পিঁপড়ার মলত্যাগ ও ঢাকার টয়লেট প্রসঙ্গ
২৪ জানুয়ারি ২০১৮ ১১:৫৯
পিঁপড়ারা ঘরের একটি কোণা মল ত্যাগের জন্য ব্যবহার করে। আমাদের টয়লেট ব্যবহারের মতোই। শুনতে আশ্চর্যজনক মনে হয়। গবেষকদের আরো ধারনা এসব মল পরে অন্য কোন কাজে তারা ব্যবহার করে। সূত্র টাইমস অব ইন্ডিয়া।
গবেষণা দলের প্রধান ড. ক্রেকজ্যাকস বলেছেন, স্যানিটেশন সমস্যা পিঁপড়াদের একটি বড় সমস্যা!!
স্যানিটেশন সমস্যা আমাদেরও একটি বড় সমস্যা।
পৃথিবীর আদি থেকে পিঁপড়া একটি সভ্য ও সুশৃঙ্খল প্রাণী। তারা লাইন ধরে হাঁটে। লাইন ধরে চলে। লাইন ধরে একের পর এক সুশৃঙ্খলভাবে টয়লেট ব্যবহার করে।
এটা নিসন্দেহে বলা যায়, পিঁপড়ার অনেক পরে মানুষ এভাবে বাথরুম ব্যবহার করা শিখেছে।
পৃথিবীর আধুনিক টয়লেট ব্যবস্থার আদিতম নিদর্শনটি ভারতবর্ষের। আদি ভারতেই। যদিও এখনও ভারতেই সবচেয়ে বেশি মানুষ খোলা আকাশের নিচে যত্রতত্র মলত্যাগ করে। তবে টয়লেটের ব্যবহারেও সবচেয়ে প্রাচীন নিদর্শন পাওয়া যায় এখানে।
যীশু খ্রিস্টের জন্মের ২৮০০ বছর আগে মাহেঞ্জাদারো সভ্যতায় আধুনিক টয়লেটের এর নজির আছে।
টয়লেটের নিচে দিয়ে প্রবাহমান পানির ড্রেন থাকত, যাতে করে মানব বর্জ্য সাথে সাথে স্রোতে অপসারিত হয়ে যায়। এটাকে আধুনিক ফ্ল্যাশ টয়লেটের আদি ধারনা বলা যায়।
প্রাশ্চাত্যে ১৫৯৬ সালে স্যার জন হারিংটন নামে এক ভদ্রলোক ফ্লাশ টয়লেটের ডিজাইন করেন ( এ কারণেই এ ধরনের বাথরুমের আরেক প্রতিশব্দ জন!!!)!
স্যার জন হারিংটন একজন কবি ছিলেন। তার ফ্লাশ টয়লেটের প্রথম ভিভিআইপি ব্যবহারকারী ছিল বৃটেনের রানী প্রথম এলিজাবেথ। রানী খুব আহ্লাদিত হয়ে তার বাসায় ফ্লাশ কমোড বসান। পরে অবশ্য রানী ফ্লাশের অতি উচ্চ শব্দে আতঙ্কিত হয়ে প্রথম দিনেই এটার ব্যবহার ছেড়ে দেন ও বাতিল করে দেন। মজার ব্যাপার হলো, বিশ্বব্যাপী এখন এই ফ্লাশ টয়লেট খুবই জনপ্রিয়।
টয়লেটের ব্যাপারে নারীরা একটু বেশি খুঁতখুঁতে। সম্প্রতি টোকিওতে এক নারী টয়লেট অপরিচ্ছন্ন থাকার কারণে ছুরি মেরে তার স্বামীকে আহত করেছেন। পুলিশের কাছে ওই স্ত্রী বলেছেন, টয়লেটে এতটাই দুর্গন্ধ ছিল তিনি টিকতে না পেরে স্বামীকে ছুরি মেরে দিয়েছেন।
খবরে কিছুটা স্বস্তির দিক আছে এই যে, ঘটনাটা টোকিওতে ঘটেছে, ঢাকায় নয়।
ঢাকায় যদি মল বা জল ত্যাগের জন্য ছুরি মারা হত তাহলে ঢাকা শহর ক্ষত বিক্ষত হয়ে যেত। ঢাকার রাস্তায়, চিপায়, অলিতে গলিতে, হাটে, বাজারে, বাসস্ট্যান্ডে হাটতে গেলেই দেখবেন জলের ঢল নেমেছে আর বিষ্ঠার দুর্গন্ধ।
ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশনের সামনে যারা চলাচল করেন তারা হয়তো এই জাতির জল বিসর্জনের শক্তি অনুমান করতে পারেন।
অনেকে মনে করেন, কমলাপুর রেল কর্তৃপক্ষ এই দায় এড়াতে পারেনা। কেননা, তাদের অফিসের গেটে প্রতিদিন হাজার হাজার লোক এসে জল ছেড়ে দিয়ে যায় কিন্তু তারা নির্বিকার । এমন অথর্ব প্রশাসন আর হয় না।
কিন্তু সম্প্রতি কিছু পরিসিং্খ্যান দেখে মনে হল রেলওয়ে চেষ্টা করলেও হয়তো সফল হতনা। ঢাকা শহরে দেড় কোটি লোকের জন্য মাত্র কাগজে কলমে ৬৯টি পাবলিক টয়লেট আছে!!! তার মধ্যে মাত্র ৫টি বর্তমানে ব্যবহার হচ্ছে। আবার লিখছি, মাত্র ৫ টি!!! বাকীগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে, বন্ধ রয়েছে কিংবা ব্যবহার অনুপযোগী।
অর্থাৎ দেড় কোটি মানুষের জন্য মাত্র ৫টি টয়লেট!!!
বলতে গেলে ঢাকার রাস্তায় চলাচল করা মানুষের জন্য কোন টয়লেটই নেই। ঢাকা শহরে ভাসমান শ্রেণির মানুষ, রিকশাওয়ালা, হকার, ভবঘুরে, পথযাত্রী, ভিক্ষুক বা সাধারণ মানুষ এরা যায় কোথায়? এটা শুধু প্রশ্ন না, বিরাট আশ্চর্যের ব্যাপারও বটে।
এসব নোংরা, স্যাঁতস্যাঁতে ব্যাপারে আলোচনা করতে আমাদের বুদ্ধিজীবীরা লজ্জাবোধ করেন। তারা এসব শুনে না শোনার ভান করেন। দেখেও না দেখার।
আমাদের সুশীলরা মানবাধিকার নিয়ে কথা বলেন, আইন নিয়ে বলবেন, সুশাসন নিয়ে বলবেন। ‘হাগা মুতা’ নিয়ে বলবেন না।
সিটি নির্বাচন এলেই ঢাকাকে হেন করেঙ্গা তেন করেঙ্গা বহু বক্তৃতা হচ্ছে। প্রার্থীরা সিটি নির্বাচনে বিশাল বিশাল ফর্দ বিলি করেন। কিন্তু বাস্তবসম্মত সমস্যায় তাদের ধ্যান কম। সেখানে কার্যত নাগরিক সমস্যাগুলোর সমাধান কোন পথে হবে? কয়জনই পারবেন নাগরিক সমস্যাগুলোর কাছাকাছি পৌছুতে?
কিছুদিন আগে বদনা হাতে মিছিল করার সংবাদ পড়েছিলাম। টয়লেটের দাবিতে বদনা মিছিল। এটি অত্যন্ত ভালো আন্দোলন নিঃসন্দেহ । কিন্তু বদনাওয়ালারা কারো নজর কাড়তে পারেন নি। কারণ, এসব বিষয় নোংরা। নোংরা বিষয়ে আলোচনায় আমরা স্বাচ্ছন্দ্য নই। তারচেয়ে বরং আমরা স্যুট টাই পরে রাস্তার পাশে জিপার খুলে জল ছাড়াতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।
সারাবাংলা/এমএম