Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রবল প্রত্যয়ী প্রধানমন্ত্রী


৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৮:০৭

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা

রাজনীতি যদি এক ধরণের খেলা হয়, তবে দল প্রধান একজন খেলোয়াড়। আর সেই ব্যক্তি যদি দল প্রধানের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী হন, তবে তিনি আম্পায়ারও্। তার কর্তব্য কেবল খেলা নয়, খেলা নিয়ন্ত্রণ করাও। আত্মনিয়ন্ত্রণেরই অভাব ঘটলে, তার আম্পায়ারের কাজ করা শোভা পায়না। যে কোনও ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রককে সাহসের সাথে, আস্থার সাথে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়।

গত ২ সেপ্টেম্বর (শনিবার) সংবাদ সম্মেলনে অনেকটা সেই ভাবমূর্তিতে গণমাধ্যমের সামনে উপস্থিত হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যখন তিনি বলেন, ‘নির্বাচন হবেই, কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবেনা, মানুষের জন্য, দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করেছি, জনগণ ভোট দিলে থাকব, নাহয় চলে যাব’, তখন তার আত্মনিয়ন্ত্রণের শক্তি বোঝা যায়। বোঝা যায় ভোটব্যাঙ্কের তথাকথিত রাজনীতি নিয়ে চিন্তিত নন তিনি।

বিজ্ঞাপন

বলা হয়, আসল রাজনীতি, বড় রাজনীতির ময়দানে বাঙালির ঘোর অনটন। রাজনীতি চর্চার রোমাঞ্চ আমরা অর্জন করতে চাই ক্ষুদ্রতর নানা পরিসরে, অর্থাৎ ষড়যন্ত্রের অলিতে গলিতে। শাসনক্ষমতা দখলের রাজনীতি রূঢ় বাস্তব দিয়ে ঘেরা। সে রাজনীতির চর্চায় খুব কষ্ট, ঝুঁকিও বড় বেশি, মারধর খাওয়ার সম্ভাবনা প্রভূত। নির্বাচন এলে একটা নাগরিক গোষ্ঠীর জোট গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন, তা উপরের বক্তব্যকে সমর্থন করে। এরা আয়েশে থাকে, আবার ক্ষমতার স্বাদও পেতে চায়। প্রধানমন্ত্রী জোট গঠন প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানিয়েছেন, তবে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন ক্ষমতায় যেতে হলে কষ্ট করে আন্দোলন করতে হবে। রাজনীতি চর্চার একটি বুদ্ধিবৃত্তিক এবং একটি মনোবৃত্তিক দিক আছে, আর অন্য দিকে রয়েছে রাজনীতির কায়িক চেহারা। তথাকথিত ভদ্রলোকরা যদি কায়িক শ্রম বাদে শুধুই ক্ষমতাদখলের খেলায় মেতে উঠেন, প্রত্যক্ষ রাজনীতির বাইরে যে আখড়া, সেখানে ভিড় করতে থাকেন, তবে সেই রাজনীতি কতটা রাজনীতি আর কতটা ষড়যন্ত্র সে প্রশ্ন অবশ্যই উঠতে পারে।

বিজ্ঞাপন

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম নিয়ে যে বিতর্ক উঠছে, তারও সমাধান দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বলেছেন, ইভিএম তার পছন্দ, কারণ তিনি প্রযুক্তি বান্ধব, কারণ তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার। তিনি বলেছেন, যখন মানুষ মোবাইল থেকে টাকা পাঠাচ্ছে, টাকা গ্রহণ করছে, তখন ভোটে প্রযুক্তির ভয় কিসের? তারপরও তিনি মনে করেন, ইভিএম জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। তবে সবকিছুতে রক্ষণশীল হওয়ার বিপদও তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন। রক্ষণশীল বলতে কাদের বোঝায়? এক কথায়, যারা আধুনিকতার দিকে যেকোনও পরিবর্তনকে অপছন্দ করে, তার বিরোধিতা করে, তারাই রক্ষণশীল।

পাকিস্তানের নতুন সরকারের প্রসঙ্গেও তার পর্যবেক্ষণ ছিল রাজনৈতিকভাবে বেশ পরিণত। বলেছেন, ক্রিকেটার ইমরান খান জীবনে অনেক ছক্কা মেরেছেন, ক্ষমতায় বসেও যদি মারতে পারেন সমস্যা কোথায়? সাহায্য চাইলে তিনি এগিয়ে যাবেন বলেও জানিয়েছেন। তবে, এদেশের কারও কারও মনোজগতে পাকিস্তানি ভূত যে আছে তার কথাও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাদের রাজনীতি জঙ্গিবাদের ঘেরাটোপে আশ্রয় খুঁজতে চায়।

মানুষের মন পাওয়ার চেষ্টা রাজনীতিতে থাকেই। এখনকার রাজনীতিতে শুধু জনসংযোগের কর্মসূচি নয়, এখন চলছে ভাবমূর্তি অথবা ব্র্যান্ড তৈরির ব্যাকুল প্রয়াস। বোঝাতে হবে আমি তোমাদেরই লোক। রাজনীতিতে ‘আমি তোমাদেরই লোক’ ভাবমূর্তি রচনা করার একটা প্রাণান্ত চেষ্টা থাকে রাজনীতিবিদদের। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি এই তথাকথিত জনপ্রিয় ধারায় হাঁটতে চাননি। তিনি চলেছেন, দেশের দিকে চেয়ে, কিভাবে বাংলাদেশ বিশ্ববুকে মাথা তুলে দাঁড়াবে, সেটাই তাঁকে ভাবায় বেশি। তাই স্বল্প মেয়াদী, মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনার পাশাপাশি শতবর্ষের পরিকল্পনা করতে চান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী জানেন নাগরিক সমাজের যে রাজনীতি, তা আটকে আছে না-বাচক আর হ্যাঁ-বাচকে। নাগরিক সমাজের এই গোষ্ঠিটি রাজনীতির এজেন্ডা স্থির করতে চায়, কিন্তু কোন জবাবদিহিতা করেনা। সে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেনা, প্রতিরোধ করেনা, শুধু কৈফিয়ত খোঁজে। সে স্বভাবত দুর্বল, কারণ তার আত্মপ্রত্যয় নেই। এই দুর্বল, পরাশ্রিত, প্রতিক্রিয়াজীবী রাজনীতিকে সরাসরিই চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা যখন এমন আত্মবিশ্বাসের সাথে কথা বলেন, তখন প্রত্যাশা্র মাত্রা বেড়ে যায় আমাদের। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, গণতান্ত্রিক বলেই, ধর্মনিরপেক্ষতাকে রক্ষা করবে এটাই স্বাভাবিক প্রত্যাশা। তাই ক্ষমতার কেন্দ্রে বসে নানামূখী ষড়যন্ত্র করে নানা কৌশল করতে হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, তিনি বা তার সরকার যেন মুক্তিযুদ্ধের যে স্বপ্ন ছিল – উদার ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ, সেই পথে তেকে যেন ছিটকে না যাই আমরা।

স্বাধীনতার আগে ও পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এমনটাই ভেবেছিলেন। ধর্মব্যবসায়ী সাম্প্রদায়িক শক্তির আধিপত্য সম্পর্কে, তার বিপদ সম্পর্কে তিনি অতিমাত্রায় সচেতন ছিলেন। তার অসমাপ্ত আত্মজীবনী, তার কারাগারের রোচনামচা পড়লে বোঝা যায়, তিনি নিজে একজন সাচ্চা ধার্মিক হয়েও ধর্ম ব্যবসার অসহিষ্ণুতা ও নির্মমতা সম্পর্কে কতটা সচেতন ছিলেন। যা কিছু প্রতিক্রিয়াশীল তাই জাতীয়তাবাদকে আশ্রয় করে ফ্যাসিবাদ ও জাতিবিদ্বেষ ছড়ায়। তিনি সচেতন ছিলেন, আধিপত্যকামী জাতীয়তাবাদ এখানে সহজেই সংখ্যাগরিষ্ঠের সাম্প্রদায়িকতাকে আশ্রয় করতে পারে। তাঁর উন্নয়ন-চিন্তাও এই ভাবনার সঙ্গে সামঞ্জস্য ছিল। তিনি যে উন্নয়নের কথা ভাবতেন, উদার ধর্মনিরপেক্ষ শাসনতন্ত্র তার পক্ষে জরুরি ছিল। প্রধানমন্ত্রী তার পিতার সেই দশৃন জানেন, বোঝেন।

বাস্তবের জমিতে দাঁড়িয়ে গোটা দেশের সামগ্রিক আর্থিক বিকাশের প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী অনেক বেশি আক্রমণাত্মক। যে উদার বহুত্বধর্মী উন্নয়নবাদকে বাস্তবায়িত করা আজও সম্ভব হয়নি, আক্রমণাত্মক ভাবে সেই পথে এগোতে চান শেখ হাসিনা। তাঁর এই প্রবল ইতিবাচক, প্রত্যয়ী রাজনীতি আগামীতে হয়তো আনতে পারে নতুন কিছুর আস্বাদন।

সারাবাংলা/এমএম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর