Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বারেক সাহেবের ঈষৎ স্বস্তি


২৯ আগস্ট ২০১৮ ১৪:৪৯

অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) ।।

মাত্রই ১৫ আগষ্ট গেল। একটু স্বস্তিতেই আছেন বারেক সাহেব। কোন অঘটন ছাড়াই শেষ হয়েছে এবারের ১৫ই আগষ্ট। আগষ্ট মাস আসলেই কিছুটা তটস্থ থাকেন বারেক সাহেব। সমাবেশ, মিটিং, মিছিল ইত্যাদি থেকে যতটা পারা যায় দূরে থাকেন। ইদানিং অবশ্য এসবের ধারে কাছে যাবার দরকারও পরে না খুব একটা। তাদের রাজনীতিতো এখন সেমিনার আর সাংবাদিক সম্মেলনেই সীমাবদ্ধ। ফলে এদিক থেকে বেশ শান্তিতেই আছেন বারেক সাহেব।

বিজ্ঞাপন

আগষ্ট নিয়ে বারেক সাহেবের টেনশনটা অন্য কারণে। ২১শে’র গ্রেনেড হামলাওতো এই আগষ্টেই হয়েছিল। কিংবা ১৭ তারিখের সিরিজ বোমা হামলা? সেটাওতো এই আগস্টেই। সমস্যাটা হলো, ‘তোরা ঘটনা ঘটাবি ঘটা- নিজেদের লোকদের একটুতো বলে-কয়ে নিবি! তাহলেতো অন্তত একটু নিরাপদে থাকা যায়। তা-না, কে শোনে কার কথা ? উনারা ঘটাবেন, উনারাই জানবেন, গা বাঁচিয়ে কেটে পরবেন আর বাকি সবাই আম জনতা, মরলে মর, বাঁচলে বাচ!’

এইতো গত বছরের কথা, চিন্তা করলেই এখনও গা শিউরে ওঠে বারেক সাহেবের। পান্থপথে তার নিত্য যাতায়াত। ওই যে ওলিও হোটেলটা, বোমায় যেটা উড়ে গেল গত ১৫ই আগষ্ট। বোমাটা যদি কোন কারনে একদিন আগে ফেটে যেত? এখনতো শুধু বিল্ডিং আর জঙ্গির উপর দিয়ে গেছে। তখন না জানি কি হতো? কে জানে তার প্রাডোর ছাদটাওতো ফুটো করে দিতে পারতো উড়ে আসা দু-একটা ইটের টুকরো!

বারেক সাহেবের এবারের স্বস্তি আরো একটা কারনে। বরাবরের মত এবার ১৫ তারিখে জন্মদিনের কেক না কেটে মিলাদ পড়ানো হয়েছে। ষাট-পয়ষট্টি কেজির একেকটা কেক আওয়ামী লীগারদের অন্তর জ্বালায় ঘি ঢেলে দেয় ষাট-পয়ষট্টি কেজি। ওদের মারো-ধরো কোন সমস্যা নেই। কিন্তু এ জিনিস ওরা মেনে নিতে পারবে না কখনোই। বারেক সাহেব ভালোই জানেন তা। আর শুধু কি আওয়ামী লীগ? সাধারন মানুষ? তাদের শরীরেও কি কম জ্বালা ধরায় এসব বাড়াবাড়ি? বুঝেই হোক আর না বুঝেই হোক এবার যে কেক কাটা হয়নি তাতেই স্বস্তি বারেক সাহেবের। ‘কেকতো কাটে না, কাটে বাঙ্গালীর হৃদয়’- বোকা হদ্দের দল শুধু যদি একটু বুঝতো ব্যাপারটা।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা শহরের মোড়ে মোড়ে, এখানে সেখানে যেদিকে তাকানো যায়, চারদিক শুধু ১৫ই আগস্টের ব্যানারে-ফেস্টুনে-পোষ্টারে সয়লাব। তেমনি একটা ব্যানারে লেখা, ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই, তবে বিশ্ব পেতো এক মহান নেতা, আর আমরা পেতাম ফিরে জাতির পিতা…’। ইদানিংকার জনপ্রিয় একটি গানের পংক্তি এটি। গানটা বারেক সাহেবের শোনা। মন্দ হয়নি গানটা।

জ্যামে বসে ব্যানারটা দেখতে দেখতে বারেক সাহেবের মনে হল ব্যাপারটা কি সত্যি তাই? ১৫ই আগষ্টের ঘটনাগুলো যদি একটু অন্যরকম হতো। ধরা যাক, আবাসিক পিএ মোহিতুল ইসলামের ফোনে বাসায় আক্রমনের খবর পেয়েই বঙ্গবন্ধু ফোন ঘোরালেন সেনানিবাসে। লাল ফোনে খবরটা শুনে সেনা প্রধানের প্রতিক্রিয়াটাও একজন সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধার মতই। তার নির্দেশে ৩২’এর দিকে এগুতে থাকা ট্যাংগুলোকে নিরস্ত্র করতে ঢাকা সেনানিবাস থেকে ছুটলো একদল চৌকশ সেনা সদস্য। এদিকে ক্যান্টনমেন্ট থেকে খবর পেয়ে সদর দপ্তরের সামনে তৈরী রক্ষীবাহিনীর একাধিক ডিটাচমেন্ট। দু’দলের সাড়াশি চাপে আত্মসমর্পনে বাধ্য হলো খুনির দল। সেরনিয়াবত আর শেখ মনির বাসাতেও আত্মসমর্পনে বাধ্য হলো বিপথগামী সেনারা। সেনাবাহিনী আর রক্ষী বাহিনীর তড়িৎ হস্তক্ষেপে বড় ধরনের একটা কলংকিত অধ্যায় এড়ানো গেলো।

বঙ্গবন্ধুর ১৫ তারিখ সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মসূচি ছিল। তিনি সেটা বাতিল করে সোজা চলে গেলেন বাংলাদেশ বেতারে। বজ্রকন্ঠে ঘোষনা দিলেন, ‘ভাইয়েরা আমার … ’। বঙ্গবন্ধুর ঘোষনায় স্তব্ধ দেশবাসী। ‘এও কি সম্ভব’? দু-একদিন পর থেকেই অবশ্য বাতাসে কান পাতলে কি যেন গুনগুনানি শোনা যায়। ‘বঙ্গবন্ধু এতগুলো মুক্তিযোদ্ধা অফিসারকে সাইজ করে দিলেন? আর খন্দকার মোশতাক? মুজিব নগর সরকারের মন্ত্রী- তাকেও কিনা জেলে ঢোকানো হলো’! কিছু কিছু লোক ধীরে ধীরে বিশ্বাসও করছে এসব। বিশেষ করে বুদ্ধিজীবি আর সুশীলরা- তারাতো পত্রিকার পাতায় রীতিমত সমালোচনার ঝড় তুলছে। বিবিসি আর ভয়েস অব আমেরিকাও এসব বিষয়ে প্রতিদিন নিউজ করছে। ব্যস, আর যায় কোথায়?

এর মাঝেই জাসদ মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাদের মুক্তির দাবিতে দু’দিন হরতাল করে ফেলেছে। পুলিশের সাথে তাদের সংঘর্ষে দুজন মারা গেছে বলে শোনা যাচ্ছে। সামনেই এ নিয়ে পল্টন ময়দানে জাসদের জনসভা। চারিদিকে টানটান উত্তেজনা। বিশেষ বেকায়দায় আছেন বঙ্গবন্ধুর সরকার। সবার ধারণা এই সরকারের মেয়াদ ফুরিয়ে আসলো বলে।

সহসা বারেক সাহেবের বোধোদয় হয়। তারা সেদিন ছিলেন জাসদ নামে, আছেন আজো, থাকবেন ভবিষ্যতেও। সাইনবোর্ড আর শ্লোগানটাই শুধু বদলে যাবে, কিন্তু বদলাবেন না তারা। ঈষৎ স্বস্তি পান বারেক সাহেব। গুণগুণ করে গানের সুর ভাজতে ভাজতে বেনসনে সুখ টান দেন। বেনসনটা বহুদিন এতো সুখকর মনে হয়নি।

অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) : চিকিৎসক ও কলাম লেখক।

সারাবাংলা/পিএম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর