Sunday 13 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বারেক সাহেব ও ঘুম সমাচার


১১ মার্চ ২০১৯ ১৬:৩৫
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) ।।

“আচ্ছা লোকগুলোরতো বয়স হয়েছে না কি? না হয় একটু ঘুমিয়েছেই, তাতে হয়েছেইটা কি?” জাতীয় নির্বাচন নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের গনশুনানিতে নেতাদের গণ-ঘুম নিয়ে ফেসবুকে ট্রল চলছে। ফ্রন্টের ‘মেয়াদোত্তীর্ন’ নেতাদের নাক ডেকে ঘুমানোর ছবি শেয়ার করছে সবাই। ধুয়া উঠছে গরম চায়ের কাপের আর আলোচনা চলছে টেলিভিশনের টকশোতে আর মহল্লার রেঁস্তোরায়।

গত জাতীয় নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী ছাড়া আর সব এমপি প্রার্থীদের দাওয়াত দেয়া হয়েছিল এই শুনানিতে। তাতে অবশ্য ধানের শীষের সব প্রার্থীও শেষ পর্যন্ত আসেননি। একদিকে ভালোই হয়েছে বোধহয়। সবাই এলে তো বেচারা নেতাদের বালিশ-তোশক নিয়ে ঘুমানো লাগতো। শুনানীতে তিনশর মধ্যে মাত্র একচল্লিশজন ধানের শীশের প্রার্থী বক্তব্য দিয়েছেন। বারেক সাহেব এবারের নির্বাচনের দৌড়ে ছিলেন না। বরং বলা ভালো দৌড়াতে চেয়েও পারেননি। এবার দৌড়ে টিকেটের দাম ছিল খুব বেশি। প্রথম প্রথম যে এক-আধটু মন খারাপ হয়নি তা নয়। দেশে একটা নির্বাচন হবে অথচ এলাকায় বারেক ভাইয়ের সালাম দিয়ে ভোট চাওয়া হবে না, ব্যাপারটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিল। তবে নির্বাচনের আগে ভালই বুঝেছিলেন কি হতে যাচ্ছে ত্রিশ ডিসেম্বর। মানুষ ভোলেনি। এই ইন্টারনেটের যুগে মানুষ ভুলতে চাইলেও ভুলতে পারেনা। মানুষ ভোলেনি আগুন সন্ত্রাস, মেনে নেয়নি একাত্তর, পঁচাত্তর আর একুশ আগষ্টের খুনিদের ব্যালটে ধানের শীষ প্রতীক।

বিজ্ঞাপন

ত্রিশ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় যখন একে একে ফলাফল আসতে থাকলো তখন তাই এতটুকু অবাক হননি বারেক সাহেব। মনে মনে স্রষ্টার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন যে সময়মত মাথাটা গরম করে নির্বাচনে দৌড়ানোর টিকেটটা কিনে বসেননি। তাহলে তো  তার আম আর ছালা দুই’ই যেতো। মান- ইজ্জত আর টাকার শ্রাদ্ধ হতো শুধু শুধু, কাজের কাজ হতো না কিছুই।

এটা যে শুধু বারেক সাহেব বোঝেন তা না, বোঝেন দলের আরো অনেকে। যারা শুনানীতে আসেননি তারা যেমন বোঝেন, তেমনি বোঝেন যারা শুনানীতে এসেছেন আর যারা শুনানী নিচ্ছেন তারাও। কিন্তু কি করবেন বেচারারা, নির্বাচেনর আগে বড় বড় কথাতো কম বলেননি। ফাঁকা বুলিতে ফানুসও ওড়াননি কম কিছু। এখন ইজ্জত বাঁচাতে কিছু একটা তো করা চাই। তাই এই গণশুনানী। বেচারাদের খুব একটা দোষ দেখেন না বারেক সাহেব। এখন এরকম দু’চারটা তামাশা না করলে পাঁচ বছর পর তাদের ভোটের টিকেট বিক্রি করা আর ভোট চাওয়ার মুখ থাকবে কোথায়?

এই যখন অবস্থা তখন গণশুনানীতে কে কি বলবে তাতো আগেই জানা ছিল। একই বুলি আউড়েছেন একের পর এক নেতা। গায়েবি মামলা, জাল ভোট, গণ গ্রেফতার ইত্যাদি ইত্যাদি সেই পুরাতন চর্বিত চর্বন। যারা বলেছেন আর শুনেছেন তারা সবাই জানেন এসবের অন্তঃসারশূণ্যতা। গণশুনানীর পর কি হবে তাতো আগে থেকেই জানা। গণশুনানীতে তাই কে কি বললো তাতে কি’ই বা এসে যায়? তাইতো শুনানী হয়েছে খোলা জায়গার বদলে বন্ধ ঘরে আর তাইতো শুনানীর বাণী নেতাদের এককান দিয়ে ঢুকে অন্য কান দিয়ে বেড়িয়ে গেছে অবলীলায়।

গণশুনানীর দরকার ছিল তাই করা হয়েছে এর বেশি কিছুতো না। কাজেই নেতারা শুনতে এসে ঘুমাবেন না গান শুনবেন তাতে কার কি, আর তাতে দোষেরই বা কি? মানুষ কেন যে এমন করে, মাথায় ঢোকেনা বারেক সাহেবের।

অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) : চিকিৎসক ও কলাম লেখক।

অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর