Saturday 07 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কোথায় চলেছেন বারেক সাহেব?


৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১১:০৬
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) ।।

ধ্যাৎ – আনমনে খেঁকিয়ে ওঠেন বারেক সাহেব। ৩০ তারিখ কি হতে যাচ্ছে জানা ছিল আগেই। স্বপ্নেও ভাবেননি ক্ষমতায় যাবে তার দল। পরাজয় ছিল প্রত্যাশিতই। কিন্তু তাই বলে এইভাবে? এমনভাবে? দল খুঁজতে যেতে হত লন্ডনে আর এখন দলের এমপি খুঁজতে লাগবে মাইক্রোস্কোপ! এটা হলো কোনো কিছু! ধ্বস আসছে জানতো সবাই, শুধু সুনামির কথা মাথায় ছিল না কারো। নৌকার সুনামিতে হঠাৎ নাই হয়ে গেল এদেশের রাজনীতিতে ডান পারের বাসিন্দারা। এখন দেশে ডানপন্থি রাজনীতি কিভাবে টিকে থাকবে ভাবতেই শিউরে উঠেন বারেক সাহেব।

ভাগ্যিস এবার নির্বাচন করেননি তিনি। নমিনেশন কিনতে টাকা লাগবে এ নিয়ে কোনো আপত্তি ছিলনা তার। টিকেট মানেইতো টাকা। টাকা ছাড়া পাওয়া যায় কিসের টিকেট? বাস-ট্রেন-প্লেন আর এমনকি রিয়ারস্টলে বসে সিনেমা দেখার যে টিকেট তার জন্যওতো চাই টাকা। টাকা দিয়ে তাই নমিনেশনের টিকেট কিনতে আপত্তি ছিলনা বারেক সাহেবের, নেই তার দলের কারোরই। কিন্তু এবার টিকেটের দামটা বড্ড বেশী হয়ে গিয়েছেল। পয়সা দিয়ে ফ্লপ ছবি দেখার টিকেট ব্ল্যাকে কাটার লোক অন্তন নন বারেক সাহেব। এবারের নির্বাচনের টিকেটের পিছনে তাই কোটি টাকা খরচ করার কোনো আগ্রহই পাননি তিনি। তারপরও যে মনটা একটু খচ্খচ্ করেনি তা নয়। হাজার হোক নির্বাচন করা লোক তিনি। দেশে একটা সংসদ নির্বাচন হয়ে যাবে আর এলাকায় ‘বারেক সাহেবের সালাম নিন’ শ্লোগান শোনা যাবেনা এটা হজম করা তার জন্য একটু কষ্টকর ছিল বৈকি। বিশেষ করে সেদিনের ছোকড়া, নাক টিপলে এখনো ফোটায় ফোটায় দুধ বেরুবে যার- সে কিনা দলের টিকেটটা কিনে নিল। দেখে বুকটা ভেঙ্গে যাচ্ছিল তার।

বিজ্ঞাপন

তবে ৩০ তারিখ সন্ধ্যায়ই দু’রাকাত নফল নামাজ পড়েছেন বারেক সাহেব। ‘বাপরে বাপ, বড় একটা ফাড়া গেছে। গুলি বেরিয়ে গেছে কানের পাশ দিয়ে। নির্বাচনে দাঁড়ালে খবরই ছিল। টাকাতো যা যাবার যেতোই, সাথে যেতো ইজ্জতটাও। উপরওয়ালা যা করেন ভালোর জন্যই করেন!’

৩০ তারিখের পর থেকেই নির্বাচনে দলের এই ধ্বসের কারণগুলো খুঁজে বের করার অনেক চেষ্টাই করেছেন তিনি। কোথায় আওয়ামী লীগ ল্যাং মারলো তাদের? ফলাফলটা শূণ্য। অনেক খুঁজেও নির্বাচনে কোনো ফাঁক-ফোকড় খুজে পাননি তিনি। থুতু ছুঁড়েছেন ওপরে, এসে পড়েছে বারবার নিজের মুখেই। মনোনয়নপত্র বিক্রির শুরুতেই পুলিশের গাড়িতে আগুন দিয়ে মানুষকে ২০১৩-১৪’র আগুন সন্ত্রাসের দিনগুলোর কথা মনে করিযে দেয়া থেকে শুরু। তারপর শুধুই ভুল আর ভুল। দণ্ডিত আসামী দলীয় মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছে সরাসরি। শুধু ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীই না বরং ১৫ আর ২১ আগস্টের খুনীদের আত্মীয়-স্বজন আর বাংলা ভাইয়ের মদদদাতা কেউই বাদ যায়নি দলের এমপি প্রার্থীদের তালিকা থেকে। মানুষ এসব কোনোকিছুই ভালোভাবে নেয়নি। তারওপর ছিল নির্বাচনে লাগামছাড়া মনোনয়ন বাণিজ্য আর একই আসনে তিন-চারজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া। নির্বাচনে তার দলের ধ্বস নামবে না তো নামবে কি নৌকার!

এমনি ছেড়াবেড়া পরিস্থিতিতে নামজাদা থিংক ট্যাংকের জরিপের ফলাফল মনের কোনায় একটু আশার আলো জাগাচ্ছিল। ভুটান থেকে আমেরিকা- একের পর এক দেশ যখন নৌকার সরকারকে অনুমোদনের সিল দিয়ে চলেছে তখন একটু স্বস্তি পাচ্ছিলেন ওই জরিপের ফল দেখে। কিন্তু কিসের কি? এখনতো দেখা যাচ্ছে বেটারা নির্বাচনে পর্যবেক্ষকই ছিল না আর জরিপ করতে গিয়েও জরিপ করা আসনগুলোর বেশিরভাগ ভোট কেন্দ্রের ধারে-কাছেও ঘেঁষেনি তারা। দল বোঝাই শুধু অকর্মন্যের দল। নির্বাচনের আগে এনে জড়ো করলো একদল অচল মালকে আর এখন নির্বাচনের পরেও ভাব-চক্করতো একদমই ভাল ঠেকছে না!

‘কি বারেক সাহেব, কোথায় চলছেন?’
এয়ারপের্টের লাউঞ্জে বসে কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছিলেন বারেক সাহেব। হঠাৎ পরিচিত এক ভদ্রলোকের প্রশ্নে সম্বিত ফিরে পেলেন
‘এইতো’।
উত্তর দেন তিনি। কথা বলতে কেন যেন একদমই ভাল লাগছে না। কোথায় যে যাচ্ছে দল, সাথে তাদেরই যে নিচ্ছে কোথায় তা ওপরওয়ালাই ভাল জানেন।

অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) : চিকিৎসক ও কলাম লেখক।

অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) কলাম বারেক সাহেব

বিজ্ঞাপন

বিশেষ নাটক ‘লাভ লুপ’
৭ জুন ২০২৫ ১৭:৩৬

আরো

সম্পর্কিত খবর