বাংলাদেশের সাফল্যে ম্যাককালামদের জ্বলতেই থাকবে
৩ জুন ২০১৯ ১৭:০৯
নিউজিল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালামের ক্রিকেট মেধার ওপর আমার আস্থা ছিল। তিনি অনেক গবেষণা করে এবারের বিশ্বকাপের ১০ দলের সম্ভাবনা নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। সেটা তিনি করতেই পারেন। সব ভবিষ্যদ্বাণী মিলে যাবে, এমন কোনো কথা নেই। সব ভবিষ্যদ্বাণী মিলে গেল তো অনিশ্চয়তা বলে আর কিছু থাকতো না। তবে ক্রিকেট নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণীর সাথে বাস্তবতার কিছুটা মিল না থাকলে, বড্ড বেখাপ্পা লাগে।
এবারের বিশ্বকাপের আগে ম্যাককালাম ১০ দলের জন্য আলাদা আলাদা প্রেডিকশন দিয়েছিলেন। ডায়রিতে হাতে লেখা এই ভবিদ্বাণীতে তিনি ইংল্যান্ডের জন্য ৮ জয়, এক পরাজয়; ভারতের জন্য ৮ জয়, এক পরাজয়; অস্ট্রেলিয়ার জন্য ৬ জয়, ৩ পরাজয়; নিউজিল্যান্ডের জন্য ৫ জয়, ৪ পরাজয়; ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য ৫ জয়, ৪ পরাজয়; দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য ৫ জয়, ৪ পরাজয়; পাকিস্তানের জন্য ৫ জয়, ৪ পরাজয়; শ্রীলঙ্কার জন্য ১ জয়, ৮ পরাজয় বরাদ্দ করেছেন। কে কোন দলের বিপক্ষে জিতবে বা হারবে তারও উল্লেখ করা আছে। এই পর্যন্ত হিসাবে একটা বড় ভুল আছে। তিনি দেখিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ শ্রীলঙ্কার সাথে জিতবে। আবার দেখিয়েছেন শ্রীলঙ্কাও ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে জিতবে। একই ম্যাচে দুই দলের জয় কিভাবে সম্ভব?
তবে তার ভবিষ্যদ্বাণীর একটি অংশ রীতিমত বোমা হয়ে ফেটেছে বাংলাদেশে। ব্রেন্ডন ম্যাককালাম বাংলাদেশের জন্য মাত্র একটি জয় বরাদ্দ রেখেছিলেন, তাও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। আমি দাবি করছি না, বাংলাদেশ সবগুলো ম্যাচই জিতবে। সবগুলো ম্যাচ জেতা হয়তো করা পক্ষেই সম্ভব নয়। এবার যে ফরম্যাটে খেলা হচ্ছে, তাতে ১০ দলকেই সব প্রতিপক্ষের বিপক্ষেই খেলতে হবে। লম্বা এই টুর্নামেন্টে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ থাকবে সব দলের সামনেই। তাই বলে বাংলাদেশ মাত্র একটি জয় পাবে, এটা ম্যাককালাম ছাড়া আর কারো মুখেই শোনা যায়নি। অনন্ত যারা ক্রিকেটের খোঁজখবর রাখেন, তারা কোনোভাবেই ম্যাককালামের সাথে একমত হবেন না। বিশ্বকাপপূর্ব র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম হলেও ম্যাককালামের প্রেডিকশনে বাংলাদেশের অবস্থান সবার শেষে, দশম। ম্যাককালাম যদি ২০ বছর আগে এই ভবিষ্যদ্বাণী করতেন, আমরা লজ্জা পেলেও চুপ করে থাকতাম। কিন্তু ২০১৯ সালের বাংলাদেশ যে এক ম্যাচ জয়ে সন্তুষ্ট থাকার দল নয়, তা বোঝা উচিত ছিল ম্যাককালামের। আগের বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা বাংলাদেশ এবার সেমিফাইনাল খেলার লক্ষ্য নিয়ে লন্ডন গেছে। ম্যককালাম যদি মাঝের চার বছর ঘুমিয়ে কাটিয়ে থাকেন, তাহলে বলার কিছু নেই। তবে সেক্ষেত্রে তার এমন গাঁজাখুড়ি প্রেডিকশন করা ঠিক হয়নি। তবে আমার ধারণা ম্যাককালাম ঘুমিয়েও ছিলেন না, বাংলাদেশের শক্তি সম্পর্কে তার ধারণাও আছে। তবে বাংলাদেশে এসে নিউজিল্যান্ডের হোয়াউটওয়াশ হওয়ার জ্বালা ভুলতে পারেননি। সেই শোধ নিতেই হয়তো সবার সামনে বাংলাদেশকে হেয় করার জন্যই তার এই অপচেষ্টা। বেশি দূরে যাওয়ার দরকার নেই। গত সপ্তাহে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স দেখলেও তিনি তার ভবিষ্যদ্বাণী লেখার আগে দুইবার ভাবতেন। ফাইনালে ২৪ ওভারে ২১০ রানের টার্গেটে বাংলাদেশে পৌঁছেছে ৭ বল বাকি থাকতেই। সেই ফাইনালটি দেখলেও বাংলাদেশ এক ম্যাচ জিতবে, এটি লিখতে তার হাত কাঁপতো। আসলে কেউ জেগে ঘুমালে তাকে জাগানো কঠিন।
তবে ম্যাককালামকে ‘বেয়াক্কেল’ প্রমাণ করতে বাংলাদেশ একটুও সময় নেয়নি। প্রথম সুযোগেই তারা হারিয়ে দিয়েছে ফেবারিট দক্ষিণ আফ্রিকাকে। শুধু হারিয়েছে বলেই নয়, যে স্টাইলে হারিয়েছে, তাও তাক লাগানিয়া। এ পর্যন্ত বিশ্বকাপের সবচেয়ে প্রাণবন্ত ম্যাচটি খেলেছে বাংলাদেশ। সবচেয়ে বড় ইনিংস খেলেছে বাংলাদেশ। এ ধরনের ভবিষ্যদ্বাণীর ক্ষেত্রে নিজের কথা নিজের গিলে খাওয়ার কথা আছে। আরেকটু খারাপ ভাষায় বললে নিজের থুথু নিজেকেই চেটে খাওয়া। ম্যাককালামের এখন সেই দশাই হয়েছে। অনেক কষ্টে বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়ে টুইট করেছেন- ‘দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারাল বাংলাদেশের ক্রিকেট দল। আমার প্রত্যাশা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা জিতবে। কিন্তু বাংলাদেশ দারুণ খেলেছে। আমার ভবিষ্যদ্বাণীকে এভাবে ভুল প্রমাণ করায় ধন্যবাদ জানাই।’
তবে এখন পুরোপুরি জাগেননি তিনি। নিজের অবস্থানে এখন অনড়। বলেছেন, ‘শেষ দল তারা (বাংলাদেশ) হবে না, আমার মনে হয় শেষ পর্যন্ত গড়পড়তার একটি অবস্থানে থাকবে। সব জিততে পারবে না।’
সেই গল্পের মত। এই ছেলে ভর্তি হতে পারবে না। ভর্তি হলে পাশ করবে না। পাশ করলে চাকরি পাবে না। চাকরি পেলে বেতন পাবে না।
বাংলাদেশের সাফল্যে ম্যককালামদের এমন জ্বলতেই থাকবে। প্রথম বলবে জিতবে না। জিতলে বলবে, গড়পড়তা।
বাংলাদেশের দায়িত্ব মাঠের পারফরম্যান্স দিয়ে এর জবাব দেয়া। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জবাব দেয়া শুরু হয়েছে। এবারের বিশ্বকাপে ম্যাককালামকে কয়বার তার ভবিষ্যদ্বাণী বদলাতে হয়, সে অপেক্ষায় রইলাম।
প্রভাষ আমিন, ৩ জুন, ২০১৯
সারাবাংলা/এমএম