Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আধডজন নির্বাচনি ইশতেহার


২১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:১২

একটি সময় ছিল যখন নির্বাচনি ইশতেহার নিয়ে আমি মাথা ঘামাতাম না। আমি ধরেই নিয়েছিলাম একটা রাজনৈতিক দল পারুক আর না-ই পারুক ইশতেহারে অনেক ভালো ভালো কথা লিখে রাখবে। ক্ষমতায় আসার পর সেগুলো নিয়ে কেউ আর মাথা ঘামাবে না। দেশটির এত রকম সমস্যা, এখানে কোনোমতে টিকে থাকাই বিরাট সাফল্য।

আমি নির্বাচনি ইশতেহার নিয়ে প্রথমবার কৌতূহলী হয়েছিলাম ২০০৯ সালের নির্বাচনের আগে। সেই নির্বাচনের ইশতেহারে আওয়ামী লীগ কথা দিয়েছিল যদি তারা ক্ষমতায় যায় তাহলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে। আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছিল এবং সত্যি সত্যি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেছিল। সেই বিচারকে থামানোর জন্যে দেশে যে তাণ্ডব শুরু হয়ছিল, দেশের মানুষের সেটি নিশ্চয়ই মনে আছে। শেখ হাসিনা সরকারের সেই বিচার প্রক্রিয়ার পক্ষে জনমত তৈরি করার জন্যে তখন গণজাগরণ মঞ্চের জন্ম হয়েছিল এবং দেখতে দেখতে সেটি সারা বাংলাদেশের মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছিল। শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা পৃথিবীর বাংলাদেশের মানুষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। গণজাগরণ মঞ্চ কিংবা তাঁর নেতৃত্বে থাকা তরুণদের বর্তমান অবস্থা যা-ই হোক না কেন, ২০১৩ সালের সেই আন্দোলনের স্মৃতি এই দেশের তরুণদের বুকের মাঝে সারা জীবন একটি আনন্দময় স্মৃতি হিসেবে বেঁচে থাকবে।

বিজ্ঞাপন

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া থামানোর জন্যে জামায়াত শিবির এবং বিএনপি যে ভয়ঙ্কর তাণ্ডব শুরু করেছিল এবং শেখ হাসিনা যেভাবে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন তার কোনও তুলনা নেই। এই দেশে শুধু যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে তা নয়, সেই বিচারের রায় কার্যকর হয়েছে। আমাদের স্মৃতিশক্তি খুবই দুর্বল (হুমায়ূন আহমেদের ভাষায় গোল্ডফিশের মতো), তাই আমাদের নিশ্চয়ই মনে নেই আমরা কেউ কখনো কল্পনাও করতে পারিনি সত্যি সত্যি এই দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে দেশকে গ্লানিমুক্ত করা সম্ভব হবে। আমরা বরং উল্টোটাই দেখেছিলাম, গর্ত থেকে বের হয়ে তারা প্রকাশ্যে এসেছে এবং একসময় বিএনপির ঘাড়ে চেপে ক্ষমতা দখল করেছে। কাজেই এই দেশের অন্য মানুষের মনোভাব কী আমি জানি না। আমি সবসময়েই উচ্চকণ্ঠে বলে থাকি এই জীবনে আমার আর চাইবার কিছু নেই।

বিজ্ঞাপন

সেই থেকে আমি নির্বাচনি ইশতেহার খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ি। কারণ, আমি আমার জীবনে অন্তত একবার দেখেছি একটি রাজনৈতিক দল তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে একটি ঐতিহাসিক অঙ্গীকার করেছিল এবং সেই অঙ্গীকারটি রক্ষা করেছিল।

এই বছর আমি সব মিলিয়ে ছয়টি রাজনৈতিক দলের নির্বাচনি ইশতেহার পড়েছি। রাজনৈতিক দলগুলো হচ্ছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ছয় নম্বর নির্বাচনি ইশতেহারটি নির্দিষ্ট একটি রাজনৈতিক দলের নয়, সেটি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের। এই নির্বাচনি ইশতেহারগুলো সবাই নিজের মতো করে পড়ে, যে যেটা নিয়ে বেশি আগ্রহী সে সেটাই খুঁজে বেড়ায়। এটা আমার জন্যেও সত্যি, তবে আমি যেহেতু শিক্ষক মানুষ, আমি নিজের অজান্তেই কে কতটুকু খাটাখাটুনি করে, কত যত্ন করে আন্তরিকতা নিয়ে লিখেছে, মনে মনে সে জন্যে সবাইকে একটা গ্রেড দিয়ে রেখেছি!

সিপিবি’র নির্বাচনি ইশতেহারটি দেখেই আমি এক ধরনের আনন্দ পেয়েছি। কারণ, এই ইশতেহারটির নাম “ভিশন-মুক্তিযুদ্ধ ৭১”। এটি চার পৃষ্ঠার ছোট একটি ইশতেহার, সব মিলিয়ে ৩০টি ভিন্ন ভিন্ন অঙ্গীকার করা আছে। বামপন্থী রাজনৈতিক দলের ইশতেহার যেরকম হওয়ার কথা এটি সেরকম একটি ইশতেহার। শিক্ষক হিসেবে আলাদাভাবে আমার পিইসি এবং জেএসসি পরীক্ষা বাতিলের বিষয়টি চোখে পড়েছে। শুধু রাজনৈতিক দল নয়, ছাত্রছাত্রী অভিভাবক, শিক্ষক সবাই আজকাল কাতরভাবে এর থেকে মুক্তি চায়। এত ছোট শিশুদের ওপর এরকম একটা পরীক্ষা চাপিয়ে দিয়ে যেটুকু লাভ হয়েছে, ক্ষতি হয়েছে তারচেয়ে বেশি! এই নির্বাচনি ইশতেহারে আদিবাসীদের কথা বলা হয়েছে। আমাদের দেশের এই মানুষদের বোঝানোর জন্যে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নামে একটা অসম্মানজনক শব্দ ব্যবহার করা হয়, তাই যখন কোথাও তাদের আদিবাসী হিসেবে সম্বোধন করা হয় আমি দেখে আনন্দ পাই।

ওয়ার্কার্স পার্টির নির্বাচনি ইশতেহারটিও বামপন্থী রাজনৈতিক দলের ইশতেহারের মতো, তবে তারা আওয়ামী লীগের পক্ষের রাজনৈতিক দল। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রবলভাবে বিশ্বাসী। এটি ২৩ পৃষ্ঠার ইশতেহার, এখানে ১৩টি লক্ষ্য এবং ২১টি কর্মসূচি আছে। ওয়ার্কার্স পার্টিও ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী না বলে তাদের জন্য আদিবাসী শব্দটি ব্যবহার করে। তারা খুব স্পষ্টভাবে বলেছে এই দেশে কোনও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল থাকতে পারবে না। ওয়ার্কার্স পার্টি অন্য রাজনৈতিক দলের মতোই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্যে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার কথা বলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় দেশের ছেলেমেয়েদের যত কষ্ট হয় সেটি সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে একমুহূর্তে শেষ করে দেওয়া যায়, তারপরেও এটি এই দেশে ঘটছে না। আমি দেখে খুশি হয়েছি যে বিষয়টি ধীরে ধীরে একটা জাতীয় দাবিতে রূপ নিয়েছে। ওয়ার্কার্স পার্টির নির্বাচনি ইশতেহারের আরেকটা বিষয় আমার আলাদাভাবে চোখে পড়েছে। সেটি হচ্ছে তারা সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্যে আলাদা কোটা রাখার পক্ষপাতী। আমাদের সবারই নিশ্চয়ই মনে আছে এই দেশে মুক্তিযুদ্ধের সন্তানদের কোটাবিরোধী বিশাল একটা আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। এই আন্দোলনের একপর্যায়ে তারা রাজাকারদের পুনর্বাসনে লেগে গিয়েছিল, বুকে ‘আমি রাজাকার’ লিখে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ছবির কথা আমি কখনো ভুলতে পারি না!

জাতীয় পার্টির নির্বাচনি ইশতেহারটি আট পৃষ্ঠার। এখানে সব মিলিয়ে ১৮টি কর্মসূচি আছে। সবক’টি ইশতেহারের মাঝে এটি সবচেয়ে দুর্বল ইশতেহার, খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়েও এর মাঝে আলাদা করে বলার মতো বাস্তব কোনও পরিকল্পনা আমার চোখে পড়ল না। আমার কোনও ছাত্র এই ইশতেহার লিখে আনলে আমি তাকে পাস মার্ক দিতাম কিনা সন্দেহ। এর মাঝে সবচেয়ে দর্শনীয় হচ্ছে ইশতেহারের প্রচ্ছদে “পল্লীবন্ধু” হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিশাল একটি ছবি এবং আটটি প্রদেশের প্রস্তাবিত নাম (যেমন- জাহানাবাদ প্রদেশ, চন্দ্রদীপ প্রদেশ ইত্যাদি!)

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনি ইশতেহারটি যথেষ্ট কৌতূহলোদ্দীপক! প্রথমত এটি বেশ কয়েকটি ছোট-বড় রাজনৈতিক দলকে নিয়ে তৈরি হয়েছে, কাজেই আমরা ধরেই নিয়েছি এই নির্বাচনি ইশতেহারটি ছোট বড় সব রাজনৈতিক দলের সম্মিলিত একটি ইশতেহার। কিন্তু এই ইশতেহারটি ঘোষণা করার পরদিন বিএনপি আলাদাভাবে তাদের ইশতেহার দিয়েছে। কাজেই আমাদের ধরে নিতেই হবে ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারটি কয়েকটি খুবই ছোট ছোট গুরুত্বহীন রাজনৈতিক দলের ইশতেহার। সেই হিসেবে আমি যদি এই ইশতেহারটি নিয়ে কিছু না বলি কেউ নিশ্চয়ই কিছু মনে করবেন না। কিন্তু আমি এটা নিয়ে কয়েকটি কথা বলতে চাই। কারণ, এর মাঝে মজার কয়েকটি বিষয় আছে। আজকাল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল কিংবা বিপক্ষের দল যাই হোক না কেন, সবাইকে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে কিছু ভালো ভালো কথা বলতে হয়। সেই হিসেবে এই ইশতেহারেও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কিছু কিছু ভালো ভালো কথা আছে এবং শেষে এক জায়গায় লেখা আছে “মুক্তিযুদ্ধের সত্যিকার চেতনা নিয়ে মানুষকে সচেতন করে তোলা হবে।” আমি এই প্রথমবার “সত্যিকার চেতনা” কথাটি দেখছি, যার অর্থ নিশ্চয়ই এক ধরনের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আছে, যেটি সত্যিকার নয়, যেটি মিথ্যা, যেটি ভুল! সেটি কী আমার জানার খুবই কৌতূহল। এই দেশের অনেক মানুষের ভেতর মুক্তিযুদ্ধের এক ধরনের চেতনা আছে। সেটি কী সত্যিকারের চেতনা নাকি মিথ্যা চেতনা? এটি যাচাই করার পদ্ধতিটি কী? কে এর দায়িত্ব নিয়েছে?

সব ইশতেহারের মাঝেই ডিজিটাল প্রযুক্তি নিয়ে কথাবার্তা থাকে, এই ইশতেহারেও আছে। শেষে এক জায়গায় লেখা আছে, “সঠিক কক্ষপথে নতুন স্যাটেলাইট প্রেরণ করা হবে!” এটি পড়ে আমি হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছি না। জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইটের কক্ষপথ নির্দিষ্ট, সেই কক্ষপথে স্যাটেলাইট বসালে পৃথিবীর নির্দিষ্ট জায়গা থেকে সার্বক্ষণিকভাবে সেটিকে দেখা যায়। এই কক্ষপথে অসংখ্য স্যাটেলাইট বসানো আছে, যেগুলো পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ রাখছে। ক্লাস নাইনে পড়া একটি ছেলে বা মেয়েকে জিজ্ঞেস করলে সেও হিসাব করে এই কক্ষপথের ব্যাসার্ধ বের করে ফেলতে পারে। এখানে সঠিক বা বেঠিক কক্ষপথ বলে কিছু নেই, একটিই কক্ষপথ!

এই ইশতেহারের সবচেয়ে মূল্যবান অংশ হচ্ছে তার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরিকল্পনা। টানা চার পৃষ্ঠাব্যাপী এই পরিকল্পনাগুলো যথেষ্ট ব্যাপক। অন্য কোনও রাজনৈতিক দল এরকম খুঁটিনাটিসহ স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরিকল্পনা দিতে পারেনি। এই ইশতেহারে শিক্ষা সংক্রান্ত অনেক পরিকল্পনা দেওয়া আছে। তবে মজার ব্যাপার হলো, এর বেশিরভাগ তারুণ্যের ইশতেহার ভাবনা ২০১৮ থেকে নেওয়া (তারুণ্যের ইশতেহার হচ্ছে কোটাবিরোধী আন্দোলনের ছাত্রছাত্রীদের ইশতেহার)। কাজেই স্বীকার করে নিতেই হবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের রাজনৈতিক নেতাদের নিজেদের শিক্ষা নিয়ে বিশেষ অভিজ্ঞতা নেই, তাদের শিক্ষা সংক্রান্ত পরিকল্পনাগুলো ছাত্রছাত্রীদের থেকে নিতে হয়েছে। অথচ যেকোনও হিসাবে একটা জাতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে শিক্ষা।

তবে এই ইশতেহারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাক্যটি হচ্ছে” “যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম চলমান থাকবে।” আমাকে স্বীকার করতেই হবে ইশতেহারের এই বাক্যটি আমাকে খুবই আনন্দ দিয়েছে। আমি সবসময়েই আশা করে এসেছি দেশের সব রাজনৈতিক দল হবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এবং যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রায় ত্রিশ পৃষ্ঠার ইশতেহারের তুলনায় বিএনপির নয় পৃষ্ঠার ইশতেহারটি যথেষ্ট ছোট। আমার ধারণা, যখন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তাদের ইশতেহারে ঘোষণা করে ফেলেছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ চালিয়ে যাওয়া হবে, তখন বিএনপি তাড়াহুড়ো করে নতুন একটি ইশতেহার দাঁড় করিয়েছে জামায়াতে ইসলামীকে সন্তুষ্ট করার জন্যে, সেখানে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সংক্রান্ত কোনও কথা নেই। বিএনপির নির্বাচনি ইশতেহারটি মোটামুটি সাদামাটা, একটি ইশতেহারে গৎবাঁধা যে জিনিসগুলো থাকতে হয়, মোটামুটি সেগুলোই আছে। তবে শিক্ষাখাতে জিডিপির পাঁচ শতাংশ অর্থ ব্যয় করা হবে ঘোষণাটি দেখে যথেষ্ট খুশি হয়েছি। (আমি ইশতেহারে দশটি বিষয় চেয়ে একটি লেখা লিখেছিলাম, সেখানে চার শতাংশ দাবি করেছিলাম, আমার চাওয়া থেকেও বেশি!)। এই ইশতেহারেও পিইসি এবং জেএসসি বাতিল করার কথা বলা হয়েছে।

আমি যতগুলো ইশতেহার পড়েছি তার মাঝে সবচেয়ে চমকপ্রদ ইশতেহারটি এসেছে আওয়ামী লীগের কাছে থেকে। ৮৪ পৃষ্ঠার এই ইশতেহারটি যথেষ্ট সুলিখিত (আমার কোনও একজন ছাত্র এরকম একটি ইশতেহার লিখে আনতে পারলে তাকে নিশ্চিতভাবে এ প্লাস গ্রেড দিতাম!)। এটি শুধু যে গুছিয়ে লেখা হয়েছে তা নয়, এটি শেষ করা আছে সুকান্তের একটি কবিতার কয়েকটি লাইন দিয়ে। শুধু তা-ই নয়, এটি একমাত্র ইশতেহার, যেখানে বিষয় ব্যাখ্যা করার জন্যে গ্রাফ ব্যবহার করা হয়েছে। এই ইশতেহারের প্রত্যেকটি অঙ্গীকার লেখার আগে এই সরকার গত দশ বছরে এ বিষয়ে কী কী কাজ করেছে সেটি লিখে দিয়েছে। ভবিষ্যতের অঙ্গীকার নিয়ে কারও মনে দ্বিধা থাকলেও অতীতের অর্জন নিয়ে কেউ কোনও প্রশ্ন করতে পারবে না।

এই ইশতেহারে অসংখ্য পরিকল্পনার কথা দেয়া আছে। যথেষ্ট খুঁটিনাটির কথা বলা আছে। শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বাজেট দেওয়ার অঙ্গীকার করা আছে। তথ্য-প্রযুক্তির কথা বলার সময় সেখানে “ব্লক চেইন” শব্দটির ব্যবহার দেখে আমি যথেষ্ট চমৎকৃত হয়েছি। প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ করা নিয়ে বক্তব্যটি আমাকে যথেষ্ট আনন্দ দিয়েছে। আমার মনে আছে একটি সময় ছিল যখন আমি একা এটা নিয়ে চিৎকার করে গিয়েছিলাম, কেউ আমার কথাকে কোনও গুরুত্ব দেয়নি। এখন সব রাজনৈতিক দল প্রশ্নফাঁস বন্ধ করাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচনা করছে।

নির্বাচনি ইশতেহারে আমি যা যা চাই তার প্রায় সবকিছুই আমি এই ইশতেহারে খুঁজে পেয়েছি। ঢাকা শহরের দূষণমুক্ত বাতাস কিংবা কর্মজীবী মায়েদের জন্যে ডে-কেয়ার, কিংবা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্যে ব্রেইল বই কিংবা গবেষণার জন্যে বাড়তি ফান্ড, এরকম সবকিছুই আছে। শুধু যদি সাইকেলের আলাদা লেন এবং সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিষয়টি পেতাম, তাহলে আমার ভেতরে কোনও অতৃপ্তি থাকতো না।

এই ইশতেহারগুলো পড়ার সময় একটি বিষয় পড়ে আমি আমার স্ত্রীকে ডেকে বলেছি, “শুনে যাও! আমাদের আর কোনও চিন্তা নেই। আমাদের বয়স ৬৫ হয়ে গেছে, এখন আমরা বিনামূল্যে চিকিৎসা পাবো!”

নির্বাচনি ইশতেহার পড়ার মাঝে এত আনন্দ কে জানতো?

লেখক: মুহম্মদ জাফর ইকবাল, অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

বিজ্ঞাপন

মানুষের হিংস্রতা কেন বাড়ছে?
২৪ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:৪১

আরো

সম্পর্কিত খবর