Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যে মাধ্যম বিশ্বকে প্রচণ্ড নাড়া দিয়েছিলো


২২ নভেম্বর ২০১৯ ১৬:৩৮

যে মাধ্যম বিশ্বকে প্রচণ্ড নাড়া দিয়েছিলো সেটি যে টেলিভিশন তাতে কি কারো সন্দেহ আছে? থাকার কথা নয়। টিভি আবিস্কারের কয়েক বছরের মধ্যেই জার্মান ডিক্টেটর হিটলার এ মাধ্যমকে যুদ্ধ জয়ের কৌশল হিসেবে ব্যবহার করেন এবং গোটা ইউরোপে টেলিভিশনের প্রসার ঘটান। হিটলারের এ সাফল্যের কথা জানাজানি হবার সাথে সাথেই যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, ফ্রান্স, ইটালি, জাপান ও সোভিয়েত ইউনিয়ন নিজ নিজ প্রযুক্তিতে টেলিভিশন সম্প্রচারকে জনপ্রিয় করে তোলেন যুদ্ধজয়ের মাধ্যম হিসেবে। যা পরে উচ্চবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত সকল পরিবারের লিভিং রূমে স্থায়ী আসন লাভ করে। তথ্য আর বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায় টেলিভিশন। সারা বিশ্বে শিল্পী আর কলাকুশলীদের পদচারণায় মুখরিত হতে থাকে এই মাধ্যম। অনেক নতুন কর্মক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়।

বিজ্ঞাপন

প্রথম দিকে প্রায় সকল দেশেই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিষ্ঠিত হয় এই মাধ্যম, যা রাষ্ট্রীয় প্রচারণার কাজেও ব্যবহার করা হতো। টেলিভিশন ছিলো অত্যন্ত ব্যয়বহুল একটি গণমাধ্যম। ব্যবসায়ীদের তাই এই মিডিয়া ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে সময় লেগেছিলো আরো বেশ ক’বছর। সেই শুরু থেকে জাপানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এনএইচকে টিভি প্রযুক্তির নানা যন্ত্রপাতির আবিস্কারে এবং সারা বিশ্বে টিভি মাধ্যমের প্রসারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে চলেছে। স্ট্যান্ডার্ড ডেফিনিশন থেকে হাই ডেফিনিশন, পরবর্তীতে আলট্রা হাই ডেফিনিশন, সুপারআলট্রা হাই ডেফিনিশন, থ্রি-ডাইমেনশনাল টেলিভিশন; সাদা-কালো থেকে রঙীন, এনালগ থেকে ডিজিটাল, তারপর স্মার্ট টেলিভিশন – সবক্ষেত্রেই রয়েছে এনএইচকে প্রকৌশলীদের অবদান।

বিজ্ঞাপন

অনেকেই জানেন বা জানেন না, সেটা হলো এই উপমহাদেশে শুধু নয় দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বপ্রথম ঢাকা থেকে শুরু হয়েছিলো টেলিভিশন সম্প্রচার। ১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর পাকিস্তানের মিলিটারি ডিক্টেটর প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান ঢাকা টেলিভিশনের উদ্বোধন করেন। আইয়ুব খান সম্ভবত হিটলার বা স্টালিন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তার প্রবর্তিত বেসিক ডেমোক্রেসি প্রচারের জন্য টেলিভিশনকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। সে সময়ে পাকিস্তান টেলিভিশন ঢাকা কেন্দ্রের হাল ধরেছিলেন কয়েকজন বাঙালি জাতীয়তাবাদী তরুণ। সেই তরুণদের মধ্যে যে ক’জনের নাম প্রথমেই উল্লেখ করতেই হয় তারা হলেন শ্রদ্ধেয় জামিল চৌধুরী, মুস্তাফা মনোয়ার, কলিম শরাফী ও আবদুল্লাহ্ আল মামুন। তাঁরা এই টিভি প্লাটফর্মকে ব্যবহার করে পাকিস্তানের কথা না বলে বলেন বাঙলার কথা, দেশপ্রেমের কথা। নতুন নতুন নাটক, দেশাত্মবোধক গান, রবীন্দ্র-নজরুল চর্চা ইত্যাদি জায়গা করে নেয় বাংলার টেলিভিশনে। সেই অসাধারন গুণী মানুষেরা সে সময়ে দেশের জন্য যে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তার কোনো তুলনা হতে পারেনা।

১৯৭৫ সালের আগস্টের পর বিটিভিকে নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে কয়েকজন সামরিক অফিসার। ঐ বছর ৭ নভেম্বর কয়েকজন সৈনিক রামপুরায় বিটিভির কয়েকজন দেশপ্রেমিক অফিসারকে হত্যা করে। জামিল চৌধুরী, মুস্তাফা মনোয়ার, কলিম শরাফী এদেরকে টার্গেট করা হলেও ষড়যন্ত্রের কথা আগে জানতে পেরে তাঁরা প্রাণে বেঁচে যান।

আবদুল্লাহ আল মামুন অত্যন্ত মেধাবী একজন টিভি কর্মকর্তাই ছিলেন না, ছিলেন অত্যন্ত গুণী একজন নাট্যকার, পরিচালক ও অভিনেতা। তাঁর সৃষ্টি শুধু নাটকের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিলো না, তিনি আবিষ্কার করেছিলেন অসংখ্য সৃজনশীল শিল্পী ও লেখককে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে সবাই ধরে নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর স্নেহভাজন আবদুল্লাহ আল মামুন বিটিভির কর্ণধার হবেন। তিনি সে সময় সবথেকে সিনিয়র কর্মকর্তা হবার পরেও তাকে বিটিভি থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। মহাপরিচালক পদে টেলিভিশনের বাইরে থেকে এমন একজনকে নিয়োগ দেয়া হয়, যার কর্মকাণ্ড পরবর্তীতে যথেষ্ট বিতর্কের জন্ম দেয়। যিনি একসাথে বিটিভির ১৪ জন কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করেন, যাদের অধিকাংশই ছিলেন মুক্তিযাদ্ধা।

স্বাধীনতার ২৮ বছর পরে আমাদের দেশে যখন প্রাইভেট টেলিভিশন চালু হয় তখন এই মাধ্যম নিয়ে আমরা ছিলাম প্রচণ্ড আশাবাদী। একুশে টেলিভিশনকে সেই আশাবাদের বাস্তবায়ন করতে দেখি। কিন্তু খুব অল্প সময়ের জন্য। বিএনপি আমলে রাজনৈতিক আক্রোশের শিকার হয় একুশে টেলিভিশন। এরমধ্যে টেলিভিশন মাধ্যমের সম্প্রচার প্রযুক্তি আরও সহজ হয়ে যায়। হাজার হাজার কোটি টাকার বদলে মাত্র পঞ্চাশ কোটি টাকায় একটা চ্যানেল দাড় করানো সম্ভব হয়। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অনেক সাধারণ ব্যবসায়ী টেলিভিশন চ্যানেলের মালিক হয়ে যান। আর সেখানে টাকা বানাবার সুযোগ কাজে লাগাতে এগিয়ে আসেন কিছু সুবিধাবাদী এজেন্ট। টাকা বানানো শেষ হলে তারা কেটে পরেন, অনেকেই বিদেশে পাড়ি জমান। আর অসহায় হয়ে রুগ্ন টিভি নিয়ে চরম হতাশার মধ্যে দিন কাটাতে থাকেন আমাদের টেলিভিশন মালিকেরা। পেশাদার টিভি কর্মী, যাদের এই মাধ্যমে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিলো তারা বেকার হতে থাকেন।

আমরা কেনো টেলিভিশন মাধ্যমে আমাদের প্রযুক্তি, আমাদের সংস্কৃতি আর আমাদের পেশাদার মানুষদের কাজে লাগাতে পারলাম না? এই প্রশ্ন আজ অনেকের মতো আমারও।

লেখক: খ ম হারূন
টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব

খ ম হারূন টেলিভিশন টেলিভিশন দিবস

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

শরৎ বাংলাদেশের কোমল স্নিগ্ধ এক ঋতু
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:৫৪

সম্পর্কিত খবর