Sunday 06 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রবাস সরকারের প্রত্যাবর্তন : কিছু কথা


১০ জানুয়ারি ২০১৮ ০৯:১৯ | আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৮ ১৬:০৯

প্রবাসে সরকার গঠন করে একটি দেশের মুক্তি সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে বিজয় অর্জনের নজির বিশ্ব ইতিহাসে বিরল। সেই বিরল, দু:সাধ্য, মানচিত্র পরিবর্তনকারী ঘটনাটিই ঘটিয়ে দেখিয়েছিল তাজউদ্দীন আহমদের প্রবাসী সরকার। যা মুজিবনগর সরকার নামেই বেশি পরিচিত।

যুদ্ধের ন’ মাস এই সরকারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে কঠিন সব পরিস্থিতি। সরকার গঠনে জটিলতা, বিভিন্ন বিষয়ে যুব নেতাদের প্রবল বিরোধীতা, সিদ্ধান্ত নিতে ভারত সরকারের দ্বিধা, সরকারের স্বীকৃতির প্রশ্নে সময়ক্ষেপণ, মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বিভক্তিসহ নানা জটিল সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়েছে এই সরকারকে। সাথে ছিল খন্দকার মোশতাকের ‘মুজিব না বাংলাদেশ’ এমন সমীকরণের ষড়যন্ত্র।

বিজ্ঞাপন

কলতাকার ৮ নম্বর থিয়েটার রোডের (বর্তমান শেক্সস্পীয়ার স্মরণী) ঐ অস্থায়ী কার্যালয়ে তাজউদ্দীনকে হত্যার জন্য আততায়ীর প্রবেশ সম্পর্কেও তথ্য পাওয়া যায়। তবে সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে করে সফলতা আসে ১৬ ডিসেম্বর। বিজয়ের আনন্দে উদ্ভাসিত হন সবাই। কিন্তু ঐ বিজয় উচ্ছ্বাস মুছে ফেলতে পারেনি অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক টানাপোড়েন ও বিভক্তি। যা অব্যাহত ছিল প্রবাসী সরকারের দেশে ফেরার পর থেকে পরের আরও কয়েক বছর। সদ্য স্বাধীন একটি দেশের জন্য যা দেখা দিয়েছিল ভয়ঙ্কর এক প্রতিবন্ধক হিসেবে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার ও ভারতীয় সরকারের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে সমন্বয়ের দায়িত্বে ছিলেন দূর্গা প্রসাদ ধর (ডি.পি. ধর নামে বেশি পরিচিত)। ৬ ডিসেম্বর সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরুর পর উদ্ভুত পরিস্থিতিতে উচ্চ পর্যায়ের জরুরী বিষয় সমন্বয়ের জন্য মস্কো যান ডি.পি. ধর। জরুরী কাজ শেষে সেখান থেকে কলকাতা ফেরেন ১৮ ডিসেম্বর। এরপর তার সাথে তাজউদ্দীন সরকারের নানা বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়। সদ্য স্বাধীন দেশে রাজধানী ঢাকার পরিস্থিতি, সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা, অবস্থানরত ভারতীয় সেনাদের এখতিয়ারসহ নানা বিষয়ে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয় মুজিবনগর সরকার ঢাকায় ফিরবে ২২ ডিসেম্বর। আর ২৩ ডিসেম্বর ঢাকায় পৌছাবে উচ্চ পর্যায়ের এক ভারতীয় প্রতিনিধি দল। যাদের কাজ হবে রাষ্ট্রযন্ত্রকে সচলসহ অন্যান্য জরুরী সহায়তার বিষয়ে বাংলাদেশকে সহযোগিততা করা।

বিজ্ঞাপন

যুদ্ধের শেষ দিকে ভারতীয় বিমানবাহিনীর বোমাবর্ষণে ঢাকা বিমানবন্দরের রানওয়ে একেবারে বিধ্বস্ত হয়েছিল। বিমান নামার উপযোগী করতে খুব দ্রুত ঐ রানওয়ে মেরামত করা হয়। ২২ ডিসেম্বর বিকেলে ভারতীয় বিমানবাহিনীর দুটি কারিবোর্ড উড়োজাহাজে ঢাকা ফেরেন প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য ও কিছু কর্মকর্তা। তাদের এই ফিরতি যাত্রা ছিল ভীষণ রোমাঞ্চকর। ঐ ফিরতি যাত্রার বর্ণনা দিয়েছেন মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের একান্ত সচিব ফারুক আজিজ খান। তিনি লিখেছেন ‘কয়েক মিনিট পর উড়োজাহাজের গতি কমে এল। যানটি নিচের দিকে নামতে শুরু করল। শিগগির আমরা পদ্মা নদী অতিক্রম করে গেলাম। এর পরপরই আকাশ থেকে চোখে পড়ল ঢাকা শহর। ভিভিআইপি বহনকারী উড়োযানটির সঙ্গে আমরাও রানওয়েতে অবতরণ করলাম। … ঢাকা বিমানবন্দর ভর্তি ভারতীয় সেনা ও মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা স্থাপনাগুলো পাহাড়া দিচ্ছিলেন। অনেক সংবাদিক ও আলোকচিত্রী সেখানে ভিড় জমিয়েছিলেন। বিপুল সংখ্যক জনতা এসে জড়ো হয়েছে জাতীয় বীরদের অভ্যর্থনা জানাতে।’

বিমানবন্দরে মুজিবনগর সরকারের নেতৃবৃন্দ উচ্ছ্বসিত জনতার উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। দ্রুত সন্ধ্য নেমে এলে তারা সেখান থেকে যান বঙ্গভবনে (১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের পরই গভর্নর হাউজের নামকরণ করা  হয়েছিল বঙ্গভবন)। প্রশাসনের কাজের সুবিধার জন্য কিছুদিন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, স্বরাষ্ট্র ও পুনর্বাসন মন্ত্রী এ.এইচ. কামারুজ্জামান, অর্থ বিষয়ক মন্ত্রী ক্যাপ্টেন মনসুর আলী বঙ্গভবনেই ছিলেন। তবে দেশ স্বাধীন হওয়ার প্রায় এক সপ্তাহ বিলম্বে দেশে ফেরার ফল খুব একটা ভাল ছিল না। এতে বিজয় উচ্ছ্বাসে উদ্বেলিত মানুষের মাঝে নৈরাশ্য ছড়ায়। চলতে থাকে নানা কানাঘুষা।

সদ্য স্বাধীন দেশে তাজউদ্দীন সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় আওয়ামী লীগের উপদলীয় কোন্দল মোকাবেলা ও মন্ত্রিসভা পুনর্গঠন। প্রবল নেতিবাচক ভূমিকা থাকা সত্ত্বেও ভবিষ্যত সংহতির কথা ভেবে খন্দকার মোশতাককে মন্ত্রিসভায় রাখা হয়। যদিও সুযোগ সন্ধানী মোশতাক এরই মধ্যেই তার চরিত্র বদলে ফেলেন। মোশতাক ২৩ ডিসেম্বর এক বিবৃতিতে মুক্তিসংগ্রামে সহযোগিতার জন্য ভারত- সাভিয়েত রাশিয়ার অকুন্ঠ প্রশংসা ও চীন-যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা করেন। মোশতাকের কন্ঠে কৃতজ্ঞতা ঝরে ইন্দিরা গান্ধির জন্যেও।

তবে মোশতাকের শেষ রক্ষা হয়নি। মন্ত্রীত্ব থাকলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রীর পদ থেকে অপসারিত হন। আর ঐ দায়িত্ব পান আব্দুস সামাদ আজাদ। এদিকে আলোচনা ছিল সর্বদলীয় মন্ত্রিসভা গঠন নিয়ে। এ বিষয়ে মুজিবনগর সরকারের বিশেষ উপদেষ্টা ন্যাপের অধ্যাপক মুজাফফর কট্টর অবস্থান নিয়ে প্রচেষ্টা চালান। কিন্তু তার এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। যেহেতু মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়েছি ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলাফল কেন্দ্রিক। তাই ঐ ফলের বাইরে গিয়ে সর্বদলীয় মন্ত্রিসভা গঠনের বিষয়ে তখনকার সরকার সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। এই সিদ্ধান্তে ভীষণ ক্ষুব্ধ হন অধ্যাপক মুজাফফরসহ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া অন্যান্য বাম রাজনীতিকরা। বাম তরুণ যোদ্ধারাও এতে ব্যথিত হন। যার ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী। মন্ত্রিসভার নতুন পাঁচ সদস্য (আব্দুস সামাদ আজাদ, ফণিভূষণ মজুমদার, জহুর আহমদ চৌধুরি, ইউসূফ আলী ও আব্দুল আজিজ) নিয়োগ পান ২৭ ডিসেম্বর ১৯৭১।

ঐ সরকারের অন্যতম স্পর্শ কাতর গুরুদায়িত্ব ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ শেখ মুজিবুর রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করা। এরইমধ্যেই তরুণ নেতারা এ বিষয়ে তাজউদ্দীনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। মুজিব বাহিনী ও  যুব নেতারা বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবীতে ১৯৭২ সালের ৭ মার্চ সমাবেশের ডাক দেয়। যা নিয়ে শুরু হয় প্রস্তুতি। উত্তেজনা ছড়ায় দেশজুড়ে। অন্যদিকে এই প্রেক্ষাপটে তাজউদ্দীনের ভূমিকা নিয়ে ছিল উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচার। তবে সেই সময়ের সরকার বঙ্গবন্ধুর মুক্তি বিষয়ের নানা দিক নিয়ে শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিবকে অবহিত করেন।

৩২ নম্বরের বাসায় গিয়ে তাজউদ্দীন বঙ্গবন্ধু পত্নীকে জানান শেখ মুজিবের মুক্তির জন্য জাতিসংঘের মহাসচিব, ইউরোপের অর্ধেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এরইমধ্যেই ইসলামাবাদের কাছে আবেদন জানিয়েছে। অনেকগুলো মুসলিম দেশ ও সোভিয়েত রাশিয়াও বঙ্গবন্ধুকে ফিরিয়ে দিতে পাকিস্তানকে অনুরোধ করেছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুকে ফেরত দেওয়া প্রচ্ছন্ন হুমকিও ছিল। বিষয়গুলো সবিস্তারে বেগম মুজিবকে অবহিত করেন তাজউদ্দীন। অন্যদিকে ৩ জানুয়ারি করাচীতে এক জনসভায় বঙ্গবন্ধুকে মুক্তিদানের সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন ভূট্টো।

৮ জানুয়ারি বিবিসি’র সংবাদে বলা হয় শেখ মুজিবকে বহনকারী একটি বিমান লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। লন্ডনে পৌছে ঐ দিন সন্ধ্যায় পরিবারের সাথে টেলিফোনে কথা বলেন শেখ মুজিব। এরপর  ব্রিটিশ রাজকীয় বিমানবাহিনীর বিমান ‘কমেট’ এ চড়ে ১০ জানুয়ারি দিল্লী হয়ে স্বপ্নের স্বদেশে ফেরেন বঙ্গবন্ধু। দেশে ফেরার পথে বঙ্গবন্ধুর সফর সূচী ও ছোটখাটো খুঁটিনাটি বিষয়ে বেগম মুজিবের পরামর্শ নিয়ে তাজউদ্দীন সরকারের পক্ষে সেই মোতাবেক ব্যবস্থা নিয়েছিলেন।

রেসকোর্সে ভাষণের পর বঙ্গবন্ধু ফজলুল হক ও সোহরাওয়ার্দীর কবর জিয়ারত এবং শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বাড়ি ফেরেন। ঐ রাতেই তিনি রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন যুব নেতাদের সাথে। ঐ বৈঠকে ছিলেন ফজলুল হক মণি, সিরাজুল আলম খান, তোফায়েল আহমদ ও আব্দুর রাজ্জাক। তারা বঙ্গবন্ধুকে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে ব্রিফ করেন। কার কি ভূমিকা, কে কি করেছেন তা বঙ্গবন্ধু তাদের কাছ থেকে জানেন। এরপর ১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। রাষ্ট্রপতি হন বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরি। সবার ঐক্যমত্যের জাতীয় সরকার না হওয়া এবং বঙ্গবন্ধুর প্রধানমন্ত্রীত্ব গ্রহণ নিয়ে কিছু ভিন্ন মতের ব্যাখা পাওয়া যায়। কেউ কেউ মনে করতেন সরকারের পদ না নিয়ে বঙ্গবন্ধু মহাত্মা গান্ধীর মত জাতির অভিভাবক হয়ে থাকতে পারতেন।

বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় পরিশ্রমী ও পরীক্ষিত তাজউদ্দীন হয়ত দেশ চালাতে পারতেন আরও নিষ্ঠার সঙ্গে। কারণ যুদ্ধের ন’ মাসে তাজউদ্দীনের বিস্তর অভিজ্ঞতা হয়েছিল। বাম রাজনীতিক হায়দার আকবর খান রনো এ প্রসঙ্গে লিখেছেন  ‘সেদিন বাংলাদেশের যে পরিস্থিতি ছিল তাতে দেশকে সামাজিক বিপ্লবের দিকে নেওয়া যেত। কিন্তু তিনি সে পথে হাঁটেননি, যদিও মুখে সমাজতন্ত্রের বুলি ছিল। একইভাবে ইন্দিরা গান্ধিও সমাজতন্ত্রের নামে ধোঁকা দিতে চেয়েছিলেন ভারতে। প্রশাসন ব্যবস্থা প্রবর্তিত হল আগের মত আমলাতান্ত্রিক কায়দায়। সেই পুরনো আমলাদের নিয়েই। তার সাথে যুক্ত হল সদ্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা কর্মীদের লুটপাট ও ক্ষমতার দাপট। .. অনেকেই বলেন সেদিন শেখ মুজিবুর রহমানের রাষ্ট্রীয় কোন পদ নেবারই দরকার ছিল না’ (শতাব্দী পেরিয়ে, পৃষ্ঠা ৩০৭)।

এদিকে মন্ত্রিসভায় রদবদল হয়। অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তাজউদ্দীন আহমদ। নিষ্ঠাবান তাজউদ্দীন নতুন দায়িত্ব একাগ্রতার সাথে পালনের চেষ্টা করেন। সাথে অপেক্ষায় থাকের একটা সুযোগে। যে সুযোগে তিনি বঙ্গবন্ধুকে বলতে চেয়েছিলেন মুজিবনগর সরকারের কথা, যুদ্ধদিদেন কথা, সেই সময়ের আবেগ-উচ্ছ্বস-টানাপোড়েনের কথা। যে কাঙ্খিত সুযোগ তাজউদ্দীনের কাছে কখনই আসেনি। এদিকে সময়ের সাথে বঙ্গবন্ধুর সাথে তাজউদ্দীনের দূরত্ব বাড়তে থাকে। এক সময় বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভাতেও অপাঙ্তেয় হয়ে ওঠেন যুদ্ধদিনের কান্ডারি তাজউদ্দীন। মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দেন ১৯৭৪ সালের ২৬ অক্টোবর।

কলকাতায় অসাধারণ এক সংগঠনের ভূমিকা রাখা তাজউদ্দীন স্বাধীন বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন করেছিলেন মাত্র ২০ দিন। ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু ফেরার পর তিনি অপেক্ষায় ছিল জাতির জনককে একটি দেশের জন্মকাহিনী শোনাবেন বলে। কিন্তু নির্মম পরিহাস তা আর হয়ে ওঠেনি। দিন পঞ্জিকায় দ্রুতই চলে আসে ১৫ আগস্ট, ৩ নভেম্বর। বাকী সব ইতিহাস।

দ্রষ্টব্য: এই কলামের সকল মতামতের দায়িত্ব লেখকের

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর