Wednesday 11 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এনআরসি: সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে বাংলাদেশকে


৩১ আগস্ট ২০১৯ ১৬:২৪

ভারতের আসামে চূড়ান্ত জাতীয় নাগরিক তালিকা বা নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) প্রকাশিত হয়েছে (৩১ আগস্ট) শনিবার। ১৯৫১ সালের জাতীয় আদমশুমারিকে সামনে রেখে আসাম থেকে অবৈধ অভিবাসী তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য ১৯৫০ সালের পহেলা মার্চ এই নাগরিক নথিভুক্তি আইনটি কার্যকর হয়।

আজকে যে সংশোধিত তালিকাটি প্রকাশিত হলো, যার ভিত্তি হচ্ছে ১৯৫১ সালের তালিকায় যারা ছিলেন এর বাইরেও ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের মধ্যরাতের আগ পর্যন্ত যারা ভারতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। অথবা যারা ওই সময়ের আগে থেকেই ভারতের যেকোন অংশে স্থায়ীভাবে বসবাসের দালিলিক প্রমাণ হাজির করতে পারবে তাদের সংযুক্ত করে। নতুন তালিকা তৈরির এই প্রক্রিয়া ২০১৩ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে শুরু হয়। তবে এই তালিকা তৈরির ব্যাপারে যেসব দালিলিক প্রমাণের কথা বলা হচ্ছে সেখানেও এক নোংরা রাজনীতি আছে। সেখানে বেশির ভাগ হতদরিদ্র কৃষক, শ্রমজীবী মানুষ রয়েছে যারা বংশ পরম্পরায় আসামে স্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছে। অথচ চাইলেই তারা তেমন কোনো দালিলিক প্রমাণ সহজে দেখাতে পারবে না।

ভারতের আসাম রাজ্যে মোট জনসংখ্যার ৩৪ শতাংশই মুসলমান এবং এই অঞ্চলে বাংলা ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৩০ ভাগ। ঔপনিবেশিক আমল থেকেই বাংলা থেকে বিভিন্ন জনগোষ্ঠী আসামে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য পাড়ি জমিয়েছিল। এরপর পুর্ব পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকেও বিপুল জনগোষ্ঠী সেখানে স্থানান্তরিত হয়ে সেখানকার ভূমি দখল ও জাতীয় কৃষ্টি-সংস্কৃতি ধ্বংস করছে বলে রাজ্য সরকার মনে করছে। তারই ফলশ্রুতিতে এই তালিকা প্রস্তুত করে বাকিদের সে দেশ থেকে বিতাড়ন করা হবে বলে জানানো হচ্ছে। এই তালিকা প্রণয়ন ও তার ভিত্তিতে বিতাড়িত হওয়ার আতঙ্কে সেখানকার লাখ লাখ জনগণ এক বিরাট অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছে।

২০১৮ সালের ৩০ জুলাই ও ২০১৯ সালের ২৬ জুন প্রকাশিত তালিকায় ৪০ লাখ লোককে তালিকা বহির্ভূত হিসাবে দেখানো হয়। যারা প্রকৃতপক্ষে কোনো দেশেরই নাগরিক নয় অর্থাৎ রাষ্ট্রবিহীন জনগোষ্টি হিসাবেই বিবেচিত হয়। সেই তালিকা আবার সংশোধিত আকারে আজ শনিবার আবারও প্রকাশ করা হলো। যেখানে ১৯ লাখ লোককে এবার এই তালিকা বহির্ভূত হিসাবে দেখানো হলো। তার মানে এই ১৯ লাখ লোক এখন কোনো রাষ্ট্রের নাগরিক না। যদিও আসাম রাজ্য সরকার তালিকা থেকে বাদ পড়াদের আপিল করার জন্য ১২০ দিনের সুযোগ দেবে এবং আদালতে যাওয়ার সুযোগও পাবে তালিকা থেকে বাদ পড়া মানুষ।

কথা হলো যত সুযোগই দিক আসাম রাজ্য সরকার, তাদের মূল লক্ষ হচ্ছে এটাই প্রমাণ করা যে বেআইনিভাবে সেখানে বসবাসকারী সবাই বাংলাদেশ থেকে এসেছে। তালিকাবহির্ভূতরা বাংলাদেশি এবং তাদের বাংলাদেশে ফিরে যেতে হবে এমন উক্তি বহু ডাকসাইটে রাজনীতিবিদ ইতোমধ্যে বেশ জোর দিয়েই বলেছেন।

খুব কঠিন বাস্তব হলেও সত্য যে আসামের এই বাঙালি খেদাও নীতি আর মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নিধন নীতির মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। এক গোষ্ঠি কোনোরকম হিসেব-নিকেশ ছাড়াই রাতারাতি বল প্রয়োগ করে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে তাদের দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে। এক গোষ্ঠি আইন কানুন দেখিয়ে, তালিকা দেখিয়ে বুদ্ধি করে তাড়ানোর ব্যবস্থা করছে। আসাম রাজ্যে এভাবে জাতিগত বিভাজন চলতে থাকলে জাতিগত সহিংসতা ও অস্থিরতা আরও বহুগুণ বাড়বে। যার ফলে আজ না হোক কাল ভারতের ওই অঞ্চলে জাতিগত ও ভাষাগত দাঙ্গা অবশ্যম্ভাবী আর তা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়বেই।

বাংলাদেশ বরাবরই আবেগতাড়িত হয়ে কূটনীতি ও রাজনীতি পরিচালনা করা একটি দেশ। এদেশের নীতি নির্ধারকদের মধ্যে কোনোকিছুর গভীরতাই তাৎক্ষণিকভাবে উপলব্ধি হয় না। অনেকটা টিউব লাইটের মতো, যখন জ্বলে ওঠে তখন আর অবশিষ্ট কিছু থাকে না রক্ষা করার মতো। যেমন ১৯৮২ সালে যদি রহিঙ্গাদের বিষয়টা গভীরভাবে নেওয়া হতো তাহলে সীমান্ত বরাবর তারকাটা দিয়ে শক্তভাবে সীমান্ত রক্ষার ব্যবস্থা করলে (রোহিঙ্গা তাড়ানোর পর পরই মিয়ানমার যা করেছে) আজ সারা বিশ্বের হাতে পায়ে ধরে বেড়াতে হতো না। এ ক্ষেত্রেও যদি বাংলাদেশ এই বিষয়টিকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে উড়িয়ে দেয়, আর এ বিষয়ে কোনো আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা না নেয় তাহলে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শিবিরের মতো আরও একটি শিবির সিলেট অঞ্চলে খুলতে হবে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে এখনো ১২০ দিন সময় আছে নিজেদের সীমান্ত কঠোরভাবে সুরক্ষা করার। এসময়ের মধ্যে ভারতের সুচতুর কুটনৈতিক চালে পা না দিয়ে নিজেদের স্বার্বভৌমত্ব দৃঢ়তার সঙ্গে রক্ষার। বাংলাদেশকে মনে রাখতে হবে যে অন্যকে বস্ত্র দিয়ে সাহায্য করা ভালো তাই বলে নিজেকে উলঙ্গ করে নয়।

ওমর তাসিক, বাংলাদেশ প্রতিনিধি, আইটিভি নিউজ, যুক্তরাজ্য

সারাবাংলা/এমআই

আসাম এনআরসি নাগরিকপঞ্জি


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর