Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বারেক সাহেবের ইউরেকা


২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৫:৫০

অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) ।।

বসে বসে ভাবেন বারেক সাহেব, ‘হচ্ছেটা কি?’ হঠাৎ দলে যোগ দেয়া আর দল বদলের হিড়িক পড়ল যেন’! অবসরপ্রাপ্ত সরকারী আমলা, পুলিশ কর্তা আর সেনা কর্মকর্তা বাদ যাচ্ছেন না কেউই। চাকুরী শেষে অবসরে আছেন। এখন ইচ্ছা হতেই পারে দেশের জন্য টুকটাক কিছু করবেন। সারাজীবন সরকারী কর্মকর্তা হিসাবে সরকারী সুবিধা ভোগ করেছেন, সম্মান পেয়েছেন ইত্যাদি ইত্যাদি। অতএব অবসর নেয়ার পর এখন যদি মনে করেন দেশ সারাজীবন তাদের যা দিয়েছে তার কিছুটা ফিরিয়ে দেবেন তাতে বারেক সাহেবের আপত্তি সামান্যই। বিশেষ করে নির্বাচনের মনোনয়ন চুড়ান্ত হবার পর তারা এমপি হবার ধান্ধায় এমনটা করছেন সেটাও বলা দুষ্কর। এসব নিয়ে মাথাও ঘামাতে চান না বারেক সাহেব।

বিজ্ঞাপন

মনে আছে বছরখানেক আগে তার জন্ডিস হয়েছিল। নামী-দামী একজন লিভার বিশেষজ্ঞকে দেখিয়েছিলেন তখন। দলের নেতারাই ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। ভদ্রলোক খাতির করে দেখে দিয়েছিলেন। সিরিয়াল লাগেনি, লাগেনি ভিজিটও। কারণ তিনি শুধু লিভার বিশেষজ্ঞও নন দলীয় প্রধানের উপদেষ্টাও বটে। পরে দলীয় বেশ কিছু কর্মসূচীতেও দেখা হয়েছে। বারেক সাহেবের খোঁজ-খবর নিতেন দেখা হলেই। দলের প্রধানও ভালোই পাত্তা দিতেন ভদ্রলোককে। বিভিন্ন মিটিং-এ, সমাবেশে দলীয় প্রধানের ডানে-বামে দেখা যেত তাকে। সেদিন ফেসবুক ঘাটতে গিয়ে বারেক সাহেবের আক্কেলগুড়ুম। স্থানীয় নেতার হাতে ফুলের তোড়া তুলে দিয়ে ডিগবাজী খেয়েছেন ভদ্রলোক। কারণটা কি? কিসের আশায়? উপরওয়ালাই ভালো জানেন। বারেক সাহেবের মাথায় ঢোকে না! সরকারী দল তার জন্য যে কিছু করবে সেই সুযোগতো নেই। আর সুযোগ পেলেও তা ভোগ করার দিন বাকী আছে কয়টি? তাহলে কেন এই ডিগবাজী?

বিজ্ঞাপন

বারেক সাহেবের বোঝাবুঝি অনেক বাকি আছে। নিজেকে তিনি অনেক সমঝদার ভাবতেন। কিন্তু সকালবেলা ফেসবুকে ঢুকে নিজেকে একজন উন্নতমানের উজবুক বলে মনে হচ্ছে তার। এবারের নির্বাচনে স্বাধীনতা, জামাত, ইত্যাদি ইস্যুকে মোটামুটি আলোচনার বাইরেই রাখা যাচ্ছিল। চামেচিকনে ২২টা জামাতীকে দলীয় প্রতীক দেয়া নিয়ে শুরুতে তেমন কোনো আলোচনা হয়নি। তেমন কোনো আলোচনা হয়নি সাতজন বিচারাধীন যুদ্ধাপরাধরি নমিনেশন পাওয়া নিয়েও। দন্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের ছেলে-পেলে, ভাই-ব্রাদারদের দলে-দলে নমিনেশন পাওয়াও গণতন্ত্র পুণরুদ্ধার, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ইত্যাদি হাঁক-ডাকের ডামাডোলে গিলিয়ে দেয়া গিয়েছিল। আর মাঝে-মাঝে টেলিফোন কল লিকগুলোও মানুষের দৃষ্টিকে ভালোই অন্যদিকে সরিয়ে রাখছিল। কিন্তু কিসের কি? দলের বড় নেতার হঠাৎ খায়েশ হলো মুক্তিযোদ্ধা হবেন। সাথে সাথে ভ্রমরের চাকে ঠিল পড়ল যেন। কেঁচো খুড়তে অজগর সাপ বেরিয়ে আসছে। বাম রাজনীতির প্রডাক্ট, মডারেটার, গোবরে পদ্মফুল- মানুষ এতদিন অনেক কিছুই মনে করেছে তাকে। এই দুর্দিনের বাজারেও রিসেল ভ্যালু খারাপ ছিলো না তার। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সাথে ডান-বাম করেও তাই পার পেয়ে যাচ্ছিলেন। মাঝে-সাঝে দলীয় কর্মীরা তার কাপড় খুলেছে আর গাড়ির কাঁচ ভেঙ্গেছে ঠিকই, কিন্তু ঠিকই ভুলে গেছে মাথায় হেলমেট পরে মোটরসাইকেলের পিছনে চেপে দলীয় কার্যালয় থেকে পালিয়ে যাবার ঘটনা।

কিন্তু এখন যে ভদ্রলোক মুক্তিযোদ্ধা সাজতে গিয়ে দলকে ডোবালেন তার উত্তর দেয় কে? কে জানত তার বাবার কথা? দেশ স্বাধীন হবার পর মুক্তিযোদ্ধারা তার বাাবকে শহরের মাঝখানে গুলি করে মারতে ধরেছিল। হাতে-পায়ে ধরে পার পেয়েছিল তখন। দালাল আইনে গ্রেফতার হয়ে জেলে ছিল এই লোক। পচাত্তরে ১৫ই আগস্টের পর নতুন সরকার দালাল আইন বাতিল করলে ছাড়া পেয়ে সরকারি দলে যোগ দিয়ে ৭৯’তে সাংসদ হয়েছিল। আকাশে থুতু ছিটালে তাতো নিজের মুখেই পরে। ‘এখন ঠেলা সামলাও’! নিজের বিরক্তি আর চেপে রাখতে পারেন না বারেক সাহেব। নিজেও ডুবলো, সাথে ডুবালো দলটাকেও।

দু’তিন দিন পরের কথা। রাতে আয়েশ করে বেনসনটা ধরিয়েছন বারেক সাহেব। হাতে ভোদকার গ্লাস। রুমের আলো-আঁধারীতে ব্যাকগ্রউন্ডে জ্যাজ মিউজিক নেশাটা বাড়িয়ে দিচ্ছে। জীবনটা অন্যরকম সুন্দর মনে হচ্ছে বারেক সাহেবের কাছে। ‘ইউরেকা’! হঠাৎই আর্কিমিডিসের নগ্ন দৌড়ের শিহরণ অনুভব করছেন বারেক সাহেব। এরা ভালোই বুঝেছে, এ জীবনে এদের দিয়ে এদের জীবনের লক্ষ্য আর পুরণ হবেনা। তাই কবরে এক পা দিয়ে কেউ খাচ্ছে ডিগবাজি তো কেউ সাজছে মুক্তিযোদ্ধা। তারা যখন প্রাকৃতিক নিয়মে একদিন বিদায় নিবেন তখন কেউ-কেউ তো অন্তত বলবে বিদায় একজন আওয়ামী লীগার কিংবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। ‘মরেও শান্তি আর কি’!

অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) : চিকিৎসক ও কলাম লেখক।

অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামে আগুনে পুড়ল ৫ দোকান
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১২:৩৪

আরো

সম্পর্কিত খবর