Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ড. কামাল হেরে গেলেন!


১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ২০:১০

বুদ্ধিজীবী দিবসে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে জামায়াত প্রসঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অবস্থান জানতে চাওয়ায় ড. কামাল হোসেনের বেপরোয়া প্রতিক্রিয়ায় অনেকে বিস্মিত হয়েছেন। আমি হইনি। কেন হইনি, সে ব্যাখ্যা পরে দিচ্ছি। বিস্মিত না হলেও আশাহত হয়েছি। আমি অনেকদিন ধরেই স্বপ্ন দেখছিলাম, বাংলাদেশের মূল দুই রাজনৈতিক স্রোতই হবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে, বাংলাদেশের পক্ষে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর ভেবেছিলাম, আমার স্বপ্ন বুঝি সত্যি হতে যাচ্ছে। কারণ ঐক্যফ্রন্টের নেতারা সবাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের। তারা বারবার বলছিলেন, স্বাধীনতা বিরোধীদের সাথে কোনো জোট হবে না। কিন্তু আশাহত হয়েছি, যখন দেখেছি ঐক্যফ্রণ্ট আর জামায়াত অভিন্ন প্রতীক ধানের শীষে নির্বাচন করছে। তার মানে তারা মুখে স্বাধীনতার পক্ষের কথা বললেও প্রয়োজনে আপস করতে আপত্তি নেই।

বিজ্ঞাপন

এবার বলছি, কেন আমি কামাল হোসেনের আচরণে অবাক হইনি। ড. কামাল হোসেনকে শেষ বিচারে আমি স্বাধীনতার পক্ষের মানুষই বিবেচনা করি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার লড়াইয়েই তিনি ছিলেন সারাজীবন। তবে তার নিজের কিছু অবস্থান তার এ লড়াইকে বারবার প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ড. কামাল হোসেন বাংলাদেশের সবচেয়ে খ্যাতিমান আইনজীবী। আর বাংলাদেশের সবচেয়ে মহৎ আইনী লড়াই মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার। কিন্তু এই বিচার প্রক্রিয়ায় তার কোনো ভূমিকা কখনো চোখে পড়েনি। বরং মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের সবচেয়ে বড় সমালোচকদের একজন তার ঘরে থাকেন।

বিজ্ঞাপন

ড. কামালের মেয়ের জামাতা সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান দিনের পর দিন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধাচরণ করে, এই বিচার প্রক্রিয়াকে আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন। ড. কামাল কিন্তু কখনোই তার জামাতার কোনো কাজের বিরোধিতা করেননি, তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেননি। তার মানে নিজের মুখে বলতে না পারলেও ডেভিড বার্গম্যানের অবস্থানের সাথে তার দ্বিমত ছিল না।

বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য ড. কামাল হোসেন বাংলাদেশের প্রথম আইনমন্ত্রী। পরে তিনি পালন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বও। তার নেতৃত্বেই অল্প সময়ে প্রণীত হয়েছে অসাধারন একটি সংবিধান। তারপরও একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন আছে। ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলামের স্মৃতিকথায় আছে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তিনি এবং ড. কামাল একসঙ্গেই ধানমন্ডির ৩২ নাম্বারে বঙ্গবন্ধুর কাছে যান। তারা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পালাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু রাজি না হয়ে, তাদের তার নির্দেশনা অনুযায়ী যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দেন। সেখান থেকে বেরিয়ে তারা যান তাজউদ্দিন আহমদের বাসায়। সেখান তিনজন একসাথেই যুদ্ধের জন্য বের হন। কিন্তু ড. কামাল ধানমন্ডি ১৫ নাম্বারে জোর করে গাড়ি থেকে নেমে যান। এরপর নানা ঘটনায় তাজউদ্দিন আহমদ আর ব্যারিস্টার আমীর কলকাতা গিয়ে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করেছেন, প্রবাসী সরকার গঠন করেছেন। আর ড. কামাল চলে গেলেন পাকিস্তান। ড. কামাল কিভাবে পাকিস্তান গেলেন, তা নিয়ে রহস্য আছে। ড. কামাল কখনোই বিষয়টি পরিস্কার করেননি। আমার ধারনা, এ নিয়ে প্রশ্ন করলেও তিনি হুমকি দিয়ে খামোশ করিয়ে দিতে চাইবেন।

পাকিস্তানে ড. কামালের শশুর বাড়ি। তবে একাত্তরে তার পাকিস্তান যাওয়ার রহস্যটা পরিষ্কার নয়। বলা হয়, তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কিন্তু গ্রেপ্তার করা হলেও তাকে পাকিস্তান নেয়া হলো কেন, কিভাবে তা পরিষ্কার নয়। একমাত্র বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তান নেয়া হয়েছিল। বাকি যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাদের সবাইকে তখনকার পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন কারাগারে, সেনানিবাসে বা অস্থায়ী নির্যাতন কেন্দ্রে রাখা হয়েছিল। আর ড. কামাল তখন অত বিখ্যাত কেউও ছিলেন না। ড. কামালের পাকিস্তান যাওয়া নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল এ ও মিটহা এর লেখা ‘আনলাইকলি বিগিনস, অ্যা সোলজার্স লাইফ’ বই থেকে। উদ্ধৃতিটি পেয়েছি কথাশিল্পী জাকির তালুকদারের লেখা থেকে। বইয়ের ৩৪৪ পৃষ্ঠার দ্বিতীয় প্যারাতে মেজর জেনারেল মিটহা জানাচ্ছেন, ‘২৮ মার্চ, আমান আমাকে জানায় সে তার স্ত্রীর ভাই কামাল হোসেনের নিকট থেকে বার্তা পেয়েছে, যিনি ২৫ মার্চ এর পর থেকে মুজিবের অন্যান্য শীর্ষ সহযোগীর সাথে নিখোঁজ হয়েছিলেন। কামাল অন্যান্যদের সাথে ভারত যান নাই; তিনি (কামাল হোসেন) নিরাপত্তা হেফাজতে যেতে চান, কেননা তিনি তার নিজের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন। তাকে তার এক আত্মীয়ের বাসা থেকে রিসিভ করে ডিভিশনাল হেড কোয়ার্টার মেসে নিয়ে যাই। পরেরদিন তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যান।’ একই বইয়ে লেখা আছে, ‘যখন পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি থাকার কথা, তখন ড. কামাল হোসেনকে মেজর জেনারেল মিটহা প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সাথে দেখেছেন।’ তার মানে মুক্তিযুদ্ধের নয়মাস ড. কামাল হোসেন কিভাবে ভারত না গিয়ে পাকিস্তান গেলেন, সেখানে তিনি কোথায় ছিলেন; সেটা পরিষ্কার নয়। ড. কামাল হোসেনই পারেন শুধু এটি পরিষ্কার করতে।

১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বঙ্গবন্ধু যখন জানলেন ড. কামালও সেখানে, তিনি তাকে নিয়েই দেশে ফেরেন। বঙ্গবন্ধু ড. কামালকে নানা দায়িত্ব দিলেও সাহস দিতে পারেননি। তাই তো পচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল সুযোগ থাকার পরও নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জনমত গড়ে তোলার চেষ্টাও করেননি। ড. কামাল একাত্তরে, পচাত্তরে, ১/১১ সময় বারবার প্রমাণ করেছেন; তিনি আর যাই হোন, সাহসী নন।

ড. কামালের মত একজন ভীরু, কাপুরুষের কাছ থেকে তাই এমন ধমকে আমি অবাক হই না।
মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস যিনি পাকিস্তানে ছিলেন। যার মেয়ের জামাই তার বাসায় থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতা করেছেন দিনের পর দিন। সেই ড. কামাল হোসেনকে আমরা যারা এতদিন স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ভেবেছিলাম, সমস্যাটা আমাদের। বুদ্ধিজীবী দিবসে জামায়াত নিয়ে প্রশ্নটাই সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক। কারণ জামাতের মার্কা আর ঐক্যফ্রন্টের মার্কা এক। যতক্ষণ এই প্রশ্নের উত্তর পাবো না, ততক্ষণই সাংবাদিকরা প্রশ্ন করে যাবেন। ক্ষেপে গেলে হবে না। জবাব দিতে হবে, জামায়াতের সাথে ঐক্যফ্রন্টের সম্পর্ক কী? আমরা জানি, মানুষের যুক্তি যখন ফুরিয়ে যায়, তখনই তিনি ক্ষেপে যান। এই প্রশ্নের উত্তর নেই বলেই ড. কামাল ক্ষেপেছেন।

কিন্তু সম্মানিত ড. কামাল হোসেন আপনি রেগে গেছেন, মানে আপনি হেরে গেছেন।

প্রভাষ আমিন
১৫ ডিসেম্বর, ২০১৮

সারাবাংলা/এমএম

বিজ্ঞাপন

মাদকের টাকার জন্য মা'কে খুন
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৭

আরো

সম্পর্কিত খবর