Monday 21 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নির্বাচন পেছানো নিয়ে তিনপক্ষের তৃতীয় হাত


১৫ নভেম্বর ২০১৮ ১৫:৪১

বাঙালিদের নাকি হাত তিনটা- ডান হাত, বাম হাত আর অজুহাত। নির্বাচন পেছানো নিয়ে তিনপক্ষের যুক্তি-পাল্টা যুক্তি শুনে আমার খালি বাঙালির এই তৃতীয় হাতের কথাই মনে পড়ছে।

রাজনৈতিক দলগুলোকে অাস্থায় না নিয়ে, কারো সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে, বিরোধী দলকে অপ্রস্তুত রেখে ৮ নভেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা। জাতীয় ঐকফ্রন্ট যখন দেখলো তাদের ছাড়াই নির্বাচনী ট্রেন চলতে শুরু করেছে, তখন তারা তাড়াহুড়ো করে ট্রেন ধরতে দৌড়াতে শুরু করলো। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিল। তবে দাবি জানালো নির্বাচন একমাস পিছিয়ে দেয়ার। যুক্তফ্রন্টসহ আরো কয়েকটি দল ও জোটও নির্বাচন পিছিয়ে দেয়ার দাবি জানায়। আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও জানিয়ে দেন, নির্বাচন পেছানোর এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের। পেছালে তাদের আপত্তি নেই। কিন্তু কোনো দলের সাথে আলোচনা না করেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার পরদিন ইভিএম প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নির্বাচনের পুনঃতফশিল ঘোষণা করে দিলেন।

বিজ্ঞাপন

আওয়ামী লীগ, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, বিএনপি, ঐক্যফ্রন্ট

বিশ্বের ইতিহাসে এই প্রথম মনে হয় কোনো সিইসি কোনো প্রদর্শনীতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলেন। তার এই নজিরবিহীন ঘোষণা আরো জটিল করেছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বলছে, এক সপ্তাহ পেছালে তাদের চলবে না। তাদের একমাসই লাগবে। আমি বলছি না, ঐক্যফ্রন্ট যেভাবে চায় নির্বাচন কমিশনকে সেভাবেই চলতে হবে। কিন্তু তফসিল পুনঃনির্ধারনের আগে নির্বাচন কমিশন ঐক্যফ্রন্টের সাথে আলোচনা করে নিলেই এই জটিলতা তৈরি হতো না। তখন হয়তো ঐক্যফ্রন্টকে এক সপ্তাহে না হলেও দুই সপ্তাহ পেছানোতে সম্মত করা যেতো। কারণ ঐক্যফ্রন্টও নিশ্চয়ই তাদের হাতে কিছু রেখেই দাবিটা করেছিল। কিন্তু নির্বাচন কমিশন ঐক্যফ্রন্টের দাবি না শুনে যুক্তফ্রন্টের দাবি মেনে নির্বাচন এক সপ্তাহ পিছিয়ে নতুন জটিলতা তৈরি করেছে।

বিজ্ঞাপন

এবার আসি বাঙালির তৃতীয় হাতের কথায়। ঐক্যফ্রন্ট বলছে ৩০ ডিসেম্বর ভোট তারা মেনে নেবে না, কারণ তখন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বড়দিনের ছুটির আমেজ থাকবে, পরে থাকবে নববর্ষ উদযাপনের প্রস্তুতি। তাই তখন বিদেশী পর্যবেক্ষক বা কূটনীতিকরা থাকবে না। প্রথম কথা হলো, বিদেশীদের ছুটির সাথে মিলিয়ে বাংলাদেশের নির্বাচনের তফসিল নির্ধারনের আবদার জাতি হিসেবে আমাদের জন্য লজ্জার। তবে তাদের দাবিটি আমাদের কাছে অজুহাত মনে হচ্ছে, কারণ ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছিল ২৯ ডিসেম্বর। সে নির্বাচনে বিএনপিসহ প্রধান প্রধান সবগুলো দল অংশ নিয়েছিল। ২০০৮ সালে ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচন হতে পারলে, ২০১৮ সালে ৩০ ডিসেম্বর হতে পারবে না কেন?

এক দফা পেছানোর ব্যাপারে আপত্তি ছিল না আওয়ামী লীগের। কিন্তু এখন তারা বলছে, আর একদিন, এমনকি এক ঘণ্টাও নির্বাচন পেছানো যাবে না। নির্বাচন না পেছানোর যুক্তি হিসেবে তারা বলছে, জানুয়ারি মাসে করতে গেলে নানান জটিলতা সৃষ্টি হবে। ১ জানুয়ারি যে কয়েক লাখ তরুণ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হওয়ার যোগ্য হবে, তাদের কেউ যদি রিট করেন, তাহলে পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়াই আটকে যেতে পারে। এই যুক্তিটিকেও আমার কাছে অজুহাত মনে হচ্ছে। কারণ তফসিল ঘোষণার পর ভোটার তালিকায় আর নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্তির সুযোগ নেই। তারচেয়ে বড় কথা হলো, ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছিল ৫ জানুয়ারি। ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারি নির্কাচন হতে পারলে, ২০১৯ সালে জানুয়ারি মাসে নির্বাচন হতে পারবে না কেন?
তবে নির্বাচন না পেছানোর সবচেয়ে হাস্যকর যুক্তিটি দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা। তিনি বলেছেন, নির্বাচনের পর ২৯ জানুয়ারিতেই সংসদ বসতে হবে। কিন্তু এই যুক্তি তিনি কোথায় পেলেন বুঝতে পারছি না। সংবিধানের ১২৩(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ‘মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভাঙিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে এবং মেয়াদ অবসান ছাড়া অন্য কোনো কারণে ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সাধারন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে’। দশম সংসদের মেয়াদ অবসান হবে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি। তাই ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে যে কোনো দিন একাদশ সংসদ নির্বাচন হতে বাধা নেই। আর সংসদের অধিবেশন ডাকার এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির। তাই ২৯ জানুয়ারির মধ্যে সংসদের অথিবেশন বসতে হবে, এ যুক্তি সবচেয়ে বড় অজুহাত এবং হাস্যকর।

নির্বাচনের তফসিল দেয়ার এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের। তারা সেটা পেছাবেন কি পেছাবেন না, সেটাও তাদের এখতিয়ার। কিন্তু সেটার জন্য এমন হাস্যকর যুক্তি আনতে হবে কেন? তিনপক্ষই আসল কথাটি মনে রেখে অজুহাতগুলো সামনে আনছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বলছে না, আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেই। আওয়ামী লীগ বলছে না, বিরোধী দলকে আমরা সুযোগ দিতে চাই না। নির্বাচন কমিশন বলতে পারছে না, সরকারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাওয়ার মত সাহস তাদের নেই।

প্রভাষ আমিন, বার্তাপ্রধান, এটিএননিউজ
১৫ নভেম্বর, ২০১৮

সারাবাংলা/এমএম

নির্বাচন

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর