পরাজয়ের কষ্টে নাকি বুলিংয়ের কারণে আত্মহত্যা?
২ জুলাই ২০১৮ ১৬:২৪
সংবাদ মাধ্যমে বা বিভিন্নজনের স্টেটাসে দেখছি প্রিয় দলের পরাজয়ে নানাজনের আত্মহত্যার খবর। এসব পড়েই আমরা খুব সহজে তাদের ‘বলদ’ বলে লেবেলিং করে দিচ্ছি। কিন্তু যত সহজে তাদের ট্রল করছি, একবারও কি এই ট্রলিং কালচার নিয়ে ভাবছি আমরা?
এমনিতেই সোশাল মিডিয়া আমাদের লাইফ কন্ট্রোল করছে কমবেশি। আর বর্তমান সময়ে অবাধ ইন্টারেনেট একসেসের ফলে সোশাল মিডিয়ায় যে পরিমাণ সাইবার বুলিং বেড়েছে তাতে আত্মহত্যা আমার কাছে অতিরঞ্জিত বলে মনে হয় না। পরিচিত অনেক স্ট্রং পার্সোনালিটির মানুষকেই দেখছি প্রিয় দলের হারে সকল ধরনের কন্টাক্ট অফ করে আইসোলেটেড করে নিচ্ছে নিজেকে। এতেই কী প্রমাণ হয় না, এই সোশাল মিডিয়ায় কতটা এডিক্টেড আমরা? এই সোশাল মিডিয়ার সাইবার বুলিং কতটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে আমাদের জীবনে।
বাস্তবিক জীবনে খুব বেশি ডিপ্রেশনে থাকা মানুষটাও ‘এনজয়িং মাই লাইফ’ লিখে হাসিমাখা ছবি পোস্ট করছে প্রতিদিন। সেখানে শখানেক কমেন্টসও আসছে ‘ওয়াও’ ‘খুব সুন্দর’ ইত্যাদি বলে। আমরাও সেসব দেখে নিজেদের অজান্তেই কোন না কোনভাবে সোশাল মিডিয়াকেই জীবন বানিয়ে নিচ্ছি। আর যখনই ভার্চুয়াল লাইফের সাথে রিয়েল লাইফের ব্যালেন্স হচ্ছে না তখন মানুষের ডিপ্রেশন বাড়ছেই।
তাই আজ সাইবার বুলিংয়ের ভয়ে আত্মহত্যা করা যে মানুষটাকে আপনি ‘বলদ’ আখ্যা দিচ্ছেন সে আসলে কখনোই ‘বলদ’ না। সে হয়ত মানসিকভাবে আপনার মত শক্ত না। সোশাল মিডিয়ার ট্রল হয়তো সে সয়ে যেতেও পারত। কিন্তু সোশাল মিডিয়ার লাইফ যখন বাইরে এনে তাকে যেখানে সেখানে বুলিং করতেন হয়তো সেটা নেওয়ার ক্ষমতা তার তখনও জন্মেনি। সেই বুলি থেকেও হয়তো মৃত্যুই সহজ মনে হয়েছে তার। এ মানুষগুলো যতটা না প্রিয় দলের কষ্টে মরে তারচেয়ে বেশি মরে বুলির ভয়ে। খোঁজ করলে পৃথিবীর যে কোন দেশেই বুলির শিকার হয়ে আত্মহত্যার প্রচুর উদাহরণ পাবেন।
ফুটবলকে বলা হয় বিউটিফুল গেম। তাই গেমটাকে এঞ্জয় করুন। আর মনে রাখুন, এখানে প্রতিপক্ষ দুদলেরই জেতার কোন নিয়ম থাকে না। এনি গিভেন ডে তে যে কেউ যে কাউকে হারিয়ে দিতে পারে। তাই প্রিয় দলের পরাজয়ে আসলে ভেঙে পড়ার কিছু নাই। তেমনি প্রিয় দলের জয়ে অহংকার করারও কিছু নাই।
ট্রোলিং কিংবা রোস্টিং কিন্তু কমেডির একটা জনপ্রিয় মাধ্যম যেটা আসলে হিউমারের মাধ্যমে করা হয়। তাই কমেডিয়ানরা যখন কোন সেলিব্রিটিকে শো তে ডেকে এনে রোস্টিং করেন, সেসব সেলিব্রিটিরা হেসে গড়িয়ে পড়েন। কোন সেলিব্রিটিকেই দেখবেন না, কমেডিয়ানের মুখে ঘুষি মেরে নাক ফাটিয়ে দিতে। অথচ ভাবুন তো বাস্তব জীবনে আমরা কী করতাম। সামান্য ফানও আমরা নিতে পারিনা, প্রতিক্রিয়া দেখাই। আসলে একজন কমেডিয়ানও তখনই সফল হয় যখন সে জানে কোথায় থামতে হবে। আমাদেরও তেমনি ফান করতে যেয়ে কোথায় কতখানি পজ নিতে হবে সেটা জানাটা বেশি গুরত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত হয়ে গেলে কমেডি কিংবা ফান আর ফান থাকে না, সেটা সিরিয়াস অপমান হয়। সেই অপমানের ভয়েই আত্মহত্যা করেন একজন ফুটবল ফ্যান।
সারাবাংলা/আরএফ