এ দেশে কোন কালে কে কম্পিউটার সায়েন্স পড়ে আইসিটি মন্ত্রী?
৪ জানুয়ারি ২০১৮ ১০:০৭
এ দেশে আইসিটি মন্ত্রী কোন কালে কে কম্পিউটার সায়েন্স পড়া ব্যক্তি ছিলেন? মন্ত্রণালয় গঠন হতে অদ্যাবধি যারা ছিলেন; সৈয়দ আবুল হোসেন। তিনি ব্যবস্থাপনায় মাস্টার্স। ইয়াসেফ ওসমান – স্থাপত্য বিদ্যায় প্রকৌশলী ও কবি। জুনায়েদ আহমেদ পলক- এম এস এস (রাষ্ট্রবিজ্ঞান), এল এল বি করেছেন পরে। এটা বলছি না তারা আইটি কম জানেন। সে রকম মোস্তফা জব্বারও অনেক আইটি জানাশোনা মানুষ। তিনি বেসিস এর সভাপতি ছিলেন। আনন্দ কম্পিউটার্স নামে একটি আইটি রিসোর্সের হাউজ আছে তার। বাংলাদেশে জনপ্রিয়তম কী বোর্ড তার। তবু তিনি মন্ত্রী হতে পারবেন না? আইসিটি মন্ত্রী হতে হলে টাইপিং এপটিচিড টেস্ট দিতে হবে? মাইক্রোসফট অফিস এক্সেল চালিয়ে দেখাতে হবে?
মন্ত্রী ও কর্মীর একটি পার্থক্য আছে। মন্ত্রীকে দূরদৃষ্টি সম্পন্ন হতে হয় তাকে চেতনায় বড় হতে হয়। বড় স্বপ্ন দেখতে জানতে হয়। আশা করি সেটা মোস্তফা জব্বার আছে।
কেউ কেউ তাকে নিয়ে নানা কথা বলছেন। তার প্রতি কারো ক্ষোভ মেহেদী হাসান খানের অভ্র টুলসে বিজয় লে আউটে ব্যবহার না করতে দেয়া। আরে বাপ, আমরা ফেসবুকে দু লাইনের কবিতা লিখে যদি তার কপি পেস্ট এর জন্য ক্রেডিট দাবি করে ঝড় তুলি তবে জব্বার সাহেব তার প্রতিষ্ঠানের নাম কপি রাইট থাকা একটি লে-আউটের জন্য ক্রেডিট দাবি করবে না কেন? কপি রাইট মানে অনুমতি স্বাপেক্ষ ব্যবহার। মেহেদী যখনই অনুমতি নেন নি তখন মোস্তফা জব্বার প্রতিবাদ করলেন। এটা তার অপরাধ? কপি রাইট আইনে তিনি উকিল নোটিশ পাঠান। অভ্র পরে সমঝোতার মাধ্যমে বিজয় লে-আউট সরিয়ে নেয়।
কিন্তু তারা মোস্তফা জব্বার কে ছোট করতে ছাড়েনি। এই বিষয়টাতে আমরা বাঙালীরা সিদ্ধহস্ত। বড় না করি, ছোট করে এক হাত দিতে আমাদের জুড়ি নেই। বলা হয় তিনি কিসের লে-আউট করবেন? তিনি কী বুঝেন কম্পিউটারের? তিনি যে বুঝতেন না ঘটনা সত্য। কিন্তু বোঝার চেষ্টা করেছেন। একজন প্রেস ব্যবসায়ী থেকে কম্পিউটার ব্যবসায়ী হয়ে উঠেছেন ধীরেধীরে। গুটেনবার্গ কিংবা ক্রিস্টোফার ল্যাথাম প্রেসকে উন্নত করতে গিয়েই টাইপ মেশিন কীবোর্ড আবিষ্কার করেছেন। ল্যাথাম তো abcd কী-বোর্ড থেকে qwerty আবিষ্কারে ৭বছর গবেষণা করেছেন। টাইপিস্ট দের কাজ সহজ করার নেশা পেয়ে বসেছিল তাকে। মোস্তফা জব্বার ইউজার ফ্রেন্ডলি বাংলা কীবোর্ড ডেভলপ করার প্রধান স্বপ্নদ্রষ্টা। ৩০ বছর তিনি শুধু এটা নিয়ে কাজ করছেন!!!
আরেকটা অভিযোগ করা হয় তিনি টাকার জন্য কপিরাইট করে রেখেছেন।এটাও অন্যায্য দাবি মনে হয়। কপি রাইট তার প্রতিষ্ঠানের মেধাস্বত্ব নয় শুধু, কর্মস্বত্বেরও মালিকানা। জগদীশ চন্দ্র বসু রেডিও আবিষ্কারের গল্পটা জানেন তো। কপিরাইটের কারনে তিনি আবিষ্কারক নন। আমরা যে পরিমান জোচ্চর জাতি, তাতে দুই বছর পর যে কেউ বলবে এই লে-আউট আমার করা। সিনেমার কথাই ধরেন, তামিল সিনেমা কপি পেস্ট করে মালেক আফসারি বলে দিলো- এটা তার নতুন গল্প। পরে জানা গেল, অন্তরজ্বালা পুরোটাই জাল সিনেমা। কিন্তু এই জাল লোকেদের পক্ষে কথা বলার লোক সংখ্যায় খুব কম নয়, যারা ক্রিয়েটিভ নির্মাতাদের নাকানি চুবানি খাওয়াতে আদা জল খেয়ে নামে। উদ্দেশ্য হলো, আমি যদি উপরে না যাই তবে, উপর থেকে সবাইকে টেনে নামাতে হবে। তারেক জিয়া যেমন করে আর কি! তার বাপকে ঠেলে উপরে উঠাতে না পেরে, বঙ্গবন্ধুকে জিয়ার কাতারে নামানোর চেষ্টা করে।
কিন্তু তাতে কি উপর-নিচের ব্যবধান প্রকৃতই কমে?
লেখক : প্রাবন্ধিক
সারাবাংলা/এমএম