বারেক সাহেবের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড
১ ডিসেম্বর ২০১৮ ১১:৪৮
অধ্যাপক মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) ।।
‘কিসের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড?’ থিম্পুর লা-মেরিডিয়ান হোটেলের লবিতে বসে ভাবেন বারেক সাহেব। থিম্পুতে আগে আসা হয়নি তার। ওই যে কথায় আছে না, ‘দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া … …’। এরপর থেকে রাজনীতি থেকে একটু সরে থাকতে হলে থিম্পুতেই আসবেন ঠিক করেছেন বারেক সাহেব। শান্তি নেই আমেরিকায়। একটা বাড়ি কিনবেন, কি দু’চারটা গোপন আলাপ সারবেন তার জো নেই। ঠিকই খবর ছাপবে দেশের মিডিয়া। ইউরোপের অবস্থাতো আরো বিচ্ছিরি। এরচেয়ে এই থিম্পুই ঢেড় ভালো। শান্ত, সৌম্য, একেবারেই নো হৈ চৈ। আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার এখানে এসে অন্তত দেশের রাজনীতির প্যাচাল পেরে সময় নষ্ট করতে হয় না।
রাজনীতির যে দশা, গাটা শুধু জ্বলে যায় বারেক সাহেবের। পার্টি অফিসে গেলে গা জ্বলে যায় ‘নবজাতক নেতাদের’ তাফালিং-এ। এলাকায় গেলেই লোকের প্রশ্ন তার নামের আগে পরে ‘অবলিগ’ দেয়াতো আরো দু’চারজনের নাম। বিষয়টা তাহলে কি? আসল ক্যান্ডিডেট কে? উত্তর দিতে পারেনা বারেক সাহেব। গাটা জ্বলে যায় শুধু। ‘এক সিএনজি-তে এটে যায়’ এমন সব জোট শরীকদের তান্ডব গুলশান আর বেইলি রোডে। শুনতে পাচ্ছেন এদের কারো-কারো নজর তার সিটটার দিকেও। শান্তি নেই কোনওখানে। দলের বড় নেতারা ছুটছেন বুড়ো নেতাদের পেছনে। তাও নিজের দলের না। সরকারী দলের উচ্ছ্বিস্ট আর অবশিষ্ট যারা তাদের আখড়াতো এখন তাদের জোট। আর তাদেরই কিনা তেলে-তেলে তৈলাক্ত করতে কি প্রানান্ত প্রয়াস দলের সিনিয়র নেতাদের। কাহাতক আর সহ্য করা যায়? গা জ্বলবে নাতো জ্বলবেটা কি? জ্বলবে কি গাড়ি-বাড়ি, শিশু আর প্রাণী?
তা অবশ্য জ্বলতেই পারে। এই একটি বিষয়ে দলের সক্ষমতা যে কমেনি তার প্রমাণ অবশ্য দলের কর্মীরা এই সেদিনও দেখিয়ে দিয়েছে দিনে-দুপুরে পুলিশের গাড়িতে আগুন দিয়ে। আর ক’দিন আগেওতো আগুন দেয়া হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাংলোতে, এমনকি বেডরুমেও। কিন্তু এসবে কাজের কাজ কি হচ্ছে কে জানে। প্লেয়িং ফিল্ডটাতো আরো অসমানই হয়ে যাচ্ছে।
সরকারি দলকে খুব হিংসে হয় বারেক সাহেবের। তারা নেতা পেয়েছে বটে। পেয়েছিল বঙ্গবন্ধুকে আর এখন তার মেয়েকে। তারা যখন পুড়িয়ে মারছেন অবুঝ গবাদি পশু আর মানব শিশু, প্রধানমন্ত্রী তখন তাদের চিকিৎসার জন্য তৈরী করে দিচ্ছেন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বার্ন ইন্সটিটিউট। তাদের নেত্রী যখন জোড়াতালির পদ্মা ব্রিজে না চড়তে নেতাকর্মীদের পরামর্শ দিচ্ছেন, প্রধানমন্ত্রী তখন দিব্বি পরিদর্শন করছেন দেশের পয়সায় নির্মীয়মাণ পদ্মা ব্রিজের কাজের অগ্রগতি।
কিসের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড? এত সোজা? মানুষ কি এতই বোকা? নির্বাচন কমিশন না হয় প্রশাসনের হাতে পায়ে বেড়ি লাগাবে, কিন্তু মানুষকে আটকাবে কে? হিমালয়ের দু’চারটা পাহাড়কে কেটে-কুটে হয়ত একটু সাইজ করা যায়, কিন্তু পাহাড়ি থিম্পুকে কি কখনো সমতল ঢাকা বানানো যায়?
‘এই ডিসেম্বরের ট্রেনটাও মনে হয় ছুটেই গেলো’, লবির জানালা দিয়ে উদাস দৃষ্টিতে হিমালয়ের পেছনে ডুবন্ত সূর্য দেখতে দেখতে ভাবেন বারেক সাহেব।
অধ্যাপক মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) : চিকিৎসক ও কলামিস্ট।