লেট’স টক: তরুণদের উদ্দেশে যা বললেন শেখ হাসিনা (ট্রান্সক্রিপ্ট)
১৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ২৩:২৭
উপস্থাপক: সবাইকে স্বাগতম, শুরু করছি সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) আয়োজিত লেটস টক। আজকের পর্বে আমাদের সাথে উপস্থিত আছেন বিশেষ একজন মানুষ, একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্য, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা, বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আমাদের সবার প্রিয় আপা। আপনাকে স্বাগত জানিচ্ছি আমাদের এই অনুষ্ঠানে।
প্রধানমন্ত্রী: আমারও ভালো লাগছে এই ছোট ছোট বাচ্চাদের দেখে। আমার কাছে বাচ্চাই, কেননা আমার নাতী-নাতনীর বয়সী সব।
আজকে আমরা যারা এখানে আছি, তরুণ-তরুণী যারা আছেন, তারা সৌভাগ্যবান আপনার সাথে কথা বলতে পেরে। আমি যদি একটু ঘুরিয়ে আবার জিজ্ঞেস করি, যেই সুন্দর একটি ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়তে আপনার নিরলস প্রচেষ্টা, এত পরিশ্রম, সেই ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ কিন্তু তারা (উপস্থিত তরুণ-তরুণীরা)। এই ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের সাথে আমাদের এই আয়োজনে এসেছেন আপনি কথা বলতে আপনার কেমন লাগছে?
– আমার সৌভাগ্য যে এই তরুণ প্রজন্ম আমার সামনে। আর আমি মনে করি বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে আমাদের তরুণ প্রজন্মই পারবে। আজকে যারা তরুণ শুধু তারা নয়, বরং ভবিষ্যতেও, যেমন আজকেও যে শিশুটি জন্মাবে সেওত বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলবে। তবে তাদের জন্য একটি সুন্দর সমাজ গড়ে রেখে যেতে চাই।
তরুণ শেখ হাসিনা সেটা সমন্ধে একটু জানতে চাই
– প্রথমে ঢাকায় আসলাম ‘৫২ সালে। তখন বাবা কারাগারে কিন্তু উনার সাথে দেখা হলো না। হাঙ্গার স্ট্রাইক করার কারনে তাকে নিয়ে যাওয়া হলো ফরিদপুরে। আবার আমরা ফিরে গেলাম। এরপরে নির্বাচন হলো ১৯৫৪ সালে। আব্বা তখন প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য। তিনি আমাদেরকে নিয়ে এলেন ঢাকায় ‘৫৪ সালে। আমরা, আমি, কামাল আর জামাল তখন ছোট মাত্র হামাগুড়ি দেয়, একেবারেই ছোট, কোলে। তখন যখন এসেছি তখনো আমার বাবা খুব ব্যস্ত। পাইনা। উনি সেই সকাল থেকে বেরিয়ে যান আর গভীর রাতে যখন ফেরেন আমরা ঘুমিয়ে থাকি।
অভাবটা বোধ করতেন, তাই না?
– হ্যাঁ, ওই অভাবটা ছিলো। তা ছাড়াও গ্রামের বাড়িতে দাদা-দাদি, আত্মীয়-স্বজন তাদের সবার সাথে থেকে যেটা পেতাম শহরে পাশে মনে হত একটু অন্যরকম, ঐ পরিবেশটা নেই। এরপরেই আব্বা মিনিস্টার হলেন। মিনিস্টার হওয়ার পরে আমরা মিন্টো রোডে ছিলাম। তখন জীবনটা একটু অন্যরকম হলো, বেশ একটু গাড়িতে বেড়াতে যেতাম। স্কুলে ভর্তি করতে নিয়ে গেলেনম ভর্তি করে দিলেন। এরপর ধীরে ধীরে আবার একসময় আব্বা জেলে। তারপর আবার আমরা বাড়ি ছাড়া। ১৪ দিনের নোটিশে আবার আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হলো। কোথায় মিন্টো রোড, সেখান থেকে গেলাম নাজির বাজার, আলাউদ্দিন রোড। পুরনো ঢাকায় যেখানে গাড়িটারি ভেতরে যায় না। রিকশাই চলে। আমাদের গাড়িটারি কিছুই নাই। আমরা রিকশায় চড়ি। এই যে আমাদের জীবনটা, সব সময় উত্থান পতনের মধ্য দিয়েই চলত। তাতে একটা জিনিস, আমরা কখনো অভাব বোধ করতাম না। আমার বাবা বোধয় ছোট বেলা থেকে আমাদের এমনভাবে শিক্ষা দিয়েছিলেন, জীবনটা যখন যেভাবে আসবে সেভাবে মেনে নিতে হবে। আমরা কিন্তু সেভাবেই মেনে নিতাম এবং সেভাবেই করতাম। আব্বা জেলে স্কুল বন্ধ। যেহেতু সরকারি স্কুলে ছিলাম, তারা নাম কেঁটে দিত। একবার নয়, বারবার এ অবস্থা আমাদের জীবনে এসেছিলো।
দর্শক প্রশ্ন- মুক্তিযুদ্ধ কালে আপনার পরিবার অবরুদ্ধ ছিলো, সেই সময়টার বিষয়ে জানতে চাই। কিভাবে কেটেছিলো?
– আমি যেহেতু সব সময় রাজনীতিতে ছিলাম, আমরা ভাই-বোন সবাই রাজনীতিতে ছিলাম। আর দেশ স্বাধীন হওয়ার জন্য আমার বাবার যে পরিকল্পনা ছিলো, এটাও আমরা নিজেরা অনেকটাই জানতাম। বাহিরে হয়ত ততটা প্রচার ছিলো না। কিন্তু তিনি আমাদের বলতেন জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত কি হবে না হবে সব কিন্তু তিনি ঠিক করে দিয়ে গিয়েছিলেন। যখন স্বাধীনতা ঘোষণাটা আসল, ৭ই মার্চের পর থেকে দেখলাম সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছে। ৭১ সালের ২৫ মার্চ গণহত্যা শুরু হওয়ার সাথে সাথে উনার যেই মেসেজটা ছিলো, সেটা বিজিবি তৎকালীন ইপিআর ওয়ারলেসের মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে দিলো। সেই সাথে সাথে পাকিস্তান হানাদার বাহিনি আমাদের বাড়িতে আক্রমণ করে। তারা বাড়িতে ঢোকার ঠিক কিছুক্ষণ আগে জাকির খান নামে এক ভদ্রলোক আমাদের পরিচিত তিনি এসেছিলেন। তিনি আমাকে, আমার ছোট বোন রেহানাকে এবং আমাদের এক খালাতো বোনকে বললেন, আপনারা এখনই এই বাসা থেকে চলে যাবেন। এদের বিশ্বাস করবেন না। এরা কি করতে পারে আপনারা জানেন না। এক রকম জোর করেই আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দিলেন। এরপর আব্বাকে এরেস্ট করার পর কারফিউ জারি হলো। আর আমার মা ছিলেন বাসায়, আমার ছোট ভাইটা রাসেল আর মেঝো ভাই জামাল। আমরা এসে মাকে খুঁজে পেলাম। ঐ সময় আমরা বিভিন্ন যায়গা থেকে শেল্টার নিয়েছিলাম। কিন্তু এক সময় আমরা গ্রেফতার হয়ে গেলাম। আর যেহেতু তখন আমি অন্তসত্তা ছিলাম। আমার প্রথম সন্তান হবে। কোথাও থাকা, শেল্টার পাওয়াও খুব কষ্টকর হয়ে যাচ্ছিলো। যখন এরেস্ট করা হলো, পুরাতন ধানমন্ডি-১৮ নম্বর রোডের এক তলা একটি বাড়িতে আমাদের নিয়ে রাখা হলো। সেই বাড়িটায় কিছুই ছিলো না। কোন ফার্নিচার নাই, কিছুই নাই। সব ধূলো মাটিতে ভরা। আর পাকিস্তান আর্মিরা আমাদের একটি কম্বল দেয়া হলো। পুরো পরিবারের জন্য ঐ একখানা কম্বল ছিলো একমাত্র সম্বল। কোন খাওয়া-দাওয়া কিছু নাই। কারণ দুপুর বেলা এরেস্ট করে নিয়ে গেছে সারাদিন-সারারাত আমরা ঐ অবস্থায় থাকতে হলো আমাদেরকে। আর তারপর থেকে ঐ বন্দিখানায় তাদের অত্যাচারের শেষ ছিলো না। খুব অত্যাচার করত। অনেক সময় বিদ্যুৎ বন্ধ করে দিতো। আর আমাদের কোন প্রাইভেসি ছিলো না। কোন পর্দা নাই, আমাদের কাছে কিছুই ছিলো না। এই অবস্থায় থাকতে হয়েছে। এই অবস্থায় আমার প্রথম সন্তান জন্ম হলো। সবচাইতে দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, জন্ম হওয়ার পর ওকে যে প্রথম কাপড়টা দেয়া হবে সেটাও দেবার কোন ক্ষমতা আমাদের ছিলো না। কারণ আমাদের বাজারটাজার করার এত তখন সুযোগও ছিলো না। হাসপাতালের কাপড় দিয়েই কোন মতে তাকে রাখা হলো। আমার এক বান্ধবী ছিলো, সেই সন্তান সম্ভাবা ছিলো। ওর বোনের অপারেশন হয়েছিলো, পাশের কেবিনে ছিলো। ও কতগুলো কাপড় দিয়ে গেলো আমাকে। সেখানে ঐ অবস্থায় আমরা যখন থাকতাম, মাটিতে, স্যাতস্যাতে ফ্লোর, সেখানেই থাকতে হতো। তবে একটা জিনিস আমরা কখনো মনের জোর হারাইনি। আমাদের একটা ধারনাই ছিলো, দেশ একটি মুক্ত হবেই, স্বাধীন হবেই। আর জামাল ঐ জেলখানায় থাকতে একদম প্রস্তুত ছিলো না। সে বলত, আমাকে মুক্তিযুদ্ধে যেতে হবেই। ও খুব গেরিলা কায়দায় একদিন পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে চলে গেলো। অতকষ্টের মধ্যে থেকেও দেশ স্বাধীন হয়েছে এটাই বড় কথা। কিন্তু যেদিন পাকিস্তান আর্মি সেরেন্ডার করল ১৬ ডিসেম্বর। আমরা কিন্তু মুক্তি পাইনি। তখন মনে হতো সত্যেন সেনের কথা, রুদ্ধদ্বার মুক্তপ্রাণ। চারিদিকে শুনি জয় বাংলা স্লোগান। আমরা ভেতর থেকে স্লোগান দিতাম। আমি, মা, রেহানা সবাই কিন্তু ভেতর থেকে স্লোগান দিচ্ছি। আমরা কিন্তু তখনো বন্দী এবং সারাদিন ওরা ওখানে মানুষ হত্যা করল। আমরা শুনছি মানুষের চিৎকার, আহাজারি, কান্না। ১৭ ডিসেম্বর আমরা মুক্তি পেলাম।
ত ঐ সময়টার কথা আসলে, খাওয়া নাই, দাওয়া নাই। যেমন একটা কেরোসিনের চুলা, একটা হাড়ি। অল্প কিছু চাল-ডাল দিয়ে কোন মতে একটু খিচুরি করে ..। কেউ আসলে পেট ভরে খেতে পারবে না। যখন কারো ক্ষুধা লাগবে, এক মুঠ খেতে পারবে। কারণ ঐ খাবারটা ফুরিয়ে গেলে এরপর যে কি হবে আমরা জানি না। দেশ যখন স্বাধীন হয়ে গেলো, মনে হলো যেনো সব কষ্ট ভুলে গেলাম। সব কষ্টই ভুলে গেলাম। এটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা।
দর্শক প্রশ্ন- মাননীয় প্রধানমন্ত্রীম আমরা জানতে চাচ্ছি আপনার সেই তরুণ রাজনীতি জীবনের কিছু কথা। কারণ আমরা বিশ্বাস করি, আমরা তরুণরা যারা আছি, যারা ভবিষ্যতে রাজনীতি করতে চাই আজকের কথা তাদের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। ধন্যবাদ
– রাজনৈতিক একটি পরিবারে জন্ম। আর রাজনীতি আমাদের সাথে এমনভাবে জড়ানো ছিলো যে রাজনীতি ঠিক কখন প্রবেশ করালাম তা সঠিকভাবে বলতে পারব না। স্কুল জীবন থেকেই রাজনীতির সাথে জড়িত। সেই সময় শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট বাতিলের আন্দোলন, তারপর আরো বিভিন্ন আন্দোলন। যখন আন্দোলন হতো, তখন এটা ঠিক স্কুল পালিয়ে চলে যেতাম সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বট তলায় মিটিং শোনার জন্য। আবার স্কুল থেকে আমাদের সংগঠন করতে হবে, ছাত্রলীগ করতে হবে বলা হলো। তাই স্কুল থেকে বিভিন্ন স্কুলে যেতাম। মেয়েদেরকে বোঝাতাম কেনো আমাদের সংগঠন করতে হবে। ‘৫২র আন্দোলন। মানে আমরা আমাদের বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকার আদায় করলাম ঠিকই। কিন্তু প্রথমে আসল আরবী হরফে বাংলা লিখতে হবে। তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হলো। এরপর রোমান হরফে বাংলা লিখতে হবে। তার বিরুদ্ধে আন্দোলন হলো। তা আন্দোলন শুনলেই আমরা ওখান (স্কুল) থেকে চলে যেতাম। ছোটবেলার একটা মজার ঘটনা বলি, ধর্মঘট চলছে তখন। আমাদের হেড মাস্টার আবার ভিষণ কড়া ছিলেন। কাজী ওমর আলী সাহেব, আমি উনাকে দেখলে ভয়ে দৌড়ে পালাতাম। কিন্তু খুব আদরও করতেন, খুব ভালো শিক্ষক ছিলেন। মানে গাধা পিটিয়ে মানুষ করা বলে না, উনিও তেমন আমাদেন গাধা পিটিয়ে মানুষ করতেন। আমরা ঠিক করলাম, স্কুল ছুটি দিতে হবে। তা এমনিতে ত আর দিবে না। ত হেড স্যারের রুমের পাশেই স্কুলের ঘণ্টিটা। এখন ঘণ্টিটা আমরা কিভাবে বাজাব। ত আমরা একটা মেয়েকে দায়িত্ব দিলাম ঘণ্টিটা বাজাবে, আরো কয়েকজনকে দায়িত্ব দিলাম দাড়োয়ান কিছু বোঝার আগেই গেটটা খুলে দিবে। যখন ঘণ্টি বাজাতে শুরু করলাম ছোট বাচ্চারা তারা সব ছুটে পালাতে শুরু করল। তখন মজাদার বিষয় হলো বাচ্চারা ছুটছে তাদের ধরার জন্য শিক্ষকেরাও ছুটছে। আর তখন আমরা বের হয়ে চলে এলাম। স্কুল থেকে সবাই দৌড় দিয়ে এক দৌড়ে চলে গেলাম সব। মিটিংয়ে গেলাম। তখন ক্লাস সেভেনে পরি। (হেসে) বেশিদিনের কথা না!
একদিন স্কুলে স্ট্রাইক করাতে গিয়ে দেখি খুব লম্বা চওড়া এক পুলিশ অফিসার সে আমাকে ধমক দিচ্ছে। আমরা গেটের বাহিরে দাড়িয়ে, যে কেউ যেতে পারবে না। ত খুব ধমক দিচ্ছে যে, ‘তুমি জানো আমি কে? তোমাকে আমি জেলে নিতে পারি।’ জেল খানায় ত আমরা প্রতি ১৫ দিন পরপর যাই। ত আমাকে এই ভয় দেখিয়ে ত লাভ নাই। আমি বললাম, আমি ত জেল খানায় সব সময় যাই। বলল সে, ‘হ্যাঁ! তোমার নাম কী?’ আমি বললাম, ‘আমার নাম, বাবার নাম হেড স্যার জানেন। তাকে জিজ্ঞাসা করে নিয়েন।’ এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু মেয়েরা ছিলো, তারা ইশারা দিয়ে আমাকে চলে আসতে বলল সেখান থেকে। ব্যস ওখান থেকে চলে আসতে গেলাম। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের বেড়া ফাঁক করে ওখান থেকে ঢুকে যেতাম। তখন বাস ছিলো মুড়িট টিনের মত। তা সেরকম একটা গাড়িতে পুলিশ আমাদের ধাওয়া করছে। ওখান থেকে বের হয়ে পলাশী মোড় হয়ে এখন যেটা জহরুল হক হলের ভিতর দিয়ে ওয়াল টপকে ওখান থেকে আমরা রোকেয়া হলে ঢুকে গেলাম।
যখন কলেজে ভর্তি হলাম। আমি ভর্তি হওয়ার সাথে সাথে সেখানকার ছাত্রীরা খুবই উৎসাহীত। আবার আমাদের ছাত্রলীগের নেতারাও খুব উৎসাহীত। আমাকে প্রথমে ছাত্রলীগের সেক্রেটারি করা হলো কলেজ ইউনিটের। আমরা বিভিন্ন কলেজে গিয়ে গিয়ে সংগঠন করতাম। তখন প্রত্যেক কলেজে বার্ষিক নির্বাচন হতো। তখন আমাকে সংগঠনের সেন্ট্রাল কমিটি থেকে জানানো হলো, ‘তোমাকে নির্বাচন করতে হবে।’ তখন আমার মা আবার বাঁধা দিলেন। কেননা আমার বাবা তখন ছয় দফা দিয়েছেন। ছয় দফা দেয়ার পর তিনি জেলে। আমাদের পার্টির তখন অধিকাংশ নেতাই বলতে গেলে জেল খানায় বন্দী। ঐ অবস্থায় নির্বাচন করাটা যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ ছিলো। আমি যে কলেজে পড়তাম, সেটা ছিলো সরকারি কলেজ। স্বাভাবিকভাবেই সরকারি কলেজে শেখ মুজিবের মেয়ে নির্বাচন করে জিতবে এটা কলেজ কর্তৃপক্ষ কিছুতেই মানতে পারেনি। কলেজ কর্তৃপক্ষ শুধু না, তখনকার সরকারও। কারণ তখন গভর্নর ছিলো মোনায়েম খান আর প্রেসিডেন্ট ছিলো আইয়ুব খান। মিলিটারি ডিকটেটর আইয়ুব খান। তার বিরুদ্ধেই আমাদের সংগ্রাম ছিলো। তাদের কথা ছিলো, আমি যেনো কিছুতেই নির্বাচনে জিততে না পারি। আবার আমার মা খুব উদ্বিগ্ন ছিলেন। মা বলেন, যদি তুমি ইলেকশনে জিততে না পারো, তাহলে মানুষ মনে করবে ৬ দফার প্রতি সমর্থন নাই। আর সরকারের কথা ছিলো, যদি আমি জিতে যাই। তাহলে প্রমাণ হবে সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থীদের ৬ দফার প্রতি সমর্থন রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে একটা বাধা। বাসায় আসলে মা বলত, এখনই যাও, উইথড্রো করো। কলেজে গেলে আমার বান্ধবী যারা ছিলো বা সংগঠন থেকে বলত, ‘না, উইথড্রো করা যাবে না। তুমি ত জিতবে তুমি কেনো প্রার্থী থাকবে না?’ এই এক টানাপোড়েনের মধ্যে। আমার মা খুব শক্ত ছিলেন। মা বললেন, ‘সবকিছু বন্ধ। টাকা পয়সা সব বন্ধ। কিছু দেবন না। তুমি ইলেকশন করতে পারবে না।’ যাই হোক এরপর একটা পর্যায়ে ইলেকশন হলো। ইলেকশনে আমি জিতলামই না শুধু, আমার বিপক্ষে দুই প্রার্থী ছিলো। তাদের দুইজনের ভোট যোগ করেও তার দ্বিগুণ ভোট আমি পেলাম। তখনকার ছবিও আছে। কাগজের মালাটালা দিয়ে আমাকে নিয়ে গেলো শহীদ মিনারে। বক্তৃতা দিতে হবে। তখন মুখে রংটং মাখা ঐ অবস্থায়। শহীদ মিনারে যখন আমাকে দাড় করিয়ে দিলো বক্তৃতা দিতে, তখন হাজার হাজার শিক্ষার্থী সেখানে। কলেজে আমগাছের একটা বেদি ছিলো। কোন কিছু হলে সেটার ওপর দাড়িয়ে খুব বক্তৃতা দিতাম। কিন্তু ওখানে গিয়ে সত্যিই আমি আর বক্তৃতা দিতে পারলাম না। খুব ইমশনাল হয়ে গেলাম। চোখে শুধু পানি আসছিলো। জীবনে প্রথম শহীদ মিনারে বক্তব্য দিতে গিয়ে আমি সত্যিই নার্ভাস হয়ে গেলাম। আমি কি বলব আমি আর কিছু খুঁজে পাচ্ছি না। আমি সবাইকে কেবল ধন্যবাদ দিলাম। দিয়েই আমি চুপ। আমার ছাত্রলীগের অন্যরা বলছিলো, তুমি এটা বলো, ওটা বলো। আমি বললাম, আর কিছু বলতে পারব না। আপনারা বলেন।
যখন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হলাম তখন শুনলাম, গভর্নর ডেকে ভিসিকে বলছেন, গণি সাহেব ভিসি ছিলেন। তাকে বলছেন, শেখ মুজিবের মেয়ে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হলো কিভাবে? তিনি জানান, হাজার হাজার ছেলে-মেয়ে প্রতি বছর ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়। আলাদাভাবে খোঁজ নেয়ার সুযোগ কোথায়? তিনি বেশ একটু ডাটের লোকই ছিলেন। পরে একজন শিক্ষক আমাকে জানিয়েছিলেন, তুমি কি জানো, তুমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পর গভর্নর ভিসিকে ডেকে নিয়ে ধমক দিয়েছেন, শেখ মুজিবের মেয়ে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলো কিভাবে। ত আমাদের জীবনটা এমনই ছিলো। আব্বা যখন মন্ত্রী ছিলো তখন শিক্ষকরা খুব আদর করতেন। আবার আব্বা যখন জেলে গেলো তখন বলত, ‘ও, ওর বাবা ত জেলে।’ তখন যত দোষ আমাদের ওপর। মানে, যা কিছু হারায় গিন্নি বলেন কেষ্টা বেটাই চোর। এমন চড়াই উৎরাইয়ের মধ্য থেকে আমাদের যেতে হয়েছে। তবে বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির জন্য আমার বাবা কাজ করছে এটা জানতাম বলে এই চরাই উৎরাইটাকে আমরা বেশ সহজভাবে নিতে পেরেছিলাম। এটা আমার মায়ের শিক্ষা, আমার দাদা-দাদির শিক্ষা।
হয়ত মিটিংয়ে যাব। মা হঠাৎ করে বললেন মিটিংয়ে যেতে পারবে না। আর মা যদি একটা কথা বলতেন তা অমান্য করে কিছু করা আমাদের সাধ্যে ছিলো না। মা দরজাও লাগাতেন না, গেটও লাগাতেন না। কিছু করতেন না। শুধু বলতেন যেতে পারেব না। আর আমাদের সেই শিক্ষা ছিলো, মা বললে শুনতে হবে। কিন্তু প্রতিবাদও ত করতে হবে। সুতরাং হাঙ্গার স্ট্রাইক। নাস্তা খাব না ভাত খাব না, কিচ্ছু খাবো না। বসে বসে ভ্যা ভ্যা করে কান্না। কিন্তু আমার দাদা থাকলে খুব ভালো হতো। তিনি থাকা অবস্থায় এমন হলো, খুব জরুরি মিটিং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাকে যেতেই হবে। মা বললেন, ‘না আজকে বের হতে পারবে না।’ দাদা শুধু ডেকে মাকে বললেন, ‘দেখ, আমিত কোনদিন আমার ছেলেকে মানা করিনি। আমিত কোনতদিন নিষেধ করিনি। ত তুমি নিষেধ করছ কেনো। ও যেতে চায়, যেতে দাও।’ আমার মা আবার মুরুব্বিদের কথা খুব মেনে চলতেন। দাদা বলেছেন। মা আর কিছু বললেন না। যাও, দাদাকে পেয়েছো এখন যাও।
উপস্থাপক- ৭৫ এ হঠাৎ করে ছোট বোন বাদে বাকি সবাইকে হারালেন। এমন মর্মান্তিক একটি আঘাতের পর আপনি নিজেকে শক্ত করলেন কিভাবে?
-এটা এতটা অপ্রত্যাশীত ছিলো! আর সেই সাথে একটা ভয়ও হত। আব্বা এভাবে একটা দেশকে স্বাধীন করলেন, তারপর স্বাধীনতা বিরোদী এই গোষ্ঠীটি সব সময় সক্রিয় ছিলো। আমার স্বামী যেহেতু নিউক্লিয়ার সাইনটিস্ট ছিলেন। উনি ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলেন রিসার্চের জন্য। আমাকেও বললেন চলে আসতে। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। আমি ভিসি স্যারের সাথে দেখা করলাম ছুটির জন্য। বঙ্গবন্ধুর তখন যাবার কথা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর উনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসবেন, আর আমি থাকব না! ত আমি ভিসি স্যারের কাছে গেলাম, আমার স্বামী আবার মতিন চৌধুরী সাহেব ভিসি স্যার তার ছাত্র। তিনি বললেন, ‘তুমি চলে যাবে এটা একটা কথা হলো নাকি?’ আমি বললাম, ‘স্যার আপনার ছাত্রকে ত আপনি চেনেন, ভীষণ চাপ দিচ্ছে। আপনার ছাত্রকে বলেন, আমি এখন যাব না, ১৫ তারিখের পরে যাব।’ তখন তিনি বললেন, ‘তুমি ওকে আমার কথা বলে ফোন করো।’ তখন ত আর এখনকার মত এত ফোন ছিলো না। একটাই ইন্টারন্যাশনাল কল করা যেত যেই ফোনে সেটা আমার আব্বার বেড রুমে ছিলো। ওখানে বসা উনি, বললাম, আমি একটা ফোন করব। ফোন করে যখন আমি বললাম তখন খেলাম বকা। আব্বার সামনে ঝগড়াও করতে পারছি না। আবার কিছু বলতেও পারছি না। হয়ত অন্য সময় হলে কিছু বলতাম। কিন্তু তখন কিছু বলতে পারছি না। কিন্তু আব্বা সব বুঝছিলেন। বলছিলেন, কি, ওয়েজেদ এটা বলছে, ও কথা বলছে। ঠিক আছে, তাহলে তুমি যাও। তখন আমার খুব মন খারাপ।
একটা ছবি আছে না, আব্বা আমাকে জড়িয়ে ধরে আছেন। সেন্ডু গেঞ্জি গায়ে, ওটা আব্বার সাথে আমার শেষ ছবি। আমি কানছিলাম, আর আমাকে ধরে সান্তনা দিচ্ছিলো। ঠিক আছে তুমি যাও। চলে গেলাম। তবে এটা ঠিক, খুব মনটা খারাপ ছিলো। কারণ তার কিছুদিন আগে আমার দুই ভাইয়ের বিয়ে হয়েছে। আমরা খুব একটা আনন্দের মধ্যে থাকব, আর আমার সব ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছে। আর বিদেশে যাবার সময় মানুষ যেমন খুশি হয়, তেমন কোন খুশি ছিলো না। আর আমার মাও খুব কানলেন। খুব ভারাক্রান্ত মন নিয়ে গেলাম। আমরা আবার তখন ইউরোপ ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম। তখন আমরা বেলজিয়ামে। হঠাৎ একদিন সকালে ফোন। বাংলাদেশের অ্যাম্বাসিডর বললেন, ওখানে ক্যু হয়েছে। ওই কথা শোনার পর মনে হলো, তাহলে ত আমাদের আর কিছু নাই। ওদের ভাষায় টিভিতে আব্বার শুধু ছবি দেখছি। কিছু বুঝতে পারছিলাম না। জার্মানিতে ফিরে এলাম। তখন সেখানে অ্যাম্বাসিডর যিনি ছিলেন, তিনি আমাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন। উনি, উনার ওয়াইফ, সবাই খুব শান্তনা দিলেন। তিনি এক সময় আমাকে আলাদা করে ডেকে নিয়ে বললেন, তিনি বিভিন্ন ভাবে খবর নিয়েছেন, সম্ভবত কেউ আর বেঁচে নাই। আমি আসলে বলতে পারব না। পৃথিবীর ঐ সময়টা আমার কাছ থেকে হারিয়ে গেছে। আমি এসে দেখলাম, রেহানা শুয়ে আছে। আমি আস্তে করে রেহানাকে জড়ায়ে ধরে শুয়ে থাকলাম। বলতে পারলাম না কিছু। ওকেও আমি বলিনি। আর ও যখন জানতে পারল, ও কিছু আমাকে বলেনি। এরকম একটা অবস্থার মধ্যে দিয়ে। তখন আমাদের অ্যাম্বাসিডর, ভারতের অ্যাম্বাসিডর কথা বলছিলেন। কেননা তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী আমাদের খোঁজ খবর নিচ্ছিলেন। মার্শাল টিটোও ফোন করেছিলেন। তারপর আমরা ভাবলাম, না আমরা ফিরে যাই দেশে। দেখি দেশে যেতে পারি কিনা। তারপর চলে এলাম দিল্লিতে। তখন জানতে পারলাম, কেউই বেঁচে নেই। এর আগেও মনে আশা ছিলো, মা, রাসেল হয়ত বেঁচে আছে। কিন্তু মিমেস গান্ধীর সাথে দেখা হলে তিনি জানালেন, না কেউ ই বেঁচে নেই। তিনি আমাদের ওখানে শেল্টার নিয়ে থাকতে বললেন। ছয়টা বছর ওখানে থাকতে হলো। প্রথম কয়েকটা বছর আসলে বিশ্বাস করতে পারিনি। বিশ্বাস করতে চাইনি। নামাজ পড়তাম, মোনাজাত ধরতাম। কিন্তু বাবা-মার কথাটা কখনই বলতে পারতাম না। ভেতর থেকে আসত না। যাই হোক, দিন চলে যায়।
দর্শক প্রশ্ন- ১৯৮১ সালে যখন আপনি ফেরত আসলেন, তখন কারা বা কোন বিষয়টা আপনাকে মোটিভেট করেছিলো। এই বিশৃঙ্খলার মধ্যে, মানে আপনি সাহস কোথা থেকে পেলেন? আপনার ভয় করেনি?
– ৭৫ পরবর্তী ৩-৪ বছর একটা অন্ধকার সময় ছিলো। বলা যায় একটা বাসায় বন্দী। সব যায়গায় যাবার সুযোগ ছিলো না। এমনকি নিজের পরিচয় দেবারও সুযোগ ছিলো না। একটা নামও দেয়া ছিলো। ঐ নামে আমাদের পরিচয়। নিজের পরিচয়টাও ছিলো না। তখন মনে হতো, জীবনের সবথেকে কম যেটুকু প্রয়োজন সেটুকু নিয়েই চলব। সেখানে থেকে সংসারের প্রতিটি কাজ একে একে আমাদের শিখতে হলো, করতে হলো। করে করে শিখলাম। আসলে বাড়ির বড় মেয়ে ছিলাম। আলসেও ছিলাম খুব। এমনও অনেক দিন গেছে, না খেয়ে ঘুমিয়ে যেতাম। আব্বা এসে ঘুম ভাঙ্গিয়ে ভাত মাখিয়ে মুখে তুলে দিতেন। আমার খুব বদ অভ্যাস ছিলো বসে গল্পের বই পড়া আর গান শোনার। তখন মা এক কাপ চা বানিয়ে এনে দিতেন। নিজে খুব একটা বেশি কাজ করতাম না, আলসে ছিলাম এটা ঠিক। আর সেখান থেকে এমন একটা অবস্থায় পড়ে গেলাম, যে ঘর ঝাড়ু দেয়া থেকে শুরু করে সবকিছু নিজেদের করতে হতো, করতাম। একটা পর্যায়ে এসে আমার চাচা এসে রেহানাকে নিয়ে গেলো লন্ডনে।
গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা এবং দেশের মানুষের জন্য কিছু করা। কেননা ছোট বেলা থেকে আব্বার সাথে সাথে থেকে জানা, উনি বাংলাদেশের জন্য কি করবেন, বাংলাদেশটাকে কিভাবে গড়ে তুলবেন; সব সময় এ গল্পটা করতেন। করতেন বলেই মনে হলো, এভাবে বসে থাকলে ত চলবে না। আমাদের ত কিছু করতে হবে, দেশের জন্য। আর কিছু না হোক, মানুষের জন্য কিছু করতে হবে। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আমি আসব। এটা ঠিক, ঐ সময় আসাটা বেশ ভয়াবহ ছিলো। তার কারণ খুনিদের কিন্তু বিচার হয়নি। এতগুলো খুন যারা করল, একটা ছোট্ট শিশুকেও তারা ছাড়েনি। তাদের বিচার করা যাবে না, এমন ইনডেমনিটি বিল তারা পাশ করল। আইন করে দেয়া হলো খুনিদের বিচার করা যাবে না। আমি আমার বাবা-মাকে হারিয়েছি আমি বিচার চাইতে পারব না। আমি মামলা করতে পারব না। এই অবস্থায় দেশে ফেরা অবশ্য সাহসের বিষয়। কেননা অনেকেই আমাকে বলেছে, দেশে ফিরলে এয়ারপোর্টেই আমাকে গুলি করে মারবে। সেখানে আমার চিন্তা ছিলো, বাবা-মা, ভাই-বোন সবাইকে ত হারিয়েছি। হারানোর আর ত কিছু নাই। সবই যখন হারিয়েছি। জীবনটাও না হয় চলে যাবে। তাই বলে মৃত্যু ভয়ে বসে থাকলে ত আর হবে না। আর মরার আগে মরতে আমি রাজি না। আমি দেখতে চাই বাংলাদেশের জন্য কিছু করতে পারি কিনা। আর সে জন্যেই ফিরে আসি।
যখন এয়ারপোর্টে নামলাম। ঐ সময়টা ছিলো খুব কষ্টের। কারণ আমি যখন যাই, তখন এয়ারপোর্টে ত আমাদের সবাই ছিলো। কামাল-কামালেই বউ, জামাল-জামালের বউ, ছোট রাসেল সবাই আমাকে বিদায় দেয়। আর আমি যখন ফিরে এলাম, তখন হাজার হাজার মানুষ। আর মুষুলধারে বৃষ্টি। আকাশে ঘণ মেঘ। আমার মন তখন হাহাকার করছে। কারণ যে মুখগুলো আমি দেখতে চাচ্ছি। সে মুখগুলোত দেখতে পাচ্ছি না। তাদেরকে ত খুঁজে পাচ্ছি না। এয়ারপোর্ট থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ পর্যন্ত আসতে ৪ ঘণ্টা লেগেছিলো এত মানুষের ভীড় ছিলো। সেখানে বৃষ্টিতে ভিজে মাইক্রোফোনের সামনে আমাকে বক্তৃতা দিতে বলা হল। ওখানে দাড়িয়ে প্রতিজ্ঞা করলাম। ১৫ আগস্ট এটা মেনে নেয়া যায় না। এই বাংলাদেশ আমার বাবা স্বাধীন করে গেছেন। এই বাংলাদেশের মানুষগুলো দরিদ্র, দুঃখি। তাদের জন্য আমার কিছু করতেই হবে। তবে এত বড় দলের দায়িত্ব নিতে হবে। সেটা ভেবে আমি আসিনি। কিন্তু কাজ করব, একজন কর্মী হিসেবে। এটা ভেবেই দেশে এসেছিলাম। এখনো আমি আওয়ামী লীগের একজন সার্বক্ষনিক কর্মী। আর প্রধানমন্ত্রী হবার পর মনে করি আমি বাংলাদেশ প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মী। আর যখন ভালো কিছু করতে পারে দেশের জন্য, তখন মনে হয় আব্বা দেখছেন। ভয় পাইনি কখনো, আর ভয় পাবও না মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার জন্য সর্বদা প্রস্তুত।
উপস্থাপকের প্রশ্ন- এই স্রোতের বিপরীতে আপনার যাত্রা সম্পর্কে বলেন
– বনানী কবরস্থানে আমি যখন গেলাম। সেখানে সারি সারি কবর। কিন্তু ৩২ নম্বরের বাড়িতে আমাকে কিন্তু ঢুকতে দেয়া হয়নি কখনো। এমনকি আমি যে একটু মিলাদ পড়াব বা বাবা-মা’র জন্য দোয়া করাব সেই সুযোগও তৎকালীন সরকার আমাকে দেয়নি। তখন ক্ষমতায় জিয়াউর রহমান। বললেন, আমার থাকার জন্য অনেক বড় বাড়ি দেবেন। আমি বললাম, অনেক বড় বাড়ির দরকার নেই। এই বাড়িতে আমার বাবা-মা শাহাদাৎ বরন করেছেন। আমি এখানে যেতে চাই তাদের জন্য জন্য মিলাদ পড়ব, দোয়া করব। আমাকে কিন্তু ঢুকতে দেয়নি।
আর একটি মাত্র টিভি, একটি মাত্র রেডিও। মিথ্যা ও অপপ্রচার ছিলো। সরকারের তরফ থেকে বাঁধা ছিলো। দলের ভিতর থেকেও ছিলো বাঁধা। কিন্তু তা অতিক্রম করতে পেরেছি।
দর্শকের প্রশ্ন- ২০০৭ সালে আপনি আপনার ছেলেকে দেখতে বিদেশে গেলে দেশে আসার ক্ষেত্রে বাধা দেয়া হয়। বলা হয় দেশে আসলে আপনাকে গ্রেফতার করা হবে। আপনি কি তারপরও ভয় পাননি?
– ২০০১ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলাম। সে সময় বাংলাদেশের মানুষের জন্য কিছু কাজ করেছিলাম। দুর্ভাগ্য হলো সে কাজগুলো আর থাকল না। বরং জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস আর দুর্নীতিতে ৫ বার চ্যাম্পিয়ান হলো বাংলাদেশ। তারপর যখন আরেকটি নির্বাচন এলো। অনেক ঝড়-ঝাপ্টা আসল। দেখা গেলো ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোটার তালিকা তৈরি করা হলো এবং এমনভাবে নির্বাচন সাজানো হলো যে জনগণের ভোট দেয়ার আর ক্ষমতা ছিলো না।
এর মধ্যে আমার ছেলের বউয়ের বাচ্চা হয়েছে। জয়েরও গলব্লাডার অপারেশন হয়েছে। তাদের সাথে দেখা করতে বিদেশে গেলাম। তখন আমার বিরুদ্ধে মার্ডারের মামলা দিয়ে এরেস্ট ওয়ারেস্ট ইস্যু করা হলো। এরপরও যখন আমি দেশে ফিরেত চাইলাম, তখন তারা বলল, আপনি দেশে ফিরতে পারবেন না এবং প্রতিটি এয়ারলাইনসকে বলে দেয়া হলো আমাকে নিয়ে তারা এলো তাদের বাংলাদেশের এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করতে দেয়া হবে না। আমেরিকা থেকে লন্ডনে যাওয়ার সময় আমি যেই এয়ার লাইনস ব্যবহার করতাম, তারা আমাকে বোর্ডিং পাস দেবে না। ঝগড়া করে বললাম, তোমার এয়ারক্রাফট লন্ডনে যাচ্ছে। ঢাকায়ত যাচ্ছে না। তিন ঘণ্টা বাকবিতণ্ডা শেষে আমি লন্ডনের ফ্লাইটে উঠি। সেখান থেকে লন্ডনে পৌছানোর পর আমাকে বাংলাদেশের ফ্লাইটে নেয়া হচ্ছে না। কিন্তু আমি দেশে ফিরবই। তখন আন্তর্জাতিক সমর্থন পেলাম আমি। সকলের কথা এটাই ছিলো। আমারও যুক্তি ছিলো, আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তা মুকাবিলায় আমি দেশে আসব। কিন্তু ওদের ধারণা ছিলো আমাকে মামলার ভয় দেখালে হয়ত আর দেশে ফিরব না। আমি বললাম, না আমি দেশে আসব এবং মামলার মুখোমুখি হবো। শেষে আন্তর্জাতিক চাপে বাধ্য হয়ে আমাকে দেশে আসতে দেয়া হলো এবং এয়ারপোর্ট থেকে গ্রেফতার করে কোর্টে নিয়ে যাওয়া হলো। কোর্ট থেকে আমাকে পরিত্যক্ত একটা ঘরে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হলো। আর রাজনীতি করতে দেখেছি, করে এসেছি। জানি আমাকে জেলে যেতে হবে। তাই এটা নিয়ে আমার কখনো দুশ্চিন্তা ছিলো না। বরং আগে থেকেই গুছিয়ে রেখে দিয়েছিলাম। কি বই নেব। রেহানা আরো ফোন করে বলে দিয়েছিলো- টর্চ, মোম, লেখার কাগজ ইত্যাদি নিয়ে নিলাম। কিছু টাকাও নিয়েছিলাম সাথে। কারণে দেখতাম, বাবা কিছু টাকা সাথে রাখতেন।
দর্শক প্রশ্ন- জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আপনি কাজ করে গেছেন। এটি নিয়ে আপনার মধ্যে কোন শঙ্কা কাজ করে বা করছে কিনা?
-আমি চেয়েছি দেশের মানুষ শান্তিতে থাকুক। কিন্তু সারা দেশে যখন একযোগে ৫০০ স্থানে বোমা হামলা হয়, বোমা পুতে রাখা। এ ধরণের কাজ আমি পছন্দ করিনি। আর আমি এর আগে ক্ষমতায় এসে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিচুক্তি করে সেখানকার অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণ করেছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়ে প্রতিবেশী দেশে হামলা করা হতো। আমি বুঝেছিলাম, জঙ্গিবাদ থাকলে কোন দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। বিরোধী দলে থাকি, আর সরকার দলে; যেটা নীতির ব্যাপার সেটার বিষয়ে সোচ্চার হওয়া শুধু সরকারি দলে আসলেই করব, বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় করব না এমন নয়। আমার দেশকে আমি ভালবাসি। আর সে কারণেই এ বিষয়গুলোর বিরুদ্ধে সব সময় প্রতিবাদ করেছি।
আর আমাকে ত অনেক বার হত্যার চেষ্টা হয়েছে। কয়েকবার না অনেকবার। এমনকি সামনে থেকে গুলি করেও হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে আমাকে। যখন বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়েছি তখনও বাধা পেয়েছি। কিন্তু একটা বিষয়, এ দেশের মানুষ, যেখানে গিয়েছি সেখানে এত ভালবাসা পেয়েছি। এই ভালবাসা আমার শক্তি। সেটাই আমার প্রেরণা।
আজকে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। এটাওত বড় বিষয়।
উপস্থাপক- ব্যক্তি শেখ হাসিনা সম্পর্কে জানতে চাই। এত খাটেন, আপা নিজের জন্য সময় পান?
– আমি আমার জীবনটাকে ত উৎসর্গ করেছি দেশের মানুষের জন্য। আসলে আমার নিজের বলেত কিছু নেই। আর রাতে ৫ ঘণ্টা ঘুমাই। আর বাকি সময় চেষ্টা করি, কত দ্রুত আমার কাজগুলো শেষ করতে পারি। কারণ আমি জানি যে কোন মুহুর্তে চলে যেতে হতে পারে। কখনও গুলি, কখনও গ্রেনেড হামালায়। তাই প্রতিটি মুহুর্তে দেশের মানুষের জন্য কিছু করে যাওয়ার চেষ্টা করি।
দর্শক প্রশ্ন- রাজনীতিতে না আসলে কি করতেন? ছোটবেলায় কি হতে চেয়েছিলেন?
-আমার ছোট বেলায় ইচ্ছা ছিলো ডাক্তার হবো। এসএসসি পরীক্ষা দিলাম, তখন দেখলাম অঙ্কে কাঁচা। আর বন্ধুরা সবাই আর্টসে ছিলো, আমিও আর্টসে ভর্তি হই। এরপর ইচ্ছা ছিলো শিক্ষক হবার। আবার শিক্ষক মানে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। বাচ্চাদের পড়াব।
দর্শক প্রশ্ন- নিজের শরীরকে কিভাবে ঠিক রাখছেন?
-আমাদের জীবনে রুটিন ঠিক থাকে না। তবে ফিট থাকতে- আমি নামাজ পড়ি নিয়মিত। আর তেমন ব্যয়াম হয় না। আর গণ ভবনে থাকা বন্দী জীবনের মতন। তারপরও চেষ্টা করি সকালে উঠে একটু হাটতে। ছাদে হাটি। আর পরিমিতভাবে খেলে সুস্থ্য থাকা যায়। আর চিন্তা ভাবনাকে সচ্ছ রাখা এবং সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ আমি সুস্থ্য থাকব এটা ভাবা।
দর্শক প্রশ্ন- নানী বা দাদী হিসেবে আপনি কেমন? আপনার নাতী-নাতনীদের সাথে আপনার সম্পর্ক কেমন?
– সেটা আমার নাতীদের জিজ্ঞাসা করলে বলবে। আমরা লুডু খেলি, ক্যারাম খেলি, দাবা খেলি। তারা আমার হাতের রান্না পছন্দ করে। আর ছোট একটা আছে সে আবার খুব ডিমান্ড করে। বলে দেয়, তুমিই রান্না করবে। ববির ছোটটা। সে বলে, তুমিই রান্না করবে। সে কোলে চড়ে বসে আবার নির্দেশও দেয়। এটা দাও, ওটা দাও। বৃদ্ধ বয়সে নাতী-নাতনী নিয়ে থাকার থেকে আর কোন সুখের সময় হয়না।
প্রধানমন্ত্রী তরুণ সমজারে কাছে প্রশ্ন করেন, তারা কি চায় আমি জানতে চাই। জানলে পরে আমার সুবিধা হবে পরিকল্পনা গ্রহণে।
– আমরা কত বেশি মেয়ে এবং কত বেশি তরুণকে সুযোগ দিতে পারি এই চেষ্টা করি। বিগত বছরগুলোতে আমরা অনেককে সুযোগ দিয়েছি। তাদের মধ্যে অনেকে ভালো করেছে। অনেকের ক্ষেত্রে পরিবর্তন করতে হবে। তবে আমরা বয়বৃদ্ধ দেখে একেবারে অবহেলা করা উচিত হবে না।
দর্শক প্রশ্ন- মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী, নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠীর কোটা তুলে দেয়া হয়েছে। এটি পুন বিবেচনা করবেন কিনা?
– কোটা বাতিলের জন্য আন্দোলন করা হয়েছে। সে কারণে কোটা তুলে দেয়া হয়েছে। অনেকে বলেছে, এই দাবি মেনে নেয়া মানে হেরে যাওয়া। আমি বলেছি, না হেরে যাওয়া নয়। কেননা বাচ্চা দাবি করেছে। সেই দাবির প্রেক্ষিতে কোটা বাতিল করা হয়েছে। যারা প্রতিবন্ধী, নৃ-তাত্বিক গোষ্ঠী বা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আছেন তাদের বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করে নতুন দিক নির্দেশনা প্রদান করা হচ্ছে।
দর্শক প্রশ্ন- প্রান্তিক পর্যায়ের উন্নয়নে কি ব্যবস্থা নিচ্ছেন?
-আমরা দেশের প্রন্তিক পর্যায়ে উন্নয়ন পৌছে দিতে চাই। আমরা কাজ করছি। গ্রাম আর গ্রাম থাকবে না, শহরে পরিণত হবে। উন্নয়ন পরিকল্পনা নেয়ার সময় শহর কেন্দ্রিক বা রাজধানী কেন্দ্রিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়না। বরং দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের কথাও ভাবা হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্যও কাজ করা হচ্ছে। হাওর অঞ্চলের উন্নয়নের জন্যও কাজ করে যাচ্ছি। আমরা বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ায় উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলব। বাংলাদেশ নিয়ে যে দীর্ঘ পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে, আমি হয়ত ততদিন বাঁচব না। কিন্তু তোমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
দর্শক প্রশ্ন- স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাবার পথ কিভাবে বন্ধ হবে, কবে বন্ধ হবে?
– কারো ভেতরে যদি মুক্তিযুদ্ধের প্রতি বা দেশের প্রতি ভালবাসা না থাকে, তারা কখনও দেশের উন্নয়ন করবে না, করতে চাইবেও না। পরাজিত শক্তির দোসর যারা তারা ত দেশকে পিছিয়েই রাখতে চায়। এর ফলাফল আমরা দেখেছে ৭৫ সাল থেকে পরবর্তীত বছরগুলোতে। ৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর আমি দাবি করতে পারি আমরা প্রমাণ করেছি, সরকার জনগণের সেবক। গত ১০ বছর বাংলাদেশের উন্নয়ন ও পরিবর্তনের চিত্র একবার খুঁজে দেখার চেষ্টা করলে তোমরাই দেখতে পাবে কতটা এগিয়েছি আমরা। এর একমাত্র কারণ আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করি। আগে যারা ছিলো, সেখানে ভেজাল ছিলো। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে শক্তি, মুক্তিযোদ্ধা সব মিলিয়ে এক জগাখিচুড়ি অবস্থা।
দর্শক প্রশ্ন- কবে দুর্নীতি মুক্ত হবে বাংলাদেশ?
– এটা আমার লক্ষ্য আছে। আমি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আভিযান চালিয়েছি। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। এরপর দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোসণা করা হবে। আমরা সরকারি কর্মকর্তাদের আয় উপার্জনের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। সেখানে দুর্নীতি করার দরকার কী? অসুস্থ প্রতিযোগীতা থেকে সরে আসতে পারলে দুর্নীতি বন্ধ করা সম্ভব।
তরুণ উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রীর বার্তা
– দেশকে ভালোবাসতে হবে। মানুষকে ভালোবাসতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে কি পেলাম না পেলাম আমি দেশের জন্য কতটুকু দিতে পারলাম, মানুষের জন্য কতটা দিতে পারলাম তা ভাবতে হবে। পরশ্রী কাতরতা থেকে বের হয়ে এসে নিজেকে নিজের বলতে হবে, আমি পারি। আমি আমার মত করেই ভালো করব। কেউ দ্রুত উপরে উঠে গেলো দেখে আমাকে একটা অসুভ প্রতিযোগীতা করতে হবে সেটা ঠিক নয়। সেই সাথে দেশ প্রেম এবং মানুষের প্রতি ভালবাসা থাকতে হবে। আমরা যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসি হই তাহলে একটি মানুষও অবহেলিত থাকবে না। প্রত্যেক মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ হবে। সরকার হিসেবে আমাদের দায়িত্ব সেই সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া। আর তোমাদের দায়িত্ব নিজের মাঝে সেই ব্যক্তিত্ব সৃষ্টি করে দেশের প্রতি দায়িত্ব, নাগরিক হিসেবে দায়িত্ব এবং প্রতিবেশি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা। আর সব সময় একটা আত্মবিশ্বাস নিয়ে চললে দেশকে কিছু দিতে পারবে, নিজেও জীবনে কিছু করতে পারবে। হতাশ হওয়ার সুযোগ নেই। জীবনে অনেক ঝড় ঝাপ্টা আসবে। কিন্তু ইচ্ছা শক্তি প্রবল থাকলে যে কোন বাধা অতিক্রম করা যায়। একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে যদি কেউ এগিয়ে যায়। তাহলে কোন বাধাই বাধা বলে মনে হবে না। দেশকে এতদূর নিয়ে আসতে পেরেছি তার প্রধান কারণ এই ইচ্ছা শক্তি। জাতির জনক বলে গেছেন, মহৎ অর্জনের জন্য মহান ত্যাগের প্রয়োজন। ত্যাগের মধ্যে দিয়েই অর্জন করা যায়। আর সৎ থাকতে হবে। যদি সৎ না থাকতাম, তাহলে ওয়ার্ল্ড ব্যাংককে চ্যালেঞ্জ করতে পারতাম না। পদ্মা সেতুর কাজও শুরু করতে পারতাম না। আমার এই একটি সিদ্ধান্ত বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের আত্মমর্যাদাকে অন্য এক পর্যায়ে নিয়ে গেছে। আমি তোমাদের কাছে এটাই চাই, যে সেই আত্মমর্যাদা তোমরা ধরে রাখবে। যেখানে আমরা বাংলাদেশকে রেখে যাচ্ছি, তোমরা সেখান থেকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে। তোমাদের হাতে বাংলাদেশকে তুলে দিচ্ছি কারণ তোমরাই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ।
সেন্টার ফর রিসার্চ ইনেশিয়েটিভ-সিআরআই’র সৌজন্যে
সারাবাংলা/এমএম