মিডিয়ার বাড়াবাড়ি আর বিরক্ত বারেক সাহেব
২৯ অক্টোবর ২০১৮ ১২:৩৩
অধ্যাাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) ।।
গরম চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে মাত্র শলাকায় আগুন ধরিয়েছেন বারেক সাহেব। সামনে মেলে ধরা পত্রিকাটির প্রথম পাতা। ইদানিং এই পত্রিকাটাই প্রিয় বারেক সাহেবের। নিরপেক্ষতার নামে সরকারের যা কিছু খারাপ সেগুলোতো বটেই, যা কিছু ভালো সেগুলোকেও তিতা ক্যাপসুলে পুরে পাবলিককে গেলানোয় চ্যাম্পিয়ন এই পত্রিকাটি।
‘আচ্ছা, দলতো সুন্দর দুই চেয়ারম্যানকেই মাইনাস করে দিল। এখন ডাক্তার, উকিল আরো কত লোককে ধরে এনে নেতা বানানো হচ্ছে’, ভাবেন বারেক সাহেব। নিন্দুকেরা বলছে ‘ ঐক্য ফ্রড’! শুনলেই গা-টা জ্বলে যায় বারেক সাহেবের। কিন্তু করারইবা আছেটা কি? কিছুই করার নেই। মাঝে মাঝে তার নিজেরও যে অমনটা মনে হয় না তাও তো না। ‘আচ্ছা ওই পত্রিকাটির সম্পাদককে ধরে এনে এই ঐক্য ‘ফ্রন্ট’ কিংবা ‘ফ্রড’ ওটার আহবায়ক বানিয়ে দেয়া যায় না?’ এসব অচল মুদ্রার চেয়ে সেটা ঢের ভালো হতো বলে বিশ্বাস বারেক সাহেবের।
পত্রিকাটির আজকের প্রথম পাতার বড় শিরনামের শিকার বিরোধী দলের একজন রাজনীতিবিদ যিনি এক সময় আবার তাদের দলেরই মন্ত্রী ছিলেন। ভদ্রলোক অবশ্য পরে ডিগবাজি দিয়ে বিকল্প একটা দলের হাল ধরেছিলেন। বিকল্প ধারা তৈরী করতে পারেননি বটে তবে ডিগবাজি দেয়া বন্ধ করেননি। তাদের সময় ‘ডিগবাজি পরবর্তী উপনির্বাচনে’ ঢাকার রাজপথে সরকার সে সময়কার দলীয় ক্যাডারদের প্যাদানি খেয়ে আরো একবার পত্রিকার শিরোনাম হয়েছিলেন। হাল ছাড়েননি তবু। এবার যুক্তফ্রন্টে যুক্ত হতে যেয়েও শেষ মুহুর্তে আবার ডিগবাজি। শর্টকার্টে ক্ষমতার কাছাকাছি যাওয়ার বিকল্প খুজছেন হয়তো। ‘রবার্ট ব্রুস যদি সতের বারে পেরে থাকেন, তবে এ ভদ্রলোকেরও হবে একদিন’, ভাবেন বারেক সাহেব। ভদ্রলোক কোন এক ফাইনানশিয়াল ইন্সিটিটিউশনের পয়সা কড়ি মেরে দিয়েছেন আর তাই নিয়ে এত্ত বড় খবর ছাপিয়েছে পত্রিকাটা।
এসববের কারন অবশ্য একেবারেই বোঝেন না বারেক সাহেব। কথায় আছে না ‘চাদেরও কলংক আছে’। তাহলে উনার থাকবেনা কেন? খুঁজলে তো এমনি কতকিছু বের করা যাবে বারেক সাহেবের নামেও। ব্যবসায়ী কাম রাজনীতিবীদ হওয়ার দরকারটাই কি যদি হাত-মুখ ধুয়ে সতি-স্বাব্ধি হয়ে বসে থাকতে হয়?
‘না- মিডিয়ার বার ইদানিং একটু বেশিই বেড়েছে’, মনে মনে ভাবেন বারেক সাহেব। হঠাৎই মনে পড়লো সাদা চুলের বয়স্ক ভদ্রলোকের কথা। এনজিও-টেনজিও করে মানুষের চিকিৎসা-টিকিৎসা করেন। কারখানাও বানিয়েছেন বেশ কয়েকটা। ওষুধ থেকে জুতা, বানানও অনেক কিছুই। তো এসববের জন্য জমিতো লাগবেই। এক-আধটু জমি যদি দখল করেও থাকেন, এ নিয়ে এত চেচামেচির কি আছে? দখল করেছেন বলেইতো এখন হজম করার জন্য এক পা মাটির তলায় রেখে রাজনীতির ময়দানে অন্য পা-টা দিয়েছেন। না কথা নাই, বার্তা নাই একদল লোক প্লাকার্ড নিয়ে স্লোগান দিতে শুরু করলো আর তা নিয়ে শুরু হলো মিডিয়ার হৈ চৈ। দুষ্টু লোকে বলছে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে দুজন বয়স্ক লোকের চিকিৎসা করা ঝামেলা হবে বলেই তাকে ভেতরে ঢোকাতে দেরি হচ্ছে।
এসব আর কাহাতক সহ্য করা যায়? তাদের ফ্রন্টের আরো যত নেতা-টেতা, তাদেরওতো ছাড়ছেনা হতোচ্ছারা মিডিয়া। বেচারারা টুক-টাক চাঁদা-টাদা তুলে নেতাগীরি করেন, ফিনফিনে পাঞ্জাবি পড়ে বত্তৃতা-বিবৃতি দেন। না, তাও সহ্য হচ্ছে না মিডিয়ার। আর এরা চাঁদা তোলেনও তো নিজেদেরই এক সময়কার রাজনৈতিক সহকর্মিদের কাছ থেকেই। এক সময় এক সাথে প্রগতিশীলতার গানতো কতই গেয়েছেন। এখন তারা নিজ নিজ পেশায় প্রতিষ্ঠিত আর ইনারা নানা ঘাটের জল ঘোলা করে নোঙর করেছেন ঐক্যের ঘাটে। এক সময়ের সহকর্মীরা পুরোনো সম্পর্কের টানেই হয়তো টুক-টাক চাঁদা-টাদাও দেয়। বেচারারা ভাবতে শুরু করেছে ক্ষমতা বোধহয় চলে আসলো বলে। হয়তো চাঁদাটাও একটু বাড়িয়ে চেয়েছেন। তাই বলে এসবও কি মিডিয়ায় ছাপিয়ে দিতে হবে?
ক্ষমতা কি জিনিস তা ভালই চেনেন বারেক সাহেব। দশ বছর ধরে হয়তো ক্ষমতার স্বাদ পাননা, কিন্তু এক সময়তো ভালই পেয়েছেন। এ এক অদ্ভুত মোহ- ধরা দেয় তো দেয় না! সমস্যা হচ্ছে ঐক্যের নতুন কান্ডাারিরা বেশির ভাগই ক্ষমতার ধারে কাছে যাওয়ার সুযোগ পাননি, আর যাদের সুযোগ হয়েছে তাও দাদার আমালে। বুড়ো বয়সে ক্ষমতার হাতছানিতে হয়তো বালকসুলভ কাজ কারবার করে বসছেন, তাই বলে মিডিয়া এতটা বাড়াবাড়ি না করলেও তো পারতো।
অধ্যাাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) : চিকিৎসক ও কলাম লেখক।
[এই বিভাগের সব মতামত লেখকের নিজস্ব]