Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আগামী দিনে বিকল্পধারাই কি বিএনপির মূলধারা?


৩০ অক্টোবর ২০১৮ ২১:২২

সাম্প্রতিক সময়ের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বেশ কয়েকটি বিষয় অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে পর্যবেক্ষণ করার দাবি রাখে। আর তা করলে দেখা যাবে, বিএনপির চেয়ে ঐক্যফ্রন্ট এর কথাই এখন বেশি উচ্চারণ হচ্ছে। যে ঐক্যফ্রন্টের নেতা গণফোরামের সভাপতি ড.কামাল হোসেন। সাথে নামসর্বস্ব একক নেতার কিছু ছোট দল, আর সম্প্রতি বিএনপিও ঢুকে পড়েছে। ঐক্যফ্রন্টে বিকল্পধারা বাংলাদেশ- এর সভাপতি সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. বি. চৌধুরী যোগদান করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনি ঐক্যফ্রন্টে যুক্ত হননি। পাশাপাশি ঐক্যফ্রন্টের প্রথম সমাবেশে ড. কামাল, সুলতান মনসুররা বেশ কয়েকবার জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নাম প্রশংসার সাথে উচ্চারণ ছাড়াও পাশাপাশি জয়বাংলা স্লোগানও তুলেছেন । কিন্তু ‘শহীদ জিয়া’ বা খালেদা জিয়ার নাম ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল কোথাও উল্লেখ করেন নি। এই বিষয়সমূহ সমাবেশে উপস্থিতির সিংহভাগ বিএনপির লোকজন ভালোভাবে নিতে পারেননি।

বিজ্ঞাপন

পরবর্তীতে চট্টগ্রামের সমাবেশেও ড.কামাল খালেদা জিয়ার মুক্তি বা তারেক জিয়ার মুক্তির বিষয়ে কোন কথা বলেননি। চট্টগ্রামেও বিএনপির কর্মীদের তোপের মুখে পড়েন ড.কামালসহ ফকরুল গং। এই সময় বিরক্ত হয়ে ড.কামাল বলেন, আমরা খালেদা ও তারেক জিয়া মুক্ত বিএনপি চাই আবার পাশাপাশি ১৭ অক্টবর ২০১৮ ঐক্যফ্রন্ট এর শীর্ষ নেতা ড. কামাল এর দল গণফোরাম বলেছে, ঐক্যফ্রন্টের সাথে তারেক বা জামায়াত-এর কোন সম্পর্ক নেই।

বিজ্ঞাপন

বিএনপি বা ২০ দল যাদের আদর্শিক শক্তি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ এবং জিয়ার আদর্শকে বাস্তবায়ন করা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়া দুইজনই দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছে। তাদের বাদ দিয়ে বিএনপির অন্যান্য নেতা মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী ও বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী ড. কামালের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। এছাড়া ঐক্যফ্রন্টের আরেক নেতা সুলতান মনসুর বলেছেন, ক্ষমতায় গেলে দেশ পরিচালিত হবে ৭২ এর সংবিধানের আলোকে, যা কিনা বিএনপির মূল গঠনতন্ত্রের সাথে সাংঘর্ষিক । সেক্ষেত্রে জিয়ার আদর্শের কট্টর বাংলদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী মানুষরা বর্তমান নেতৃত্বের বিএনপির প্রতি কতটুকু আস্থা রাখতে পারবেন সেটি বড় প্রশ্ন। এছাড়া কট্টরপন্থী বিএনপির নেতারা এবং ২০ দলীয় জোটের অনেকেই ড. কামালের কার্যকলাপে স্বাচ্ছন্দবোধ করছেন না, তাও সকলের জানা।

ঠিক এই বিষয়গুলোর দিকে বিকল্পধারা বাংলাদেশ এর সভাপতি সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. বি,চৌধুরী অঙ্গুলি নির্দেশ করে বলেছেন , ‘শহীদ জিয়ার নাম নেয়া হয়নি ঐক্যফ্রন্টের সভায়। এই বিএনপি শহীদ জিয়ার আদর্শ ধারণ করে না।’ এই কথাগুলো বলে তিনি শহীদ জিয়ার আদর্শিক এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদীর মানুষদের আকৃষ্ট করতে চেয়েছেন। বিকল্পধারা বার বার বলছে, শহীদ জিয়ার আদর্শকে ধারণ করে আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে চান। সুনির্দিষ্ট এই কথাগুলো বলে বিএনপি ঘরানার মানুষদের তিনি বিকল্পধারার পতাকাতলে আবদ্ধ করতে চাইছেন। এরইমধ্যে বিএনপির সরকারের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও পরবর্তীতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এবং একসময় অবসর নেয়া রাজনীতি থেকে ড. শমসের মবিন চৌধুরী এবং ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি গোলাম সারোয়ার মিলন বিকল্পধারায় যোগ দিয়েছেন। এবং শিগগিরই অপেক্ষাকৃত নিষ্ক্রিয় ও সংস্কারপন্থী বিএনপির নেতারাও এতে যোগ দেবেন বলে আশা করছেন বিকল্পধারার নেতারা।

আরেকটি বিষয় বিএনপি প্রায় সময় বলে, মুক্তিযোদ্ধার দল বিএনপি। তবে জন্মের লগ্ন থেকে তাদের কার্যকলাপে বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল কি না সি বিষয়ে প্রশ্ন উঠে আসছে। বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা গোলাম আজমের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয়া , রাজাকার আব্দুর রহমান বিশ্বাসকে রাষ্ট্রপতি বানানো এবং সর্বশেষ যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও মুজাহিদ কে বিএনপি জোট সরকারের মন্ত্রী বানিয়েছে। সেক্ষেত্রে সত্যিকার মুক্তিযুদ্ধের সমর্থিত বিএনপির নেতৃবৃন্দ মনে মনে ক্ষুব্ধ থাকলেও খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়ার ইচ্ছার কারণে কোন প্রতিকার করতে পারেন নি। আজকে বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়া দুজনেই সাজাপ্রাপ্ত দণ্ডিত আসামি।

মুক্তিযুদ্ধের সমর্থিত সত্যিকার বিএনপির নেতাদের মনোজ্বালা টের পেয়ে বি. চৌধুরী অতীতে তার কর্মকাণ্ডের সাথে স্বাধীনতার বিরোধী শক্তির যোগাযোগের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। এবং বলেছেন বিকল্পধারা আগামী দিনে স্বাধীনতা বিরোধী কোন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোন শক্তির সাথে যুক্ত হবে না।

তাছাড়া ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে বারবার বলেছেন, বিএনপিকে পরিষ্কার করতে হবে স্বাধীনতার বিরোধী শক্তি জামায়াতের সাথে তাদের সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। বিএনপি এই বিষয়টি পরিষ্কার করেনি বলে ঐক্যফ্রন্টে বিকল্পধারা যোগ দেয়নি। কারণ বিএনপি ঐক্যফ্রন্টে থাকলেও ২০ দলীয় জোটে বিএনপির সাথে জামায়াত রয়েছে। ঐক্যফ্রন্টের অনেক নেতা মুখে এক কথা বলে কার্যত স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির সাথে হাত মিলিয়ে জনগণের সঙ্গে ভাওতাবাজি করেছেন।

কারণ এরইমধ্যে বিকল্পধারার অন্যতম নীতিনির্ধারক মাহি বি. চোধুরী ঐক্যফ্রন্টের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্নাকে বলেছেন , ঐক্যফ্রন্টের নেতারা জনগণকে ধোঁকা দিয়েছে। এই সবের মাধ্যমে বিকল্প ধারা জিয়ার আদর্শের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিএনপির একটি ঠিকানা হতে পারে এবং বিএনপির অনেকেই যোগদান করতে পারে।

আগামী দিনে এই বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তির রাজনীতিই প্রাধান্য থাকুক- এটাই প্রগতিশীল রাজনীতির সচেতন জনগণ মনে করে। সে ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের দল শক্তিশালী আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিশালী বিরোধীদল দরকার। কেননা শক্তিশালী বিরোধীদল একটা দেশের গণতন্ত্রকে সংহত করা , সুশাসন ও জবাবদিহিতার জন্য খুবই দরকার। কিন্তু সেটা হতে হবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের।

বিকল্পধারা সেক্ষেত্রে তাদের বর্তমান অবস্থান ধরে রাখতে পারলে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের একটি বিরোধীদল হতে পারবে। বর্তমানে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী ও জিয়ার আদর্শিকদের এবং আওয়ামী বিরোধীদের ঠিকানা হতে পারে এই বিকল্পধারা।

এছাড়া জাতীয়পার্টির এরশাদ না থাকলে জাতীয়পার্টির অনেকেই যারা আওয়ামী লীগ বিরোধী তারাও বিক্লপ ধারায় সামিল হতে পারবে।
ভবিষৎই বলে দিবে বিকল্পধারা সত্যি কি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের দল কি না !

ড. বিদ্যুৎ বড়ুয়া, সাবেক ভিপি , ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্রসংসদ, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
[email protected]

খালেদা ড. কামাল তারেক বি চৌধুরী বিএনপি বিকল্পধারা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর