িত্ব রয়েছে একটি নৈতিক এবং ন্যায়সংগত সংস্কৃতি গড়ে তোলার। ‘আধুনিকতা’র নামে কেউ যেন অভিজ্ঞতা বা বয়সকে উপেক্ষা না করে—এটি নিশ্চিত করতে হবে। জুনিয়রদের উদ্ভাবনী শক্তিকে স্বাগত জানাতে হবে, কিন্তু সেটি যেন কোনোভাবেই জ্যেষ্ঠদের প্রতি অসৌজন্যতায় রূপ না নেয়। তেমনি, ‘সহায়ক কর্মচারীদের প্রতি যথাযথ সম্মান বজায় রাখার পাশাপাশি তাদের কাজ এবং আচরণের উপর নজরদারিও জরুরি, যাতে তারা নিজেদের অবস্থানকে বুলিংয়ের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে।’ এজন্য প্রয়োজন একটি ভারসাম্যপূর্ণ পরামর্শপ্রদাতা পদ্ধতি, যেখানে জ্যেষ্ঠরা তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে জুনিয়রদের গাইড করবেন এবং জুনিয়ররা নতুন চিন্তা ও উদ্ভাবনী ধারণার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতিতে সহায়তা করবেন। এটি একটি পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং সহযোগিতার সম্পর্ক তৈরি করবে, যা উভয় পক্ষের জন্য ফলপ্রসূ হবে।
বাংলাদেশ আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে—তরুণ নেতৃত্ব আসছে, ডিজিটাল রূপান্তর ঘটছে, এবং নতুন কর্মপদ্ধতি প্রবর্তিত হচ্ছে। কিন্তু এই পরিবর্তনের ভেতরে যদি বয়স্ক ও অভিজ্ঞ কর্মীদের প্রতি অবজ্ঞা, তাদের প্রতি উল্লাসে গোপন বিদ্বেষ, কিংবা শ্রদ্ধার সংকট তৈরি হয়, তবে তা কর্মক্ষেত্রের সুস্থতা এবং সামগ্রিক উৎপাদনশীলতার জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। একটি প্রতিষ্ঠান তখনই সফল হতে পারে, যখন সেখানে প্রতিটি কর্মী, তার বয়স বা অভিজ্ঞতা নির্বিশেষে, সম্মান এবং মর্যাদা নিয়ে কাজ করতে পারে।
উর্ধ্বমুখী বুলিং একটি নিঃশব্দ সহিংসতা—যা ধীরে ধীরে একটি প্রতিষ্ঠানের ভেতরকার আস্থার বন্ধনকে ক্ষয় করে। এটি কেবল ব্যক্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে না, বরং পুরো প্রতিষ্ঠানের নৈতিক মানদণ্ডকে দুর্বল করে দেয়। একটি সুশৃঙ্খল, নৈতিক, এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সংস্কৃতি গড়তে হলে, আমাদের বুঝতে হবে যে ক্ষমতার মঞ্চে শুধু উপর থেকে নিচের দিকেই নয়, নিচের দিক থেকেও অন্যায় ঘটতে পারে—’সেটা জুনিয়র কর্মী হোক বা সহায়ক কর্মচারীই হোক না কেন।’ সেই অন্যায়ের প্রতিকার শুধু কঠোর নিয়ম দিয়ে সম্ভব নয়, বরং ন্যায়বোধ, পারস্পরিক সম্মান এবং সহাবস্থানের গভীর উপলব্ধি দিয়েই তা সম্ভব। বাংলাদেশ যদি সত্যিই একটি পেশাগতভাবে পরিপক্ক সমাজে রূপ নিতে চায়, তবে এই নীরব নির্যাতনের ভাষা এবং এর প্রেক্ষাপটকে বুঝতে এবং দৃঢ়ভাবে মোকাবিলা করতেই হবে। এটি আমাদের ভবিষ্যতের কর্মক্ষেত্রের জন্য এক অপরিহার্য পদক্ষেপ।
লেখক: গবেষক ও উন্নয়নকর্মী