বাঙ্গালীর চরিত্র নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন নেই। হাটে-ঘাটে-মাঠে চলমান, ভ্রাম্যমাণ অডিও-ভিডিও চাক্ষুষ করলেই এর স্বরূপ উদঘাটিত হবে। এদেশে উচিত কথা বললে বন্ধু বেজার হয়। পক্ষের লোক মুহুর্তেই পৃষ্ঠদেশ প্রদর্শন করে পল্টি খায়। আর প্রতিপক্ষ নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার ছক কষে। তাই কাউকে কিছু বলা যায় না। দেখেও না দেখে, শুনেও না শুনে চলার ভান করে থাকতে হয়। সেটাই বা কাহাতক সম্ভব?
বাঙ্গালীর মুখে পনের বছর কোন বোল ছিল না। দু’হাত বজ্র মুষ্ঠি হয় নি, বরং প্যারালাইসিস ভর করেছিলো। আন্দোলন, দাবী-দাওয়া মনের মধ্যেই ঘুরপাক খেত, রাজপথে নামার সাহস হত না। পেশাজীবিরা স্পিক-টি-নট হয়ে ছিলো। আজ সবার বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। মনে হয় ফারাক্কা বা তিস্তা বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। এই বুঝি সব কিছু স্রোতের তোড়ে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে, ওলট-পালট করে দেবে।
জুলাই বিপ্লব সবাইকে বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার সাহস দেখিয়েছে। আর তাতেই সবাই যার যার এজেণ্ডা নিয়ে নেমে পড়েছে রাজপথে। এটাকে খাটো করে দেখার কথা না। বরং জনদাবীকে উপেক্ষা করে কায়েমি স্বার্থবাজরা যেন যাচ্ছেতাই করতে না পারে, জুলুম-অত্যাচার করে যেন কেউ পার না পেয়ে যায় তার পক্ষে সোচ্চার প্রতিবাদ করাই ছিলো উদ্দেশ্য। সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারলেও তার ফসল নিজেদের গোলায় তুলতে না পারাটাই বাঙ্গালীর বরাবরের চ্যালেঞ্জ।
জুলাই বিপ্লব ছিলো জোর-জুলুম- জবরদস্তি, অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা আর বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রতিবাদ। কিন্তু কিছু বয়োবৃদ্ধ ঝানু, ঘোড়েল মানুষের হাতে পরে বিপ্লব সূতিকাগারেই শেষ হয়ে গেছে। এই সব বয়োবৃদ্ধ ঝানু ব্যাক্তিরা রাজনীতির নামে, দলের নামে, বিদেশি প্রভুর ইশারায় জেন জি প্রজন্মকে ভুলিয়ে- ভালিয়ে বাড়ী মুখো করে দিয়েছে। বয়সে একেবারেই অরুন-তরুনরা কিছু বুঝে উঠার আগেই বানরের পিঠা ভাগের মত কামড়াকামড়ি শুরু হয়ে গেছে। বিপ্লব বেহাত হয়ে যাদের হাতে পড়েছে তাদের ভেতরেই পরস্পর বিরোধী শক্তি যার যার অবস্থান থেকে রশি টানাটানি খেলার মত খেলে যাচ্ছে। আর পরাজিত পতিত শক্তি বাইরে থেকে বিদেশি প্রভুদের অর্থ আর কুট-কৌশলে একের পর এক খেলার রুলস পাল্টাতে বাধ্য করছে। চব্বিশের জুলাই বিপ্লবের পর থেকে দেশ নাজুক অবস্থার মধ্য দিয়ে চলেছে। পতিত শক্তি নানা ছুতানাতা করে পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল রাখার পরিকল্পনার একের পর এক সফল বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। দু:খজনক হলেও সত্য যে, সরকারের পলিসি মেকারদের কারো কারো অতি বার্ধক্য, অনভিজ্ঞতা, জড়তা, ভীরুতা ও ডাবল ষ্ট্যা-ার্ড রক্ষা করার সেফ গেম পরিস্থিতিকে কখনোই স্থিতিশীল করতে দেয় নি। বরং কারো কারো অতি কথন, নিজস্ব ট্র্যাকের বাইরে গিয়ে আগ বাড়িয়ে অভ্যন্তরীণ কৌশল পাবলিক করে দেওয়াই কাল হয়েছে। যা কোন কিছুর সফল বাস্তবায়নে পর্বতসম বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ কেউ সরকারি কর্মচারীর ন্যায় নয়টা- পাঁচটা অফিস করাটাকেই ধরি মাছ না ছুঁই পানির মত নিরাপদ ভেবে নিয়েছেন।
মব হচ্ছে অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিরব। যতটুকু হস্তক্ষেপ না করলেই নয় জাতীয় একশনের কৌশল বেছে নিয়েছে। বিরাজমান উৎশৃংখলতার বীজ এখানেই নিহিত। সচিবালয় আক্রান্ত হলো, ভাংচুর হলো, সরকারি সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলো বিপরীতে একশন নেই বললেই চলে। যেটুকু একশন নেওয়া হয়েছে তারও প্রচার নেই। ফলতঃ পাবলিক ধরেই নিয়েছে যে সরকার দুর্বল। অতএব যা কিছুই করা হোক পার পাওয়া যাবে। তাই সবাই কি যৌক্তিক কি অযৌক্তিক, বিভিন্ন দাবীদাওয়া নিয়ে রাজপথে নামছে। নামছে মানে একেবারে সহিংস মূর্তি নিয়ে কোমর কষে নামছে। হুমকি- ধামকি, আল্টিমেটাম শেষে হয় সচিবালয় নয়ত যমুনা অভিমুখে মারমুখী যাত্রা করছে। রাজপথ অবরোধ করে, জনভোগান্তি বাড়িয়ে, তীব্র যানজট সৃষ্টির মাধ্যমে সরকারকে বেকায়দায় ফেলে দাবী আদায়ের এই বিধ্বংসী প্রবণতার যেন শেষ নেই। সময়ের সাথে সাথে তা বাড়ছেও।
সংস্কারের নামে সরকার প্যাণ্ডুরা বক্স ওপেন করে দিয়েছে। বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল পাবলিককে অবোধ মনে করে। সংস্কার তাদের কাছে উৎকৃষ্ট মূলা। ক্ষমতায় গেলে এই সেই করা হবে জাতীয় কতিপয় আশার ফানুস। এই সব আনউইলিং রাজনৈতিক দলের কাছে সংস্কার আজ বাড়াবাড়ি, নির্বাচিত সরকারের এখতিয়ার আর দীর্ঘমেয়াদি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার গঠিত বিভিন্ন সংস্কার কমিশন নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে নানারূপ কথা হচ্ছে। সেটা দোষের না। কিন্তু সরকারে যারা আছেন তারা কি একটুও স্থান কাল পাত্রের বিষয়টি মাথায় রাখবে না? জনপ্রশাসন বিষয়ক সংস্কার কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সরকার ডিসি পদবাচ্যের জেলা প্রশাসক পদবী পরিবর্তন করতে যাচ্ছে। এতে ছাব্বিশ ক্যাডার খুশী হবে সন্দেহ নেই। রাজনীতিবিদরাও চরম পুলকিত বুঝা যায়। প্রশাসক নাম তাদের কাছে সর্বময় কর্তৃত্বের মধ্যে একপ্রকার বিষ কাঁটা স্বরূপ। অথচ বর্তমান টালমাটাল সময়ে এই পদবী পরিবর্তনই যেন অপরিহার্য ও সকল সমস্যার মূল দাওয়াই। তদ্রুপ নতুন বিভাগ সৃষ্টির নামে নতুন করে ইতোমধ্যে স্থিরকৃত জেলাসমূহকে কাটাকুটি করাটাও যেন ভীষণ সংস্কার। ফলত: শরিয়তপুর জেলা পদ্মা সেতু অবরোধ করে ঘোষণা দিয়েছে তারা ফরিদপুরের সাথে থাকবে না। টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জ কোমর কষে নেমে পড়েছে তারা ময়মনসিংহের সাথে যাবে না। এদিকে ভৈরব মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে তাদেরকে জেলা মর্যাদার সরকারি ঘোষণা বাস্তবায়ন করা হোক। কিশোরগঞ্জেরই বাজিতপুর উপজেলা সন্নিহিত কিছু উপজেলা নিয়ে জেলা ঘোষণার দাবী রাখছে। টাঙ্গাইল নিজেই গাজীপুর, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও আরো কয়েকটি জেলা নিয়ে নিজেকে বিভাগ মর্যাদায় উন্নীত করতে চাচ্ছে। নোয়াখালীও নিজেই বিভাগ হতে চাচ্ছে, তারা কুমিল্লার সাথে যাবে না। কি নেই এমন একটা ভাব রয়েছে তাদের বডি ল্যাংগুয়েজে। গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী ও সন্নিহিত আরো দু’ একটি জেলা নিয়ে প্রেসিডেন্সি স্ট্যাটাসের স্বতন্ত্র প্রশাসনিক কাঠামোর দাবীও উঠছে। দিনে দিনে এসব আওয়াজ প্রকট ও বিভৎস হচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কোন স্পষ্ট ঘোষণা নেই। কেউ কি তাদের পক্ষ হয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য নেপথ্যে ভূমিকা রাখছেন? জানা যায় না।
কিছুদিন আগে নার্সরা রাজপথ কাঁপিয়ে গেলো। তারা আবার কবে ভয়ানক হয়ে নামবে কেউ জানে না। এখন বেসরকারি শিক্ষকরা রাজপথে অদম্য ও মারমুখী। এর শেষ কবে কিভাবে কেউ বলতেও পারবে না। বোধকরি শিক্ষকরাও বলতে পারবেন না। তারা সরকারকে এই বলে হুমকি দিয়ে বসেছেন আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করা থেকে বিরত থাকবেন। একই সময়ে সরকারি কলেজ শিক্ষককে লাঞ্চিত করাকে কেন্দ্র করে সরকারি শিক্ষকরাও কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়ে বসেছে। এসবের পাশাপাশি আরো আরো পেশাজীবি সংগঠনের দাবী-দাওয়া তো আছেই। এসবের কোনটা কতটুকু যৌক্তিক, কতটা সরকারের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব তার কোন হোম ওয়ার্ক সরকারের আছে কিনা সন্দেহ জাগে।
সরকারের মুখপাত্র তথ্য মন্ত্রণালয়ের কোন ভূমিকাই চোখে পড়ে না। অথচ এই মন্ত্রণালয়ের পরিধি ৬৪ জেলাব্যাপী বিস্তৃত। তাদের আছে ভ্রাম্যমাণ গাড়ী ও উন্নয়ন কাজের ফিরিস্তিমূলক বিভিন্ন ডকুমেন্টারি, আইনশৃঙ্খলা মেনে চলায় জনগণের ভূমিকা, এর নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন বাহিনীর তৎপরতা ও সক্ষমতা ইত্যাদি প্রচারণার হাতিয়ার। মাঠ পর্যায়ে এগুলোর তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। তথ্য মন্ত্রণালয় কি জুলাই বিপ্লবের উপর কোন চলচ্চিত্র বা ডকুমেন্টারি বানিয়েছে? অনুদান দিয়ে কাউকে কি দায়িত্ব দিয়েছে? দিলেও কাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছে সেটাও বিবেচ্য বিষয়।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের ভূমিকা কার্যত ন্যুনতম। তারা মার খাচ্ছে, পিছু হটছে, হয়রানির শিকার হচ্ছে। পাবলিকের মাঝে তাদের কোন ইমেজ নেই। যা আছে তা ফ্যাসিস্টের দোসরের। পুলিশ কি নিজে থেকেও ঘুরে দাঁড়াতে চাচ্ছে? নাকি আগেরটাই ভালো ছিলো, এই টুপ করে এলো বলে, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম, আবার জমবে মেলা বটতলা, হাটখোলা গীতে মোহিত হয়ে আছে? নাকি নির্বাচনোত্তর নির্বাচিত সরকারের লাঠিয়াল হিসেবে কাজ করে সুদে আসলে কড়ায় গ-ায় সব উশুল করে নেওয়ার স্বপ্নে বিভোর? শাসকের বরকন্দাজ হিসেবে নয় জনসমর্থন ছাড়া পুলিশ রাজপথে কোনদিনই আর শক্ত ভাবে দাঁড়াতে পারবে না। এই অপ্রিয় সত্যটি পুলিশকে মেনে নিতে হবে। বেসামরিক প্রশাসন থেকে বিযুক্ত হয়ে পুলিশের একলা চলো নীতি যে আজকের তাদের এ পরিণতির জন্য দায়ী তা যত তাড়াতাড়ি তারা উপলব্ধি করতে পারবে ততই তাদের জন্য মঙ্গলজনক। নির্বাচনোত্তর সরকারের সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জই হবে পুলিশকে যথাযথ ট্র্যাকে স্থাপন করা।
আনসার বাহিনী নিয়ে সরকারের অবস্থা ও অবস্থান কিরূপ তা স্পষ্ট না। নির্বাচনে প্রত্যন্ত অঞ্চলে আনসাররাই ভোট কেন্দ্রে নিরাপত্তা প্রদান সহ অন্যান্য আনুষাঙ্গিক কাজে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদেরকে সহায়তা প্রদান করে থাকে। কেন্দ্র থেকে তাদের কাছে কি ম্যাসেজ কতটুকু গুরুত্ব দিয়ে প্রদান করা হবে তা ভবিষ্যতেই বলা যাবে। কিন্তু তখন হয়ত পরিস্থিতি সামাল দিতে বাড়তি মেহনতের প্রয়োজন পড়বে। নির্বাচন কমিশনের জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামাল দেওয়ার মত যথেষ্ট দক্ষ ও মোটিভেটেড জনবল আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। নির্বাচন পূর্ব, নির্বাচন কালীন গোয়েন্দা এজেন্সী সমূহের ভূমিকা সঠিকভাবে পরীবিক্ষণ করা না গেলে, সরকারের কাছে সঠিক বার্তা সময়মত না পৌছালে বা ভুলভাল বার্তা দিয়ে দৃষ্টি অন্যখাতে প্রবাহিত করা হলে পরিস্থিতি আকারে ও প্রকারে বহুমুখী ও জটিল হতে পারে। সরকারের সেরূপ কোন প্রস্তুতি আছে কি?
ইদানীং অনলাইন প্লাট ফর্মের জয়জয়কার। পাবলিক জানে এর ভেতর পনের আনাই অসত্যে ঠাসা তবু চটকদার অডিও-ভিডিওর কাছে তাদের বিপুলাংশের বিবেক-বিবেচনাবোধ বন্ধক দেওয়া। বাঙ্গালী এতকাল ছিলো হার হাভাতে। আর এখন হয়েছে আদিখ্যেতা প্রবণ। তারা উলঙ্গ, নষ্ট-ভ্রষ্টদের আইডল হিসেবে মেনে নিচ্ছে, তাদেরকে অনুসরণ করছে। লাইক, ভিউ, কমেন্ট প্রত্যাশীদের সস্তা, অরুচিকর ও নিম্নমানের কন্টেন্টে বুঁদ হয়ে থাকছে। ভাইরাল রোগে আক্রান্ত হতে আবাল-বৃদ্ধ- বণিতা সবার বড় খায়েস। তাই তারা ট্যাকের টাকা খরচ করে, কেউ কেউ কয়েক শ’ কিলোমিটার দূর থেকে এসে, রাস্তার উপর টেবিলে পরিবেশিত ধুলি ধূসরিত কেক খেতে আগারগাঁও ছুটছে। সেখানে কেক বিক্রেতাদের সংখ্যাধিক্য ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। কম্পিটিটিভ মার্কেট দখলের খায়েসে বা দখলদারিত্ব বজায় রাখার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে মারামারি, হাতাহাতি, বচসা পর্যন্তও হয়েছে। দেখি শালা কি করে নীতিতে বিশ্বাসী বর্তমান প্রশাসনের কুম্ভ কর্ণের ঘুম আচমকা কে বা কারা যেন ভাঙ্গিয়ে দিয়েছে। তাই সেনাশক্তির ভয় দেখিয়ে অবশেষে কেকখোর বাঙ্গালীকে নিবৃত্ত করা গেছে। মিজানের ভাতের হোটেলে সে কি ভীড়! ভøগার আর ইউটিউবারদের সে কি তৎপরতা! যেন মিজানের লঙ্গরখানার স্বাদ পেতে সবাই দল বেঁধে ছুটে আসছে পঞ্চগড়, খুলনা, কক্সবাজার, খাগডাছড়ি, ভোলা, সন্দ্বীপ, পটুয়াখালী থেকে। একশ টাকার টোকেন নিয়ে মিজানের লঙ্গরখানায় নিম্ন, মধ্য, উচ্চবিত্তের লোকেরা যখন মেলামাইনের শূন্য থালা হাতে লাইনে দাঁড়িয়ে কামড়াকামড়ি করে তখন তার দৃশ্য লঙ্গরখানার চিত্রকেই মনে করিয়ে দেয়। লক্ষ্য করে দেখবেন, রাজধানী, জেলা সদরে ড্রেনের উপর, কাদার উপর, ডাস্টবিনের পাশে দাঁড়িয়ে পাবলিক পয়সা দিয়ে কাড়াকাড়ি করে ছোলামুড়ি, চপ, সিঙ্গারা, চটপটি, ফুচকা খেতে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষায় থাকছে। এর কারণ যাই হক এগুলো যে স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর ও রুচির পক্ষে বিবমিষার উদ্রেককর তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
রাস্তায় শৃংখলা নেই, গাড়ী আর রিক্সা সমানে উল্টো পথে চলছে। ফুটপাতের উপর দিয়ে মোটর সাইকেল চলছে। প্রচ- শব্দ করে কিশোর গ্যাংস্টাররা হু-ার সাথে গু-া হয়ে জনমনে ভীতির সঞ্চার করছে। কিছু বলার উপায় নেই। দলবদ্ধ ভীমরুলের মত চড়াও হবে নিমিষেই। কাউকেই কিছু বলা যাচ্ছে না। সবাই তেঁতে আছে। কোন একটা কিছু মনমত না হলেই সোডার বোতলের মত ফস করে জ্বলে উঠছে। কি শিক্ষিত কি অশিক্ষিত কি উচ্চ শিক্ষিত সবাই যুক্তির উচ্চস্কেল নিয়ে চলাফেরা করছে। কেউ কারো কাছে বশ্যতা স্বীকার করবে এমনটি ভাবাও পাপ। সবাই সবকিছুতে পিএইচডি। যার যার যুক্তিই শ্রেষ্ঠ ও একমাত্র সমাধান পথ। এরূপ একটা অবস্থার উদ্ভব হলো কেন তা নিয়ে সমাজ বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখবেন এটাই আশা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বুদ্ধিজীবিদের নাম শুনলেই আপামর মানুষ নাক ছিটকায়, তাদের কাছে এদের মূল্য জ্ঞানপাপী ছাড়া অন্য কিছু না। অথচ একসময় জাতির ক্রান্তিলগ্নে তাদের কথা শোনার জন্য সাধারণ মানুষ মুখিয়ে থাকত।
বর্তমান ঘটমান চলমান এরূপ অবিস্থার পরিসমাপ্তি কীভাবে হবে কে জানে? সরকার কি তাদের টেনিওর ক্লোজিং নিয়ে ব্যস্ত? নাকি হতবুদ্ধ হয়ে আছে? নাকি ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা? জানি না। শুধু জানি আমরা আটকে গেছি অরাজকতা, বিশৃংখলা, দুর্নীতি, বেপোরোয়া মনোবৃত্তি ও ফায়দা পিয়াসী মনোবৃত্তির জালে। ইদানীং সর্বত্র উচ্চারিত জনপ্রিয় উক্তি হলো ‘কী একটা অবস্থা’! এ থেকে মুক্তির পথ কি? সুবোধ জাগ্রত হওয়া, সুন্দরের অনুশীলন আর সংযত আচরণ? কেউ কি আরো কিছু যোগ করবেন? দেখা যাবে সেখানেও একে অপরের পি-ি চটকানো যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। আহত নিহতের সংখ্যা দেখার সময়ও নেই, আগে নিশ্চিহ্ন করা পরে অন্য কথা। কথায় কথা বাড়ছে, কিন্তু নটে গাছটি কিছুতেই ফুরোচ্ছে না। সবার সুবোধ জাগ্রত হোক।
লেখক: কলামিস্ট