Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শরবতে ওয়াসা


২৪ এপ্রিল ২০১৯ ১৬:৫৩

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা

‘শরবতে বাজিমাত’ নামে একটা বই আছে। লেখক মুনির হাসান। বইটা মূলত নতুন উদ্যোক্তাদের সৃজনশীলতা বিষয়ক। তবে রমজান মাসকে সামনে রেখে শরবতে এপি বা রুহ আফজার চেয়ে এখন ‘শরবতে ওয়াসা’ই বুঝি বাজার পেয়েছে বেশি।

কৃতিত্বটা যতটা না বেশি মিজানুর রহমানের নেতৃত্বাধীন জুরাইনবাসীর, তার চেয়ে অনেক বেশি ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানের। তিনি অসম্ভব ক্ষিপ্রতা আর দক্ষতায়, একজন ঝানু সেল্স ম্যানের মত ওয়াসার ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানিকে শতভাগ সুপেয় বলে দাবি করেছেন। তবে কৃতিত্বের কিছু ভাগীদার সেই পরিচালনা পর্ষদ সদস্যদেরও দিতে হয় যারা তার সাথে উপস্থিত থেকে তাকে শক্তি আর সাহস যুগিয়ে চলেছেন।

বিজ্ঞাপন

গত ২০ এপ্রিল ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেন ‘ঢাকা ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয়’। তো সেই সুপেয় পানিরই শরবত তাকে পান করাতে এসেছিলেন ঢাকার জুরাইনবাসী। তবে এমিডি সেদিন আর অফিসই করেননি। এমডি না থাকায় শরবত না খাইয়েই প্রতিশ্রুতি নিয়ে ফিরে গেছেন মিজানুর রহমান ও তার সাথীরা।

সারাবাংলা’য় আজকের কার্টুন : ওয়াসার ‘সুপেয়’ পানির শরবত

ঢাকা ওয়াসার এমডি সংবাদ সম্মেলনে কয়েকজন জলবিজ্ঞানীও রাখলে পারতেন, যারা আরো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় চিৎকার করতে পারতেন ‘পানি ভাল, ভাল পানি’ বলে।

ঢাকার পানি সুপেয়, কিন্তু এমডি সাহেব নিজে সেটা পান করেন না। বোতলজাত পানি কিনে পান করেন, এমনটাই সংবাদে এসেছে। এবং এটাই স্বাভাবিক এই শহরে। তাদের মত অসাধাণ নাগরিকরা বোতল জাত পানি পান করেন বলেই খাস ঢাকার নানা প্রান্তে বোতলবন্দি পানির রমরমা ব্যবসা চলছে।

বিজ্ঞাপন

গরমকাল এসেছে। ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। বিশুদ্ধ পানির চাহিদা এসময় সবচেয়ে বেশি। কিন্তু নগরীর দরিদ্র মানুষের কপালে বিশুদ্ধ পানি মানে ফুটিয়ে পান করা। এই ফুটিয়ে পানি পান করতে গিয়ে নগরবাসী কত খরচ করে সেকথা বলতে গিয়েই ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশাল বাংলাদেশ- টিআইবি নায়ক তাকসিমের কাছে খলনায়ক হয়ে গেল। আমরা জানি এই শহরের অনেক এলাকায় ওয়াসার সরবরাহকৃত পানিতে ময়লা, দুর্গন্ধ শুধু নয়, কলিফর্মের অস্তিত্বও পাওয়া যাবে। কোথায় সংস্থাটি দায় নিবে, দুঃখ প্রকাশ করবে তা নয়, উল্টো অস্বীকার করেছে, শতভাগ সুপেয় বলে দাবি করেছে। এরকম অস্বীকার আসলে একধরণের প্রচ্ছন্ন হুমকিও বটে।

শহর বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে যে সব সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে উঠে তার একটি হল সুপেয় পানির সংকট। কেউ বলবেনা যে, পুরোটাই ঢাকা ওয়াসার দায়। ভূগর্ভস্থ পানির পাইপ ফেটে গিয়েও পানিতে দূষণ ছড়াতে পারে। শহরজুড়ে নির্মাণকাজের জন্য খোঁড়াখুঁড়িতেও এটা হতে পারে। বিশেষ করে যেখানে নিষ্কাশন ও পানীয় জলের পাইপ পাশাপাশি গিয়েছে, সেখানে এমন আশঙ্কা বেশি। কিন্তু অস্বীকার করা, পান অযোগ্য পানিকে সুপেয় দাবি করার মধ্যে নগরবাসীর প্রতি এক ধরণের তাচ্ছিল্য আছে্। সমস্যার প্রতি অংসবেনশীল আচরণও এটি।

জুরাইনবাসীর ডাকে সাড়া দেননি ঢাকা ওয়াসার এমডি। একজন পরিচালক সেই শরবত পান করেননি, তবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জুরাইনের পানি তিনি সুপেয় করার ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়ে এই অসংবেদনশীলতা ঢাকা যাবে?
দশ বছর ধরে আছেন তাকসিম এ খান। একদিন তিনি চলে যাবেন, তবে যাবার আগে নিশ্চয়ই সঙ্গে করে শরবতে ওয়াসা নিয়ে যেতে পারবেননা। নিয়ে যেতে পারেন নিজের বাঁধানো ছবি, যে ছবিটা এই নগরবাসী তাকে উপহার দিতে পারে।

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, এডিটর ইন চিফ, সারাবাংলা ও জিটিভি

সারাবাংলা/এমএম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর