Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বারেক সাহেবের আকাশবীণা দর্শন


১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৩:০৪

||অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)||

রাজশাহীতে দলীয় কর্মসূচি। সকালের ফ্লাইটে রাজশাহী যাবেন। কিন্তু বিমানবন্দরে প্ৗেঁছেই মেজাজটা খারাপ হয়ে যায় বারেক সাহেবের। এখানেও ‘আওয়ামী থাবা’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ বিমানের নতুন বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারটি উদ্বোধন করতে আসবেন। বিমানবন্দরে ঢোকা-ঢুকি নিয়ে তাই বিস্তর কড়াকড়ি। নভো এয়ারের বাসে চড়ে বিমানের দিকে যেতে যেতে ‘আকাশবীণা’ দেখতে পান বারেক সাহেব। আনকোরা, ঝকঝকে নতুন বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারটি গর্বিত, উদ্ধত ভঙ্গিমায় ভিভিআইপি লাউঞ্জের সামনে পার্ক করা। দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। ‘আহা!’- নিজের অজান্তেই স্বগোক্তোত্বি করেন বারেক সাহেব। এক সময় বিমান যাত্রা মানেই ছিল অর্নিদিষ্ট যাত্রা। দশটার বিমান কয়টায় যাবে, আদৌ যাবেতো, না যাবে না? সেদিন যে মোটামোটি বিগত দিনের কথা, ঘন ঘন বিমান যাত্রার কারণে সেটা অবশ্য ভালো করেই জানেন বারেক সাহেব। তবে ‘সিটি অব ঢাকা’, ‘সিটি অব চিটাগং’ ইত্যাদি থেকে বাংলাদেশ বিমানেরও এখন ‘মেঘদূত’ আর ‘আকাশবীণায়’ উত্তরণের গল্পটা বারেক সাহেবর একেবারেই অজানা। গত দশ বছরেরও কম সময় দেশের যে গর্ব করার মত নানা অর্জন, তার ছিটেফোটা যে বাংলাদেশ বিমানের গায়েও এসে পড়বে তা অবশ্য বারেক সাহেবের বোঝাই উচিৎ ছিল। বাংলাদেশ বিমানে ভুলেও চড়েননা বিধায় বিষয়টা মাথায় আসেনি তার। ঢাকার হযরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরের টারমাকে দাড়িয়ে আছে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডনিউ বোয়িং ৭৮৭- ভাবা যায়? ‘প্রধানমন্ত্রী আরো কত যে চমক দেখাবেন’! আজ নভোর বিমানে চড়ে রাজশাহী যেতে যেতে এটা কিছুতেই মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারছেন না তিনি।

বিজ্ঞাপন

হঠাৎ মনে পড়ে বারেক সাহেবের। ২০১২ সালের কথা। সাত সকালে কোনমতে দৌড়ঝাঁপ দিয়ে কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দরে পৌছেছেন। পাঁচ তারকা মল্ল হোটেলে কেসিনোতে রাতের হল্লা মন্দ কাটেনি। এয়ারপোর্টে পৌছে বিমানের জন্য অপেক্ষা। এক সময়, বেশ কিছুটা বিলম্বে দিগন্তে দেখা গেল বাংলাদেশ বিমানের এয়ারবাসটি। কিন্তু কোন রকম আওয়াজ না দিয়েই এয়ারপোর্টে ল্যান্ড না করে উড়ে চলে গেল বিমানটি। ভ্যাবাচেকা খেয়ে বসে আছেন বারেক সাহেব, সাথে অন্য যাত্রীরাও। সকাল সাতটার বিমান যখন শেষমেষ রাত সাড়ে আটটায় কাঠমান্ডু বিমান বন্দর ছেড়ে গেল, তখন বিমান বালার মুখে শুনলেন আসল কাহিনী। সামান্য যান্ত্রিক ত্রুটির শঙ্কায় কাঠমান্ডুতে না নেমে ঢাকায় ফিরে গিয়েছিল বাংলাদেশ বিমানের এয়ারবাসটি। ঢাকায় ফিরে, ত্রুটি সারিয়ে, নতুন ক্রু আর ফ্লাইট মেইনটেনেন্স ইঞ্জিনিয়ার নিয়ে ফিরে আসতে সাড়াদিন পার। আর ফলশ্রুতিতে ল-ভ- আর্ন্তজাতিক রুটের বাংলাদেশ বিমানের যত শিডিউল। পুরাতন এয়ারবাসটির জন্য এটি নাকি অস্বাভাবিক কিছু না। শুনে মেজাজটা হঠাৎ ঠা-া হয়ে আসে বারেক সাহেবের। সারাদিনের ক্লান্তি আর বিরক্তি নিমিশেই হাওয়া। ‘আওয়ামী লীগ সরকার যতই বাগাড়ম্বর করুক না কেন, বেটাদেরও ডালমে বহুত কুছ কালা হায়’, ভাবেন বারেক সাহেব। ‘মুখে বড় বড় কথা বললেও, ঠিকইতো দুই নম্বর বিমান চালাও তোমরাও’!

পাঁচ-সাতদিন পরের কথা। পল্টনের অফিসে বসে নিজেদের সরকারের সময়কার বিমানমন্ত্রীর সাথে আসর জমিয়ে শেয়ার করছিলেন ঘটনাটা। মন্ত্রী মহোদয়ের কেন যেন উচ্ছাস একেবারেই নেই। আমতা আমতা করে, পাশ কাটিয়ে উঠে পড়লেন বারেক সাহেবের পাশ থেকে এক সময়। ব্যাপারটা ঠিক বুঝে উঠতে পারেননি তখন বারেক সাহেব। পারলেন আরো দু’একদিন পর। ভাঙ্গা-চোড়া বাতিল ঐ এয়ারবাসটি যে তাদের সময়ই কেনা হয়েছিল! একটি না, কেনা হয়েছিল দু’দুটি পুরাতন, বাতিল হয়ে যাওয়া এয়ারবাস! সাবেক বিমানমন্ত্রী সেদিন তাই মানে মানে আড্ডা ছেড়ে কেটে বেঁচেছেন।

বিজ্ঞাপন

খিচড়ানো মেজাজটা আরো বেশি খিচড়ে যায় বারেক সাহেবের রাজশাহীর শাহ মাখদুম বিমানবন্দরে অবতরন করার পর। চারদিকে বড় বড় সব ব্যানার। হাস্যোজ্জ্বল শেখ হাসিনা। ব্যানারে বয়ান করা হয়েছে রাজশাহীর এই বিমানবন্দরটির জন্য প্রধানমন্ত্রীর যত অবদান। এপ্রোন সম্প্রসারনের কাজ চলছে। শিগগিরই এখানে পাশাপাশি পার্ক করা যাবে দুটার জায়গায় আটটা বিমান। শহরে পৌঁছে খবর নিতে জানলেন বিমানবন্দরটি নাকি খুব তাড়াতাড়ি আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরের মর্যাদাও পেতে যাচ্ছে। এখান থেকে সরাসরি বিমান যাবে কলকাতায়। মনে পড়লো বারেক সাহেবের। ১৯৯৬’এ শেখ হাসিনার প্রথম মেয়াদেই সিলেটের এম এ জি ওসমানি আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর আর চট্ট্রোগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দর দুটির সম্প্রসারণ আর আধুনিকায়ন করা হয়েছিল। এবারেও কাজ চলছে কক্সবাজারের বিমানবন্দরটির নতুন টার্মিনাল ভবন নির্মাণের। এরই মধ্যে সম্প্রসারিত হয়েছে বিমানবন্দরের রানওয়েটিও।

মনে পড়ে নিজেদের সময়ের কথা। বিমানের জন্য কি করেছিলেন তারা অনেক চেষ্টায়ও মনে করতে পারেন না বারেক সাহেব। কেনার মধ্যে কিনেছিলেন ভাঙ্গাচোরা বিমানগুলো আর করার মধ্যে করেছিলেন একের পর এক আর্ন্তাজাতিক সেক্টরে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট পরিচালনার সত্ত্বত্যাগ। তাদের সময় বাংলাদেশ বিমানের বহরের বিমানগুলোর নাম ছিল ‘সিটি অব ঢাকা’ কিংবা ‘সিটি অব চিটাগং’, আর এখন ‘মেঘদূত’ আর ‘আকাশবীণা’। দুই সরকারের মেধায়, মননে আর চিন্তায় যে যোজন যোজন ফারাক, সেতো এই নামগুলোর মধ্যেই পরিস্কার।

হঠাৎ মনটা খারাপ হয়ে যায় বারেক সাহেবের। নিজের মধ্যে অদ্ভুত এক অস্থিরতা অনুভব করেন তিনি। ‘আকাশবীণার সুরে ২০১৮’র ডিসেম্বরে মেঘদূতের পুনরাবির্ভাব বড় বেশি অনিবার্য্য বলে মনে হয় তার কাছে’!

লেখক: চিকিৎসক, রাজনীতিক

সারাবাংলা/এমএম

আকাশবীণা প্রধানমন্ত্রী বিমান বিমানবন্দর শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন

খেজুর আমদানিতে শুল্ক কমলো
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২১:০৮

আরো

সম্পর্কিত খবর