বিশ্বে গতি দিয়েছে চাকা, থামিয়ে দিয়েছে ‘ঢাকা’
৪ জানুয়ারি ২০১৮ ২০:৪০
ইশতিয়াক আহমেদ
নতুন বছর এলে আমরা একটু অন্যরকম হয়ে যাই। চাপ অনুভব করি। নতুন বছরকে একটা আলাদা কিছু ভাবি। নতুন বছর আমাদের জন্য সংখ্যার পরিবর্তন ছাড়া আর আলাদা কিছু না।
মহাত্মা শিবরাম চক্রবর্তী বলেছেন, যখনই নতুন বছর এসেছে এক বছরের বেশি টেকেনি।
অথচ আমরা বছরের পর বছর নতুন বছর নিয়ে মাতামাতি করি। প্রত্যাশা আর শপথের জলে গোসল করে ফেলি। বছর শেষে যখন সালতামামি দেখি তখন দেখি কিছুই হয়নি।
তাই আমার কাছে মনে হয়, আমাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে প্রত্যাশার একটা বিশাল স্তুপ তৈরি হয়। বারো রকম মানুষের তেরো রকম চাওয়া হলে, ষোল কোটি মানুষের সতের কোটি চাওয়া হয়ে যাওয়ার কথা। যে পরিমান কখনওই আসলে পূরণ হবার নয়।
তাই আমি চাই, প্রতিবছর আমাদের একটা করে প্রত্যাশা থাকুক। পুরো দেশ মিলে একটা প্রত্যাশায় ভাসুক। সে হিসেবে একটা প্রত্যাশা বছরে পূরণ হোক। কর্তৃপক্ষ একটা চাপ নিয়ে আমাদের একটা করেই চাপমুক্ত করুক।
আমার কাছে যদি জানতে চাওয়া হয়, আমার এ বছরের চাওয়া কী?
আমি চোখ বন্ধ করে বলে দেবো আমি যানজটমুক্ত হতে চাই। যানজটমুক্ত একটা দেশ চাই। একটা রাজধানী চাই। যানজটের ভয়াল থাবা থেকে ঢাকার মুক্তি চাই।
একটা দেশের রাজধানীতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো হয়। অথচ বছরের পর বছর যানজটে এই রাজধানী মৃত শহরে পরিণত হতে যাচ্ছে। বছরব্যাপী অসংখ্য কর্মঘন্টা, কাজের স্পৃহা নষ্ট করে দেয় আমাদের এই ঢাকা। জ্যামে, ঘামে আমরা স্থবির হয়ে থাকি রাস্তার মাঝপথে। নিরুপায়, অসহায় সেই সময়ে রাস্তাকে মনে হয় বিশাল সমুদ্র। আমরা ডুবে যাই গাড়ির অতলে।
বাধ্য হয়ে বলতে হয়, পৃথিবীকে গতি দিয়েছে চাকা, থামিয়ে দিয়েছে ঢাকা।
কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই এই শহরের যান এবং বাহনের ড্রাইভারদের ওপর। একদল অশিক্ষিত, সচেতনতাহীন পরিবহন-শ্রমিকরা এই যানজটের জন্য প্রথমত দায়ী। তাদের সাঙ্গে দায়ী তাদের কিছু বলতে না দেয়া তাদের এক শ্রেণীরর ক্ষমতাশালী নেতারা। ফিটনেসহীন গাড়ি নিয়ে নামতে পারার ক্ষমতা আর লাইসেন্স ছাড়া ড্রাইভার হয়ে যাওয়া ম্যাজিকে তারা হয়ে পড়ে বেপরোয়া। না মানে মানুষ, না মানে আইন। নিজেকে রাস্তার রাজা মনে করা, এলোপাথাড়ি থামিয়ে যাত্রী নেওয়ার মতো সাহস তাদেরকে করেছে উজ্জীবীত, শহরকে করেছে মৃত।
দ্বিতীয়ত, আমাদের সেবা প্রদানকারী সংস্থা। সেবা প্রদান এই রাজধানীতে এক আতংকের নাম। সেবা সাইনবোর্ড কোথাও বসালে মানুষ বুঝে যায় এক অনির্দিষ্ট কাল তাদের কষ্ট করতে হবে সংশ্লিষ্ট এলাকায়। সেবার নামে বছরব্যাপী চলে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি। যানবাহন চলাচলে ঘটে বিঘ্ন।
তৃতীয়ত, আমাদের ট্রাফিক বিভাগের গাফিলতি এবং অন্যান্য কারণ।
তবে এ সব কিছু ছাপিয়ে এখন আরও প্রকট এক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, আমাদের রাজধানীর ভিআইপিগণ। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর বিষয়টা না হয় একটা ব্যাপার। সাংবিধানিক শীর্ষপদের দুজন নির্বিঘ্ন চলাফেরার জন্য রাস্তা আটকাতেই পারেন। কিন্ত তাই বলে এখন যে কেউ গেলেই রাস্তা আটকে যায়। মনে হয়, সবাই ভিআইপি মর্যাদাপ্রাপ্ত।
যারা আটকাতে পারেন না, তারা আবার রং সাইডে গিয়ে জট সৃষ্টি করেন। দিন দিন এ সবের ব্যাপকতা বাড়ছে। সে সব ভিআইপিদের চেয়ে আরও বড় ভিআইপি হয়ে ওঠে তাদের ড্রাইভারগুলো। যারা উল্টোপাল্টা চালানো আর যত্রতত্র পার্ক করে যানজটকে বহুমাত্রিকতা দান করছে।
এমন হতে হতে একদিন সত্যি স্থির হয়ে যাবে এই শহর। এখন না হয় ঘন্টার পর ঘন্টা, নিকট ভবিষ্যতে সেটা দিনে রুপান্তরিত হয়ে গেলেও আশ্চর্যের কিছু থাকবে না।
তাই আমার চাওয়া, নতুন বছরে প্রতিটি মানুষ তার চলাচলে সতর্ক হোক। আমাদের পথ চলা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন হোক।
নতুন বছরে আমি সময়মত কাজে গিয়ে, সময়মতো বাড়ি ফিরতে চাই। আমি অফিসের সময়টুকু বা পরিবারকে দেওয়ার সময়টুকু রাস্তায় ব্যয় করতে চাই না।
সারাবাংলা/এমআই
দ্রষ্টব্য: এই কলামের সকল মতামতের দায়িত্ব লেখকের