Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বারেক সাহেব ও খোদার দিল কি দয়া হয় না


১ আগস্ট ২০১৮ ১৩:১৯

অধ্যাপক মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) ||

গভীর মনোযোগে এবারের সিটি নির্বাচনগুলোর দিকে চোখ রাখছিলেন বারেক সাহেব। জাতীয় নির্বাচনের আগে এটাই সম্ভবত সর্বশেষ নির্বাচনী মহড়া। ‘খেলবে নাকি খেলবে না, খেলবো নাকি খেলবো না, আর খেললেও ঠিকঠাক মতো খেলবে বা খেলাবে কিনা’ ইত্যাদি ইত্যাদি এরকম অনেক কিছুই মাথায় রাখতে হচ্ছে। নতুন কিছু অবশ্য পাননি। কেন যেন মনে হচ্ছে যেই পাগাড়ে ছিলেন সেই পাগাড়েই রয়ে গেছেন। নির্বাচনের দিন সকাল থেকে ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত যা যা ঘটতে পারে বলে মনে করেছিলেন তাই তাই ঘটেছে। বিশ থেকে উনিশ বা একুশ কিছুই ঘটেনি। বারেক সাহেব কিছুটা বিষন্ন তাই।
না-বারেক সাহেব কোন স্বপ্নদ্রষ্টা নন। ভবিষ্যত বলার কোন অলৌকিকতায় তিনি বিশ্বাসও করেন না। কিন্তু তিনি বাস্তববাদী লোক, সাথে বস্তুবাদীতো বটেই। এ দুয়ের সংযোগ আর সংমিশ্রণ তিনি বরাবরই ভালভাবেই ঘটিয়েছেন। গ্রামের প্রাইমারীতে ক্যারিয়ার শুরু করে এদেশের মাননীয় সাংসদ পর্যন্ত হয়েছেন। সাথে ব্যাংক ব্যালেন্সও ফুলেছে-ফেঁপেছে সেটাতো বলাই বাহুল্য। বারেক সাহেব বিশ্বাস করেন ক্ষমতা আর অর্থ একে অপরের সম্পুরক। এটাই তার জীবন দর্শন আর এটাই তার দলের রাজনৈতিক দর্শনও বটে।
বারেক সাহেবের মনটা খারাপ অনেক কারণেই। অনেক আশা নিয়ে বসেও তিনি এবারের নির্বাচনে নতুন কোন ম্যাসেজ পাননি। নির্বাচনে টুকটাক অনিয়ম হয়েছে। তার দলের প্রার্থীরা সাতসকালেই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন, একজনতো ভোটও দেননি। মজার ব্যাপার বরাবরের মত এবারও নির্বাচন কমিশন একবারের জন্য বলেনি যে, নির্বাচনগুলো একেবারে স্বতী-স্বাব্ধী হয়েছে। প্রতিটি সিটিতেই তারা একাধিক কেন্দ্রের ফলাফল বাতিলও করেছেন। একই রকম কথা বলেছেন মোটামুটি দুদিক সামলে চলা নির্বাচন পর্যবেক্ষকরাও। দলকানা পর্যবেক্ষকদের কথা অবশ্য আলাদা। তাদের বাঁশীতে বরাবরের মতই অন্য সুর বেজেছে। সাধারণ মানুষের কানে সেই সুর পৌছায় বলে মনে হয় না। সব মিলিয়ে যা হয়েছে মানুষ তাতে সন্তুষ্ট। সন্তুষ্ট বারেক সাহেবও। অন্তত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের চেয়ে ভাল নির্বাচনতো হয়েছে।
বোঝেন বারেক সাহেব। বোঝেন তার রাজনীতির অনেকেই। বোঝেন না শুধু তার দলের সেই নেতারা যাদের রাজনীতি সেই ক্যাম্পাসের গন্ডিতে সীমাবদ্ধ। কুয়ার ব্যাঙ বললে এরা আবার মাইন্ড-টাইন্ড করে বসতে পারেন। বারেক সাহেব এদের ডাকেন ‘ক্যাম্পাসের ব্যাঙ’। এরা ক্যাম্পাসে রাজনীতি করেছে কি করেনি- ব্যাস অতটুকুই। এলাকায় কেউ তাদের চেনেন না। তারাও নিজেদের এলাকা ঠিকঠাক চেনেন কিনা সন্দেহ। কিন্তু তারা মক্কাটা ঠিকই চেনেন। এরা ঠিকই জানেন কোন ভোগে কোন দেবতা তুষ্ট হন। তাই তারা অবলীলায় পৌঁছে যান ভবনে আর পল্টনে আর বারেক সাহেবদের দৌড় বড়জোর তাদের ড্রইংরুম অবধি। ‘যে দলে যে বিচার!’
পল্টনের বৈঠকি আড্ডায় বসে এই ক্যাম্পাসের ব্যাঙরা সকাল সকালই যথারীতি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে দিয়েছেন। এসব ঘোষণা দলের সাধারণ কর্মী-সমর্থকদের উপর দিয়ে যে কি যায়, তাদের উৎসাহ-উদ্দীপনায় যে কিভাবে পানি ঢেলে দেয়া হয় তা এরা কোনদিনও বুঝবেন না। এরা যদি বুঝতেন প্রার্থীদের এত দৌড়াদৌড়ি আর আশা-আকাঙ্খার বাড়া ভাতে তাদের এসব ঘোষণা ছাই ঢেলে দেয়! এদের নিজেদেরতো নির্বাচন করা লাগে না। করার আশাও নেই। এদের পরামর্শেই গতবার নির্বাচনের রেলগাড়িটা ছুটে গেছে আর এবারও যাই যাই করছে। বারেক সাহেব ভাবেন শুধু একবার যদি এদের নির্বাচনে নামিয়ে দিয়ে এসি রুমে নির্বাচনের দিন সকালে তিনি নির্বাচন বর্জনের ঘোষনাটা দিতে পারতেন!
আচ্ছা লোকে এদের মারে না কেন? অন্তত দলীয় নেতা-কর্মীদের হাতেতো এদের মার খাওয়ার কথা। তার পরপরই মনে পরে বারেক সাহেবের, ‘কর্মীরা এদের মারবে কিভাবে? হাতের কাছে পেলেতো মারবে?’ এরা যে শুধু নির্বাচনের মাঠেই যায়না তাতো না। এদরেতো কর্মীদের সাথে কোন যোগাযোগই নেই। কর্মীরা এদের না পায় নির্বাচনে, না পায় জনসভায়। ইদানিংতো আবার ডিএমপি এদের কাজ আরো সোজা করে দিয়েছে। জনসভা-টভা করার অনুমতি নেই। রাজনীতি তাই পল্টন আর প্রেসক্লাবে। সেখানেও আবার পোশাকে আর পোশাকবীহিন পুলিশের নজরদারির নামে প্রোটেকশান।
‘আচ্ছা এরা যে এইসব করে আর তারপর ধরাগুলো খায় তাতেও কি এদের কিছুই এসে যায় না?’ সকালে বর্জনের ঘোষনা দিয়ে সন্ধ্যায়তো একটা সিটিতে বিজয় মিছিল করতে হলো। একটুও কি লজ্জা হলো না লোকগুলোর? আর এমনতো নয় যে, এটা এবারই প্রথম। একদিন আগেওতো একই ঘটনা ঘটেছে আরেকটি সিটিতেও। এদের চাপে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে বারেক সাহেব কাঁদতেও দেখেছেন সিটি নির্বাচনে নিজেদের প্রার্থীকে।
মাথাটা দপদপ করতে থাকে বারেক সাহেবের। ‘ইস্, শুধু একবার- শুধু একবার যদি এসি রুমে বসে এদের কারো একটা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়ার সুযোগটা পেতেন!’ ‘হে খোদা- তোমার দিল কি দয়া হয় না?’

বিজ্ঞাপন
অধ্যাপক মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) : চিকিৎসক ও কলাম লেখক।

সারাবাংলা/পিএম

অধ্যাপক মামুন আল মাহতাব কলাম বারেক সাহেব

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর