Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সাঙ্গ হবে ভবলীলা…কেমনে…কেমনে?


২৯ মার্চ ২০১৯ ১৪:৪৩

বনানী আগুনের ঘটনায় বারবার একটি প্রশ্নই মাথায় আসছে। তাহলে এখনো আমরা ২২ তলা ভবনে আগুন লাগলে উদ্ধারকারী একটি মই-ই সেখানে পৌঁছে দিতে পারি না। তাহলে আমাদের ফায়ার সার্ভিস বলেন, সিভিল ডিফেন্স বলেন, যৌথ বাহিনীর উদ্ধার তৎপরতা বলেন কী সক্ষমতা আছে আমাদের জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা করার?

একজন সংবাদকর্মী হিসেবে ঘটনার শুরু থেকেই আগুনের ঘটনাটি পর্যবেক্ষণে ছিল। বনানী এফ আর টাওয়ারে যখন আগুন লাগে তখনই খবরটি নিশ্চিত হয়ে স্ক্রল নিউজে দিতে বলি। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে আগুনের তীব্রতা। খবরের ট্রিটমেন্টও বদলে যায় কিন্তু আমার প্রশ্ন আর বদলায় না।

বিজ্ঞাপন

প্রশ্নের উত্তর যখন পাই না তখন ক্ষোভ আর কিছুটা মানসিক নিষ্কৃতি পাওয়ার আশায় দু’কলম লেখা। জানি আমার লেখায় কিছু যায়-আসবে না। কিছু হবে না। তাতে কী?

যখনই কোনো বিপর্যয় আসে তখনই আমরা হৈ চৈ বাঁধিয়ে দিই। টেলিভিশনে চলে লাইভ নিউজ টেলিকাস্ট করার প্রতিযোগিতা। গণমাধ্যম সজাগ থাকে। সবাই তৎপর হয়ে উঠি যে, যার জায়গা থেকে। এটা ভালো। কিন্তু যে বিষয়টি সবচেয়ে আশঙ্কার তা হলো কিছুদিন পর আবার আমরা শীতনিদ্রায় চলে যাই।

আমরা দেখছি- বিশেষ করে ঢাকা শহরে কিছুদিন পরপরই আগুন লাগছে। ঘনবসতির মহানগরে এই কান্না আর কত? চুড়িহাট্টার আগুনের স্মৃতি ভুলতে না ভুলতেই দিন-দুপরে বনানীর বহুতল ভবনের আগুন আমাদের সামনে কয়েকটি প্রশ্ন হাজির করেছে।

আমরা আদৌ কি ফায়ার সার্ভিসকে ঢেলে সাজাতে পেরেছি? আমাদের প্রয়োজনমাফিক উন্নীতকরণ করতে পেরেছি?
উত্তর- না।

যুক্তি বলে, ঢাকা মহানগরীতে ৫০ তলা বিল্ডিংয়ের অনুমতি দিলে, সেই বিল্ডিংয়ে কোনো বিপর্যয় হলে সেটি মোকাবেলা করার যোগ্যতা আমার থাকতে হবে। না হলে বিল্ডিং নির্মাণের অনুমতি দেই কীভাবে আমরা?

বিজ্ঞাপন

অবাক হই, বিস্মিত হই, নিজেকে নিঃস্ব আর অসহায় লাগে ২২ তলা ভবন পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে এমন একটা মই (ল্যাডার) নেই আমাদের!!!

টাকার বড় অভাব আমাদের?

নাগরিক হিসেবে সাধারণ কিছু জ্ঞান কাজে লাগিয়েই পথ চলি আমরা। আগুনের ঘটনায় সহজ সমীকরণ হলো, যেহেতু ঢাকা শহরে অধিকাংশ বিল্ডিংই উঁচু। তাই আগুন লাগলে ‘লাইভ সেভিং’ বলি আর আগুন নেভানো বলি- ‘যত উপরে উঠা যায়, ততই মঙ্গল’, এরকম যন্ত্রই আমাদের প্রথম দরকার। তাহলে নেই কেন?

এরপর আসি অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রের কথায়। বনানীর আগুনের ঘটনায় এটা স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে যে, আমাদের ফায়ার সার্ভিসের আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব রয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে ভবনে আটকে পড়াদের আমরা উদ্ধার করতে পারিনি। উদ্ধার পাবার আশায় জানালা ভেঙে যারা অপেক্ষা করছিলেন তারা শেষ পর্যন্ত আগুনের উত্তাপ সহ্য না করতে পেরে কিংবা বাঁচার শেষ চেষ্টা হিসেবে তার ধরে নিচে নামতে গিয়ে আছড়ে পড়ে মারা যান।

তার মানে দাঁড়াচ্ছে তাৎক্ষণিকভাবে সময় নষ্ট না করে উদ্ধার তৎপরতা আমরা চালাতে পারিনি। শেষ মুহূর্তে যারা লাফিয়ে পড়েছে তাদের রক্ষার জন্য নিচে নেট ধরা যেত তাও করা যায়নি। সম্ভাব্য সব রকম উপায় প্রস্তুত থাকার কথা ফায়ার সার্ভিসের। সেই প্রস্তুতির ঘাটতি লক্ষ্য করা গেছে। আমি বলছি না ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা চেষ্টা করেননি। তাদের মূল চেষ্টাতেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু আমি যেটি বলতে চাচ্ছি তা হলো আমাদের ফায়ার সার্ভিসের এ বেহাল দশা কেন? যন্ত্রপাতির অভাব কেন? দক্ষ জনবলের অভাব কেন? তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাপনা এত দুর্বল কেন?

এই দায়বদ্ধতা তো নীতি-নির্ধারকরা এড়াতে পারেন না। যারা ফায়ার সার্ভিস কিংবা এই সম্পর্কিত বাহিনীকে দেখ-ভাল করেন তারা এটা কেন ভুলে যান যে, সব দুর্যোগের দেশ বাংলাদেশ। আর এখানে মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ আরও বেশি। তাহলে কেন আমরা অত্যাধুনিক সেট-আপে পিছিয়ে থাকব?

আরও প্রশিক্ষিত, আরও দ্রুত যেকোনো দুর্যোগকে মোকাবিলা করার সক্ষমতা তৈরি করতে হবে। অন্যথায় প্রচণ্ড মাত্রার ঘনবসতির এ মহানগরীতে কয়েকদিন পরপরই এমন ভয়াবহতার শিকার হতে হবে আমাদের। আজ অন্যজন এর শিকার, কাল হয়ত আপনি বা আমি।

বহুল এই জনসংখ্যার দেশে মানুষকে শুধু সংখ্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আসলে কি তাই? একটি মানুষ কি শুধুই সংখ্যা? একটা মানুষ মানে একটি সভ্যতা, সভ্যতার বাতিঘর, শত শত, কখনো হাজার হাজার, আবার কখনো কোটি কোটি মানুষের আত্মার মেলবন্ধন, বয়ে যাওয়া সংস্কৃতি-অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বয়ে বেড়ানো জৈবনিক বৈশিষ্ট্য।

এই পৃথিবীতে হিউম্যান ক্যাপিটালের চেয়ে দামি কিছু আর নেই। যেদিন আমরা সেটা বুঝবো সেই দিন মানুষ শুধু সংখ্যা নয়, সেটাও বুঝব। যা বলছিলাম। ভবনের ভেতরে যারা আটকে পড়েছিলেন তাদের উদ্ধার করতে বিলম্ব হচ্ছে কিন্তু সেসময় তাদের ‘লাইভ সেভিং’ কিছু জিনিসপত্র দেওয়া যেত যার ঘাটতি দেখেছি আমরা। সমন্বয়হীনতা তো ছিলই। তাহলে আমার ধারণা মৃতের সংখ্যা আরও কম হতো।

একটি হেলিকপ্টার আটকেপড়া একজনকে উদ্ধার করেছে। এটি প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে পারছি না। মনে হয়েছে, তাদের উদ্ধার অভিযানে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে সমন্বয়হীনতা ছিল। তা নাহলে হেলিকপ্টারে করে ফায়ার সার্ভিসের কিছু জনবল তারা ছাদে নামাতে পারত। যেখানে ছাদের দরজা বন্ধ থাকলে তা কেটে বা অন্য উপায়ে খুলে দেওয়া যেতো। ছাদে নেমেও ফায়ার সার্ভিস তাদের কাজ করতে পারত।

এই লেখা যখন লিখছি তখন সাতজনের মারা যাওয়ার খবর পেলাম (পরবর্তীতে তা বেড়ে ২৫ জনে দাঁড়িয়েছে)। অনেকেই নিখোঁজ, আহতরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আত্মীয়-স্বজনরা এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটছেন প্রিয় মানুষটার খোঁজে। হয়তো ছোট্ট শিশুকে বুকে নিয়ে এক নারী খুঁজে বেড়াচ্ছেন তার স্বামীকে যে কিনা সকালে অফিসে যাওয়ার সময় বলেছিল একটু আগেই চলে আসব আজ।

রাজউকের কথা আর নাইবা টানলাম। শুধু ভবন নির্মাণের অনুমতি দিতেই জানে সে…বাকি কিছু শুনতেও পায় না.. দেখা তো দূরের কথা..

শুধু ভাবি…মন পাখি রে.. সাঙ্গ হবে ভবলীলা… কেমনে… কেমনে?

লেখক: সাংবাদিক

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

উর্মিলার সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০২

নতুন পরিচয়ে কুসুম সিকদার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৭

সম্পর্কিত খবর