Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ক্ষমতামুখী নয়, রাজনীতিমুখী সংলাপই অর্থবহ


২ নভেম্বর ২০১৮ ১৫:৩৮

ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া ।।

১ নভেম্বর ২০১৮ বাংলাদেশের রাজনীতিতে অন্যতম দিন। আওয়ামী লীগের সরকার প্রধান শেখ হাসিনার সাথে কোনো তৃতীয়পক্ষের সহযোগিতা ছাড়াই বিরোধীপক্ষের জোট ড. কামালের নেতৃত্বে একই টেবিলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ রাজনৈতিক আলাপ আলোচনা হয়েছে। সুস্থ ধারার রাজনীতির ইতিবাচক দিনের সূচনা হলো। কয়দিন আগেও দুপক্ষের মধ্যে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার উত্তাপ ছিল। ঐক্যফ্রন্ট তো আওয়ামী লীগ সরকারকে কঠিন শাস্তির দেওয়ার কথাও উল্লেখ করেছিল। সুস্থ গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনীতির চেয়ে আলাপ-আলোচনা আরো বেশি ভূমিকা রাখতে পারে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুই শক্তি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এর মধ্যে এতো সংঘাতময় রাজনীতি কেন? পোস্টমর্টেম করলে সহজেই দেখা যায় ১৫ অগাস্ট ১৯৭৫ এর পরবর্তী ঘটনা এবং ২১ অগাস্ট ২০০৪ শেখ হাসিনার উপর গ্রেনেড হামলা সাংঘর্ষিক রাজনীতির পিছনে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার বন্ধে ইনডেমনিটি বিল পাশ ও রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা প্রদানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান এর ভূমিকা এবং ২১ আগস্ট ২০০৪ তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে গ্রেনেড হামলায় খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৃষ্ঠপোষকতা আওয়ামী লীগ কখনো ভুলতে পারে না আর কখনো পারবে না।

পাশাপাশি বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতাকারী জামাত-শিবির ও যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসন এবং রাষ্ট্রের ক্ষমতার অংশীদার করার ক্ষেত্রে বিএনপির ভূমিকা প্রগতিশীল রাজনীতির ধারক ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগের চিন্তাচেতনার বিরোধী। সেই ১৯৭৫ থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ এর সাথে পরে গঠিত হলেও বিএনপির রাজনীতি আদর্শিকভাবে সাংঘর্ষিক এবং উল্লিখিত ঘটনাসমূহ আরো বেশি সহিংস হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সর্বশেষ ১০ বছর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা থাকাকালীন রাজনৈতিক প্রাজ্ঞতায় বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারের রায় এবং স্বাধীনতা পক্ষশক্তির প্রাণের দাবি শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায় কার্যকর করেছে। পাশাপাশি ২১ শে অগাস্ট গ্রেনেড হামলার রায় ঘোষিত হয়েছে যেখানে বিএনপির কো-চেয়ারম্যন তারেক রহমানের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় হয়েছে। ২০০৭ সালে কেয়ারটেকার সরকারের দায়েরকৃত জিয়া এতিমখানা মামলায় খালেদা জিয়ার ১০ বছরের সাজা ও চ্যারিটেবল ট্রাস্ট এর মামলায় ৭ বছরের কারাদন্ড আদালত কর্তৃক ঘোষিত হয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধে বিরোধিতাকারী জামাত শিবিরের নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন আদালতের নির্দেশে। বিএনপির গঠনতন্ত্রে উল্লিখিত ‘দণ্ডিত ব্যক্তি সংগঠনের সর্বোচ্চ পদে থাকিতে পারিবে’ -তার বিরুদ্ধে আদালত কর্তৃক রায় হয়েছে। অর্থাৎ খালেদা জিয়া বা তারেক জিয়া বিএনপির সর্বোচ্চ পদে থাকতে পারবে না।

বিএনপি আজীবন যাদের নিয়ে ক্ষমতা থেকে শুরু করে রাজনীতির মাঠে শক্তি নিয়ে ঠিক ছিল, সেই জামাত শিবির আজ নিবন্ধনহীন। পাশাপাশি বিএনপি নিজ দলে খালেদা বা তারেক জিয়ার পদ নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন। এই সব কিছুর জন্য বিএনপির শীর্ষ নেতারা আওয়ামী লীগ সরকারকে দায়ী মনে করে। কিন্তু বিএনপি সরকার থাকা অবস্থায় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া ২১ সে অগাস্ট এর মতো জঘন্য ও নৃশংস হামলা সম্ভব না।

আসলে রাজনীতি হচ্ছে কৌশলের খেলা। কিন্তু আপনি যদি অপকৌশল ও হিংসাত্মক সহিংসতার আশ্রয় নেন সেখানে আপনি বেশিদিন ঠিকতে পারবেন না। আজকের বিএনপির বর্তমান অবস্থানের কারণ তাদের জন্মলগ্ন থেকে সবসময় বিরোধী মত ও দলের প্রতি অপকৌশল ও হিংসাত্মক সহিংসতা। তার ফলাফল আজ ভোগ করছে বিএনপি।

দেশের উন্নয়নের স্থিতিশীলতার জন্য রাজনৈতিক দল সমূহের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব রাজনৈতিক দূরদর্শিতায় অনেক বেশি পরিপক্ব। তাছাড়া দেশের ক্রম বর্ধমান আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সূচকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করছে। বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রপ্রধানরা বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করতে পিছপা হচ্ছেন না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী ও দূরদর্শী নেতৃত্ব আজ অনেক বিশ্ব নেতাদের আদর্শ।

আমরা যদি মোটা দাগে চিন্তা করি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গঠনমূলক আলোচনা বা সমলোচনার জন্য মুক্তিযুদ্ধের কোন শক্তিশালী পক্ষশক্তি গড়ে উঠেছে কি না? উঠেনি। অনেকেই বিএনপির কথা বললেও বিএনপি কি আদৌ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তির কথা বলে? বিএনপির কর্মকান্ড কিন্তু তা বলে না। বিএনপি জন্মলগ্ন থেকে যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসন ও ক্ষমতার ভাগাভাগিতে যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রীত্ব প্রদান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির বিষয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার স্বার্থে বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল মুক্তিযুদ্ধের কথা বলুক মনে ও মগজে। ধারণ করুক মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। অন্তত জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে কোন দ্বিমত না থাকে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে স্বীকার করে গড়ে উঠুক সকল দলের রাজনীতি।

তাই তো জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, সংলাপের জন্য বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনাকে যে পত্র দিয়েছেন সেখানে বঙ্গবন্ধুর কথা বলেছেন বেশ কয়েকবার। ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে বিএনপির নেতৃত্বের সামনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার জয়বাংলা স্লোগান ও বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারিত করেছে বেশ কয়েকজন নেতা। বিএনপির নেতৃত্ব তা মেনেও নিয়েছেন, মনে নিতে না পারলেও। ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন একসময় বঙ্গবন্ধুর সাথে রাজনীতি করেছেন। আজ সেই ড. কামাল এর দ্বারস্থ হয়েছেন কৌশল ও নেতৃত্বের জন্য। শেষ পর্যন্ত সেই জয়বাংলা বলা ও বঙ্গবন্ধুর সাথে রাজ্নীতি করা ড. কামালই তাদের উদ্ধারকর্তা। তাই বলে বিএনপির আদর্শিক পরিবর্তন হয়েছে তা বলছি না। কেবলমাত্র সাময়িক শেল্টার নিয়েছেন ড. কামালের কাছে। এই কথা ড. কামাল ও জানেন। তাই তো সত্য কথা ড. কামাল এর মুখ থেকে শোনা যায় খালেদা ও তারেক মুক্ত বিএনপিই চাই। কারণ খালেদা ও তারেকমুক্ত বিএনপিই কেবল মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের দল হতে পারে।

সময় আর বাস্তবতার সাথে অভিযোজিত হতে হয় নিজেকে ঠিকিয়ে রাখতে চাইলে। ক্ষমতা থাকা অবস্থায় তারেক জিয়ার রাজনৈতিক অপকর্মের জন্য বিএনপি আজ অনুতপ্ত নিচ্ছয়। নিজেদের অভিযোজিত করে বিএনপি বাস্তবতা ও সত্যকে মেনে নিলেই টিকে থাকবে। সত্য হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু এর বিষয়ে কোন প্রশ্ন রাখা যাবে না। সত্য হচ্ছে মতের ভিন্নতা হলেও সহিংস রাজনীতি করা যাবে না।

ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামালের মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে কোন প্রশ্ন নেই বলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংলাপে বসা সহজ হয়েছে। যে সংলাপ শুরু হয়েছে তা যেন শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার সংলাপ না হয়। রাজনীতির গুনগতমান পরিবর্তনের সংলাপ হয়।

রাজনীতিমুখী সংলাপ এর মাধ্যমে সকল রাজনীতিবিদ মতামত এর মাধ্যমে আমাদের সকলের প্রিয় স্বদেশকে সহিংসতাপূর্ণ কর্মকান্ড থেকে রক্ষা করতে পারি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুয়ার আলাপ আলোচনার জন্য সবসময় খোলা- এই কথার মাধ্যমে তিনি তার উদারতাই প্রকাশ করেছেন। সংলাপ ,আলাপ আলোচনা শুধু নির্বাচনের আগে যেন না হয়। এই ধরণের গঠনমূলক আলোচনা নির্বাচন পরবর্তী সময়ও সকল রাজনীতিবিদের মাঝে হওয়া উচিত।শুধুমাত্র ক্ষমতার ভাগবাটোয়ারার জন্য সংলাপ দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর হয় না। কেবল মাত্র সুস্থ ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনীতির জন্য সংলাপ যেন চলমান থাকে। রাজনীতিবিদদের এই জন্য দায়বদ্ধতা রয়েছে জাতির কাছে। সুস্থ ধারার রাজনীতিমুখী সংলাপই কেবল দেশ ও জাতির জন্য অর্থবহ ভূমিকা পালন করতে পারে।

ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া, সাবেক ভিপি, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্রসংসদ
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

সারাবাংলা/এমও

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর