প্রধানমন্ত্রী নির্ধারণ করতে পারেনি বিএনপি!
৩০ নভেম্বর ২০১৮ ১৮:৩০
সরকার গঠন করলে কে তাদের সংসদ নেতা হবেন বিএনপি এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা দিতে পারেনি। দেশের মানুষকে অন্ধকারে রেখে বিএনপি নির্বাচনে যাচ্ছে। যদিও প্রত্যেকটা ভোটারের জানার অধিকার আছে তাদের ভোটে কোনও দল জিতলে কে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন। সম্ভবত বিএনপি নিজেও এ ব্যাপারে ঠান্ডা মাথায় কোন চিন্তা করেনি। অথবা তারা সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি কে তাদের প্রধানমন্ত্রী হবেন।
সম্প্রতি আদালতের রায়ের পর খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশগ্রহণে অযোগ্য হয়েছেন। তার ছেলে তারেক রহমান বিদেশে পলাতক থাকায় নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না। সংবিধান অনুসারে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মুখ্য যোগ্যতা হচ্ছে তাঁকে সংসদ সদস্য হতে হবে। আপাতত তাদের দুজনের কারোরই সে যোগ্যতা থাকছেনা। দল বিজয়ী হলে অনেক কিছুই হতে পারে। ফলে ইনডিমিনিটি বা সাধারণ ক্ষমা নিয়ে আসলেও নৈতিকভাবে তারা প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। ড. কামাল হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ দুই মিনিটে সবকিছু ঠিক করে দেন বলে জনশ্রুতি আছে। অন্তত নির্বাচনকে ঘিরে বৈঠকের আগে সাংবিধানিক জটিলতা সমাধান নিয়ে এমন কথা তারা বলেছেন। তারা যদি মনে করেন সাংবিধানিক জটিলতা কাটিয়ে তুড়ি মেরে খালেদা জিয়া বা তারেককে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী করা সম্ভব , তা হলেও প্রধানমন্ত্রী কে হবেন সেটা এখুনি বলা উচিত। বিএনপির অংশগ্রহণে নবগঠিত নির্বাচনী জোট ঐক্যফ্রন্টের বর্তমানে প্রধান নেতা ড কামাল হোসেন। তিনিও সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় তিনিও প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন না। প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হচ্ছে একটি দলের এর সূর্যের মতো। যাকে দেখে জনগণ সেই দলের কাছে ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা নির্ধারণ করে । কিন্তু বিএনপি সেই সূর্যটা ঢেকে রেখেছে অথবা তারা সূর্যের সন্ধান এখনো পায়নি।
এটা অস্বীকার করার উপায় নেই বিএনপি গত ১০ বছর আগোছালোভাবে দল পরিচালনা করেছে! তারা বিভিন্ন সময়ে লক্ষ্যহীন ভাবে এগিয়েছে। অনেকবার নির্বাচন ব্যবস্থা, নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে বহু ধারণা দিলেও দেখা যেত সেসব ধারণা প্রায়শই অচিন্তিত, অপরিকল্পিত, গবেষনা হীন। তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা যদি এখনো আগোছালো হয়ে থাকে, প্রধানমন্ত্রী কে হবেন তা যদি এখনো অনির্ধারিত থেকে যায় তাহলে বিজয়ী হলে আগামীর সরকার একটি বিশৃংখল সরকার হবে, আশংকা করা বাহুল্য। যদি নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে পরাজিত করাই় বিএনপির লক্ষ্য হয়ে থাকে তবে আগোছালো ও লক্ষ্যহীন বিজয় ধরে রাখা সহজ হবে না।
প্রথমে বিএনপিকে নির্ধারণ করতে হবে কে তাদের প্রধানমন্ত্রী হবে। সেটা প্রকাশ করতে হবে। যদিও এটা প্রেসিডেনশিয়াল ইলেকশন নয়। সংসদ নির্বাচন। সংসদে প্রধানমন্ত্রী যেহেতু সর্বেসর্বা সেহেতু প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, কেমন হবেন, তা নির্বাচনী ম্যান্ডেটের সময় প্রকাশ করতে হবে।
খালেদা জিয়া বা তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী না হলে, ভারতের মনমোহন সিং স্টাইলে কাউকে প্রধানমন্ত্রী করতে পারেন। এটার সম্ভাবনা এখন পর্যন্ত বেশী। মনমোহন সিং একজন প্রগাঢ় ব্যক্তিত্বের অর্থনীতিবিদ। কিন্তু বিএনপির এ সংক্রান্ত অতীত ইতিহাস জাতির জন্য সুখকর ছিল না। রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দৌজা চোধুরী বিতাড়নের পর বিএনপি এমন কাউকে চাইছিল যিনি প্রকৃতই মেরুদণ্ডহীন হবেন। যার নিজের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের ক্ষমতাতো নয়ই… সক্ষমতাও থাকবেনা। এভাবে ইয়াজউদ্দিন আহমেদ রাষ্ট্রপতি পদে অভিষিক্ত হন। তার জন্য দু’বছর খেসারত দিতে হয় বাংলাদেশকে। ব্যক্তিত্বহীন পুতুল প্রধানমন্ত্রী হলে তার জন্য কি খেসারতই জাতিকে দিতে হবে?
জোট গঠনের প্রথম দিকে ডা. জাফরুল্লাহ টিভি টকশোতে বলেছিলেন মির্জা ফখরুল প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের যে জনপ্রিয়তা এবং ইমেজ তাতে তিনি প্রধানমন্ত্রী হলে স্বাগত হবেন। কিন্তু তিনিও কি বিএনপিতে সর্বেসর্বা? তিনি কি স্বাধীনভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারবেন? এ প্রশ্নগুলো কিন্তু থেকেই যায়। কিংবা অন্য কেউ যদি প্রধানমন্ত্রী হয় তিনি কতটা স্বাগত হবেন, তিনি কতটা নিজের প্রজ্ঞায় রাষ্ট্রপরিচালনায় স্বাধীন হবেন, এ প্রশ্নগুলোর উত্তর জরুরি।
মনোয়ার রুবেল: ফ্রিল্যান্স রাইটার
ইমেইল : [email protected]