আর কতো মেয়ে নির্যাতিত হয়ে ফিরলে হুশ ফিরবে?
১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১৫:১৫
গৃহকর্তার ধর্ষণের শিকার হয়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে দেশে ফিরেছেন কেউ, কাউকে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে, প্রতিবাদ করায় এক নারীর চুল টেনে টেনে তুলে ফেলা হয়েছে, নির্যাতনের কারণে চারতলা বাড়ির ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে একজন হাসপাতালের আইসিইউতে ছিলেন অনেক দিন, অনেকেই যৌন নিপীড়নের শিকার, এমন অভিযোগও রয়েছে পিরিয়ড চলাকালে মালিকের পাশবিকতায় ক্ষত-বিক্ষত হয়েছেন শ্রমিক হয়ে সৌদি আরব যাওয়া অনেক নারী।
জানুয়ারির মাঝামাঝিতে দেশটি থেকে নির্যাতিত হয়ে প্রায় সাড়ে তিনশ নারী দেশে ফিরেছেন। এর আগেও ফেরার এমন ঘটনা ঘটেছে বারবার।
এতকিছুর পর- কেমন আছে বাংলাদেশি মেয়েরা? সে প্রশ্ন তোলার অবকাশ রাখে না।
১৯৯১ থেকে ২০১৭ সাল পয়ন্ত প্রায় সাত লাখ নারী বিদেশে গেছেন। এরমধ্যে দুই লাখই গেছেন সৌদি আরবে। এছাড়া জর্ডানে এক লাখ ২৯ হাজার, আরব আমিরাতে এক লাখ ২৬ হাজার, লেবাননে এক লাখ চার হাজার, ওমানে ৬৪ হাজার, কাতারে ২৫ হাজার এবং মরিশাসে ১৬ হাজার নারী গেছেন। জর্ডান ও লেবাননে পোষাক কারখানায় কাজ করতে যাওয়া অধিকাংশ মেয়ে ভালো অবস্থায় আছেন, এমন তথ্য নানাভাবেই মিলছে। এর বাইরে অন্য দেশগুলোয় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতে যাওয়া অনেকেই ভালো নেই। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা সৌদি আরবে।
বছর দশেক আগে সৌদি আরব প্রথম বাংলাদেশ থেকে নারী গৃহকর্মী চায়। ততোদিনে সাংবাদিকতা করতে গিয়ে আমি জেনেছি জর্ডান, লেবানসহ আরও কিছু জায়গায় গৃহকর্মী হিসেবে যাওয়া বাংলাদেশি মেয়েরা নির্যাতনের শিকার। সাত বছর আগে আনুষ্ঠানিকভাবে সৌদি আরব যখন বাংলাদেশ থেকে নারী গৃহকর্মী চাইলো তখন এ ঘটনা নিয়ে ২০১১ সালের ৭ মে প্রথম আলোতে ‘সৌদি আরবে নারী গৃহকর্মী পাঠানো নিয়ে উদ্বেগ, কয়েকটি দেশের তিক্ত অভিজ্ঞতা, সরকারের নিরাপত্তার আশ্বাস ‘শিরোনামে একটি রিপোর্ট করলাম।
ওই রিপোর্টে উঠে এসেছিল, সৌদি আরবে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতে যাওয়া ইন্দোনেশীয়, ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কার নারীরা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। নির্যাতনের কারণে এই দেশগুলো যখন তাদের নারীদের সৌদি আরবে পাঠানো বন্ধ করে দিচ্ছে, তখন বাংলাদেশ থেকে নারী গৃহকর্মী নিতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে দেশটি। কিন্তু নিরাপত্তা সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে বাংলাদেশ সরকারের সেখানে নারী গৃহকর্মী পাঠাতে আপত্তি করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশি সায়েদুল হাসান, কুমিল্লার ফরহাদ আহমেদ, চট্টগ্রামের বাবুল আহমেদসহ আরও অনেকেই আমাকে সেদিন বলেছিল, সৌদি আরবে নারী গৃহকর্মীদের খাদ্দামা বলে। খাদ্দামাদের কী পরিমাণ দুর্ভোগ পোহাতে হয়, তা এখানকার সবাই জানে। কাজেই আমরা আমাদের মা-বোনদের এভাবে নির্যাতিত হতে দিতে পারি না। বাংলাদেশ সরকারের কোনোভাবেই এখানে নারীদের পাঠানো ঠিক হবে না।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার মানবাধিকার কর্মীদের অভিজ্ঞতাও তুলে ধরেছিলাম ওই নিউজে। প্রত্যেকেই সতর্ক করেছিলেন। প্রতিবেদনে লিখেছিলাম ফিলিপাইনের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদল সে দেশের নারী কর্মীদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে সৌদি আরবে যায়। ফিরে এসে তারা ফিলিপাইনের সরকারকে যে প্রতিবেদন দেয়, তার মূল বক্তব্য ছিল, ‘আমরা আমাদের মেয়েদের ধর্ষিত বা নির্যাতিত হওয়ার জন্য সৌদি আরবে বিক্রি করতে পারি না।’
সৌদি আরবে গৃহকর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়ে কী করা হবে জানতে চাইলে তখনকার বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছিলেন, ‘নারীদের নিরাপত্তা বিধান করেই সৌদি আরবে পাঠানো হবে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।’
অবশেষে চুক্তি: ওই নিউজের পর নারীদের বিদেশে যাওয়ার প্রক্রিয়াটি বন্ধ না হলেও কিছুটা গতি হারায়। এভাবে কাটলো আরও চার বছর। সৌদি আরবে তখনো পুরুষ কর্মী পাঠানো বন্ধ। তারা বারবার চাপ দিচ্ছে বাংলাদেশ থেকে নারী গৃহকর্মী দিতে হবে। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। সৌদি আরবের শ্রম মন্ত্রণালয়ে উপমন্ত্রী আহমেদ আল ফাহাইদের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসে। এবার তারা নারীদের নেবেই। চুক্তি স্বাক্ষর করলো বাংলাদেশ। সেদিনও এই প্রক্রিয়ার সমালোচনা তুলে ধরে খবর প্রকাশ করেছিলাম। যা ১১ ফেব্রুয়ারি তারিখে ‘৮০০ রিয়ালে নারী গৃহকর্মী, সৌদি আরবে জনশক্তি রপ্তানির চুক্তি, শিরোনামে প্রকাশিত হয়।
ওই সংবাদে উঠে আসে- ১২০০ রিয়াল থেকে ১৫০০ রিয়াল বেতনের কথা বলা হলেও শেষ পর্যন্ত ৮০০ রিয়ালেই (১৬ হাজার ৮০০ টাকা) গৃহকর্মী পাঠাতে রাজি হয়েছে বাংলাদেশ। এতো কম বেতনে গৃহকর্মী পাঠানোর চুক্তি করায় এবং নারী গৃহকর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সৌদি আরবপ্রবাসী বাংলাদেশি এবং অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থাগুলো।
সমস্যা সমাধানে করণীয় কী জানতে চাইলে বাংলাদেশ অভিবাসী মহিলা শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশনের (বমসা) পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম সেদিন বলেছিলেন, ‘সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ, সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই যেন পাঠানো হয়। এ ক্ষেত্রে প্রত্যেক নারী কর্মীকে যাওয়ার সময় মোবাইল ফোন দেওয়া হোক। কারণ, মেয়েরো ঘরে কাজ করবে। এ ছাড়া মাসে অন্তত একবার দূতাবাসের পক্ষ থেকে মেয়েদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা উচিত। এ জন্য দূতাবাসে লোকবল বাড়ানো কিংবা প্রয়োজনে বেসরকারি সংস্থাগুলোর সহায়তা নেওয়া উচিত। কারণ, আমরা চাই না কোনোভাবেই আমাদের মেয়েরা নির্যাতিত হোক।’
সেদিন প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও জনশক্তি রপ্তানিকারকেরা বলেছিন, সৌদি আরব দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে রাজি হয়েছে। কাজেই চাইলেও তাদের প্রত্যাখ্যান করার সুযোগ ছিল না। আর গৃহকর্মী নেওয়ার পর অন্যান্য খাতেও কর্মী নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে দেশটি। বাংলাদেশি মেয়েরা যেন কোনো বিপদে না পড়ে, সে জন্য সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবে বাংলাদেশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) চেয়ারপারসন তাসনিম সিদ্দিকীকেও উদ্ধৃত করা হয়েছিল ওই খবরে। তিনি বলেছিলেন, ‘৮০০ রিয়াল বেতন খুবই কম। তবে বেতনের চেয়েও আমি বেশি উদ্বিগ্ন মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে। এ ক্ষেত্রে গৃহকর্মী পাঠানোর আগেই সেখানে দূতাবাসের শেল্টার হোম করা উচিত, যাতে কেউ বিপদে পড়লে আশ্রয় নিতে পারেন। দূতাবাসের উচিত নিয়মিত বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নেওয়া। এসব বিষয় নিশ্চিত না করে গৃহকর্মী পাঠানো ঠিক হবে না।’
নির্যাতনের নানা ধরেন: অধিকারকর্মীরা বারবার সতর্ক করলেও কেউ কথা শোনেনি। ব্যবসায়ীরা উঠে পড়ে লাগলেন। সারাদেশে দালালরা সক্রিয় হলো। ২০১৫ সালে গেলেন ২১ হাজার নারী শ্রমিক। ২০১৬ সালে গেলেন ৬৮ হাজার। এই মেয়েরা কেমন থাকলেন? পরে এই মেয়েদের দুরাবস্থা নিয়ে ফলোআপ স্টোরি আমিই করলাম ২০১৬ সালের ৯ এপ্রিল। শিরোনাম- মধ্যপ্রাচ্যে নির্মম নির্যাতনের শিকার বাংলাদেশি মেয়েরা।
সেই নিউজে উঠে এল, সংসারে সচ্ছলতার আশায় কুড়িগ্রাম থেকে যাওয়া এক নারী গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরবে গিয়ে গৃহকর্তার ধর্ষণের শিকার হয়ে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। পরে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে আশ্রয় নেন রিয়াদের বাংলাদেশ দূতাবাসে। দুই মাস পর তিনি দেশে ফিরেন।
সৌদি আরব থেকে ফিরে আসা রংপুরের এক নারী আমাকে বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর সংসারে অভাবের কারণে তিনি ২০১৫ সালের ২৫ জুন সৌদি আরবে যান। যে বাড়িতে কাজ করতেন, সেখানে তাঁকে শারীরিক নির্যাতন করা হতো। বাইরে থেকে আসা পুরুষেরাও নির্যাতন করত। প্রতিবাদ করায় ২০১৪ সালের ২১ আগস্ট তাঁর গায়ে আগুন দেওয়া হয়।
যশোরের এক নারী বলেন, তাকে সৌদি আরবে পাঠায় ফাতেমা ওভারসিজ। যে বাসায় কাজ করতেন, সেই বাসার গৃহকর্তা, তাঁর ছেলে এবং ছেলের বন্ধুরা তাঁকে শারীরিক ও যৌন নির্যাতন করেছে। ঢাকার শাহবাগ এলাকার এক ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন, তাঁর স্ত্রীকে সৌদি আরবে একটি কক্ষে রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে। কেরাণীগঞ্জের এক স্বামী অভিযোগ করেছেন, তাঁর স্ত্রীকে যৌনকাজের প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে।
ঢাকার উত্তর বাড্ডার এক নারী বলেছিলেন, যে বাসায় তিনি কাজ করতেন, ওই বাসার পুরুষেরা তাঁকে শারীরিক নির্যাতন ও যৌন হয়রানি করত। প্রতিবাদ করলে তাঁর চুল টেনে টেনে তুলে ফেলা হতো।
মানিকগঞ্জেরে এক মেয়ে বলেছেন, সৌদি আরবের বনি ইয়াসার এলাকায় কাজ করতেন তিনি। নির্যাতনের কারণে চারতলা বাড়ির ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়েন। পরে তার স্থান হয় হাসপাতালের আইসিইউতে। কুমিল্লার এক নারীকে নির্যাতন করে মাথা ফাটিয়ে দিলে ১৪টি সেলাই লাগে।
ওই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, অতিরিক্ত কাজের চাপ ও নির্যাতন সামলাতে না পেরে বিভিন্ন সময়ে পালিয়ে দূতাবাসের সেফ হাউসে আশ্রয় নিয়েছেন অন্তত ১৫০ জন। তাঁদের মধ্যে অন্তত ১০০ জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া সিরিয়ায় অবৈধভাবে পাচার হওয়া বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি নারী যৌন নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধরনের শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
শুধু মেয়েদের কথায় নয় সৌদি দূতাবাসের বিভিন্ন চিঠিতেও এই চিত্র উঠে এসেছে। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রীর কাছে পাঠানো এক চিঠিতে সৌদি রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ লেখেন, ‘এ পর্যন্ত ৫৫ জন গৃহকর্মী অতিরিক্ত কাজের চাপ, দুর্ব্যবহার বা নির্যাতনের কারণে গৃহকর্তার বাড়ি থেকে পালিয়ে দূতাবাসে আশ্রয় নিয়েছে। প্রতিদিনই তিন-চারজন গৃহকর্মী এভাবে আশ্রয় নিচ্ছে।’আরেক চিঠিতে তিনি লেখেন, ‘গৃহকর্মীদের মধ্যে ৫৬ জন দূতাবাসের সহায়তায় এবং ৫৫ জনকে রিয়াদের দুটি কোম্পানির সহায়তায় দেশে পাঠানো হয়েছে। যাঁরা আসছেন, তাঁদের অনেকেরই শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি নেই। সৌদি গৃহকর্তাদের বিরুদ্ধেও নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।’ওই চিঠিতে নারীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ, প্রয়োজনে আত্মরক্ষামূলক প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ বেশ কটি বিকল্প প্রস্তাব দেন তিনি।
এভাবে মেয়েরো নির্যাতিত হচ্ছে কেন জানতে চেয়েছিলাম প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলামের কাছে। তিনি বলেন, ‘ঘটনাগুলো দুঃখজনক। আমরা যখনই এই ধরনের অভিযোগ পাই, তাঁদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করি। অন্তত ১০০ মেয়েকে আমরা ফিরিয়ে এনেছি। সচিবের নেতৃত্বে আমাদের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল সৌদি আরব ঘুরে বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলে এসেছে। যেসব গৃহকর্তা এসব ঘটাচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ওই দেশের আইনে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেটিও আমরা দেখছি।’
এখনকার কথা: সাংবাদিকতা ছেড়ে গত বছরের জুলাই মাসে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান হিসেবে যোগ দিয়েছি। ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম এই মুহুর্তে ইউরোপ ফেরতদের জন্য ইইউ ও আইওএম-এর সাথে কাজ করছে। পাশাপাশি বিদেশে ফেরতদের জন্য ঢাকার ড্যানিশ দূতাবাসের সাথে কাজ করছে। পাশাপাশি বিদেশ যেতে ইচ্ছুকদের প্রশিক্ষণ ও ভাষা শিক্ষা, মানবপাচার প্রতিরোধেও কাজ চলছে। এর মধ্যেই গত মাসে জানা গেলো নানা রকম নির্যাতনের কারণে সৌদি আরব থেকে সাড়ে তিনশ মেয়ে দেশে ফিরে এসেছে। এর মধ্যেই ব্র্যাকে আমাদের সাথে যোগাযোগ করেছে ২৪ টি পরিবার। তারা জানালো তাদের মেয়েরাও বিপদে আছে। আমরা গত ২১ জানুয়ারি এই ২৪ টা মেয়েকে ফেরত আনতে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কল্যাণ বোর্ডে চিঠি দিলাম নাম ও পাসপোর্ট নম্বরসহ। ২৪ জানুয়ারি কল্যাণ বোর্ড সেই চিঠি পাঠায় দূতাবাসে।
পুরো বিষয়টা নিয়ে ১১ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোয় মানসুরা হোসাইনের একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক নারীকে বাড়ির মালিক, ছেলে এবং অন্য পুরুষ সদস্যদের কাছে যৌন নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। খেতে না দেওয়া, কাজে একটু ভুল হলেই মারধর করা, বেতন না দেওয়া, এক বাড়ির কথা বলে কয়েক বাড়িতে কাজ করানোসহ নানা সমস্যায় আছে মেয়েরা।
সরকারসহ অনেকেই সবসময় বলার চেষ্টা করেন বিদেশ গিয়ে অনেক নারীই ভালো আছেন। গণমাধ্যমে ওই নারীদের কথা কেউ বলে না। তারা উল্টো প্রশ্ন করে কতো মেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে? এ বিষয়ে আমার বক্তব্য পরিস্কার- আপনারা যারা সরকারে আছেন, যারা দূতাবাসে আছেন, আমরা যারা শিক্ষিত তারা কী কেউ আমদের দূরের কোন নারী আত্মীয়কে বিদেশে পাঠাতে রাজি? আমি জানি উত্তর না। আচ্ছা আপনারা কী আপনাদের বাসার কাজের মেয়েটাকে বিদেশে পাঠাবেন? জানি তাও পাঠাবেন না। তাহলে গ্রামের সহজ সরল মেয়েগুলোকে কেন গৃহকর্মী হিসেবে পাঠাচ্ছেন?
মেয়েদের বিদেশে পাঠানোর বিপক্ষে বলছি না। আমাদের মেয়েরা বিদেশে কাজ করতে যাক, তবে সেটা গৃহকর্মী না হয়ে অন্য কিছু হলে ভালো হয়। বিশেষ করে পোষাক খাত বা অন্য কোন কাজে। তারপরেও যদি সরকার পাঠাতে চায় তাদের পুরোপুরি নিরাপত্তা দিয়ে পাঠাতে হবে।
এছাড়াও যারা নির্যাতন করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। অন্তত একটি মামলা হলেও হোক। দূতাবাসগুলোতে জনবল দেয়া হোক। নিয়মিত তারা নজরদারি করুক। আমি জানি সরকারের আন্তরিকতার অভাব নেই। তারপরেও বলবো, আমি চাই না বিদেশে কাজ করতে গিয়ে বাংলাদেশের একটা মেয়েও নির্যাতনের শিকার হোক। কারণ একটা মেয়েও যদি কাঁদে আমার কাছে সেটা পুরো বাংলাদেশের কান্না।
সারাবাংলা/এমএম