ব্রাজিলের বেলেমে অনুষ্ঠিত কপ৩০ সম্মেলনের প্রথম দিন থেকেই জলবায়ু ন্যায্যতা, ক্ষতিপূরণের অর্থায়ন এবং বৈশ্বিক দায়বদ্ধতা নিয়ে তীব্র উত্তেজনা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। উন্নত দেশ এবং জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ ছোট দ্বীপ ও স্বল্পোন্নত রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে মতবিরোধ এখন দৃশ্যমান। আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের ঐতিহাসিক রায়, যেখানে ১.৫°C লক্ষ্যমাত্রাকে আইনি বাধ্যবাধকতা, জীবাশ্ম জ্বালানি লবিস্ট নিষেধাজ্ঞা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। এই রায় জলবায়ু সংকটের বিতর্ককে আরও তীব্র করে তুলেছে। জলবায়ু দুর্যোগে গত দশ বছরে প্রায় ২৫ কোটি মানুষের বাস্তুচ্যুত হওয়া, সংঘাত ও দারিদ্র্যের সাথে মিলিত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন সব মিলিয়ে মানবিকতার সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই সংকট মোকাবিলায় দ্রুত ও ন্যায্য জলবায়ু অর্থায়নের দাবি উত্থাপন করেছে UNHCR। অন্যদিকে, বৈশ্বিক রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের অনুপস্থিতি, চীনের কৌশলগত সক্রিয়তা, ভারতের কড়া অবস্থান এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ চাপ কপ৩০–এর আলোচনাকে আরও জটিল করে তুলেছে। ছোট ছোট দ্বীপ রাষ্ট্র এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলো জীবাশ্ম জ্বালানিকে ধাপে ধাপে পরিত্যাগ, শক্তিশালী NDC, ঋণমুক্ত জলবায়ু অর্থায়ন, এবং ‘বাকু–টু–বেলেম রোডম্যাপ’ বাস্তবায়নের জোর দাবি তুলেছে।
সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের আলোচনার শুরুতেই জলবায়ু অর্থায়নের রোডম্যাপ নিয়ে তীব্র বিতর্ক দেখা দেয়। বিশেষ করে ১০০ বিলিয়ন ডলারের অতীত প্রতিশ্রুতি পূরণ না হওয়া, নতুন করে ২০২৫–এর পরবর্তী দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন লক্ষ্য নির্ধারণ, এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ঋণের বদলে অনুদানভিত্তিক সহায়তার দাবিগুলো উত্থাপন করা হয়। লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড কীভাবে পরিচালিত হবে, কোন দেশ কত অর্থ দেবে, কোন দেশ কতটা সুবিধাভোগী হবে ইত্যাদি প্রশ্নও আলোচনায় জোরালোভাবে উঠে আসে। ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ঘূর্ণিঝড় এবং উপকূল ক্ষয়ের কারণে তাদের জীবনধারা আজ চরম সংকটের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হওয়ায় জরুরি সহায়তা তহবিলের দ্রুত অনুমোদন দাবি করেছে। এদিকে Global Stocktake–এর বাস্তবায়ন পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনায় তথ্য–স্বচ্ছতা, NDC হালনাগাদ, এবং ১.৫°C সীমা বজায় রাখতে এখনই বৈজ্ঞানিকভাবে নির্দেশিত হারে নির্গমন কমানোর বিষয়গুলো গুরুত্ব পায়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০৩০ সালের মধ্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধের ঘোষণাকে পুনর্ব্যক্ত করলেও ক্ষতিগ্রস্থরা এটিকে অপ্রতুল বলে উল্লেখ করে, কারণ গ্যাস ও তেলের ব্যবহার কমানোর বিষয়ে EU–এর পক্ষ থেকে কোন স্পষ্ট পদক্ষেপ এখনো অনুপস্থিত। ভারত ও সৌদি আরব ‘ফসিল ফুয়েল ফেজ–আউট’ শব্দটি টেক্সটে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে আপত্তি জানায়, যার ফলে আলোচনায় নতুন জটিলতা সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশসহ ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো দ্বিতীয় দিনে উপকূলীয় অভিযোজন, পূর্বাভাস ব্যবস্থা, কৃষি–সহনক্ষমতা এবং ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় বিশেষ বরাদ্দের দাবি তুলেছে।
কপ৩০-এর তৃতীয় দিনে বৈশ্বিক জলবায়ু আলোচনার মূল দিক ছিল বাস্তবায়নভিত্তিক পদক্ষেপ, গ্লোবাল স্টকটেকের অগ্রগতি মূল্যায়ন এবং নবায়নযোগ্য শক্তি ও জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে ধীরে ধীরে সরে আসার পরিকল্পনা নির্ধারণ। চীনের প্রতিনিধিদল দ্রুত নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে অগ্রগতি দেখিয়ে ইতিবাচক বার্তা প্রদান করেছে, যেখানে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন স্থিতিশীল রাখা এবং লো-কার্বন শক্তি ব্যবস্থাকে কেন্দ্রীয় অগ্রাধিকার দেওয়ার পরিকল্পনা গুরুত্ব পেয়েছে। তবে, ২০২০–২০২৫ সালের জিডিপি-প্রতি কার্বন তীব্রতা কমানোর লক্ষ্য এখনও অর্জিত হয়নি, ফলে ২০৩০ সালের কার্বন হ্রাস প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। পটসডাম ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী জোহান রকস্ট্রোমের মতে, বিশ্ব উষ্ণতা ১.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখতে প্রতি বছর বাতাস থেকে ১০ বিলিয়ন টন কার্বন অপসারণ জরুরি। দিনের শেষের দিকে আদিবাসী ও পরিবেশ আন্দোলনকারীরা হঠাৎ নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে ঢুকে ‘আমাদের বন বিক্রয়ের জন্য নয়’ এবং ‘আমাদের ছাড়া আমাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না’ স্লোগান দিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কায়াপো প্রধান রাওনি আমাজন রেইনফরেস্ট সংরক্ষণের জন্য আদিবাসী সম্প্রদায়ের ক্ষমতায়নের দাবি তোলেন। ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোও ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস সীমাকে জীবনরেখা হিসেবে ঘোষণা করে বিশ্বকে তা সম্মান করার আহ্বান জানায়। পাশাপাশি বন সংরক্ষণ, জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা, কার্বন বাজার এবং আর্টিকেল ৬ বাস্তবায়ন সংক্রান্ত আলোচনাও তৃতীয় দিনে গুরুত্ব পেয়েছে। বাংলাদেশের প্যাভিলিয়নে দেশের ঝুঁকি, সরকারের পরিকল্পনা এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের দাবিগুলো তুলে ধরার হয়েছে।
আমাজনীয় সম্মেলনের চতুর্থ দিনে জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় বাস্তবায়ন, তথ্যের অখণ্ডতা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রধান আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল। এই দিনে ১২টি দেশ জলবায়ু তথ্যের বিকৃতির বিরুদ্ধে ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছে, যা সরকার, ব্যবসায়ী ও শিক্ষাবিদদের সঠিক তথ্য প্রচার এবং পরিবেশ বিজ্ঞান ও সাংবাদিকতার উপর আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করে। তবে, স্টকটেক প্রক্রিয়ার আনুষ্ঠানিক পর্যালোচনার পর ঘোষণাপত্র প্রকাশ করে এতে আরও সংশোধন প্রয়োজন আছে বলে উল্লেখ করে মাত্র তিন মিনিটে শেষ করা হয় এবং শনিবার পর্যন্ত পরবর্তী আলোচনা স্থগিত করা হয়েছিল। আন্তর্জাতিক এনার্জি সংস্থা (IEA) ও অন্যান্য বিশ্লেষকরা নবায়নযোগ্য জ্বালানির দ্রুত সম্প্রসারণকে ইতিবাচক বলে উল্লেখ করলেও, কয়লা, তেল ও গ্যাসের নির্গমন এখনও বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা ২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধির ঝুঁকি তৈরি করছে। চার দিনের আলোচনার মধ্যে বিশেষভাবে বাংলাদেশের প্যাভিলিয়নে আয়োজিত ‘প্যারিস চুক্তির ধারা ৬: নির্গমন হ্রাসের পথ’ শীর্ষক সেশনে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, স্বচ্ছ কার্বন বাজার ও বাস্তবসম্মত নির্গমন হ্রাস কৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এ দিনে ব্রাজিলে ৫,০০০ আদিবাসী কর্মী, বন রক্ষাকারী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা ১০০টিরও বেশি নৌকাসহ ফ্লোটিলা আয়োজন করে জলবায়ু ন্যায়বিচারের দাবি জানান।
বেলেমের পঞ্চম দিনে বেলেমে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবস্থান এবং জলবায়ু উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে জটিল পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। ইইউ আলোচকরা বিশ্বকে উচ্চাকাঙ্ক্ষী পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানালেও, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট গ্রিনহাউস গ্যাস কমানোর লক্ষ্য ও বন সংরক্ষণ নীতি শিথিল করার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। অথচ এই একই দিনে আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো জীবাশ্ম জ্বালানি ধাপে ধাপে বন্ধের জন্য বৈশ্বিক চুক্তি ও Fossil Fuel Treaty–এর জোরদার সমর্থন করেছে। প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ নেতারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুপস্থিতি ও ট্রাম্প প্রশাসনের জলবায়ু নীতি বিরোধিতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। পঞ্চম দিনে জলবায়ু ও লিঙ্গ সংক্রান্ত বিতর্কও তীব্র ছিল; বিশেষ করে ‘gender’ শব্দের সংজ্ঞা নিয়ে বিভিন্ন দেশের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। এদিন বেলেমে স্বাস্থ্য-কেন্দ্রিক জলবায়ু অভিযোজন কাঠামো ‘হেলথ অ্যাকশন প্ল্যান’ উদ্বোধন করা হয়েছে এবং আশা করা হচ্ছে এটি ঝুঁকি পর্যবেক্ষণ, সক্ষমতা বৃদ্ধি ও ডিজিটাল স্বাস্থ্য প্রযুক্তিতে জোর দেবে। বাংলাদেশের প্যাভিলিয়নে অনুষ্ঠিত সাইড ইভেন্টে স্থানীয় নেতৃত্বাধীন প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধানের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে সুন্দরবন ও হাকালুকি হাওরের উদাহরণ ব্যবহার করে ন্যায়সঙ্গত, দীর্ঘমেয়াদি সহনশীলতা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
অপরদিকে, ষষ্ঠ দিনে জলবায়ু অর্থায়ন, আদিবাসী অধিকার এবং নাগরিক সমাজের সক্রিয় ভূমিকা সামনে এসেছে। ধনী দেশগুলো ২০২০ সালের জন্য প্রতিশ্রুত ১০০ বিলিয়ন ডলার জলবায়ু তহবিল সময়মতো পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই অর্থায়নের প্রকৃত অংশ অনেক কম, এবং মূল অংশ ধনী দেশ ও মধ্যম আয়ের দেশে পাঠানো হয়। অথচ, সবচেয়ে দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো প্রায়শই অনুদান পায়না। এদিন ব্রাজিলের মুন্ডুরুকু আদিবাসীরা প্রধান প্রবেশপথ কয়েক ঘণ্টা অবরোধ করে রাষ্ট্রপতি লুলা এবং কপ সভাপতি সঙ্গে সরাসরি আলোচনার দাবি জানায়, যা নাগরিক সমাজ ও আদিবাসীর ক্রমবর্ধমান সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রতিফলিত করে। কপ৩০-এ প্রথমবার বৈশ্বিক জীবাশ্ম জ্বালানি হ্রাস ও নবায়নযোগ্য শক্তিতে রূপান্তরের রূপরেখা আলোচনা হয়েছে। একই সঙ্গে আদিবাসী ও নাগরিক সংগঠনরা আমাজন বন সংরক্ষণ, বেলেম অ্যাকশন মেকানিজম (BAM) এবং ন্যায়সঙ্গত ট্রানজিশনের জন্য চাপ সৃষ্টি করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে দক্ষিণ আমেরিকার তীব্র পীত জ্বর ও ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ঝুঁকির প্রতি সতর্ক করেছে। এছাড়া কোইয়াবের জরিপে দেখা গেছে, ২০২৩–২০২৫ সালে আমাজন অঞ্চলে খরা ও দাবানল চরম মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে, যা আদিবাসীদের জীবন ও নিরাপত্তায় মারাত্মক হুমকির সৃষ্টি করেছে।
সম্মেলনে সপ্তাহ ব্যাপী আলোচনার সপ্তম দিনে তীব্র জলবায়ু আন্দোলন, মিথেন নির্গমন হ্রাস এবং ক্ষয়ক্ষতি-তহবিলের উপর গুরুত্বারোপ লক্ষ্য করা গেছে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা প্যারিস চুক্তির ১.৫°C সীমা অতিক্রম করায় আমাজন বন ও গ্রিনল্যান্ডের বরফের টিপিং পয়েন্ট নিয়ে জাতিসংঘ শঙ্কা প্রকাশ করেছে। বিজ্ঞানীরা মিথেন নির্গমন হ্রাসকে জরুরি ও তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। শনিবার বেলেমের রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ বিশেষ করে আদিবাসী, যুবক ও পরিবেশকর্মী সবাই জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধ, আমাজনে খনন থামানো এবং আদিবাসী ভূমি অধিকার স্বীকৃতির দাবিতে ‘গ্রেট পিপলস মার্চ’ আয়োজন করে। এছাড়া কপ৩০-এ ক্ষয়ক্ষতি ও লস অ্যান্ড ড্যামেজ কাঠামো নিয়ে বাংলাদেশের তরুণ নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশি অংশগ্রহণকারীরা সহজ প্রবেশাধিকার, স্বচ্ছতা ও স্থায়ী যুব প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার উপর জোর দেন। অন্যদিকে, সৌদি আরবের তেলভিত্তিক অর্থনীতি এবং উচ্চ কার্বন নির্গমন আন্তর্জাতিক জলবায়ু পদক্ষেপে বাধার মুখে দাঁড়িয়েছে।
কপ৩০-এর প্রথম সপ্তাহের শেষে দেখা গেছে, বৈশ্বিক জলবায়ু সংকট মোকাবেলার পদক্ষেপে ধনী দেশগুলোর আগ্রহ ও কাজের গতি হ্রাস পাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি বড় জাহাজ সংক্রান্ত চুক্তি স্থগিত করেছে, আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০৪০ সালের জন্য নির্ধারিত জলবায়ু লক্ষ্যকে দুর্বল করছে। এতে করে বহুপাক্ষিকতার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোজন ও প্রশমন জন্য EMDC-গুলোর প্রতি বছর ২.৩–২.৫ ট্রিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন, যা ২০৩৫ সালে ৩.২ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। কিন্তু ২০২৩ সালে তারা মাত্র ১৯৬ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করতে পেরেছে। উন্নত দেশগুলোর রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি, বহুপাক্ষিক সংস্কার ও সহজতর অর্থায়ন ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা কপ৩০-এ স্পষ্ট হয়েছে। তহবিলের অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন একটি বিশ্বাসযোগ্য রোডম্যাপ অপরিহার্য। এসময় ব্রাজিলের ‘ট্রপিক্যাল ফরেস্টস ফরেভার ফ্যাসিলিটি (TFFF)’ ১২৫ বিলিয়ন ডলারের সাহসী প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে, যা বন সংরক্ষণ ও স্থানীয় সম্প্রদায়কে পুরস্কৃত করতে তহবিল বিনিয়োগ করবে।
জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে উত্তরণের জন্য কপ৩০ সম্মেলন কি একটি রোডম্যাপ তৈরি করতে পারবে? এমন প্রশ্নে সম্মেলনের আয়োজকগণ না বোধক উত্তর দিয়ে বলেন, এই জটিল নথি তৈরির জন্য দুই পক্ষের আলোচনার এই সময় পর্যাপ্ত নয়। একটি রোডম্যাপের জন্য একটি সময়সূচী নির্ধারণ করতে হবে এবং দেশগুলো কী কী পদক্ষেপ নিতে সম্মত হবে এবং তাদের কী কী মাইলফলক অর্জন করতে হবে তা নির্ধারণ করতে হবে। এই রোডম্যাপের সমর্থকরা আশা করছেন যে, কপ৩০ এমন একটি প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে যেটি কয়েক বছরের মধ্যেই বাস্তবায়িত হবে এবং পরবর্তী দুই–তিনটি কপ প্রেসিডেন্সি সাইকেলের মাধ্যমে জীবাশ্ম জ্বালানির উৎপাদক ও ভোক্তা দেশগুলো মুক্ত, অ-বাধ্যতামূলক এবং খোলামেলা আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে পারবে এমন একটি ফোরাম গঠিত হবে।
লেখক: ডিন, বিজ্ঞান অনুষদ; অধ্যাপক, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ; যুগ্ম সম্পাদক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এবং চেয়ারম্যান, বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)