Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কোটা বা‌তিল নয়, সংস্কা‌রেই সমাধান


৪ অক্টোবর ২০১৮ ১৬:৫৩

|| শ‌রিফুল হাসান ||

মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার দা‌বি‌তে মু‌ক্তি‌যোদ্ধা সন্তান কমান্ডের উদ্যোগে শাহবা‌গে যে আন্দোলন চলছে তার প্রতি সমর্থন জানিয়ে এই লেখা। অা‌গেই ব‌লে‌ছি, সব ধর‌নের কোটা বাতিলের প্রস্তাবকে স্বাগত জানা‌তে পার‌ছি না। বারবার ব‌লে‌ছি, কোটা পদ্ধ‌তির সংস্কার দরকার। কখ‌নোই বা‌তিল নয়। আমি এখ‌নো মনে করি অনগ্রসর মানুষের জন্য কোটা অবশ্যই থাকা উচিত। এটা কোন রাগ-অ‌ভিমা‌নের বিষয় নয়। যারা ম‌নে ক‌রেন, মু‌ক্তি‌যোদ্ধার সন্তান‌দের জন্য, অা‌দিবাসী‌দের জন্য, নারী‌দের জন্য, প্র‌তিবন্ধী‌দের জন্য কোটা দরকার নেই তা‌দের স‌ঙ্গে অা‌মি একমত নই। বরং অা‌মি ম‌নে ক‌রি তা‌দের প্র‌ত্যে‌কের জন্য কোটার দরকার অা‌ছে। এখন প্রশ্ন হ‌লো কীভা‌বে কার জন্য ক‌তো শতাংশ কোটা ঠিক করা হ‌বে।

বিজ্ঞাপন

অা‌গেও দে‌খে‌ছি কোটা নি‌য়ে অালাপ কর‌তে অা‌সেন যারা হোক তারা প‌ক্ষের কিংবা সংস্কা‌রের দুই পক্ষই অনড় থা‌কে। দুই প‌ক্ষের অ‌নে‌কেই বাস্তব তথ্য জা‌নেন না। এক পক্ষ ম‌নে ক‌রেন, বিদ্যমান কোটা পদ্ধ‌তি‌তে সব পি‌ছি‌য়ে পড়া লোকজন চাকু‌রি পে‌তো, অা‌রেকপক্ষ ম‌নে ক‌রে, মেধাবীরা সব ব‌ঞ্চিত। কোটা নি‌য়ে দি‌নের পর দিন কাজ ক‌রে‌ছি। দেশের সামা‌জিক যোগা‌যো‌গের মাধম ও সংবাদমাধ্যম উভয় ক্ষেত্রেই সোচ্চার থেকেছি।

তবে কখ‌নোই অা‌বেগতা‌ড়িত হ‌য়ে কিছু ব‌লি‌নি, বরং যৌ‌ক্তিক কথাগু‌লো বলার চেষ্টা ক‌রে‌ছি। কোটা নি‌য়ে বাংলা‌দে‌শের যে কা‌রো সা‌থেই বির্ত‌কে রা‌জি। কিন্তু সমস্যা হ‌লো কোটার ইস্যু‌কে রাজ‌নৈতিক অার ভো‌টের ইস্যু বা‌নি‌য়ে বারবার জ‌টিল করা হ‌য়ে‌ছে। যাই হোক মূল কথা হচ্ছে- অা‌মি কোটা রাখার প‌ক্ষে। ত‌বে কোটা সংস্কার কর‌তে হ‌বে।

বিজ্ঞাপন

এখন প্রথম প্রশ্ন হ‌লো, ক‌তো শতাংশ কোটা রাখ‌বেন? কার জন্য ক‌তো শতাংশ। সেটা সবাই মি‌লে অালাপ অা‌লোচনার মাধ্য‌মে ঠিক হ‌তে পা‌রে। ত‌বে মূল কথা হ‌লো, কখ‌নোই সাধারণের চে‌য়ে কোটা বে‌শি হ‌তে পা‌রে না। যেমন সাধারণ প্রার্থী‌দের জন্য ৪৪ শতাংশ অার কোটার জন্য ৫৬ শতাংশ হ‌তে পা‌রে না। সেটা উল্টো হ‌তে পা‌রে। কোটা ৪৪ অার সাধারণ ৫৬। সবাই মি‌লে চাই‌লে কোটা ৪০ অার সাধারণ ৬০ শতাংশ হ‌তে পা‌রে। ত‌বে এখা‌নে অা‌রেকটা কথা অা‌ছে।

কোটা ৫৬ শতাংশ হোক, ৪৪ বা ৪০ শতাংশ যাই হোক না কেন কোটার প্রার্থী না পাওয়া গে‌লে সেটা শূণ্য না রে‌খে সাধারণ প্রার্থী দি‌য়ে পূরণ কর‌তে হ‌বে। নি‌শ্চিত করে বলা যায়, দি‌নের পর দিন য‌দি কোটার প্রার্থী না পাওয়ার কার‌ণে হাজার হাজার পদ শূন্য রাখা না হ‌লে কোটা নি‌য়ে সমস্যা এতো প্রকট হ‌তো না।

এবার অা‌সা যাক কার জন্য ক‌তো শতাংশ কোটা রাখ‌তে হ‌বে? সে প্রসঙ্গে। সবাই‌কে ম‌নে রাখ‌তে হ‌বে, কোটা কারও পুরস্কার বা সম্মান নয়, কোটা মা‌নে পি‌ছি‌য়ে পড়া জন‌গোষ্ঠী‌কে এগি‌য়ে অানা। কা‌জেই কারা এই অনগ্রসর গোষ্ঠী সেটা প্রতি তিন বছর পরপর মূল্যায়ন করা হোক। আর একজন‌কে একবারের বেশি কোটা দেয়া উচিত নয়।

কার জন্য ক‌তো শতাংশ কোটা সে আলোচনায় প্রথ‌মেই মু‌ক্তি‌যোদ্ধা কোটার কথা আসে। মু‌ক্তি‌যোদ্ধারা জা‌তির শ্রেষ্ঠ সন্তান এ নি‌য়ে কারও কোন কথা বলার থাক‌তে পা‌রে না। মু‌ক্তি‌যোদ্ধা‌দের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা অবশ্যই সমর্থন যোগ্য। এখন চাকু‌রির জন্য মু‌ক্তি‌যোদ্ধা পাওয়া যায় না। কা‌জেই ১৯৯৭ সা‌লে মু‌ক্তি‌যোদ্ধার সন্তান‌দের জন্য এই কোটা প্রবর্ত‌নের সু‌যোগ‌টিও সমর্থনযোগ্য। আমিও শতভাগ সমর্থন ক‌রি। অনেকেই চান মু‌ক্তি‌যোদ্ধার সন্তান‌দের জন্য কোটা থাক। এমন‌কি যতোদিন পর্যন্ত একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানও চাকুরিপ্রার্থী থাকবে ততোদিন মুক্তিযোদ্ধা কোটা থাকুক। ‌কিন্তু অামার অাপ‌ত্তি অা‌ছে না‌তিদের কোটায়।

কারণটা অা‌গেও ব‌লে‌ছি, এখ‌নো ব‌লি। অা‌মি ম‌নি ক‌রি না, না‌তিরা পি‌ছি‌য়ে পড়া মানুষ। মু‌ক্তি‌যোদ্ধার সনদ অাছে এমন কারও না‌তিই পি‌ছি‌য়ে পড়া মানুষ অা‌ছে অা‌মি শু‌নি‌নি। অা‌রেকটা কথা, না‌তি কোটা মু‌ক্তিযেু‌দ্ধের চেতনার সা‌থে যায় না। ধ‌রেন কোন একজন মু‌ক্তি‌যোদ্ধার সন্তান য‌দি কোন জামায়াত বা স্বাধীনতা প‌রিবা‌রে বি‌য়ে ক‌রে তাহ‌লে তি‌নিও সেটা পা‌বেন। তার মা‌নে রাজাকার হ‌য়ে মু‌ক্তি‌যোদ্ধা কোটা পা‌বেন তি‌নি। এটা অা‌মি কোনভা‌বেই মান‌তে রা‌জি নই।

অাজ‌ই এ নিয়ে লি‌খে‌ছেন রফিকউল্লাহ রোমেল। তার যুক্তিগুলোও প্রনীধানযোগ্য। তিনি লিখেছেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটার ক্ষেত্রে নাতি-নাতনী বা থার্ড জেনারেশনের ক্ষেত্রেও আমার ব্যক্তিগত আপত্তি আছে। তবে সন্তানদের জন্য কোটা সিগনিফিকান্টলি কমালেও তা উঠিয়ে দেবার কোন প্রশ্নই আসে না। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান একটা টাইম বাউন্ড কোটা। এই কোটা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ও নয়। কাজেই এটা জিরো পার্সেন্ট করার প্রশ্নই আসে না। অামি এর সা‌থে যোগ কর‌তে চাই, যতোদিন পর্যন্ত একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানও চাকুরিপ্রার্থী থাকবে ততোদিন মুক্তিযোদ্ধা কোটা থাকুক। অসহায় অস্বচ্ছল শহীদ সব মু‌ক্তি‌যোদ্ধার সন্তা‌নকে সু‌যোগ দেয়া হোক।’

এবার অা‌সি অা‌দিবাসী কোটায়। কোটা না থাক‌লে সব‌চে‌য়ে ক্ষ‌তিগ্রস্ত হ‌বেন অা‌দিবাসীরা। অা‌মি ম‌নে ক‌রি আদিবাসীদের জন্য অন্তত দুই শতাংশ হলেও কোটা থাকা উচিত। এই মুহু‌র্তে দুই শতাংশ অা‌দিবাসী শেষ পর্যন্ত পাওয়া যা‌বে না, তাও অা‌মি ম‌নে ক‌রি অা‌দিবাসী‌দের জন্য এই কোটা রাখা উচিত। কোটা না থাক‌লে অাদিবাসী‌দের জন্য চাকু‌রিতে অাসা ক‌ঠিন হ‌বে।

এবার অা‌সেন নারী কোটায়। নারীদের জন্য অবশ্যই কোটা থাকা উচিত। নারী কোটা অ‌নেক বে‌শি হ‌লেও অামার ব্য‌ক্তিগত অাপ‌ত্তি নেই। এমন‌কি সব কোটাতেও অ‌র্ধেক নারী কোটা থাক‌তে পা‌রে। যেমন দুই শতাংশ অা‌দিবাসী কোটা। এর ম‌ধ্যে এক শতাংশ নারী, এক শতাংশ পুরুষ। নারী না পাওয়া গে‌লে পুরুষ অা‌দিবাসী। অার কোন অাদিবাসী না পাওয়া গে‌লে সাধারণ প্রার্থী। প্র‌তিবন্ধী‌দের জন্য এক শতাংশ কোটা রাখা উচিত।

আর জেলা কোটার বিষয়ে অ‌নে‌কেই ম‌নে ক‌রেন, বিদ্যমান জেলা কোটার কার‌ণে পি‌ছি‌য়ে পড়া জেলার মানুষ কোটা পায়। অাস‌লে তা নয়। বিদ্যমান জেলা কোটা বণ্টন হয় জনসংখ্যা অনুযায়ী। মা‌নে যেই জেলার লোক বে‌শি তারা কোটা পায়। অর্থাৎ ঢাকা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কু‌মিল্লা এগি‌য়ে থা‌কে। এই নিয়‌মে এই মুহু‌র্তে জেলা কোটার প্র‌য়োজন অা‌ছে ব‌লে অনেকে ম‌নে ক‌রেন না। কারণ সব জেলার মানুষ এখন অাগা‌চ্ছে। তারপ‌রেও জেলা কোটা থাক‌তে পা‌রে পি‌ছি‌য়ে পড়া জেলা যেমন পঞ্চগড়, ঠাকুগাঁও, কু‌ড়িগ্রাম। সরকার প্র‌তি বছর পি‌ছি‌য়ে পড়া জেলা ঠিক কর‌তে পা‌রে।

অা‌রেকটা কথা, কোটার যে সংস্কার দরকার সেটা বছ‌রের পর বছর কেন এই রাষ্ট্র বুঝ‌তে পা‌রে নি? অামা‌দের রাষ্ট্র কেন তরুণ‌দের ভাবণা ধর‌তে পা‌রে না? কেন কোটা সংস্কার চাওয়ায় ছে‌লে‌মে‌য়ে‌কে এতো নির্যাতন করা হ‌লো? অার কোটা সংস্কার চাওয়ায় যদি তা‌দের মু‌ক্তিযুদ্ধ বি‌রোধী বা ষড়যন্ত্র‌বি‌রোধী বলা হয়, তাহ‌লে এই যে মু‌ক্তি‌যোদ্ধা কোটা বা‌তিল করা হ‌লো সেটা কী? রফিকউল্লাহ রোমেলের সা‌থে অা‌মি একমত যে, একটা পলিটিকালি ইম্পোজড ক্যাম্পেইনকে সরকার হয়ত সরকারের মত দেখেছে। কিন্ত দল হিসেবে আওয়ামী লীগ পুরোপুরি ফেল করেছে… সেটা পলিটিক্যালি। কোটা নিয়ে জনমতের যে অংশের উপরের কথাগুলো মনের কথা, তাদের আওয়ামী লীগ একেবারেই ধারণ করতে পারে নাই। এই জনসংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৩৫% এর চেয়ে কোন অংশে কম নয়। এদের নেতৃত্ব দিতে পারেনি আওয়ামী লীগ।

আরেকটা কথা, এই যে সবকিছু বাদ দিয়ে আমাদের তারুণ্য শুধুই বিসিএসমুখী এটা কখনোই একটা দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়। কেন সেটা হচ্ছে, সমাধান কী সেটাও ভাবা উচিত। অার শুধু কোটা বা‌তিল বা সংস্কা‌রে ক‌রে সব সমস্যার সমাধান নয়, অা‌মি ম‌নে ক‌রি পুরো নি‌য়োগব্যবস্থা বি‌শেষ ক‌রে পরীক্ষা পদ্ধ‌তির সংস্কার দরকার। দরকার স্বচ্ছতা। সব ধর‌নের নি‌য়ো‌গে নম্বরপত্র প্রকাশ ও তা‌লিকায় কার কতোতম অবস্থান সেটা জানা‌নো জরুরী। অার রাষ্ট্র, সরকার, অা‌ন্দোলনকারী, পক্ষ বিপক্ষ সবাই‌কে বল‌বো, যে কোন অব্স্থানে গোয়ারের মতো থাকা কখনোই সমস্যার সমাধান নয়। বরং তথ্য প্রমাণ যু‌ক্তি উপাত্ত অার দে‌শের সা‌র্বিক স্বার্থ নি‌য়ে ভাব‌তে হ‌বে। কারণ সবাই এই দে‌শের মানুষ। সবার বি‌বেক‌বোধ জাগ্রত হোক।

অাবারও বল‌ছি, কোটা বা‌তিল নয়, সংস্কা‌রেই সমাধান।

সারাবাংলা/এমএম

বিজ্ঞাপন

সিইসি ও ৪ কমিশনারের শপথ আজ
২৪ নভেম্বর ২০২৪ ০১:৩৩

আরো

সম্পর্কিত খবর