Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সরকারি উপাচার্যদের কাজ কী?


২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৪:৪২

একটি বিশ্ববিদ্যালয় কোথাও স্থাপিত হলে আমরা স্বাভাবিক ভাবে মনে করি সেই এলাকাটি জ্ঞান ও প্রজ্ঞার কেন্দ্র হয়ে উঠবে। বিশ্ববিদ্যালয় মানেই জ্ঞান পিপাসু শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য গণতান্ত্রিক পরিবেশে মুক্তবুদ্ধির চর্চা।

কিন্তু আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেই পরিবেশ কতটা আছে, সে নিয়ে জিজ্ঞাসা আছে। গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জিনিয়া একটি জাতীয় ইংরেজি দৈনিকে কাজ করেন। বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আবেগের জায়গা থেকে রিপোর্ট লেখার জন্য ফেসবুকের মাধ্যমে মতামত সংগ্রহের উদ্দেশ্য তিনি লিখেছিলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কাজ কী’? তারপরের অবস্থা আর বর্ণনার মত নয়। তার নিজের জীবন আর শিক্ষা জীবনের উপর দিয়ে যে ঝড়টা বয়ে গেছে তাতে তার শিক্ষা হয়ে গেছে বলতেই হবে। উপাচার্য খোন্দকার নাসির উদ্দিনের রোষাণলের শিকার হয়ে বহিষ্কৃত হয়েছেন, যদিও তা পরে প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু জিনিয়াকে সমর্থনকারী আন্দোলনরত সতীর্থরা বহিরাগতদের সহিংস হামলার শিকার হয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

সন্তানতুল্য জিনিয়ার সাথে তার ফোনে কথোপকথন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তার বাণী আমাদের আশ্চর্য করেছে। এত কদর্য হতে পারে একজন উপাচার্যের ভাষা? একজন শিক্ষকের মুখ থেকে এমন অশ্রাব্য অপমানকর কথা শব্দ উচ্চারিত হতে পারে? টেলিভিশন টকশোতে, সামাজিক মাধ্যমে এ নিয়ে সরব আলোচনা।

কিন্তু এমনটা হতে পারে! পারে এ কারণে যে, এরা ভাল শিক্ষক হিসেবে বা গুনীজন হিসেবে এসব চেয়ারে বসেননি। এই চেয়ারে বসার জন্য তাদের একমাত্র যোগ্যতা ক্ষমতার কেন্দ্রে প্রশ্নাতীত আনুগত্য।

বিজ্ঞাপন

এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মুখ থেকে আমরা দশ টাকায় চা, চপ, সিঙ্গারা যে এই বড় বিদ্যাপীঠের ঐতিহ্য সেটা জেনেছিলাম। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যতো চাঁদা কেলেঙ্কারির পর বলেই চলেছেন নানা কথা। আর উড়োজাহাজে ঘুরছেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। এই উপাচার্যরা কত কি করেন, কত কথা বলেন, আমরা মূর্খের সম্প্রদায়, অবাক বিস্ময়ে শুনি, দেখি।

গোপালগঞ্জ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চলছে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে আন্দোলনের মুখে ক্যাম্পাস ছাড়তে হয়েছে। প্রায় সবকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় লেখাপড়ার চাইতে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি, শিক্ষকদের ভেতরকার গ্রুপিং বেশি আলোচনায়। কিছু ব্যাতিক্রম ছাড়া প্রায় সব ক্ষেত্রেই উপাচার্যরা আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রে।

উপাচার্যের পদে বর্তমানে যিনি আসীন, তার এই পদে বসার যোগ্যতা, তাকে সেই পদে বসানোর প্রক্রিয়াই আসল বিষয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক দিন ধরেই শিক্ষক নিয়োগ কতটা হয়, আর কতটা ভোটার নিয়োগ হয় তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বজনপ্রীতি, দল প্রীতি, ভোটার প্রীতি, আঞ্চলিকতা প্রীতি, আনুগত্য প্রীতি যতদিন চলতে থাকবে ততদিন উপাচার্যও সেই মানেরই হবে। গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাণ্ড শিক্ষক হিসেবে তাদের নৈতিক অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

শিক্ষকরা পরীক্ষা নেন, শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করেন। এখন নিশ্চয়ই দাবি উঠতে পারে যে শি ক্ষকদেরও মূল্যায়ন প্রয়োজন। বলা যেতেই পারে যাদের নিজেদের শিক্ষা বহুলাংশে অসম্পূর্ণ থেকে গেছে, তাদের উপরেই যদি ন্যস্ত হয় দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার ভার, তার পরিণাম উদ্বেগজনক। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শেখা আচার, আচরণ, ভাষা এতটা অশ্রাব্য ও অগ্রহণযোগ্য হলে, শিক্ষা নড়বড়ে হলে বিশ্ববিদ্যালয় নিজেই শুধু নয়, রাজনীতি, প্রশাসন সহ সমাজ ও জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রই অপরিণত, অনুন্নত থেকে যাবে।

কেউ কেউ বলছেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রসাতলে গেল বলে! সত্যিই কি তাই? অতীতের মেধাবী এবং সম্মানিত অধ্যাপকদের মত শিক্ষক এখন আর দেখা যায়না ক্যাম্পাসে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাকাল্টি ডিনদের ভূমিকা অপরিসীম। তারাই কার্যত পড়াশোনা সম্পর্কিত সবরকম কর্মকাণ্ড মাথায় রাখেন। কিন্তু বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুসারে একাডেমিক দিকে উৎকর্ষের চাইতে ডিন নির্বাচিত হচ্ছেন রাজনীতির মাধ্যমে। তাদের যেহেতু ভোট জোগাড় করে আসতে হয়, তাতে তারা কতটা শিক্ষানুরাগী হবেন সেটাও বিবেচনায় নিতে হবে।

আমাদের সময়ও শিক্ষক ও ছাত্র রাজনীতি ছিল। শিক্ষকরা অনেক বড় ভূমিকাও রেখেছেন শিক্ষা ও জাতীয় ইস্যুতে। কিন্তু তারা শুধু শিক্ষক ছিলেন না, ছিলেন আমাদের অভিভাবকও। আমাদের সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এমন শিক্ষক ছিলেন, দলমত নির্বিশেষে সেই সব শিক্ষকদের সান্নিধ্যে পেতে পারলে, তাদের কাছ থেকে কিছু শিখতে পারলে শিক্ষার্থীরা নিজেদের ধন্য মনে করত। খুব বেশি দিন নয়, ১৯৯০-এর সময়টাও ছবিটা এমনই ছিল। সেই সব আদর্শ শিক্ষকের কথা মনে হলে নিজের অজান্তেই ভক্তি ও শ্রদ্ধা মনের মাঝে উচ্চারিত হয়। মনে পড়ে যায় শিক্ষা ও গবেষণায় তাদের নিরলস সময় দেওয়ার কথা, মনে পড়ে যায় শিক্ষার্থীদের প্রতি তাদের ভালবাসার কথা।

শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক তখন শুধুমাত্র ক্যাম্পাস গণ্ডিতেই আবদ্ধ ছিল না। বাইরের মানুষের কাছেও শিক্ষকরা ছিলেন এক একজন প্রতিষ্ঠান। আজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যোগ্যতাসম্পন্ন, ছাত্রদরদি শিক্ষকের বড় প্রয়োজন। আর সেটা হতে গেলে শিক্ষকদের নিজেদেরই আগে উপযুক্ত হতে হবে।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের অবস্থা দেখে আমরা হতাশ হই, কিন্তু আশাতো আর ছাড়তে পারিনা। শুধু একটাই আবেদন উপাচার্যদের কাছে – শিক্ষার মুক্তধারাকে আপনারা আর রুদ্ধ করবেন না।

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, এডিটর ইন চিফ, সারাবাংলা ও জিটিভি

উপাচার্য বাংলাদেশে শিক্ষা বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা

বিজ্ঞাপন

আদানি গ্রুপের নতুন সংকট
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১৫:৩৬

আরো

সম্পর্কিত খবর