Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চলুন অন্যকে শুনি


১১ অক্টোবর ২০১৯ ১৮:৫৩

আচ্ছা আপনি বুয়েটের কথা ভুলে যান। নিজের মনোজগতের ক্যাম্পাসে থাকুন। একা মনকরিডোরে হাঁটুন। খুব দূর অতীতে যাবার প্রয়োজন নেই, নিকট অতীত বা আজকালের কথা চিন্তা করে দেখবেন; আপনি অন্যকে কতোটা শুনেছেন।

আপনার ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ সরিয়ে রেখে আপাতত রাষ্ট্র, সমাজে থাকেন। জাতীয় সংকট, রাজনৈতিক দর্শন, দুর্নীতি, নির্বাচন, রাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিবেশী ও অন্য দেশের সম্পর্ক, সরকারি দল-বিরোধী দল বিষয়ে আপনার মগজে আছে, তার বাইরেও যে ভিন্ন দৃশ্যপট থাকতে পারে, তা আপনি কি কবুল করেন?

বিজ্ঞাপন

কবুল করাতো অনেক উদার ও সুবোধ বিষয়। কিন্তু আপনি কর্ণের একশ হাতের মধ্যেতো ভিন্ন ভাবনাকে ভিড়তে দেন না। কারণ আপনি কুয়োকেই সমুদ্র ভেবে বসে আছেন। আপনিই সকল বিষয়ের নিউক্লিয়াস। তাই আপনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

এবার আপনার কাজের জায়গায় আসি। সেখানে আপনি নিজেকে সর্বেসর্বা ভেবে বসে আছেন। আপনি ছাড়া আর কেউ কোনো কাজ জানেনা। কারো কোনো কাজ হয় না। আপনার কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে এক ফোটা কথা বলতে গেলেই ভাবছেন আপনাকে বুঝি চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে। হুঙ্কার দিয়ে উঠছেন। সামাজিক ক্ষেত্রেও একই কথা। সমাজের আপনিই মোড়ল। প্রতিবেশী, আত্মীয় পরিজন, বন্ধুদের সমাবেশেও কোনো তর্কে আপনি যোগ দিতে চাচ্ছেন। অফিস- পরিবার সর্বত্র আপনার ভাবনার বাইরে কোনো দ্বিতীয় মত তৈরি হতে দিতে চান না। পরিবারকেও এক শাসনে রাখতে চান। সে আপনি পুরুষও হন কিংবা নারী। এই যে আপনি কোনো ভিন্ন মত সইতে পারছেন না। আপনার বিশ্বাস, দেখার চোখই চূড়ান্ত, এই অনুশীলনটা কিন্তু নিজের কাছে আটকে রাখতে পারছেন না।

প্রথমত আপনার কাজের জায়গা, পেশাগত বা রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনেও সেই অনুশীলন শুরু হয়ে যাচ্ছে। আপনার অধস্তন, অনুসারীরাও একই চরিত্র নিচ্ছে। আর পরিবারে আপনার সন্তানের মধ্যেও সংক্রমিত হচ্ছে সেই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ।

বিজ্ঞাপন

এই চরিত্র যে একমাত্র আপনার তাই নয়, আমারও হয়তো তাই। আপনার আমার এই চরিত্রই রাষ্ট্র ধারণ করেছে। কেউ কারও কথা শুনতে চাচ্ছে না, ভিন্নমত রাষ্ট্রের অভিধান থেকে মুছে গেছে। তর্ক যেন কোনো এক ইউটোপিয়ার স্বপ্ন। এমন এক কুয়োতে, আঁধারে বাস করে আমরাতো আমাদের সন্তানদের অসহিষ্ণু করেই তৈরি করছি। অসহিষ্ণুতাই তাদের কাছে অহংবোধ । সেই অহংবোধের উচ্ছ্বাস – ফাহাদ আবরারের হত্যা।

আমাদের পাপের ফলাফল আবরারে এসে থেমে যাবে এমনটি মনে করার সুযোগ নেই। কারণ আবরারের হত্যার পরেও নিজেদের সংশোধিত হতে দেখছি না। আবরার হত্যার পেছনের কারণ, হত্যার সঙ্গে যুক্ত যারা, বুয়েট শিক্ষকদের অবস্থান, ছাত্র রাজনীতি থাকবে কি থাকবে না, এনিয়ে আমি আপনি মগজের মহাফেজখানা থেকেই চিন্তা চালান দিচ্ছি। প্রতিটি বিষয় নিয়েই যে ভিন্ন ভিন্ন মত সরব। তর্কও হচ্ছে। কিন্তু সেই ভিন্নমত ও তর্ক ইথারেই ভেসে বেড়াচ্ছে। কানে তুলছিনা আমরা। এই অভ্যাসেই যদি রয়ে যাই। তর্ককে উপভোগ করতে না শিখি, ভিন্নমতকে স্বাগত না জানাই, তাহলে আবরার শেষ নয়। তালিকাতে কখন আমার আপনার সন্তান, এমনকি আপনি আমিও উঠে পড়বো, টেরই পাবো না। তাই চলুন অভ্যাস করি অন্যকে শোনার। হোক প্রতিবাদ, প্রতিবাদ যে গণতন্ত্রের অঙ্গীকার।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টেলিভিশন

আবরার হত্যাকাণ্ড তুষার আব্দুল্লাহ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর