Thursday 06 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৭ নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি আবির্ভূত বাস্তববাদী জিয়াউর রহমান

শায়রুল কবির খান
৬ নভেম্বর ২০২৫ ১৭:২৫

১৯৭৫ সাল ৩ থেকে ৬ নভেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি দেশ এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে। হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়ে আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বাংলাদেশ। ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে ৩ নভেম্বর সেনাবাহিনীর একটি উচ্চাভিলাষী দল পেশাদারিত্ব চৌকস সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান-কে ক্যান্টনমেন্টের বাসভবনে বন্দি করে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়।

ফলে দেশের সাধারণ জনগণ ও সিপাহীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর সর্বমহলে, বিশেষত সৈনিকদের কাছে ছিলেন খুবই জনপ্রিয়। বিচক্ষণতার সাথে তারা পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ ও জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ৬ নভেম্বর মধ্যরাতে ঘটে সিপাহী-জনতার ঐক্যবদ্ধ এক বিপ্লব, যা জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে মর্যাদার আসন লাভ করেছে।

বিজ্ঞাপন

বিগত ১৭ বছর ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বরকে বিতর্ক সৃষ্টি করে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার ইতিহাস বিকৃতি করেছিল। ইতিহাসের অমোঘ সত্য সেটি আবারও জাগ্রত হয়ে ফিরে এসেছে সিপাহী-জনতার পাশে বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে। শেখ হাসিনা সরকার ইতিহাস থেকে ৭ নভেম্বরকে চিরতরে মুছে ফেলার অপচেষ্টা করেছিল।

সর্বশেষ ২০১০ সাল বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে …

৭ নভেম্বর নয়া পল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে গণতন্ত্রের মাতা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সমাবেশে বক্তব্য রাখছিলেন। এরপর আর ৭ নভেম্বর তারিখে কোনো সমাবেশে করতে দেয়নি ফ্যাসিস শেখ হাসিনা সরকার। ২০১৭ সাল ১২ নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ তিনি সর্বশেষ জনসমাবেশে বক্তব্য রেখেছেন।

সত্যি ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। সে কারণেই ২০২৪ সালে ৫ আগস্ট জুলাই ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থান মাধ্যমে ৭ নভেম্বর চেতনা জনতার মাঝে ফিরে এসেছে স্বমহিমায়।

৭ নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবস

দুটো শব্দের মধ্যে স্বাধীন স্বার্বভৌমত্ব বাংলাদেশের সত্তা নির্হীত আছে। এর প্রেক্ষাপটের মধ্যে দিয়ে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান রাজনীতিতে আবির্ভূত হয়েছেন এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। বাংলাদেশের নাগরিকদের জাতিস্বত্বা প্রতিষ্ঠিত করেছেন- যা ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ ৭ নভেম্বরের চেতনা তার সাথে পরিপূরক।

দেশবাসী সেদিন জিয়াউর রহমানের হাতেই তুলে দিয়েছিল রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব। ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতা স্বকীয়ভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের চক্রান্তকারীদের খপ্পর থেকে দেশকে উদ্ধার করে ২৫ বছরের গোলামী চুক্তিকে নিকুচি করে সত্যিকার স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে স্থান করে নেয়। ওই সময় বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ (গুটিকয় বৈদেশিক অনুচর ছাড়া) এবং সশস্ত্রবাহিনীর পূর্ণ সমর্থন ও আস্থা নিয়ে দেশকে উন্নতি, অগ্রগতি ও শান্তির পথে নিয়ে যায়। সিপাহী-জনতার মিলিত বিপ্লবে নস্যাৎ হয়ে যায় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ববিরোধী, দেশীবিরোধী সকল অকৌশল আধিপত্যবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আগ্রাসন থেকে রক্ষা পায় বাংলাদেশ।

৭ নভেম্বরের বিপ্লব সম্পর্কে তদানীন্তন দৈনিক বাংলার রিপোর্টে বলা হয়, সিপাহী ও জনতার মিলিত বিপ্লবে চারদিনের দুঃস্বপ্ন শেষ হয়েছে। মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাত প্রায় ১টায় সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনীর সিপাহী-জওয়ানরা বিপ্লবী অভ্যুত্থান ঘটিয়েছেন। ষড়যন্ত্রের নাগপাশ ছিন্ন করে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে উদ্ধার করেছেন বিপ্লবী সিপাহীরা।

সেই ৭ নভেম্বর ছিল শুক্রবার। সেদিন ভোরে রেডিওতে ভেসে আসে, ‘আমি মেজর জেনারেল জিয়া বলছি’। জেনারেল জিয়া জাতির উদ্দেশ্যে ঐতিহাসিক ভাষণে সবাইকে শান্তিপূর্ণভাবে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের আহবান জানান। সশস্ত্র বাহিনী দেশবাসীর পাশে আছে আপনারা ধৈর্য্য ধারণ করুন মহান আল্লাহ আমাদের সহায়।

ওইদিন রাজধানী ঢাকা ছিল মিছিলের নগরী। পথে পথে সিপাহী-জনতা আলিঙ্গন করেছে একে অপরকে। আনন্দে উদ্বেলিত হাজার হাজার মানুষ নেমে আসেন রাজপথে। সাধারণ মানুষ ট্যাঙ্কের নলে পরিয়ে দেন ফুলের মালা। বারুদের গন্ধ ছাপিয়ে ভেসে আসে ফুলের সুবাস। এই আনন্দের ঢেউ রাজধানী ছাড়িয়ে দেশের আনাচে-কানাচে পৌঁছে যায়।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে বাঁক বদলের তিনটি বড় গণঅভ্যুত্থানেই দৃশ্যত দেশের কল্যাণে বিএনপি এগিয়ে এসেছে…

১৯৭৫ সালের পটপরিবর্তনে পর জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র পরিচালনায় এসে বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর বিএনপি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে।

২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমেও আবারও দেশের কল্যাণে বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনায় আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সাঈদ ইফতেখার বলছেন, দু’টো গণঅভ্যুত্থানের পরে রাজনৈতিক শূন্যতার সুবিধা পেয়েছে বিএনপি। প্রতিটি ক্ষেত্রে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আ’লীগ অত্যন্ত নেতিবাচক হিসেবে জনগণের কাছে প্রতিভাত হয়েছে। সে সুযোগ বিএনপি পেয়েছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও লেখক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, জন-বিদ্রোহ বা জনরোষের ফলে যে সরকার পরিবর্তন হয়েছে, সেটার রাজনৈতিক ফসল বিএনপি ঘরে তুলেছেন। ফ্যাসিস সরকার একজন জনবিপ্লবীকে মেরে ফেলতে পারবে, কিন্তু বিপ্লবকে মেরে ফেলতে পারবে না।

‘সত্যিই তাই-বিপ্লব চিরঞ্জীব’

আজকের বাস্তবতায় জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের ইতিহাসও তাই অমোচনীয়, অনস্বীকার্য। প্রতিষ্ঠিত হবে আগামীর ‘সোনালি বাংলাদেশ’ ‘৩১-দফা’র’ ভিত্তিতে।

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাংস্কৃতিক কর্মী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর