Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আঠারো মিনিট


৭ মার্চ ২০১৯ ০১:৩১

||কামাল হোসেন মিঠু||

আজ যদি বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতেন, তবে তার বয়স হতো নিরানব্বই বছর। বয়সের ভারে শরীরটা ঝুঁকে যেতো অনেকখানি। তিনি কি লাঠিতে ভর করে হাঁটতেন? হতে পারে। চোখেও বোধহয় দেখতে পেতেন না তেমন। তবে শুভ্র চুলগুলো মনে হয় ব্যাকব্রাশ করে রাখতেন আগের মতোই।

আজ বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে নিরানব্বই বছর বয়স হতো তাঁর। নাতি-নাতনি ও তাদের ছেলেমেয়েরা বছরের বিভিন্ন সময় দেশের বাইরে থেকে বেড়াতে আসতো তাঁর কাছে। ছোট্ট হাতগুলো শক্ত করে ধরে থাকতো বঙ্গবন্ধুর হাত। কচি কণ্ঠগুলো কী বলে সম্বোধন করতো তাঁকে? খুব জানতে ইচ্ছে করে। নিশ্চিত করে বলা যায়, বঙ্গবন্ধুর চারপাশে অচেনা মানুষের ভিড় লেগে থাকতো সর্বদা। এত অচেনা মানুষ দেখে ছোট্ট বাচ্চাগুলো ভয় পেয়ে গেলে, তিনি বলতেন, এই তোরা ভয় করিস না। এরা সবাই আমার লোক। কখনো কখনো হয়তো ওদের সঙ্গে নদী কি সমুদ্রের পাড়ে বেড়াতে যেতেন। এত্ত বড় বড় ঢেউ দেখে বাচ্চাগুলো ভয় পেলে, তিনি হেসে বলতেন, এত ভয় পেলে চলে? এটা তো আমার সমুদ্র। আমার নদী। আমার আকাশ। এক মুঠো মাটি হাতে নিয়ে বলতেন, এ আমার বাংলার মাটি। এ আমার বাংলাদেশ।

আজ বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে তাঁর বয়স হতো নিরানব্বই বছর।

আজ বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে বয়সের ভারে শরীর অনেকটাই ন্যুজ হয়ে যেত। হয়তো হাতে লাঠি থাকতো। চশমার কাঁচ পুরু থেকে পুরুতর হতো। হয়তো না প্রকৃতির নিয়মে এমনটাই হতো, এটাই স্বাভাবিক। তবে, আজ বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে তিনি হতেন নিরানব্বই বছরের একমাত্র মানুষ, যাকে বার্ধক্য ছুঁতে পারতো না কখনো। এ কথা ঠিক যে, তাঁর চশমার কাঁচ পুরু থেকে পুরুতর হতো। তবে দৃষ্টি থাকতো স্বচ্ছ। হয়তো হাতে থাকতো লাঠি তবে মাথাটা থাকতো সোজা। আর হবেই না বা কেন! আমরা বলছি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা। এই একজন মানুষ, যিনি বাঙালিকে শিখিয়েছেন কেমন করে শিরদাঁড়া টান করে মাথা উঁচু করে হাঁটতে হয়।

বিজ্ঞাপন

এই একজন মাত্র মানুষ, যিনি বাঙালিকে বিশ্বাস করতে শিখিয়েছেন যে, স্বাধীনতার আবীর রাঙা সুর্যটা একদিন আমাদের হবেই। তিনি শুধু একটি স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নই দেখেননি, বাঙালিকে স্বপ্ন দেখিয়েছেনও। মুক্তির জন্য যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলায় ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে এই সাহস ও চেতনা ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন বাঙালির মনে।

বঙ্গবন্ধু একজনই ছিলেন। সকল কালে সকল সময়ে ওই একজনই। আর একজন বঙ্গবন্ধুর জন্ম হবে না কোনোদিন। আর তাই বয়সের সাধ্য কী বঙ্গবন্ধুকে পর্যুদস্ত করে! চোখের সাধ্য কী দৃষ্টি দুর্বল করে?

আজ ৭ই মার্চ, ২০১৯। বেঁচে থাকলে বঙ্গবন্ধুর বয়স হতো নিরানব্বই বছর। হয়তো তিনি ৩২ নম্বর বাড়ির বারান্দায় বসে থাকতেন। নামতো মানুষের ঢল। কাছে দূরে বাজতো হৃদস্পন্দনে তোলপাড় তোলা আঠারো মিনিটের সেই ঐতিহাসিক ভাষণখানি। উন্মুখ মানুষেরা তাঁর মুখের কথা শোনার জন্য বসে থাকতো নিরানব্বই বছর বয়সী বঙ্গবন্ধুর বাড়ির উঠোনে। ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চারা তাদের দাদা-নানা, বাবা-মায়েদের হাত ধরে আসতো। ওরা অবাক হয়ে প্রশ্ন করতো, আচ্ছা বাবা উনি তোমাকেও তুই করে বলছেন, আবার দাদাকেও তুই করে বলছেন কেন?

প্রশ্ন শুনে দাদা বাবার কাঁধে হাত রেখে বলতেন, কারণ তিনি বঙ্গবন্ধু। আমাদের সবার জনক।

আজ ৭ই মার্চ, ২০১৯। ১৯৭১ সালের এই দিনটি ছিল রবিবার। ১৯৭১ সালের এই দিনটি ছিল এক অবিস্মরণীয় দিন। এই দিনে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, জয় বাংলা বলে হাসতে হাসতে জীবন দে রে বাঙালি। এই দিনে তিনি বলেছিলেন, অনেক হয়েছে। আর আপস না। এবার হয় মুক্তি নয় মৃত্যু।

আজ ৭ই মার্চ, ২০১৯। আজকে বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে তাঁর বয়স হতো নিরানব্বই বছর। নিজ বাড়ির বারান্দায় বসে তিনি আজ কী ভাবতেন? উন্মুখ মানুষগুলো তাঁর কণ্ঠ শোনার জন্য ব্যাকুল হয়ে বসে থাকতো। হঠাৎ কি তিনি উঠে দাঁড়াতেন? তারপর? তর্জনি উঁচিয়ে কি বলতেন, তোরা আমার বাঙালি। আমার যা বলার রেসকোর্সের ভরা উদ্যানে বলেছি সেদিন। তোদের মন আজকাল কোথায় থাকে রে? ভুল পথের গোলকধাঁধায় অযথাই ঘুরে ঘুরে মরছিস। আমি সব কথা বলেছি তো সেদিন। আজ মন দিয়ে শোন আরেকবার।

বিজ্ঞাপন

এ কথাগুলো বলেই হয়তো সামনে বসা শিশুদের মাথায় হাত রেখে বলতেন, বাবা-দাদাদের দেখে রাখ। ওদের বড্ড ভুলো মন। ওরা সব ভুলে যায়। দেশ ভুলে যায়, মাটি ভুলে যায়। সৃষ্টির শ্রম ভুলে যায়। ইতিহাস ভুলে যায়। তোরা নিজেরাই উঠে দাঁড়া। তোদের জন্য আছে আঠারো মিনিট। ওই আঠারো মিনিটেই সব পাবি। পাবি স্বপ্ন, পাবি আশা। পাবি মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার স্পৃহা। পাবি শোষিতের হাহাকার। পাবি পথ প্রদর্শন। পাবি দেশপ্রেম। পাবি আত্মত্যাগ। ওই আঠারো মিনিট শুনে নে। বুঝে নে। আর ওদের হাত ধরে দেখিয়ে দে পথ। ওরা পথ ভুলে যায়। কেবল পথ ভুলে যায়।

বাবা-দাদারা কি এরপর মাথা চুলকোতেন? আর উপস্থিত শিশুগুলো কি তখন সমস্বরে চিৎকার করে বলতো, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’!

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর