Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দিয়ারা বাড়ি ফেরেনি, এই শিশুদের ফেরান


২ আগস্ট ২০১৮ ১৪:৪৮

।। পলাশ মাহবুব, উপ সম্পাদক ।।

চোখ বন্ধ করে দৃশ্যটা একবার ভাবুন।
তপ্ত দুপুর। কলেজ শেষ করে বাড়ির পথে ফিরছিল দিয়া, রাজীবসহ একদল কিশোর-কিশোরী। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল তারা। রাস্তা পাড় হয়ে ঘরে ফিরবে। মা বসে আছে গরম ভাত নিয়ে। ছোট বোনটাও অপেক্ষা করে আছে। বোন ফিরলে একসঙ্গে খাবে। দিয়া হয়তো এসবই ভাবছিল মনে মনে।

কিন্তু হঠাৎ। একেবারে দিনে-দুপরে তাদের গায়ের ওপরে উঠে গেল বাস। পিষে দিয়ে গেলো মুহুর্তেই। ঘটনাস্থলেই মারা গেলো দিয়া খানম মীম আর আবদুল করিম রাজীব নামের ফুটফুটে দুই কলেজ ছাত্র। মারাত্মক আহত হলো আরও ৯জন। এদের একজন এখনও আশংকামুক্ত নয়।
ভাবতে পারছেন? গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছে না?
ঘটনাটা গেলো রোববারের। এই ঘটনার পর থেকেই রাজধানীসহ দেশের স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা ফুঁসে উঠেছে। তারা বিচারের দাবিতে রাস্তায় নেমে এসেছে। রাজধানীর সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা এখন মূলত তাদের নিয়ন্ত্রনে। তারা পথ-ঘাট আটকে রেখেছে। যানবাহন থামিয়ে ফিটনেস আর লাইসেন্স পরীক্ষা করছে। সিটবেল্ট বেঁধেছে কিনা সেসব দেখছে। তাদের হাত থেকে পুলিশের গাড়িও রেহাই পাচ্ছে না। এবং এমনও শোনা যাচ্ছে, কিছু কিছু পুলিশের গাড়িরও নাকি কাগজপত্র ঠিক নেই।
এই যে স্কুল ফেলে, কলেজ ফেলে ছাত্র-ছাত্রীরা এসব করছে, এসব কি তাদের করার কথা? তাদের করার কথা না। যাদের করার কথা তাদের ব্যর্থতার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে আজকের এই ঘটনা। আজকের প্রতিবাদ। ছোটরা চোখে আঙুল দিয়ে বড়দের ব্যর্থতা ধরিয়ে দিচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে বড়দের গড়ে তোলা জঞ্জাল দেখিয়ে দিচ্ছে। এই লজ্জা মেনে নিয়েই আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে এবং সেটা যত দ্রুত সম্ভব। ইতিমধ্যেই অনেক দিন পাড় হয়ে গেছে। সময় যত গড়াবে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষোভ তত বাড়বে। একই সঙ্গে বাড়বে নানা রকমের শংকা। অনেকেই এর সুযোগ নিতে চাইবে।

বিজ্ঞাপন

রাষ্ট্র হচ্ছে শরীরের মতো। শরীরে কোনও ক্ষত তৈরি হলে আমরা কি করি? দ্রুত সেটা সারিয়ে তোলার জন্য ব্যবস্থা নেই। রাষ্ট্রুও তাই। রাষ্ট্রের ভেতরও ক্ষত তৈরি হতে পারে। আজকের এই ঘটনাকে যদি আমরা একটা ক্ষত হিসেবে ধরে নেই তাহলে দ্রুতই সেটা সারানোর উদ্যোগ নেয়া দরকার। তা না হলে ক্ষত ছড়িয়ে পড়ার শংকা তৈরি হয়। সেটা নিশ্চয়ই কারোর কাম্য না।

ছোটরা মূলত বড়দের কাছ থেকে শেখে। তারা শিক্ষা নেয় পারিপার্শ্বিকতা থেকেও। আমাদের দেশে যেহেতু সড়ক দুর্ঘটনার বিচার সেভাবে হয় না, সেরকম কোনও নজিরও ছোটদের সামনে নেই। ফলে তারা ধরে নিয়েছে তাদের সহপাঠী তাদের বন্ধুদের হত্যার বিচার নিশ্চিত করতে হলে তাদের পথে নামতে হবে এবং তারা তাই করেছে। শিশু কিশোরদের এই পথে নেমে আসা তাই অমূলক নয়। আমাদের দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনার কারণে জমতে থাকা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।

প্রকৃতি শূনত্যা পছন্দ করে না। এটা প্রকৃতির ধর্ম। ছোটদের জন্য একটা বাসযোগ্য সমাজ প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব আমাদের। কিন্তু আমরা সে কাজে ব্যর্থ হচ্ছি বলেই ছোটরা আজ রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছে। এটা আমাদের ব্যর্থতা। এটা আমাদের লজ্জা। কিন্তু এই লজ্জা আর বাড়তে দেয়া ঠিক হবে না। ছোটদের কোমল মনের ক্ষোভকে আমলে নিয়ে দায়িত্বশীলদের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া। রাজনীতিবিদদের মনে রাখতে হবে এই শিশুরাই কিন্তু আর অল্প কিছুদিন পরে ভোটার হবে। তারাই সিদ্ধান্ত নেবে কারা যাবে ক্ষমতায়। সুতরাং তাদের মনে এমন কোনও ক্ষত রাখবেন না, যা দীর্ঘস্থায়ী হয়।

তাছাড়া শিশুরাতো যৌক্তিক দাবিতেই পথে নেমেছে। বন্ধু হত্যার বিচার তো তারা চাইতেই পারে। তাদের এসব দাবির সাথে কোনও স্বার্থ নেই। জড়িয়ে আছে স্বজন হারানোর আবেগ আর একটা নিরাপদ জীবনের আকাংখা। সদিচ্ছা থাকলেই এসব দাবি মেনে নেয়া সম্ভব। তাই যত দ্রুত সম্ভব শিশুদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিয়ে তাদের নিজস্ব ভুবনে ফিরিয়ে আনুন। কারণ বন্যেরা বনে সুন্দর, শিক্ষার্থীরা পাঠশালায়।
আমরা আমাদের ছোট বন্ধুদের সেখানেই দেখতে চাই। রাজপথে নয়।

বিজ্ঞাপন

পলাশ মাহবুব : কথাসাহিত্যিক ও নাট্যকার।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর