প্রিয় প্রিয়তি আমার
৩১ অক্টোবর ২০১৮ ১৩:৩৩
শান্তা তাওহিদা ।।
প্রিয় প্রিয়তি, তোমাকে নিয়ে যতই ভাবছি আর মুগ্ধ হচ্ছি। এই মেয়ে, তুমি কী জানো তুমি যে অসামান্যা? নাহ তুমি জানো না । যদি জানতে তবে, তোমার তারার মতন চোখে কান্না হয়ে বৃষ্টি ঝরতো না। আজ তোমার তারার মতো চোখের বৃষ্টিকণা স্ফটিক হয়ে আলোর প্রতিফলনে ছেয়ে দিয়েছে গোটা পৃথিবীটা।
এই যে মেয়ে রাজকন্যা আমার, তুমি আর কেঁদো না। এত জল কোথায় ঠাই হবে বল? তোমার ঝড় জলোচ্ছাসে আজ একেবারে ভিজে ভেঙ্গে চূরে গেছি । তোমার থেকে দুই মহাদেশ দূরে থেকেও আমি প্রতিনিয়ত তোমার থোকা থোকা দুঃখ টের পাচ্ছি। আমার দেশে এখন কেবল সন্ধ্যা আর তোমার দেশে মধ্যরাত। তবু তোমার আমার অভিন্ন আকাশ। আজ সন্ধায় যে মেঘেরা তোমার দুঃখ ছুয়ে এসেছে তারা আমার আকাশে এসে ঝরিয়েছে কান্না। আমার বুকের ভেতরে আজ সারাদিন তোমার তোলপাড়। কখনো ঝড় আসার আগের থমথমে আকাশ দেখেছ? ভীষণ রকম থমথমে আকাশ। সেই আকাশে চঞ্চল চপলা মেঘও মাঝে মাঝে দস্যি কাল মেঘ হয়ে উঠে । ঠিক তোমার মতন।
শোন মেঘ বালিকা আমার, মেঘবালিকার আকাশে মাঝে মাঝে ঝড়ো বাতাস বয়। হালকা পেজো তুলোর মতন মেঘও কখনো সখনো হার মানতে বাধ্য হয় । কিন্তু সেই হার কেবল ক্ষণিকের । দস্যি মেয়ে হয়ে সে একাই হারিয়ে দেয় ঝড়ো বাতাসকে । মেঘবালিকার দস্যিপনা দেখে বাতাস এক সময় ভয়ে পালায়। তারপর আরও অনেক অনেক মেঘবালিকা এসে বন্ধু হয় তার। মেঘবালিকা সকল সখিদের নিয়ে তার হাতের আলতো নরম ছোঁয়ার আকাশটাকে আবার সাজিয়ে তোলে সাত রঙা রামধনুতে। তারপর, বিজয়িনীর বেশে চরে বেড়ায় তার স্বপ্নের আকাশে। সেই আকাশটা দেখতে অদ্ভুদ সুন্দর লাগে। নব কিশোরী মেঘেরা ভিড় করে মেঘবালিকার চারপাশে। আর সে তো একেবারে বীর দর্পে বলতে থাকে, কী করে সে একাই হারিয়ে দিয়েছে বুনো ঝড়ো বাতাসকে । তাই শুনে নবীন কিশোরী মেঘবালিকারা শুধু বাহবা বাহবা দেয়, তা নয়। বরং মনে মনে নিজেদের তৈরি করে বুনো বাতাসকে শক্ত হাতে মোকাবেলা করার জন্য।
এই দেখো, আমি তোমাকে শুনাচ্ছি আকাশ আর মেঘবালিকার গল্প। সে গল্প তো তুমি আমার চেয়ে ভাল জানো মেয়ে। তুমি নিজেই তো আকাশে উড়ে বেড়াও মেঘেদের সাথে। মেঘবালিকার সাথে তো আমার থেকে তোমার বরং বেশি সখ্যতা । ইশ তোমাকে আমার খুব হিংসে হচ্ছে। তোমার মত পাইলট হতে পারিনি বলে। একদিন তোমার কাছে আমি তোমার আকাশে উড়ার গল্প শুনতে আসব, কেমন?
আজ তোমার গায়ে জড়িয়ে নেয়া তোমার বিশ্ব ভ্রমান্ডের ছবি যতবার দেখছি ততবার ভাবছি। এইতো সেই মেয়ে যে দূর থেকে পৃথিবীর জন্য কাঁদছে । হয়তো সেই কারণেই দূর অচিনপুর থেকে আমি শুনছি তোমার কান্না। তুমি সত্তিকারের মিস আর্থ । তোমার মত করে কজন ভাবে এভাবে? কজন শুনতে পায়পৃথিবীর জন্য বিশ্ব ভ্রমান্ডের নীলচে কান্না?
কোন এক বুনো ঝড় বাতাসের জন্যে তো তুমি থেমে যাবে না। এত সহজে তোমাকে হারতে দিতে তুমি পারো না। বজ্র হয়ে আগুনে পুড়ে ঝলসে দাও বুনো ঝড়কে। তারপর বিজয়িনীর বেশে নবীন কিশোরী মেঘদের তৈরি কর। তোমার এখন একদন্ড অবকাশের সুযোগ নেই। অনেক অনেক কাজ সামনে পরে আছে তোমার …। আর ভুলো না যেন যে, আমরাও আছি তোমার দলে।
শুধু একটাই অনুরোধ তোমার কাছে তুমি আর কেঁদো না।
তোমার আকাল নীল চোখে কান্না মানায় না প্রিয় প্রিয়তি আমার।
সারাবাংলা/ এসএস
[এই বিভাগের সব মতামত লেখকের নিজস্ব]