Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ক্রিকেটিয় বৈরিতা নাকি ভারতবিদ্বেষের পুরোনো বিষ?


১৩ জুলাই ২০১৯ ১২:২২

বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে লড়াইটা ছিল ভারত-নিউজিল্যান্ডের মধ্যে। আঞ্চলিকতা বিবেচনায় দক্ষিণ এশিয়ার সবার ভারতের পক্ষে থাকার কথা। দক্ষিণ এশিয়া থেকে পাঁচটি দেশ এবার বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছিল- বাংলাদেশে, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান। নবীণ আফগানিস্তান খালি হাতে ফিরলেও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত সেমিফাইনাল লড়াইয়ে টিকে ছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত একমাত্র ভারতই সেমিফাইনালে যেতে পেরেছিল। এশিয়ার মান রক্ষায় সবার ভারতের পক্ষে থাকার কথা। কিন্তু হয়েছে উল্টো। আফগানিস্তান-শ্রীলঙ্কার কথা জানি না, পাকিস্তান তো ভারতের চির বৈরী। অন্তত ক্রিকেটিয় বিবেচনায় বাংলাদেশও এখন ভারতের প্রবল প্রতিপক্ষ। বাংলাদেশ-ভারত খেলা হলে না হয় ভারত আমাদের প্রবল প্রতিপক্ষ। কিন্তু ভারত-নিউজিল্যান্ড ম্যাচেও বাংলাদেশের প্রায় সবাই ভারতের বিপক্ষে, ভারতের পরাজয়ে উল্লাস দেখা গেলো চারদিকে। কেন এই হঠাৎ ভারতবিদ্বেষ?

বিজ্ঞাপন

এটা কি নিছক ক্রিকেটিয়, নাকি ক্রিকেট সূত্রে বেরিয়ে এসেছে অন্ধ ভারতবিদ্বেষের পুরোনো বিষ? পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক পুরোটাই অম্ল। ভারতের সাথে সম্পর্কটা ছিল অম্লমধুর। কিন্তু ইদানীং বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে মধুর পরিমাণ কমে অম্লের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। কারণটা জানা জরুরি, বাংলাদেশের জন্যও, ভারতের জন্যও।

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের একটা ঐতিহাসিক, কূটনৈতিক, ইমোশনাল, সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট রয়েছে। আরেকটু ছোট করে বললে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের সম্পর্কটা নাড়ির টানের। ১৯৪৭ সালের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান একটি অভিন্ন রাষ্ট্র ছিল ভারত নামে। ব্রিটিশরা দুইশ বছরের শাসন শেষে ফিরে যেতে বাধ্য হওয়ার আগে দ্বিজাতিতত্বের ভিত্তিতে ভারতকে ভেঙ্গে দিয়ে যায়। সৃষ্টি হয় পাকিস্তান নামে এক অদ্ভুত রাষ্ট্রের। ধর্মের ভিত্তিতে সৃষ্টি হওয়া পাকিস্তানের দুটি অংশ পূর্ব পাকিস্তান আর পশ্চিম পাকিস্তানে ভৌগোলিক দূরত্ব ছিল ১১০০ মাইল। কিন্তু মানসিক দূরত্ব ছিল হাজার কোটি মাইল। পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণ, বঞ্চনা আর অবহেলায় পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের মনে সৃষ্টি হয় স্বাধীনতার আকাঙ্খা। একাত্তরে নয়মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। স্বাধীনতা অর্জনের পর পাকিস্তানের সাথে সৌজন্যের কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকলেও, তা বরাবরই শীতলই ছিল। রাষ্ট্রীয়ভাবে যাই হোক, পাকিস্তানের সাথে আমাদের সম্পর্কটা বরাবরই বিদ্বেষের। জনগণের সাথে জনগণের সম্পর্ক নেই বললেই চলে। এই বিচ্ছিন্নতার মূল কারণ পাকিস্তানের সাথে আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টির কোনো মিল নেই; বিচ্ছিন্নতাটা আসলে মানসিক।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্কটা তেমন নয়। বাংলাদেশ আর ভারতের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ একসময় অভিন্ন বাংলা ছিল। ১৯০৫ সালে প্রথম বঙ্গভঙ্গ হয়। ১৯১১ সালে আবার বঙ্গভঙ্গ রদ হয়। তবে ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় পুরোপুরি ভেঙ্গে যায় বাংলা। পূর্ব বাংলা থেকে পূর্ব পাকিস্তান হয়ে বাংলাদেশ হলেও পশ্চিমবঙ্গের সাথে আমাদের রক্তের সম্পর্কটা এখনও রয়ে গেছে। দেশভাগের সময় বা পরে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় এপার বাংলা থেকে সংখ্যালঘুদের অনেকেই ভারতে চলে গিয়েছেন বা চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। যতই বাধ্য হন, তাদের শেকড় তো বাংলাদেশেই। ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্কটা কৃতজ্ঞতার। এই কৃতজ্ঞতা জন্মের। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত আমাদের সরাসরি সহায়তা করেছে। বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার পরিচালিত হয়েছে কলকাতা থেকে। ভারত আমাদের শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে, খাইয়েছে। তখনকার প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর দৃঢ় কূটনৈতিক পদক্ষেপ বাংলাদেশকে অনেক বিপদ থেকে বাঁচিয়েছে। শেষ পর্যন্ত ভারত সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে পাকিস্তানের পরাজয় নিশ্চিত হয়। একাত্তরের এই অপরিসীম সহায়তা আমরা কোনোদিন ভুলিনি, ভুলবো না। এ ধরনের ক্ষেত্রে সাধারনত সৈন্যরা নতুন দেশে ঘাঁটি গেড়ে বসে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে প্রথম সুযোগেই ভারতীয় সৈন্যদের ফেরত পাঠান।

এতকিছুর পরও ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্কটা বরাবরই অম্লমধুর। বিশেষ করে ’৭৫এর পর থেকে বাংলাদেশের রাজনীতির একটি বড় ফ্যাক্টর হয়ে যায় ভারত বিরোধিতা, কখনো কখনো তা অন্ধ ভারত বিরোধিতা। কিন্তু বাস্তবতা হলো ভারতের মত একটি বড় দেশের সাথে সম্পর্ক খারাপ রেখে বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা কঠিন। ভারত শুধু সমৃদ্ধ ও বড় দেশ নয়, বাংলাদেশের বৃহৎ প্রতিবেশীও। আর এটা তো সত্যি- বন্ধু বদলানো যাবে, প্রতিবেশী বদলানো যায় না। কিন্তু স্বার্থটা যখন একতরফা হয়ে যায়, তখন সম্পর্কটা টেকসই হয় না। আমাদের যেমন ভারতকে দরকার, তেমনি ভারতেরও আমাদের দরকার। একসময় ভারত বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে শান্তিবাহিনীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে। আবার ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীরাও বাংলাদেশের ভূখন্ড ব্যবহার করেছে। চট্টগ্রাম বন্দরে আটক হওয়া ১০ ট্রাক অস্ত্রতো ভারতেই যাচ্ছিল। তখন বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ছিল অবিশ্বাস আর সন্দেহের। তবে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দুই দেশই নিজেদের স্বার্থটা বুঝে নিতে চেষ্টা করে। ফলে স্বস্তি আসে দুই দেশেই। পার্বত্য শান্তি চুক্তি, গঙ্গার পানি চুক্তি, ছিটমহল সমস্যা সমাধান অনেক জট খুলে দিয়েছে। তবে এখনও বাংলাদেশের সাথে ভারতের সব সমস্যা মিটে যায়নি। সীমান্তে হত্যা, চোরাচালান, বাণিজ্য ঘাটতি তো আছেই; সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে আছে তিস্তার পানি। এইসব সমস্যাও মেটানোর চেষ্টা হচ্ছে কূটনৈতিক পর্যায়ে। তবে দুপক্ষ যখন মর্যাদার ভিত্তিতে নিজের প্রয়োজনটা বুঝবে, সমাধানটা তখনই আসবে।

তবে বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্কের সবচেয়ে বড় সমস্যা ভারতের মানসিকতায়। এ ব্যাপারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথাটি বলেছেন সুষমা স্বরাজ ভারতের সংসদে। মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির অনুমোদন দেয়ার সময় তিনি বলেছিলেন, সম্পর্ক উন্নয়ন করতে হলে বাংলাদেশের এলডার ব্রাদার হতে হবে, বিগ ব্রাদার নয়। এটাই মূল কথা। কিন্তু সমস্যা হলো, ভারতে অনেক এলডার ব্রাদার যেমন আছে, বিগ ব্রাদারেরও কমতি নেই। ভারত আয়তনে, জনসংখ্যায়, সম্পদে সবকিছুতে আমাদের চেয়ে এগিয়ে। তবে বাংলাদেশও একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। গত ৪৫ বছরে বাংলাদেশও অনেক এগিয়েছে। এমনকি অনেক সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ এখন ভারতের চেয়েও এগিয়ে। তবে বাংলাদেশ যে নতজানু মানসিকতা এড়িয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াচ্ছে, এটাই ভারতের কারো কারো পছন্দ হচ্ছে না। তাদের কেউ কেউ চান বাংলাদেশ সবসময় পরনির্ভরশীল থাকুক, নতজানু থাকুক। কিন্তু দুটি স্বাধীন দেশের সম্পর্ক হতে হবে পারস্পরিক সম্মান ও শ্রদ্ধার ভিত্তিতে।

তবে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নাটকীয় মোড় নিয়েছে ক্রিকেটকে ঘিড়ে। বিশেষ করে ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের কাছে বাংলাদেশের হারের পর। সেই ম্যাচে বাংলাদেশ বাজে আম্পায়ারিঙের শিকার হয়েছিল। বাজে আম্পায়ারিংও খেলারই অংশ। কখনো সিদ্ধান্ত আপনার বিপক্ষে যাবে, কখনো হয়তো পক্ষেও যাবে। এটা মেনে নিতে পারলেই ভালো। তবে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে এমন দুঃখজনক বিদায় মেনে নিতে পারেননি বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমী সমর্থকরা। যদিও সরাসরি কোনো যোগাযোগ নেই, ভুল-শুদ্ধ যা হয়েছে সব মাঠে, তবুও এর পেছনে বাংলাদেশের অনেকে ভারতের ষড়যন্ত্রের গন্ধ পেয়েছেন। তবে এই সন্দেহ একেবারে অমূলক নয়। তখনকার আইসিসির চেয়ারম্যান শ্রীনিবাসন বাংলাদেশবিদ্বেষী লোক হিসেবে পরিচিত। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ-ভারতের ক্রিকেট সম্পর্কটা নাটকীয়ভাবে বিষিয়ে যায়। এর অবশ্য আরেকটু প্রেক্ষাপট আছে।

২০০৭ সালে ভারতের বিশ্বকাপ স্বপ্নের বাড়া ভাতে ছাই ঢেলে দিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই জ্বালাটা ভারত ভুলতে পারেনি। তাই ২০১৫ বিশ্বকাপের আগে ভারতীয়রা ‘মওকা মওকা’ বিজ্ঞাপন বানায়, যাতে বাংলাদেশকে হেয় করা হয়। বাংলাদেশের লোকজনও সামাজিক মাধ্যমে পাল্টা জবাব দেয়। এ নিয়ে মাঠের বাইরে এক ধরনের যুদ্ধংদেহী পরিস্থিতি তৈরি হয়। এমনকি এবারও বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে বাদ দিতে ভারত ইচ্ছা করে ইংল্যান্ডের কাছে হেরেছে বলে কেউ কেউ বিশ্বাস করেন। যদিও আমি বিশ্বাস করি না, করার কোনো কারণও নেই। বিশ্বকাপ পর্যায়ে এসে কেউ ইচ্ছা করে ম্যাচ হারে না। তবে যেভাবেই হোক, সব মিলিয়ে বাংলাদেশ-ভারত ক্রিকেট সম্পর্কে একটা দারুণ উপভোগ্য বৈরিতা তৈরি হয়েছে। আগে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের যে উত্তেজনা ছিল তা আস্তে আস্তে বাংলাদেশ-ভারতের ম্যাচে চলে আসছে। এটা আমার কাছে দারুণ লাগছে। উত্তেজনা না থাকলে খেলা দেখে মজা পাওয়া যায় না। তবে ক্রিকেটিয় উত্তেজনাটা কখনো কখনো ক্রিকেটের সীমা ছাড়িয়ে ধর্মবিদ্বেষ, জাতিবিদ্বেষে বদলে যায়; ঘৃণার বিষ ছড়ায়। বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতবিরোধী অনেক ট্রল শ্লীলতার সীমা ছাড়িয়ে যায়। বিষয়টি আর স্পোর্টিং থাকে না। আপনি যখন কাউকে ধর্ম তুলে গালি দেন, তখন বুঝতে হবে, আপনার অন্তরজুড়েও সাম্প্রদায়িকতার গরল। আপনি আপনার দেশকে ভালোবাসুন, তাই বলে আরেক দেশকে গালি দিতে হবে কেন। আর গালি দিলে কিন্তু গালি শোনার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। শত্রুকেও তার প্রাপ্য মর্যাদা ও সম্মান দিতে হয়।

তবে অন্ধ ভারতবিদ্বেষ ছড়ানোর আগে আমাদের অতীত ভুলে যাওয়া উচিত নয়। ২০০০ সালে ভারতের ক্রিকেট সংগঠক জগমোগন ডালমিয়ার বদৌলতে আমরা কিছুটা আগেই টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়েছিলাম। অভিষেক টেস্টে ভারতই ছিল আমাদের প্রতিপক্ষ। কিন্তু ধারণা করা হয়, বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নয়নে যতটা করা উচিত ছিল বা করতে পারতো, ভারত ততটা করেনি। ডালমিয়ার মত বন্ধু যেমন ছিলেন, শ্রীনিবাসনের মত শত্রুও তো আছেন। ভারতের কেউ কেউ মনে করেন, ভারত যেহেতু বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন এবং টেস্ট ক্রিকেট প্রাপ্তিতে সহায়তা করেছে; তাই বাংলাদেশের উচিত সবসময় কৃতজ্ঞ থাকা। অবশ্যই আমরা কৃতজ্ঞ। কিন্তু তার মানে তো এই নয়, আমরা মুখ বুজে সব অন্যায় মেনে নেবো। ডালমিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞ বলেই শ্রীনিবাসনের সব আচরণ মানতে হবে কেন, ইন্ধিরা গান্ধীর প্রতি কৃতজ্ঞ বলেই কি আমরা তিস্তার পানির দাবি ছেড়ে দেবো? ভারতের কেউ কেউ এখনও আমাদের ৩০/৪০ বছর আগের বাংলাদেশ মনে করেন। তারা ভুলে যান আমরা অনেক এগিয়েছি, আমাদের আত্মমর্যাদাবোধ যে আমাদের সামর্থ্যরে সাথে সাথে বেড়েছে সেটা বুঝতে চান না অনেকে।

আমার ক্রিকেট দেখা শুরু আশির দশকে। বাংলাদেশ ক্রিকেটে আসার আগে আমার পছন্দের তালিকার দ্বিতীয় দল ছিল ভারত। প্রথম দল ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্রিকেটে বাংলাদেশের উত্থানের পরও ভারত দুই নাম্বারেই আছে। তবে তালিকাটা বদলে গেছে। ভারত এখন অপছন্দের তালিকায় দ্বিতীয়। প্রথম যথারীতি পাকিস্তান। তবে একসময় যে শচিন, সৌরভ, কপিলদের জন্য গলা ফাটিয়েছি, সেটা আর সম্ভব নয়। বিরাট কোহলীকে দেখলেই সেই জিভ বের করা উদযাপনের কথা মনে হয়। বাংলাদেশের মানুষের ভারতবিদ্বেষী হওয়ার পেছনে একটা বড় অবদান এই বিরাট কোহলীর। তার সমস্যা অ্যাটিচুডে। এখন যেমন বাংলাদেশের সবাই ক্রিকেটে ভারতকে প্রতিপক্ষ ভাবেন। অথচ একটা সময়ে আমার মত অনেকেই ভারতের পক্ষে গলা ফাটাতেন। কিন্তু ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের সময় ভারত বিরোধিতা ছড়িয়ে পড়ার সুযোগে একটি মহল মাঠে নামে। বাংলাদেশের যারা হৃদয়ে পাকিস্তান ধারণ করেন, যারা পাকিস্তানের পতাকা নিয়ে মাঠে যেতেন, যারা ‘আফ্রিদি ম্যারি মি’ বলে প্ল্যাকার্ড তোলেন মাঠে; তারা এই সুযোগটা নিয়ে ভেতরে ভেতরে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন ভারত বিদ্বেষ। তারা বেশ সফলও। কিন্তু খেলার মাঠের প্রতিদ্বন্দ্বিতা আর রাজনীতির হিসেবে নিকেশ এক নয়।

এমনিতে আমি ইতিবাচক মানুষ। পাকিস্তান ছাড়া আর কারো পরাজয় চাইতাম না। কিন্তু ইদানীং ভারতের পরাজয় আমাকেও দারুণ আনন্দ দেয়। একসময় যেমন ভারতের পক্ষে গলা ফাটাতাম। সেমিফাইনালে তেমনি নিউজিল্যান্ডের পক্ষে গলা ফাটিয়েছি। ভিরাট আউট হওয়ার পর যে আনন্দটা পেয়েছি, তা নিখাঁদ, অতুলনীয়। তবে ক্রিকেট বাদ দিলে আমি মোটেই ভারতবিদ্বেষী নই। ভারতের শিল্প-সংস্কৃতি-সাহিত্যের প্রতি আমার এক ধরনের ভালোবাসা আছে। ভারতের সিনেমা, সঙ্গীত, টিভি সিরিয়াল, ফ্যাশন বাংলাদেশে তুমুল জনপ্রিয়। কেউ কেউ একে আগ্রাসন বলেন। কিন্তু মানুষ যদি গ্রহণ করে, আপনি ঠেকাতে পারবেন না। আমাদের ছেলেবেলো কেটেছে ভারতীয় লেখকদের বই পড়ে আর ভারতীয় শিল্পীদের গান শুনে। সিরিয়াল না দেখলেও সুযোগ পেলে ভারতীয় সিনেমা দেখি। এখনও আমার পছন্দের তালিকার বড় অংশ জুড়েই ভারতীয় গান, বই, সিনেমার নাম।

আগেই বলেছি, ২০‌১৫ বিশ্বকাপের পর বাংলাদেশে ভারতবিরোধিতার সুযোগ কাজে লাগাতে মাঠে নামে বাংলাদেশে মানসিকভাবে আটপেড়া পাকিস্তানীরা। তারা ভারত আর পাকিস্তানকে এক পাল্লায় মেপে পাকিস্তানের অপরাধ জায়েজ করার চেষ্টা করেছেন। কেউ কেউ এমনও বলছেন, পাকিস্তান আমাদের শোষণ করেছে ২৩ বছর। আর ভারত করছে ৪৭ বছর ধরে। এটা আসলে একধরনের ফাঁদ।

বাংলাদেশ ক্রিকেটে আসার পর থেকে আমার সকল সমর্থন বাংলাদেশের জন্য। অন্য দেশকে সমর্থন করি বাংলাদেশের স্বার্থ বিবেচনায়। কিন্তু একটা বিষয় পরিস্কার, আমি কখনোই ভারত আর পাকিস্তানকে এক পাল্লায় মাপি না। সবার সাথে সব সম্পর্ক বাংলাদেশের স্বার্থ বিবেচনায়। ছিটমহল সমস্যা সমাধান করায় হাসিনা-মোদীকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। কিন্তু তিস্তা নিয়ে টালবাহানা করায় মোদী-মমতাকে নিত্য নিন্দা। সীমান্তের প্রত্যেকটি হত্যার জন্য আমি বিএসএফকে দায়ী করি। প্রতিটি ঘটনা আলাদা আলাদা। শচিন-সৌরভকে সবাই পছন্দ করেন। কিন্তু দারুণ পারফরমার হলেও ভিরাটকে পছন্দ করার লোক বাংলাদেশে নেই।
যার যার স্বার্থ, তার তার। আমি শুধু বাংলাদেশের স্বার্থটা বুঝে নিতে চাই।

প্রভাষ আমিন, সাংবাদিক

সারাবাংলা/এমএম

কোহলি ক্রিকেট প্রভাষ আমিন বাংলাদেশ-ভারত বিদ্বেষ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর