মুক্তিযুদ্ধে শহীদের তালিকা: ড. কামালের ডিগবাজি!
২০ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৪:২৪
।। হাসান আজাদ ।।
২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত এক আলোচনা সভায় মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক আছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। (প্রথম আলো, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৫ অনলাইন সংস্করণ)। তার এই বক্তব্য তুমুল বির্তকের জন্ম দেয় ওই সময়। খালেদা জিয়ার সেই বক্তব্যের জবাব দিতেই গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন দলের স্থায়ী কমিটির এক সভা শেষে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বির্তক করা এক রুগ্ণ রাজনীতি।’ (প্রথম আলো, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ অনলাইন সংস্করণ)। একই বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবে অন্য এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বির্তকের কোনো অবকাশ নেই।’ (প্রথম আলো, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ অনলাইন সংস্করণ)।
মাত্র দুই বছর পর এসে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের নিয়ে নিজের এমন অবস্থানের ঠিক বিপরীতে এসে দাঁড়িয়েছেন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নে নেতৃত্ব দেওয়া খ্যাতনামা এই আইনজীবী। এখন তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিরূপণ করতে চান। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, একবার রাজনৈতিক নীতি-আদর্শ বিসর্জন দিলে সারাজীবন পথ খুঁজে বেড়াতে হয়। ড. কামাল হোসেনের অবস্থাও হয়েছে তাই। আদর্শ হারিয়ে তিনি এখন এখানে-ওখানে নীতিপথ খুঁজে বেড়াচ্ছেন।
একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধ শেষে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির প্রধান ছিলেন ড. কামাল হোসেন। দীর্ঘদিন আইন পেশায় থেকে দেশ-বিদেশে সুনামও কুড়িয়েছেন। একটা সময় পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলেও নব্বইয়ের দশকের মধ্যভাগে এসে দলটি থেকে বেরিয়ে গিয়ে গড়ে তোলেন গণফোরাম। সম্প্রতি বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে নিয়ে তিনিই গড়ে তুলেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। সমালোচকদের মতে, আইন পেশার সঙ্গে জড়িত এই প্রাজ্ঞ মানুষটি দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করলেও গণমানুষের নেতা হতে পারেননি। বিএনপি-জামাতের সঙ্গে জোট করে এখন সেই চেষ্টা করছেন।
সেই ড. কামাল হোসেনের মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে অবস্থান পাল্টানোর বিষয়টি সামনে আসে গত সোমবার (১৭ ডিসেম্বর), একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করা হয় ওই দিন। ড. কামালের উপস্থিতিতেই ঘোষণা করা ওই ইশতেহার ফলাও করে প্রচার করা হয় দেশের সব সংবাদমাধ্যমে। ৩৫টি অনুচ্ছেদের ওই ইশতেহারের ৩২ নম্বর অনুচ্ছেদটি হলো ‘মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধা’। এই অনুচ্ছেদে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কী করা হবে, তা উল্লেখ করা হয়েছে। এই অনুচ্ছেদের অঙ্গীকারগুলোর অন্যতম— ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম চালানো হবে’ এবং ‘সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের একটি তালিকা প্রস্তুত করা হবে’।
এদিকে, ঐক্যফ্রন্টের বৃহত্তম শরিক দল বিএনপি এর পরদিনই (১৮ ডিসেম্বর) দলীয় ইশতেহার ঘোষণা করে। সেই ইশতেহারেও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রসঙ্গে একই কথা বলা হয়েছে। দলটি তাদের ইশতেহারের মুক্তিযোদ্ধা অনুচ্ছেদে বলছে, ‘রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে নিবিড় জরিপের ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের একটি সঠিক তালিকা প্রণয়ন করা হবে’। বিএনপি দীর্ঘদিন ধরেই মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক তৈরির প্রচেষ্টা চালিয়ে আসায় তাদের ইশতেহারে এই বিষয়টি যুক্ত হওয়া নিয়ে কেউ অবাক হয়নি। তবে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক নেই বলে এতদিন কঠোর অবস্থান দেখিয়ে আসা ড. কামাল হোসেনও জোটের ইশতেহারে বিষয়টি উল্লেখ করবে, তা অনেকেই ভাবেননি।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের ‘সঠিক সংখ্যা’ নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হয় মূলত একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিচার কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে। বিএনপি-জামায়াতের পক্ষ থেকে বিচার ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এই বিষয়ে বিতর্ক তোলার অপচেষ্টা শুরু হয়। বিচার ব্যবস্থাকে আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করতে দেশে বিদেশে লবিস্টও নিয়োগ দেওয়া হয়।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের প্রতিশ্রুতি দেয়। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, ২০০৯ সালের ২৯ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। অবশেষে স্বাধীনতার ৩৯ বছর পর বহুল কাঙ্ক্ষিত মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের জন্য ২০১০ সালের ২৫ মার্চ আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়।
তথ্য ঘাঁটলে দেখা যায়, ওই বিচার প্রক্রিয়া শুরুর পরপরই পাকিস্তানের পক্ষ থেকে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। ওই সময় পাকিস্তানে উত্থাপিত বিষয়টি নিয়ে দেশের ভেতরে বিভিন্ন সভা-সেমিনারে এই প্রশ্নটি সচেতনভাবে উপস্থাপন করেন বিএনপি জামায়াতের একাধিক নেতা ও তাদের সমমনা বুদ্ধিজীবীরা। তারই পরিপ্রেক্ষিতে শহীদের সংখ্যা নিয়ে ও মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের অবদান নিয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন ড. কামাল হোসেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, দুই বছরের মাথায় কেন এই ইস্যুতে ড. কামাল ডিগবাজি দিলেন?
২০১০ সালে আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর দেশি-বিদেশি অনেক ষড়যন্ত্র শুরু হয়। এর অংশ হিসেবে ২০১১ সালের ব্রিটেনে জন্মগ্রহণকারী ড. কামাল হোসেনের জামাতা সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান তার নিজের ব্লগে একাত্তরে মৃতের সংখ্যা অনেক কম বলে মতামত দেন এবং সরকারি সংখ্যার সমর্থনে কোনো প্রমাণ নেই বলেও উল্লেখ করেন। পাশাপাশি যুদ্ধাপরাদের বিচার নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। এ ঘটনায় ২০১৪ সালে আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে দোষী সাব্যস্ত করে।
এই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় একই বছরের ২০ ডিসেম্বর দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় ৫০ জন নাগরিক এক বিবৃতিতে বার্গম্যানের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। পরের বছরের ১৪ জানুয়ারি বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের কাছে এর ব্যাখ্যা দাবি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। পরে বিবৃতিদাতাদের মধ্যে ২৬ জন নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ায় এবং ২২ জন প্রথমবার আদালত অবমাননা করেছিলেন বলে তাদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এর মধ্যে জাফরউল্লাহ চৌধুরীকে আদালত শাস্তি দেন।
ড. কামালের জামাতা বার্গম্যান ও বিবৃতিদাতাদের অনেকেই ড. কামাল হোসেনের ঘনিষ্ঠজন। এই ঘনিষ্ঠজনদের প্ররোচনা এবং দীর্ঘদিনের কাঙ্ক্ষিত ক্ষমতা পেতেই হয়তো ড. কামাল নিজ অবস্থান থেকে সরে আসেন। সর্বশেষ চলতি বছর তিনি প্রকাশ্যে বিএনপি-জামায়াত গোষ্ঠীর সঙ্গে রাজনৈতিক জোট করার মধ্য দিয়ে আদর্শ বিচ্যুতি স্পষ্ট করে দেন। আর এই বিচ্যুতির চূড়ান্ত উদাহরণ ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার। বিএনপি-জামায়াত জোটের আদর্শ বাস্তবায়নের প্রকাশ্যে রাজনৈতিক মাঠ দৌড়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। এর মাধ্যমে আদর্শ বিসর্জন দিয়ে হলেও জননেতা হতে চাইছেন তিনি। বিএনপি-জামায়াত চক্রে তিনি এখন অনেকটা খেই হারিয়ে ফেলেছেন। যে কারণে জামায়াত ইস্যুতে প্রশ্ন করায় সাংবাদিককে দেখে নেওয়ারও হুমকি দিয়েছেন ড. কামাল।
মহান মুক্তিযুদ্ধের যে ইস্যুটি ঐতিহাসিক সত্য বলে গৃহীত, সেই ইস্যুকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানানোর পক্ষে কাজ করেছেন ড. কামাল হোসেন। যে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের কথা প্রতিনিয়ত বলে যাচ্ছেন, তার মূল বিষয়টি নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন এবং তার সমাধানের নামে নতুন বিতর্ক উসকে দিলেন। ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে বিষয়টি এনে তার প্রাতিষ্ঠানিকতা যেমন দিলেন, একইসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত বিভিন্ন দলিলও অস্বীকার করলেন এই রাজনীতিক ও তার নেতৃত্বাধীন অন্যরা।
মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা যে ঐতিহাসিকভাবে সত্য, তার পক্ষে তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ। ২০১৬ সালে ২ জানুয়ারি দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় ‘৩০ লক্ষ শহীদের সংখ্যাতত্ত্ব’ শিরোনামে এক নিবন্ধে তিনি দেখান, কিভাবে ৩০ লাখ শহীদের বিষয়টি সত্য। নিচে তার নিবন্ধ থেকে কিছু অংশ পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো—
‘……..১৯৭১ সালে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের লক্ষ্যই ছিল ৩০ লাখ বাঙালিকে হত্যা করা। পাকিস্তানি আর্মিদের এক বৈঠকে ইয়াহিয়া খান বলেন, Kill 3 million of them and the rest will eat out of our hands. এখানে সুস্পষ্ট, পাকিস্তানি বাহিনীর প্রথম থেকেই লক্ষ্য ছিল অন্তত ৩০ লাখ বাঙালিকে হত্যা করা।’
[তথ্যসূত্র: Robert Payne, Massacre: The Tragedy of Bangladesh and the Phenomenon of Mass Slaughter Throughout History (1972), পৃষ্ঠা-৫০; (২) Debashish Roy Chowdhury, ‘Indians are Bastard Any way’, The Asia Times, 23 June, 2005]
(খ) পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা বিষয়ক ওয়েবসাইট defence.pk-তে প্রকাশিত The Radical Truth: Teaching MPACUK the Forgotten Chapter of Pakistan’s History শীর্ষক নিবন্ধের তৃতীয় অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘In 1971, over 9 months, President Yahiya Khan and his military commanders with the aid of local collaborators committed mass atrocities on unarmed civilians, killed an estimated three million people…’
(গ) ১৯৭১ সালের ২১ ডিসেম্বর দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার সম্পাদকীয়তে লেখা হয়, হানাদার দুশমন বাহিনী বাংলাদেশে প্রায় ৩০ লাখ নিরীহ লোক ও দুই শতাধিক বুদ্ধিজীবীকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।
(ঘ) ১৯৭২ সালের ৫ জানুয়ারি ঢাকার The Daily Observer-এর শিরোনাম ছিল Pak Army Killed Over 30 Lakh People। একই দিন The Morning News-এর শিরোনাম ছিল Over 30 Lakh Killed by Pak Force।
(ঙ) রাশিয়ার কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র ‘প্রাভদা’ ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসেই বাংলাদেশে ৩০ লাখ শহীদের বিষয়টি প্রকাশ করে। এই প্রাভদার ইংরেজি সংস্করণে উল্লেখ করা হয়, Over 30 lakh persons were killed throughout Bangladesh by the Pakisthani occupation forces during the last nine months। ‘প্রাভদা’ পত্রিকাটির ১৯৭২ সালের ৫ জানুয়ারির বাংলা সংস্করণে শিরোনাম হয় দখলদার বাহিনী বাংলাদেশে ৩০ লক্ষাধিক মানুষ হত্যা করেছে।
(চ) ১৯৭২ সালের ৯ জানুয়ারি দৈনিক বাংলা’র ‘হুঁশিয়ার আন্তর্জাতিক চক্রান্ত’ শিরোনাম খবরে লেখা হয়, দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী বাংলাদেশে যে তাণ্ডব চালিয়েছে তাতে ৩৫ লক্ষাধিক বাঙালি প্রাণ হারিয়েছে।
(ছ) গবেষক রওনাক জাহানও তার গবেষণায় ৩০ লাখ শহীদের সংখ্যা খুঁজে পেয়েছেন। [তথ্যসূত্র : Genocide in Bangladesh- Samuel Totten, William S. Parsons and Israel W. Charny (ed), Century of Genocide: Critical Essays and Eyewitness Accounts (2nd ed, Routledge, 1995)]
দ্বিতীয় যুক্তির খণ্ডন: যারা মনে করেন, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হওয়া কোনোমতেই সম্ভব নয়, তারা আসলে অঙ্কে বড় কাঁচা। সহজ সরল অঙ্কের ফর্মুলা না বোঝার কারণেই তাদের এই বাচালতা। কারণ—
(ক) Rudolph Joseph Rummel গণহত্যার পরিসংখ্যান কিভাবে করতে হয়, তার একটি গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। পদ্ধতিটি তার রচিত ‘Estimating Democide: Methods and Procedures’ শীর্ষক নিবন্ধে বর্ণনা করা হয়েছে। তার রচিত ‘Statistics of Democide (1998)’ গ্রন্থের অষ্টম অধ্যায়ে তিনি অন্তর্ভুক্ত করেছেন ‘Statistics of Pakistan Democide, Estimates Calculation and sources’ শীর্ষক নিবন্ধটি। এই নিবন্ধে Rummel তার উদ্ভাবিত গণহত্যা পরিসংখ্যান পদ্ধতি অনুসারে দেখিয়েছেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে ৩০ লাখ ৩ হাজার লোক প্রাণ হারিয়েছেন।
(খ) ১৯৮১ সালের UNHRC (ইউনাইটেড ন্যাশনস হিউম্যান রাইটস কমিশন) রিপোর্ট বলছে, মানবসভ্যতার ইতিহাসে যতগুলো গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে, তাতে অল্প সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে ১৯৭১ সালে, বাংলাদেশে। প্রতিদিন গড়ে ৬,০০০ থেকে ১২,০০০ মানুষ তখন খুন হয়েছিল বাংলাদেশে। গণহত্যার ইতিহাসে এটাই সর্বোচ্চ গড়।
এতকিছুর পরও ড. কামাল হোসেনকে কেন এখন মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের সমীক্ষা করতে হবে, আর তা কেনই তার নির্বাচনি অঙ্গীকার— তা বুঝে নিতে কারও বেগ পাওয়ার কথা নয়।
লেখক: সাংবাদিক
সারাবাংলা/এইচএ/এমএম/টিআর