Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সাংবাদিকতা প্রশ্নের পেশা, প্রশ্ন করাই আমাদের কাজ


১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৩:২৩

জার্নালিজম ইজ অ্যা কোয়েশ্চেনিং প্রফেশন…. সাংবাদিকতার প্রথম পাঠে এ কথাটিই শেখানো হয়। সংবাদকর্মী মূলত কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজে তবেই একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। আর খবর লেখার জন্য তো- কে? কি? কেন? কোথায়? কখন? কিভাবে? এই 5W 1H এক মৌলিক তত্ত্ব।

আপনি ভোটের রাজনীতিতে নেমেছেন? নানা সময়ে, নানা পর্যায়ে কিছু প্রশ্ন সংবাদকর্মীরা আপনাকে করবে সেটাই তো স্বাভাবিক। তাহলে প্রশ্ন করায় এতটা ক্ষিপ্ত কেন?

বিজ্ঞাপন

দিন কতক আগে- মূলত নভেম্বরের প্রথম সপ্তায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টিয়াল মিড-টার্ম নির্বাচনের পর ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউজের সংবাদ সম্মেলনটি অনেকেই দেখেছেন। সেই সংবাদ সম্মেলনে অপছন্দের প্রশ্ন করে সিএনএন করেসপন্ডেন্টকে কতটা অপদস্থ হতে হয়েছে তাও এখন অনেকেরই জানা। সুতরাং রাজনীতিবিদদের কাছে সংবাদকর্মীদের অপদস্থ হওয়া নতুন কিছু নয়।

অতীতে বিষয়টি এমন ছিলো না? সংবাদকর্মীর প্রয়োজনীয় বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরে খুশি থাকতেন রাজনীতিবিদরা। এখন সেটা কমে গেছে। জাতীয় পর্যায়ে যেমন কমেছে, আন্তর্জাতিকভাবেও আমরা তার ভুরিভুরি উদাহরণ পাচ্ছি।

প্রশ্ন করে, কিংবা কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে তো প্রাণটিই তো হারালেন সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি।

গবেষকরা দেখেছেন- সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যেতে নানা কৌশল খোঁজেন একজন রাজনীতিবিদ। সবচেয়ে বেশি যেটি করেন খুব কৌশলে আপনার প্রশ্নটির উত্তর তিনি এড়িয়ে যান। আবার কখনো কখনো প্রশ্নটির খুব প্রশংসা করেন কিন্তু উত্তর দেন না। এছাড়া- প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে প্রশ্নটি নিয়েই প্রশ্ন তোলেন- প্রশ্নের ব্যাখ্যা চান কখনো পাল্টা প্রশ্ন করে বসেন। আবার কেউ কেউ প্রশ্নে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রশ্নটির ওপরই হামলা করে বসেন? যে প্রশ্নটি করা হলো সেটি এখন করার মতো প্রশ্ন নয়! আমরা এখন এ বিষয়ে কথা বলছি না! এই সব। অনেকে প্রশ্নটিকে ভিত্তিহীন বলেও উড়িয়ে দেন। আর কেউ কেউ সকল টেমপার হারিয়ে ফেলে প্রশ্নকর্তার ওপর চড়াও হন।

বিজ্ঞাপন

উপরের প্রায় সবগুলো বিষয়ই ঘটেছে শুক্রবার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে ঢাকার মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে।

একটি ভাইরাল হওয়া ভিডিও থেকে দেশের কোটি মানুষের এখন পুরো বিষয়টিই জানা।

ভিডিওতে দেখা গেছে ড. কামাল হোসেন শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে তার দিকে ছুঁড়ে দেওয়া একটি প্রশ্ন এড়াতে চেয়েছেন। আর সে এড়ানোর প্রক্রিয়ায় তিনি উপরের প্রায় সবগুলো প্রক্রিয়াই ব্যবহার করেছেন।

তবে তার একটি প্রশ্ন ও একটি শব্দ নিঃসন্দেহে শিষ্টাচারের বাইরে চলে গেছে। তিনি সংবাদ কর্মীকে ‘খামোশ’ বলে ধমক দিয়ে চুপ থাকতে বলেছেন। আর একটি পাল্টা প্রশ্নে জানতে চেয়েছেন- কত টাকা নিয়ে তাকে এই প্রশ্নটি করা হয়েছে?
তার এই খামোশ শব্দে খাশোগির পরিনতির কথা মনে পড়ে যায়।

এটা নিঃসন্দেহে বলা চলে- ‘খামোশ’ বলে সাংবাদিকের মুখ বন্ধ করতে চেয়েছেন ড. কামাল হোসেন। সেখানেই থেমে থাকেননি সাংবাদিকের পরিচয় জানতে চেয়েছেন এবং বিষয়টি দেখে নেবেন বলেও হুমকি দিয়েছেন। তার শত ধমকা ধমকিতেও সংবাদিক কর্মী বিনয়ী ও অমায়িক থাকার চেষ্টা করেছেন। আর তাতে শ্লেষ ছড়িয়ে বলেছেন- হাসছে হে হে হে!

গোটা দৃশ্যপট এটা নিশ্চিত করে দেশের এই বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ তার বদমেজাজটিই সাংবাদিকদের দেখিয়েছেন।

তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে- সত্যিই কি একটি অপ্রয়োজনীয়-অযাচিত প্রশ্ন করেছেন ওই সংবাদকর্মী?

সাংবাদিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে বলতে হবে- নিশ্চয়ই নয়। বরং বলা চলে একটি সময়পোযোগী প্রশ্নই করেছেন একটি টেলিভিশন চ্যানেলের ওই সংবাদকর্মী।

কেন?

সে প্রশ্নের উত্তরে আসুন আমরা সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটটি তুলে ধরি-

ড. কামাল হোসেন যখন ঐক্যফ্রন্ট গড়ার প্রক্রিয়া শুরু করেন তখন থেকেই বলে আসছিলেন তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। তাকে আমরা বিভিন্ন সভা-সমাবেশে জয়বাংলা উচ্চারণ করতেও শুনেছি। পরে যখন রাজনৈতিক স্বপ্নে বিভোর হয়ে বিএনপিকে এই জোটে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলো তখন এলো জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের প্রসঙ্গ। স্বাধীনতাবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী, দেশের সাংবিধানিক প্রক্রিয়া বিরোধী একটি নিবন্ধন বাতিলকৃত দলকে এই ঐক্য প্রক্রিয়ায় কিভাবে নেওয়া হবে সে প্রশ্ন বার বার এসেছে- এবং ড. কামাল হোসেন গং তখন বলেছেন— জামায়াতকে বাদ দিয়েই বিএনপিকে ঐক্যফ্রন্টে আসতে হবে। কিন্তু আজ যে বাস্তবতা আমরা দেখছি- ঐক্যফ্রন্টের ‘তথাকথিত’ প্রগতিশীল নেতারা ধানেরশীষে ভোট করছেন। আর একই প্রতীকে ভোটের মাঠে আষ্ফালন করছে জামায়াতের নেতারাও। যাদের অনেকেই আবার সরাসরি যুদ্ধাপরাধী। মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত। কেউ কেউ রয়েছে- যারা মহান মুক্তিযুদ্ধে ঘৃণিত সেই সব রাজাকার আল-বদরদের হয় সন্তান নয়তো ভাই-বেরাদার।

একটি বিষয় এখন আর কারোই বুঝতে বাকি নেই- রাজনৈতিকভাবে খাদের কিনারে চলে যাওয়া বিএনপি-জামায়াত জোটকে একটি পুনর্বাসন প্রক্রিয়াই ছিলো ঐক্যজোট।

তাহলে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে মুক্তিযুদ্ধ চেতনাবিরোধী, মানবতাবিরোধীদের পুনর্বাসন কিংবা তাদেরই ভোটের মাঠে নিয়ে আসার বিষয়ে ড. কামাল হোসেনকে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে- তাতে সন্দেহমাত্র নেই। আর সে কারণে বলতেই হবে- প্রচণ্ড ভীড়ের মাঝে ঠেলাঠেলির মধ্যেও যথার্থ প্রশ্নটিই ছুঁড়ে দিয়েছেন ওই সংবাদকর্মী।

কিন্তু তাকে অপদস্থ করে ড. কামাল হোসেন কিছু প্রশ্ন আরও শক্ত করে সামনে এনেছেন। সে প্রশ্নগুলো করতেই হবে। আমরা জানতে চাই- তিনি কি জামায়াতের রাজনৈতিক পুনর্বাসনের মূল দায়িত্বটি নিয়েছেন? তিনি এই কাজে কত টাকা নিয়েছেন? তিনি এখন যদি জামায়াত নিয়ে প্রশ্নে রেগে যান- তাহলে প্রথম দিকে কেনো এত জয়বাংলা-জয়বাংলা করেছেন? কই এখন তো তার মুখে আর জয়বাংলা শুনিনা!! তিনি কি এবার তাহলে জয়বাংলার চেতনাটিকেও একবার বিক্রির চেষ্টা করলেন? স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে পুনর্বাসনের উদ্দেশ্যে? আর যদি এসব না হয়- তাহলে প্রশ্ন তিনি কি খেই হারিয়ে ফেলেছেন? তিনি কি বয়সের ভারে ন্যুব্জ? তার তা যদি হয়- তাহলে প্রশ্ন কেনই তার এই রাজনৈতিক খেলা? কে বা কারা তার পেছনে? আর সবশেষে তারই একটি প্রশ্ন তাকে ফিরিয়ে দিতে চাই- তিনি কত টাকা পেয়েছেন এসব করার জন্য?

পাঠক প্রশ্ন করতে পারেন- এতটা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া কেন? উত্তরে বলবো- ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া নয়। এসবগুলোকে প্রশ্ন হিসেবেই দেখতে পারেন। কারণ সাংবাদিকতা প্রশ্নের পেশা। প্রশ্ন করাই আমাদের কাজ।

মাহমুদ মেনন, নির্বাহী সম্পাদক, সারাবাংলা.নেট

সারাবাংলা/এমএম

ড. কামাল হোসেন প্রশ্ন শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস সাংবাদিক সাংবাদিকতা

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

বিপদসীমার ওপরে পানি, ৪৪ জলকপাট খোলা
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৫:০৬

তৃতীয় দিনের খেলাও পরিত্যক্ত
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৪:৫৪

সিটিকে সরিয়ে শীর্ষে লিভারপুল
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:২০

পদ্মায় কমেছে পানি, থামছে না ভাঙন
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:১৯

সম্পর্কিত খবর